উপজেলা চত্বরে বাগান উজাড়

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

উন্নয়নের নামে অবাধে গাছ কাটা যেন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। গাছ কাটার বিরুদ্ধে নানা আপত্তি ও প্রতিবাদের পরও তা বন্ধ হচ্ছে না। নতুন ভবন নির্মাণের বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি আমবাগানের ১১৬টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ছুটির দিনে লোকজন কম থাকার সুযোগে সেগুলো কাটা হয়। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগের অনুমতির বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে গাছ যে কাটা হয়েছে, সেটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানেন না। তাহলে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে এতগুলো গাছ কাটা হলো কীভাবে?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলা পরিষদ চত্বরে নতুন একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমবাগানের জমিতে এ ভবন নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। এর অংশ হিসেবেই গত শুক্র ও শনিবার শ্রমিক নিয়োগ করে ১১৬টি আমগাছ কাটা হয়। এরপর দ্রুত এসব গাছ ও ডালপালা পরিষ্কার করা হয়। এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুল আলমের ভাষ্য হচ্ছে, উপজেলা পরিষদের সামনে এ বাগান করায় পরিষদের ভবনটি বাগানের আড়ালে পড়ে গেছে। এটা জঙ্গল হয়ে গিয়েছিল। ভালো জাতের আম হয় না। তাই এটা রাখার যৌক্তিকতা নেই। বন বিভাগের অনুমতি না নিয়ে গাছ কাটার পেছনে তাঁর যুক্তি—বন বিভাগের অনুমতির জন্য আবেদন করা হলে চার-পাঁচ বছরেও এই অনুমতি পাওয়া যেত না।

উপজেলা বন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও আমাদের কাছে কেউ অনুমতি চায়নি।’ নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় বলেন, ‘আমগাছ কাটার সময় আমি কর্মস্থলে ছিলাম না। দুদিন ছুটিতে ছিলাম। সেই সময়ে এগুলো কাটা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উপজেলা পরিষদের ভবনটির পেছনে নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে আমবাগানটি রক্ষা করা যেত। পরিবেশকর্মীরা মনে করেন, গাছ কাটার এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।

সৌন্দর্য রক্ষা কিংবা আমগাছে কী ধরনের ফল ধরল, সেটা বিবেচনা করে এতগুলো গাছ কাটা দুঃখজনক। এভাবে বৃক্ষনিধন ও বন উজাড়ের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে ভুগতে হচ্ছে সবাইকে। চলমান জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতারা বন উজাড় না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অংশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে অবশ্যই অবাধে বৃক্ষনিধনের ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে হবে। গাছ বাঁচিয়েই উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে।