এই আইন আর লোকবলে চলবে না

আবার চালু হলো অবৈধ ইটভাটা

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কম করেও পাঁচটি নিয়ম ভঙ্গ করেছে ভোলার মাওয়া ব্রিকস। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইটভাটা খুলেছে তারা। ভাটা খোলার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়, সেটাও তাদের নেই। অত্যাবশ্যকীয় লাইসেন্স ছাড়া ইট তৈরির কোনো সুযোগই নেই। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা খোলার শাস্তি অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। ইটভাটা খোলা বা চালু রাখার আরেকটা আবশ্যিক শর্ত হলো এর প্রযুক্তি হতে হবে পরিবেশবান্ধব, থাকতে হবে উন্নত চিমনি। কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নিষিদ্ধঘোষিত স্থায়ী ড্রাম চিমনিতে গাছ পুড়িয়েই ইট তৈরি করে চলছে মাওয়া ব্রিকস। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না; কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনও অবৈধ। অথচ মাওয়া ব্রিকসের চারপাশেই ধানখেত, আর অদূরেই বসতি।

ফলে যুক্তিসংগত কারণেই ৯ মার্চ ঢাকা থেকে যাওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের ওই ভাটাটি বন্ধ করে দেয়, ভেঙে ফেলে চিমনি। আক্ষরিক অর্থেই যাকে বলে পানি ঢেলে দেওয়া, তা–ও পর্যন্ত তারা করে। অথচ ১৫ দিনও পার হতে দেয়নি, পরিবেশ অধিদপ্তরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেই মাওয়া ব্রিকস আবার চালু করেছেন মালিক রাসেল পণ্ডিত।

রাজনৈতিক পরিচয়ে তিনি আবার রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। এই সূত্রেই জানা গেল, এই প্রথম না, আগেও বিভিন্ন সময়ে অন্তত চারবার ভাটাটি বন্ধ বা জরিমানা করা হয়েছিল। প্রতিবারই প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেটিকে আবার চালু করেছেন মালিক। এখানে উল্লেখ থাকে যে মাওয়া ব্রিকস চালু হয়েছে মাত্র দুই বছর, এর মধ্যেই এতসব কীর্তি কাণ্ড করে ফেলেছে।

ভাববেন না যে মাওয়া ব্রিকস কোনো ব্যতিক্রমী উদাহরণ। সারা দেশেরই এই চিত্র। ১১ এপ্রিল প্রথম আলোরই একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নওগাঁয় মোট ইটভাটা আছে ২০৩টি, এর মধ্যে মাত্র ছয়টির পরিবেশ ছাড়পত্র আছে, বাকি ১৯৭টিই অবৈধ। তাতে কিন্তু তাদের কাজকর্ম থেমে নেই, দিব্যি পুড়িয়ে চলেছে ইট। এটি কেবল দেশের একটি জেলার চিত্র। একটা ভাত টিপলেই তো হাঁড়িসুদ্ধ ভাতের হাল বোঝা যায়। প্রায়ই অভিযান হয়, জরিমানা হয়, বন্ধ হয় ইটভাটা, তারপর আবার যেই সেই, আগের মতো চলতে থাকে ইট পোড়ানো। এ সবই ইঙ্গিত করে যে বিদ্যমান আইন আর লোকবলে এই দুষ্টচক্র থেকে বেরোনো যাবে না। বিশেষ করে দ্বিতীয়বার আইন ভঙ্গকারীর শাস্তি আরও কঠোর করতে হবে।