শুধু তদন্ত নয়, আইনি পদক্ষেপ নিন

উপাচার্য–সমাচার

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

উপাচার্য পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়, যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে সুষ্ঠুভাবে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালাতে পারেন। কিন্তু উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে পদে আসীন হওয়ার পর অনেক উপাচার্যই আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তথা উপাচার্যের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ও তাঁর সহযোগী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০ তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির একটি তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৪৫টি অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ তাঁকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

ইউজিসির প্রথম তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যে উপাচার্য মহোদয় ভালোভাবে নেননি, তা জানা গেল গত বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। উপাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি শিক্ষামন্ত্রীর ষড়যন্ত্র ও রাজনীতির শিকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর বক্তব্যকে অসত্য ও রুচিহীন বলে অভিহিত করা হয়েছে।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হয়েও অনুপস্থিত থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছেমতো পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে একাডেমিক-প্রশাসনিক পদ দখল এবং ক্রয়প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন। উপাচার্য এসব অভিযোগের কোনো সদুত্তর না দিয়ে সব দায় শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসির ওপর চাপিয়েছেন।

ইউজিসি আরও যেসব উচ্চশিক্ষালয়ের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করছে, সেগুলো হলো খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম ও নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ।

আমরা আশা করব, বরাবরের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি তদন্ত করেই দায়িত্ব শেষ করবে না। তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে। যেসব উপাচার্য নিয়মবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ করে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে সেই অর্থ ফেরত নেওয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যক্তিরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে না আসতে পারেন, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে সরকারকে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের বুঝতে হবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনিয়ম ও দুর্নীতি বহু বছর ধরেই চলে আসছে। বহু তদন্ত কমিটি বসেছে, কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে, কিন্তু ব্যতিক্রম ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না।