সরাইলে নিচু জমিতে ঘর নির্মাণ

আশ্রয়ণ প্রকল্প

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের দক্ষিণে হাওর এলাকায় লাহুর নদের পাশে ৩০ শতাংশ এলাকার নিচু খাসজমি ভরাট করে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১০টি গৃহনির্মাণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, নিচু জমি ভরাট করে গৃহ নির্মাণ করলে ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। অন্যদিকে নদীর পাশে নিচু জমিতে এসব ঘর যেকোনো সময় তলিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লাহুর নদের পাশে ১০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২ শতাংশ জমির মধ্যে ৩৯৪ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষের একটি সেমিপাকা গৃহের পাশাপাশি থাকবে একটি শৌচাগার ও একটি রান্নাঘর। প্রতিটি গৃহের নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। মোট ব্যয় হবে ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। উপজেলা প্রকৌশলী নিলুফা ইয়াছমীন জানান, নদের ভাঙন থেকে ঘরগুলো রক্ষা করতে সেখানে প্রতিরক্ষাদেয়াল নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। ঘর নির্মাণে যা ব্যয় হবে, ঘর রক্ষায় তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি।

ঘর তৈরির উদ্দেশ্যে লাহুর নদের পাশে ১০ ফুট গভীর নিচু জমি ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলায় এমন ১০২টি পরিবারকে ওই প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে। বিধিমালায় বলা আছে, এই প্রকল্পের জন্য এমন কোনো জায়গা নির্ধারণ করা যাবে না, যেখানে নতুন করে মাটি ফেলতে হবে। কিন্তু নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের দক্ষিণে হাওর এলাকায় লাহুর নদের পাশে ৩০ শতাংশের নিচু খাসজমি খননযন্ত্র দিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নদের পাশে নতুন মাটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হয়নি। এখানে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বসবাস করা কঠিন হবে। প্রতিরক্ষাদেয়াল তৈরি করা হলেও তা টিকবে না।

বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদটি শূন্য আছে। এর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেছেন, ওই ইউনিয়নে আর কোনো খাসজমি না থাকায় এ এলাকা বেছে নিতে হয়েছে। তাঁর যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। খাসজমি না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ঘর নির্মাণ করে গরিব মানুষকে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া যায় না। প্রকল্পের উদ্দেশ্য গৃহহীনকে গৃহ দেওয়া। কিন্তু যে ঘর নদীগর্ভে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে ঘর নির্মাণের যুক্তি নেই। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক।