আমেরিকার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন-এ ১৭ মে প্রকাশিত প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম খবর, চার ‘কলাম’ব্যাপী শীর্ষ নাম দিয়ে, ‘স্ক্র্যামবল ফর অলটারনেটিভস টু বাংলাদেশ’ অর্থাৎ ‘বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশের জন্য হুড়োহুড়ি’। তার পরই ব্যাখ্যা, পশ্চিমা ক্রেতারা তৈরি পোশাক আমদানির জন্য বাংলাদেশ ছাড়া অন্য উৎস খুঁজতে উন্মুখ হয়ে গেছে, ‘রেস’ শুরু করেছে। তার ওপর একটি চার কলামব্যাপী ছবি, একটি বিকল্প উৎস ইন্দোনেশিয়াতে একটি জাতীয় প্রশিক্ষণকেন্দ্রে নারীদের সেলাই শেখানো হচ্ছে। শুধু এই কেন্দ্র থেকেই বছরে ১২ হাজার হবু পোশাককর্মী শিক্ষা গ্রহণ করছেন। অধিকাংশই নারী। আরেকটি খবর। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রদত্ত জিএসপি-সুবিধা প্রত্যাহারের চিন্তা করছে (যদিও সম্প্রতি অন্যথা খবর প্রচারিত হয়েছিল)। পত্রিকাটির তৃতীয় পৃষ্ঠায় আরও বিস্তারিত পাঁচ কলামব্যাপী ছবিসংবলিত খবর। এর বিবরণে আছে কীভাবে ক্রেতারা এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সাংঘর্ষিক অবস্থা এড়াতে দেশ থেকে সত্বর তাদের ক্রয়কর্ম গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যৎও তারা আশাপ্রদ মনে করছে না। আরেকটি খবরে ছিল কম্বোডিয়াতে তৈরি পোশাকশিল্প উন্নয়নে সরকারি প্রচেষ্টার কথা।খবরটি আমাকে যেন একটি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করল। এমনিতেই দেখছি দেশে শিল্প উৎপাদন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতির কী নিদারুণ দুরবস্থা। তার ওপর দেশের প্রধানতম বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের উৎস রপ্তানিশিল্পের ওপর আশু মৃত্যুপরোয়ানা। এ তো শুধু সরকারের ওপর নয়, সারা রাষ্ট্রের ও জাতির কাছে প্রদত্ত বহির্বিশ্বের ‘আলটিমেটাম’। বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া তো দেশের এই দুঃসহ পরিস্থিতি অবিলম্বে স্বাভাবিকীকরণের জন্যই বাজিয়েছিলেন সাবধানী ঘণ্টা, দিয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ঘণ্টা আজ রাষ্ট্রের স্বাভাবিক অস্তিত্বের জন্য অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন সম্পর্কে সংলাপ নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ যে টালবাহানা, লুকোচুরি, ভান-ভণিতা শুরু করেছে; তা দেখে আইনবিদ শাহদীন মালিক ১৭ মে প্রথম আলোতে লিখেছেন, ‘সংলাপ-সংলাপ খেলা চলবে আরও দুই-তিন মাস।...সে সময়তক আমরা হয়ে যাব ব্যর্থ রাষ্ট্রের ক্ষত-বিক্ষত নাগরিক।’ নোবেল বিজয়ী বিশ্বনন্দিত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যে বিশাল ফাটল ধরেছে, সেটা আমলে না নিলে জাতিও এ ধরনের ধসের ভেতর হারিয়ে যাবে।’এই যে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার উচ্চকিত পদধ্বনি আমরা শুনছি, যার সাবধানী ঘণ্টা আজ দেশে-বিদেশে ‘আলটিমেটাম’ বা চরম পর্যায়ে বাজানো হচ্ছে, তাতে কি সরকারের টনক নড়বে না? জাতির ভাগ্যাকাশে আজ জারি হয়েছে দশ নম্বর মহা বিপৎসংকেত।