নতুন দৃষ্টান্ত কাউয়াদীঘি হাওর

এক দশক পর আমন চাষ

হাওরে গত বছর যে দুর্যোগ গেছে, তার রেশ এখনো কাটেনি। বোরো ধান প্রায় পেকে গিয়েছিল। পাঁচ–দশ দিনের মধ্যে কাটার কথা ছিল। কৃষক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে সব ডুবিয়ে দিল। হাওর অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম (হ্যাপ)-এর হিসাবমতে, সেখানকার ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা। সেখানকার ৯০ লাখ মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে পড়েছিল। হাওরবাসীর আয়–রোজগারের সব পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ডুবে যাওয়া ফসল পচে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মরে সাফ হয়েছিল। খাবারের অভাবে মানুষের মতো গবাদিপশু এবং হাঁস–মুরগিও ক্ষুধার স্বরূপ দেখা শুরু করেছিল।

সেই ক্ষতির রেশ যদিও রয়ে গেছে, তবে এ বছর হাওরাঞ্চলের মানুষ আমন নিয়ে নতুন আশায় বুক বেঁধেছে। কোথাও কোথাও আমনের ভালো ফলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পত্রিকার খবরে এসেছে, মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরের কোল ঘেঁষে এখন বিশাল এলাকাজুড়ে ধানের খেত। হাওরের অন্য এলাকার সঙ্গে এই এলাকার একটি বিশেষ পার্থক্য আছে। জলাবদ্ধতার কারণে এখানে গত ১০ বছরে আমন ধান চাষ সম্ভব হয়নি। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পানি আটকা পড়ে থাকার কারণে সেখানে ফসল হতো না। এ বছর দৃশ্যটা পাল্টে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কাউয়াদীঘি হাওরের পানি সেচে ফেলে সেখানে প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। মনু নদ প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্পহাউসে নতুন পাম্প মেশিন স্থাপনের কারণে এ আবাদ সম্ভব হয়েছে বলে জানাচ্ছেন কৃষকেরা।

পাউবো বলছে, পানি নিষ্কাশনের জন্য আটটি পুরোনো পাম্প ছিল। সেগুলো এবার বদলে ফেলে নতুন আটটি পাম্প বসানো হয়। এতেই কাউয়াদীঘি হাওরের ছবি বদলে গেছে। শ্রাবণ মাস থেকে আমনের চারা রোপণের কাজ শুরু হয়। আর এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকে ধান কাটা শুরু হবে। আমন চাষের সময় জমিতে পানি থইথই করত। কিন্তু এবার নতুন পাম্প বসানো এবং সময়মতো পানি সেচে ফেলে দেওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি।

কাউয়াদীঘি হাওরের মতো বাংলাদেশে কতটি জলাবদ্ধকবলিত হাওর আছে, তা শনাক্ত করা দরকার। ওই সব জলাবদ্ধ হাওরকে কাউয়াদীঘির মতো বাঁধ ব্যবস্থাপনায় এনে সেখানে ফসল ফলানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। এসব প্রকল্পকে সরকার যদি বিনিয়োগ হিসেবেও বিবেচনা করে, সেটিও মহৎ কাজ হিসেবেই বিবেচিত হবে। একটি এলাকার অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় এলে নানাভাবে এলাকাবাসী উপকৃত হয়। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু ও হাঁস–মুরগির জীবনচক্রেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় এলে একদিকে স্থানীয় মানুষের দারিদ্র্য দূর হবে, অন্যদিকে এর সুবিধা ভোগ করবে দেশের জাতীয় অর্থনীতি। এই সম্ভাবনার কথা আরও জোরালোভাবে সরকারকে মাথায় নিতে হবে।