আগের অবস্থায় ফেরা যেন নিশ্চিত হয়

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী করোনাকালে বাড়ানো ৬০ শতাংশ ভাড়া গতকাল মঙ্গলবার থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার মানে গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাসে আগের নির্ধারিত ভাড়া নিতে হবে। এর পাশাপাশি গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রাখার বাধ্যবাধকতা উঠে গেছে। এখন থেকে শতভাগ আসন পূর্ণ করে যাত্রী নিতে পারবে গণপরিবহন। তবে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে যাত্রী, পরিবহনশ্রমিকসহ সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। এমন বেশ কিছু শর্ত ও সমঝোতার ভিত্তিতে গত ১৯ আগস্ট পরিবহনমালিক-শ্রমিকনেতারা আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।

করোনার মধ্যে রাজধানীর জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক। রাস্তাঘাটে করোনাকালের আগের চিত্র দেখা যায়। ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। ১ জুন থেকে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখাসহ নানা শর্তে সীমিত আকারে তা চালু হয়। এ সময় বাস-মিনিবাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী অতিমারির এই সময়ে ৬০ শতাংশের বদলে শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর নজির রয়েছে। করোনার আগে সাভার থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরির ভাড়া ছিল ৪০ টাকা। ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পর তা নেওয়া হয়েছে ৮০ টাকা, অর্থাৎ বৃদ্ধি শতভাগ।

এ দেশে একবার কোনো কিছুর দাম বা ভাড়া বাড়লে, তা সাধারণত আর কমে না। এর আগে বহুদিন পর জ্বালানি তেলের দাম কমেছিল। তখন দাবির মুখে বাসভাড়া কমানো হয়, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি।

গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে সোচ্চার ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এবারও আগের ভাড়ায় ফিরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা কথা শুনতে চান না, এটা সত্য। গতকাল তিনি বলেছেন, যেসব গণপরিবহন সরকারি নির্দেশনা মানবে না, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার প্রথম দিন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ভাড়া প্রত্যাহারসহ অন্যান্য বিষয় মানা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন হচ্ছে, প্রথম দিনের পরিস্থিতি সন্তোষজনক।

আইনে থাকলেও বাস-মিনিবাসে ভাড়ার তালিকা নেই। করোনাকালে যে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে, তা কমিয়ে কত টাকা করলে আগের অবস্থানে যাবে, সেটা অনেক যাত্রী আন্দাজ করতে পারবেন না। সেই সুযোগই পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের কেউ কেউ নিতে পারেন। তাই প্রতিটি পরিবহনে ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা হোক।

করোনা পরিস্থিতির আগে ঢাকায় মিনিবাসে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ছিল ১ টাকা ৬০ পয়সা, বড় বাসে ১ টাকা ৭০ পয়সা। দূরপাল্লার পথে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া নির্ধারিত আছে ১ টাকা ৪২ পয়সা। পরিস্থিতির কারণে এত দিন এসব ভাড়া মানা হয়নি। যাত্রীরাও চুপচাপ ভাড়া দিয়ে গেছেন। অস্বাভাবিক এই ভাড়া কমবে, এটাই কাম্য। আর তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কিন্তু সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, ভ্রাম্যমাণ আদালত, ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

এমনিতেই করোনাকালে মানুষের আয়-উপার্জন কমেছে। গণপরিবহনে যাতায়াত করা প্রায় সব মানুষই দরিদ্র বা নিম্নমধ্যবিত্ত। তাঁদের পারিবারিক খরচ প্রায় একই রকম আছে; বরং করোনার কারণে মাস্ক কেনাসহ নানা খাতে কিছু খরচ বেড়েছে। তাঁদের স্বস্তির জন্য বাড়তি ভাড়া কমাতেই হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা কথা শুনতে চান না। কিন্তু কেন তাঁরা শুনবেন না? তাঁদের শোনাতে না পারলে তো সরকারেরই দুর্বলতা প্রকাশ পায়, যেমনটি পেয়েছে সড়ক নিরাপত্তা আইনটি এখন পর্যন্ত কার্যকর না করায়। ভয় বা চাপ, যে কারণেই হোক, সেই আইন তো আজও কার্যকর করা যায়নি। তাহলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে কীভাবে?