এ থেকে উত্তরণের উপায় ছিল একটাই। গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি সর্বদল গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন। আর সেটা নির্ধারণের জন্যই অপরিহার্যভাবে প্রয়োজনীয় ছিল রাজনৈতিক সংলাপ। সে সংলাপ আহ্বানের আশা বা কথা সরকারি দল অধুনা মাঝে মাঝে দিয়ে থাকলেও, বিশেষত বিদেশিদের কাছে, আজ তাদের মনোভাব পরিষ্কারই হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ এখন সংলাপের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা নির্ধারণের জন্য আন্তরিক বা আগ্রহী নয়। সাদামাটা কথায় তারা চায়, নির্বাচনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে (এমনকি পার্লামেন্টও) গদিনশিন রেখে লোকদেখানো চার-পাঁচজন অন্য দলীয় উপদেষ্টা বা মন্ত্রী নিয়ে তাকে অন্তর্বর্তী সরকার নাম দিয়ে এক স্বৈরাচারী উপায়ে নির্বাচন পরিচালনা করতে। তাদের ভীষণ ভয়, যেকোনো নিরপেক্ষ, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার থাকলে তাদের ভরাডুবি হবে। তাই তারা যেকোনো উপায়ে দেশের সর্বস্বার্থ বিসর্জন দিয়েও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়; জাতির ও বিশ্বের জনমত সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সর্বদলের অংশগ্রহণের অপরিহার্যতার নীতি প্রত্যাখ্যান করে।দেশের একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে প্রকাশিত পেশাদারি জরিপে সম্প্রতি দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ‘নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার’ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। ৮০ শতাংশ ধারণা করছে, দেশের অবস্থা বর্তমানে বিপজ্জনক। বিদেশি শুভার্থীরাও সবাই একবাক্যে বলছেন, সব প্রধান দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক, যা হবে গণতন্ত্র সুরক্ষায় অপরিহার্য। সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় ও সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু বিএনপির দাবি নয়; এ আজ জাতির দাবি, বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের দাবি।আওয়ামী লীগ বলে বেড়ায় যে ‘নির্বাচনের সময়ের’ সরকার শুধু ‘নির্বাচিত’ সাংসদ দিয়ে গঠিত হবে, অথচ পৃথিবীর প্রতিটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে মেয়াদপূর্তিতে সংসদ অবলুপ্ত হয়। তখন সরকারে যাঁরাই থাকেন, তাঁরা কেউই ওই সময়ে ‘নির্বাচিত’ নন। তাঁরা হলেন সাবেক নির্বাচিত। তাঁদের আইনি অবস্থান অন্য যেকোনো সাবেক সাংসদ বা সাধারণ নাগরিকের মতো। তাই ‘নির্বাচিত’ শব্দ ব্যবহার করে এই ভাঁওতাবাজি করা বা ধূম্রজাল সৃষ্টির অপচেষ্টা কেন? বর্তমানে সৃষ্ট সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি, পারস্পরিক অনাস্থা ও অবিশ্বাস এবং দলীয়করণ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কারণে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের নাগরিক সদ্য অবলুপ্ত সাংসদ-সমন্বিত সরকারের ওপর কোনো আস্থা রাখতে পারছেন না। আবার পঞ্চদশ সংশোধনী মোতাবেক যদি পার্লামেন্ট ও সরকারকে বহাল রেখেই নির্বাচন হয় তাহলে কি তা অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের মতো নির্বাচন হবে? তা কি প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এনে দেবে? তা কি গ্রহণযোগ্য হবে? সেটাই তো হবে নিখাদ স্বৈরাচার।আমাদের কানে আজ বাজছে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রের’ মরণঘণ্টা। আর আমরা অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলাম কী করে একই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ‘পাকিস্তান’ একটি চরম বিপর্যয়মুখী অবস্থা থেকে একটি সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়াদপূর্তিতে এক সরকার থেকে আরেক নির্বাচিত সরকারে ক্ষমতা হস্তান্তর করল। আর প্রায় নিমেষেই হয়ে দাঁড়াল বিশ্বনন্দিত, অভিহিত হলো শক্ত ভিতের গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে। কেননা ১. তারা ক্ষমতাসীন দলের মেয়াদপূর্তির পর শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করল; ২. সব প্রধান দলের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কেয়ারটেকার সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করল; ৩. এই নির্বাচন সর্বজনীন হলো—শুধু সব রাজনৈতিক দলই নয়, মহিলারা এবং উপজাতীয়রা ও সমাজের সর্বশ্রেণীর লোকেরা (এমনকি একজন হিজড়াও প্রার্থী ছিলেন) বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করলেন; ৪. চরমপন্থী ও তালেবানের সক্রিয় বিরোধিতা সত্ত্বেও সব দল গণতন্ত্রের সপক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও অনুষ্ঠানে দৃঢ়তা দেখাল; ৫. শান্তি-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন নিরপেক্ষতা দেখাল এবং সামরিক বাহিনী শান্তি রক্ষায় সহায়তা করলেও কোনো রকম প্রভাব বিস্তার বা হস্তক্ষেপের বিন্দুমাত্র অপচেষ্টা করল না; ৬. সবার সম্মতিতে গঠিত নির্বাচন কমিশন সত্যিকারভাবে আস্থা উদ্দীপককারী নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করল এবং ৭. সব দল একে অপরের প্রতি ভদ্রজনোচিত সহনশীলতা ও সহযোগিতামূলক আচরণ করে নির্বাচনের ফলাফল অনতিবিলম্বে স্বীকার করে নিয়ে পাকিস্তানে গঠনমূলক কার্যক্রমে সমর্থন জানাল।পাকিস্তানের পরিস্থিতি আমাদের চেয়েও বেশি সমস্যাসংকুল ছিল। সেখানে তালেবান নেতা হাকিমুল্লাহ মেহসুদ তো ঘোষণাই দিয়েছিলেন, এ জাতীয় রাজনৈতিক নির্বাচন ইসলামবিরোধী এবং তাঁরা সর্বপ্রকার উপায়ে এটাকে প্রতিহত করবেন। অনেকগুলো আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হলো, প্রার্থী অপহরণও করা হলো (পিপিপি নেতা গিলানির তনয়)। বহু রাজনৈতিক দলকে বড় সমাবেশই করতে দেওয়া হলো না। এমনকি নিরাপত্তার কারণে পিপিপির খোদ চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টোকে হতে হলো দেশান্তর। নেতৃত্বহীন অবস্থা ক্ষমতাসীন পিপিপির পরাজয়ে ছিল একটি বড় ফ্যাক্টর। তবুও লক্ষ করলাম নির্বাচনোত্তর কালে দুবাই থেকে বিলাওয়াল ভুট্টো নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে তাঁর দলের লোকজনকে নতুন সরকারের গঠনমূলক কার্যক্রমে সমর্থনের আহ্বান জানালেন। তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা তো হাসপাতাল থেকে ভোট গণনার সময়ই ফলাফলের ধারা লক্ষ করে পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে নওয়াজ শরিফকে বিজয়ী হিসেবে অভিনন্দন জানালেন। অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলও তা-ই করল। বিজয়ী দলের প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসাপরায়ণ কোনো আচরণ আমরা লক্ষ করলাম না। বরং বিজয়ী নওয়াজ শরিফ হাসপাতালে গিয়ে প্রতিপক্ষ ইমরান খানের সুস্থতা ও সহযোগিতা কামনা করলেন। নির্বাচনের সময়ও এই সহযোগিতামূলক ভাব আমরা লক্ষ করেছি। ইমরান খান মঞ্চ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন হলে পিএমএল-এন একদিন তাদের সব নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত রাখল। পিপিপি স্থগিত করল তাদের কয়েকটি আহূত নির্বাচনী সমাবেশ। সবাই দেখাল একে অন্যের প্রতি সম্মান, সমীহ ও সুবিবেচনা। বাক্য বিনিময় হলো ভদ্রসম্মত। বক্তৃতাকালীন বক্তব্যও ছিল শালীন এবং অনেকাংশে নীতিভিত্তিক।