পরিকল্পিত সবুজায়ন হোক দেশজুড়ে

ইউপি ভবনের ছাদে বাগান

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে দেশে কৃষি ও বনভূমির (বন ও বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা) আয়তন কমে আসছে। যেখানে মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা, সেখানে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) মতে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব, যেমন উষ্ণায়ন, অতিবৃষ্টি ও খরা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সবুজায়ন। বড় পরিসরে বনভূমি সৃজনের সুযোগ বাংলাদেশে কম। সে ক্ষেত্রে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আঙিনা কিংবা ছাদে পরিকল্পিতভাবে বাগান সৃজন করা একটি বিকল্প উপায়। যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) এমনই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রেমবাগ ইউপি কমপ্লেক্স ভবনের ছাদের আয়তন প্রায় দুই হাজার বর্গফুট। সেখানে সৃজন করা হয়েছে ছাদবাগান। ছাদজুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। বিভিন্ন ফলের সারি সারি গাছ। গাছে ঝুলছে ফল। আছে ফুলগাছও। পাখির কলকাকলিতে মুখর। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১৩ প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ রয়েছে সেখানে। ছাদ ছাড়াও পরিষদ চত্বরের ফাঁকা জায়গায় রোপণ করা হয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। সবজিরও আবাদ করা হয়েছে।

ছাদবাগান ও সবুজায়নের উদ্যোক্তা প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন। শখের বশে চার বছর আগে ছোট পরিসরে শুরু করেছিলেন এই বাগান। তিনি জানান, বাগানের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন ইউনিয়নের ১০ জন গ্রাম পুলিশ। কীটনাশক প্রয়োগ না করায় গাছগুলো বেড়ে উঠছে পরিবেশবান্ধব উপায়ে।

বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশি। অনেক ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের ছাদ ও চত্বরে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। যশোরের প্রেমবাগ ইউপির সবুজায়নের এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সেসব জায়গায় গাছ লাগানো এবং বাগান করার সুযোগ রয়েছে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগের চেয়ে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া গেলে সেটি আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে। শুধু ইউনিয়ন পরিষদ নয়, সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ভবনের ছাদ ও ফাঁকা জায়গা সবুজায়ন করা যেতে পারে। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মবিধি প্রণয়ন করতে হবে।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় অনুষ্ঠিত হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন। পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী ও বিশ্বনেতারা সেখানে মিলিত হয়েছেন পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কীভাবে বাঁচানো যায়, সেই পথ খুঁজতে। বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী কার্বন ও গ্রিনহাউস গ্যাস শুষে নিয়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে পারে সবুজ গাছ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতি নয়, প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের মতো এ ধরনের উদ্যোগ দেশজুড়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে।