দেশে একটা সময় অ্যাসিড-সন্ত্রাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। অ্যাসিড-সন্ত্রাস বন্ধে ২০০২ সালে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হওয়ার পরও এর মাত্রা কমানো যাচ্ছিল না। যদিও ওই আইনে অ্যাসিড আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুত, বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, ক্ষয়কারী দাহ্য পদার্থ হিসেবে অ্যাসিডের অপব্যবহার রোধের কথা বলা হয়েছিল। ওই বছরই সর্বোচ্চ ৫০০ অ্যাসিড-সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যাসিডবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করে। প্রথম আলোও অ্যাসিডবিরোধী কার্যক্রম চালায় এবং এর সুফলও মেলে।
সরকারের নজরদারি, অপরাধীদের বিচার ও জনসচেতনতার কারণে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা অনেক কমে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক দুটি অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। প্রথম ঘটনাটি ঘটে গাজীপুরে, দ্বিতীয়টি ভোলায়। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের বড়হর গ্রামে মোছা. শামসুন্নাহার নামের এক নারী ছয় মাস বয়সী এক শিশুকে অ্যাসিডে ঝলসে দেন বলে অভিযোগ আছে। শিশুটির মায়ের সঙ্গে ওই নারীর ঝগড়া ছিল। পুলিশ ওই নারীকে গ্রেপ্তার করলেও মামলার তদন্ত না এগোনোয় উৎকণ্ঠায় আক্রান্ত পরিবারটি।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শিবা গ্রামে নিজের ঘরে বসে পড়াশোনা করছিলেন সালমা নামের এক কলেজছাত্রী। এ সময় টিনের বেড়া কেটে দুর্বৃত্তরা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে তাঁর গায়ে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ আছে। মেয়েটির বাবা আবদুল খালেক দুই যুবককে আসামি করে থানায় মামলা করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে জমিজমার বিরোধ থেকে অ্যাসিড-সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে প্রথম আলোর খবরে জানা যায়, কেবল জমিজমা নয়, নির্বাচন নিয়েও দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ আছে। দুই পরিবার থেকে দুজন আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সদস্যপদে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
আসামিপক্ষের লোকজন সংবাদ সম্মেলন করে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা সাজানো বলে দাবি করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করা। সাজানো হোক আর প্রতিহিংসা হোক, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাফল্য বহির্বিশ্বেও প্রশংসিত। এই অর্জনকে কোনোভাবে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। আমরা অ্যাসিড–সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই।