নড়িয়ায় নদীভাঙন

উদ্বাস্তুরা সরকারি সহায়তার আওতায় আসুক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) বলছে, নদীভাঙনে প্রতিবছর প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে চলে যায়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ হওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমি পানির তলে চলে গেছে। এই পরিমাণ মুন্সিগঞ্জের মতো দুটি জেলার সমান। আর একেকটা ভাঙন মানে তো শুধু জমির নাই হয়ে যাওয়াই নয়, অনেকগুলো পরিবারের রাতারাতি পথে বসা। আমরা মুন্সিগঞ্জের লোকসংখ্যাকেই যদি মান ধরি, তাহলে বলতে হবে স্বাধীনতার পর শুধু নদীভাঙনেই নিঃস্ব বা উদ্বাস্তু হয়েছে কম করেও ৩০ লাখ মানুষ।

কই যায় এসব মানুষ? কিছু আশপাশের গ্রাম, ইউনিয়ন বা উপজেলায় যায়। ভাঙনের পরও যাদের হাতে টাকা থাকে বা কাছে-দূরে জমি থাকে, নতুন করে আবার বসত গড়ে তারা। তবে অধিকাংশেরই টাকা-জমি কিছুই থাকে না। এদের চূড়ান্ত গন্তব্য হয় ঢাকা। একসময় যাদের গোলায় সারা বছর হেসেখেলে চলার মতো খোরাকি ছিল, মাথা গোঁজার জন্য ছিল চারচালা টিনের ঘর, তাদের ঠিকানা হয় ঘিঞ্জি কোনো বস্তি।

ভাঙনের শিকার এ রকমেরই ২৫৪ ব্যক্তির মতামত নিয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একটি সমীক্ষা করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং বেসরকারি সংস্থা এসডিএস। শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সমীক্ষাটি চালায় তারা। ২০১৮ সালে পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়। তারপর প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। সমীক্ষা বলছে, এখনো পুনর্বাসিত হয়নি এসব পরিবার। ৮৩ শতাংশই সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে আছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক হচ্ছে এসব সুবিধা পাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাগুজে পরিচয়। কারণ, এ সুবিধাগুলো পাওয়ার একটা পূর্বশর্তই হচ্ছে ঠিকানা। কিন্তু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে যে ঠিকানা আছে, তার কোনো অস্তিত্বই এখন আর নেই, হারিয়ে গেছে নদীর তলে। আর এই ‘ঠিকানাহীনতা’র কারণে সব ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে তারা।

বিশেষ ব্যবস্থায় ‘ঠিকানাহীন’ এসব মানুষকে দ্রুত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার জোর দাবি আমরা জানাচ্ছি। এদের পুনর্বাসনের আওতায়ও আনা দরকার। এ মানুষগুলোর দারিদ্র্য আকস্মিক, অনেকটা সকালবেলার ‘আমির’ সন্ধ্যাবেলা ‘ফকির’ হয়ে যাওয়ার মতো৷ আস্তে আস্তে গরিবির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যে প্রক্রিয়া, তার সঙ্গে এরা পরিচিত নয়। ফলে সাহায্যের জন্য মানুষের কাছে হাত পাততেও এরা অভ্যস্ত নয়। তাই হঠাৎ নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এ মানুষগুলোর পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকেও হতে হবে মানবিক।