১০ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে মেঘনা ভরাট’ শিরোনামে খবর ছাপা হওয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) অবকাঠামোর নির্মাণকাজ সাময়িক বন্ধ আছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের আপত্তি সত্ত্বেও এপিএমসিএল তাদের অবস্থানে অনড়।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখতে বলেছেন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপ্রধান পানি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা জমির কাগজপত্র পরীক্ষা করব এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন জমা দেব। আমাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয় নদীর কোনো ক্ষতি হয় কি না।’ বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভরাট করা জায়গাটি নদীর বলেই তাঁদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের বাসিন্দা নাসির মিয়া গত ১৯ জানুয়ারি নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, সচিব ও আশুগঞ্জ-ভৈরব নদীবন্দরের উপপরিচালকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে নদীপাড়ের জমি দখলের অভিযোগ করেন। এতে মেঘনা নদীর ‘গতিরোধ, পরিবেশ বিনষ্ট ও নদীভাঙন ঠেকাতে’ ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানানো হয়। তাঁর অভিযোগ, মেঘনা নদীর পাড় ও নদীর ভেতরের শত শত একর জায়গা অবৈধভাবে ভরাট করছে এবং এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হবে। এ ছাড়া চরসোনারামপুর গ্রামটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন নোঙরের আশুগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক ইকরামুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মেঘনার পাড় দখল করে ভরাট করা হয়েছে। এর প্রভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে। পাশাপাশি উপজেলার সোহাগপুর এলাকার নদীপারের ফসলি জমি, নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরসোনারামপুর গ্রাম, সেখানে থাকা কয়েক জেলার বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার ও আশুগঞ্জ বন্দরও হুমকির মুখে পড়বে।
সম্প্রতি প্রথম আলোর প্রতিনিধি সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন, আশুগঞ্জ বন্দর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর দিকে এপিএসসিএলের রেস্টহাউস। এর পেছনে সীমানাপ্রাচীর থেকে নদীর দিকে ১৫০ থেকে ২০০ ফুট প্রস্থের ও দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের নতুন করে দেয়াল নির্মাণ করে বালু ভরাট করা হয়েছে। এপিএসসিএল সূত্র জানায়, ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহন ও গ্যাসপ্রাপ্তি সহজ হওয়ায় ১৯৬৬-৬৭ সালে মেঘনা নদীর তীরে আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তখন উপজেলার সোহাগপুর, সোনারামপুর, বাহাদুরপুর মৌজার ৩১১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৩ সালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এপিএসসিএল যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। পাকিস্তান আমলে জায়গাটি তারা অধিগ্রহণ করেছে বলে এর যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারে না। যেকোনো স্থাপনা বা উন্নয়নকাজের আগে দেখতে হবে এর পরিবেশগত ঝুঁকি আছে কি না, নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয় কি না। তাদের কার্যক্রম যদি এতই স্বচ্ছ হয়ে থাকে, তাহলে কেন তারা আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিল না?
আমরা মনে করি, নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বাইরে কিছু করা যাবে না। নদী, পরিবেশ ও প্লাবনভূমি অক্ষত রেখেই বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।