নববর্ষের দিন বৈশাখী উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তাহলে আমরা কি মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি? প্রথম কথা হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা শুধু লজ্জার না, বিষয়টি ক্ষোভের। সেই দিন যে নারী ও শিশুরা নিপীড়নের শিকার হয়েছে, শুধু তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়নি, এ ঘটনায় দেশের সব নারী-শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
অন্যদিকে ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে রাখঢাক চালাচ্ছে, তা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। কোনো অভিযোগ উঠলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব তা আমলে নেওয়া। কিন্তু এখানে একধরনের ‘ব্লেম গেম’ চলছে। একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে।
রাস্তায়, কর্মক্ষেত্র কোনো জায়গাতেই নারীরা নিরাপদ নয়। আমাদের সংস্কৃতির গৌরবের জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৈশাখী উৎসবেও নারী নিরাপদ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ বলতে চাচ্ছেন নারী বা মেয়েদের রাত নয়টার পরে বাইরে থাকার প্রয়োজনটা কী। তাই বলা যায় দেশের নারীরা এগিয়েছে, তবে ক্ষমতায়ন হয়নি। শুধু উন্নয়ন দিয়ে ক্ষমতায়ন হবে না। ক্ষমতায়ন হবে তখনই যখন নারী নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবে।
বলা হচ্ছে যে নারীরা নিপীড়নের শিকার, তারা অভিযোগ করছে না। সেই নারীকেই কেন অভিযোগ জানাতে হবে? যে নারী কাপড় ঠিক করার জন্য রোকেয়া হলে ঢুকতে বাধ্য হয়েছে, সে নারীই বুক ফুলিয়ে অভিযোগ করবে, এ ধরনের পরিবেশও তৈরি হয়নি। সবার ঘরেই মা, মেয়ে বা বোন আছে। অর্থাৎ সবার ঘরেই নারী আছে। নীতিনির্ধারকেরা কেন এ দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না? যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। যে বা যারা এ অপরাধ করেছে, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঘটনার পর হাইকোর্ট একটি নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা সবাই হাইকোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ।
রমনার বটমূলে বোমা হামলা সংস্কৃতিমনা বাঙালিদের রুখতে পারেনি। তবে এবার যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে বৈশাখী উৎসবসহ এ ধরনের উৎসবে সন্তানকে যেতে দেওয়ার আগে তিনবার ভাবতে বাধ্য হবেন অভিভাবকেরা। এ ধরনের নারী নির্যাতনকারীরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠলেও দল সেভাবে বিব্রতবোধ করছে বলে মনে হচ্ছে না। এ ধরনের পরিবেশে যে বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই, তা দেখতে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। পরিকল্পিত ও দলবদ্ধভাবে নির্যাতনের যে চিত্র আমরা সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, তাতে করে বলা যায় সামাজিক বিপর্যয় ঘটেছে।
তাই সোচ্চার দাবি তুলতে হবে, রাষ্ট্রকে নাগরিকের নিরাপত্তা দিতেই হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তরুণ প্রজন্মও বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার। এটি একটি ইতিবাচক দিক। গণমাধ্যমকেও এ ঘটনার ফলোআপ করতে হবে, যাতে অপরাধীরা কোনোভাবেই পার পেতে না পারে।
রাশেদা কে চৌধূরী: গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক