সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ইউক্রেনে মানব বিপর্যয়

অবিলম্বে বাংলাদেশিদের ফেরত আনুন

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে, তা থেকে রেহাই পায়নি বাংলাদেশও। যুদ্ধ শুরুর এক দিন আগে দেশটির অলভিয়া বন্দরে ২৯ জন নাবিকসহ ভিড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। যুদ্ধের কারণে সেখানে জাহাজটি কেবল আটকাই পড়েনি, রুশ বাহিনীর গোলায় একজন নাবিকও মারা গেছেন। হাদিসুর রহমান নামের এই নাবিক ছিলেন ওই জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী। আমরা এই নাবিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। সমবেদনা জানাচ্ছি তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতিও।

স্বস্তির খবর হলো জাহাজের বাকি ২৮ জন নাবিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, যে দেশে যুদ্ধ চলমান আছে, সে দেশে কোনো স্থানই নিরাপদ নয়। তাই সরকারকে চেষ্টা করতে হবে, যাতে এই নাবিকদের ইউক্রেনের বাইরে নিয়ে আসা যায়।

ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা পাঁচ শর মতো, যাঁরা সবাই চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাংলাদেশি দীর্ঘ পথ হেঁটে পার্শ্ববর্তী দেশ পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও পার্শ্ববর্তী পোল্যান্ড বা রোমানিয়ায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকদের। উল্লেখ্য, ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসই সেখানকার বাংলাদেশিদের দেখাশোনা করে থাকে, যদিও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের কাছ থেকেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ মানবিক বিপর্যয়ের সময় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মানবিক আচরণই প্রত্যাশিত।

ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অবিলম্বে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা যেমন জোরদার করতে হবে, তেমনি জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাইতে হবে। রাশিয়া ইউক্রেনে অবস্থিত ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নিতে নো ফ্লাই জোন করতে সম্মতি দিয়েছে দিল্লির অনুরোধে। ভারতের সরকার চারজন মন্ত্রীকে ইউক্রেনের পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেখাশোনার জন্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। সেখানে থেকেও পরিস্থিতি তদারকিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করা সম্ভব। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোয় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর করণীয় ও তদারকির বিষয়েও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক নির্দেশনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। সেখানে তঁাদের সহযোগিতারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আটকে পড়া ২৫০ জনের সঙ্গে পোল্যান্ড দূতাবাস যোগাযোগ করেছে। কিন্তু সীমান্ত পার হওয়া খুবই কঠিন কাজ। যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশিসহ সব বিদেশি নাগরিককে উদ্ধার করার উপায় বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সহায়তা করতে পারে।

উদ্বেগের বিষয় হলো যুদ্ধ কত দিন প্রলম্বিত হবে, আমরা কেউ জানি না। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত অন্যান্য দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। রাশিয়ার পক্ষেও বেলারুশসহ কয়েকটি দেশ অবস্থান নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ প্রলম্বিত ও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে ব্যবসা–বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বব্যাপী, যার ধকল কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। তবে সবার আগে ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হোক। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হোক।