এ ধরনের একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর আমরা লক্ষ করলাম, প্রায় তাৎক্ষণিকভাবেই পাকিস্তানিদের ভেতরে একটি আত্মবিশ্বাস, আস্থা এবং জাতীয় ঐক্যচেতনার জন্ম ও বহিঃপ্রকাশ হলো। এ যেন একটা জাতির নবজন্ম। আন্তর্জাতিক মহলে এটা সাগ্রহে স্বীকৃত হলো। প্রেসিডেন্ট ওবামা ফোন করে অভিনন্দন জানিয়ে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অভিনন্দন জানিয়ে আশা প্রকাশ করলেন পাকিস্তান-ভারত সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার। একটি ‘প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্র’ থেকে নিমেষেই পাকিস্তান হয়ে দাঁড়াল উপমহাদেশে ‘অমিত সম্ভাবনা’র এক দেশে; উপমহাদেশ এবং আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে যা পালন করবে এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।দেশের অত্যন্ত কঠিন কয়েকটি সমস্যা মোকাবিলার জন্যও এই সর্বস্বীকৃত নির্বাচন নওয়াজ শরিফকে শক্তি ও সাহস জোগাবে। নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গেই দেশের শেয়ার মার্কেট চাঙা হয়ে উঠেছে। নওয়াজ শরিফ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ও শিল্পায়নের ওপর গুরুত্ব দেবেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রীর পদে প্রাইভেটাইজেশন বিশেষজ্ঞ ইকবাল দার বা অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ সারভাজ আজিজের নিযুক্তির কথা ভাবছেন। গঠনমূলক কয়েকটি মহাপরিকল্পনার কথাও তিনি প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় প্রশাসন নির্দলীয় আচরণ করবে, এই দৃঢ় অঙ্গীকার তিনি ব্যক্ত করেছেন। দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় তাঁর সংকল্প অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই ওই দুই দেশ গ্রহণ করেছে। ওবামা বলেছেন, এই সম্পর্ক হবে ‘সমান দোসর’ হিসেবে। নতজানু ভূমিকা এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের হবে না। ভারতও সেটা জানে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, যদি আমরা বাংলাদেশে একটি সর্বদলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন-প্রক্রিয়া সংলাপ মারফত উদ্ভাবন করতে পারতাম এবং সেভাবে নির্বাচন করে একটি দল ক্ষমতাসীন হতো, তাহলে বাংলাদেশেও অচিরেই অর্থনৈতিক স্থিরতা ও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হতো, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথে আমরা এক ধাপ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে পারতাম। পাকিস্তান তো আমাদেরই কেয়ারটেকার ব্যবস্থা ধার করে নিয়ে তাদের দেশে তা সম্ভব করে তুলল। নেপালও তা করার চেষ্টা ও প্রস্তুতি শুরু করেছে।দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে হচ্ছে অর্থবহ সংলাপ ছেড়ে এক হিংসাত্মক সাংঘর্ষিক পথ বেছে নিচ্ছে। সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রার কোনো অনুমোদন দিচ্ছে না; ধরপাকড়, জোর-জুলুম, মামলা-হয়রানি শুধু চালিয়েই যাচ্ছে না, তার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ। দুই টেলিভিশন ও একটি জাতীয় দৈনিক বন্ধ করে দিয়েছে। সিএনএনের ক্রিস্টিন আমনপুরের ভাষায়, ‘সরকার গণমাধ্যমকে করেছে শৃঙ্খলাবদ্ধ।’ বিরুদ্ধাচরণ করলে কী করা হয় তা সাগর-রুনির ব্যাপারেই দেখা গেছে। দেশে এখন প্রবর্তিত হয়েছে স্বৈরাচারী শাসন। সরকার ‘কঠিন হস্তে’ এখন বিরোধী দলের সব গণতান্ত্রিক কার্যক্রম বন্ধ করতে চায়। গণতান্ত্রিক পরিবেশ এখন সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। দেশের ভবিষ্যৎ আজ চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ হওয়ার দোরগোড়ায় আমরা।এমতাবস্থায় ‘আলটিমেটাম’-এর ঘণ্টা না বাজিয়ে কি বাজানো হবে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সরোদের মূর্ছনা?ইনাম আহমদ চৌধুরী: বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।