গোষ্ঠীস্বার্থের চেয়ে জনস্বার্থ বড়

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করুন

বাংলাদেশে অন্যের জায়গায় অন্যায়ভাবে স্থাপনা গড়ে তোলার প্রবণতা অত্যন্ত প্রবল। এই ‘অন্য’ যদি হয় রাষ্ট্র বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা বিভাগ, যারা নিজেদের ফাঁকা, অব্যবহৃত জায়গাজমির নিয়মিত তদারকি করে না, তাহলে তাদের সেসব জায়গায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার হিড়িক পড়ে যায়। বিশেষত, সড়ক–মহাসড়কের দুই পাশের ফাঁকা জায়গায় অবৈধভাবে দোকানপাট, ছোটখাটো কারখানা, এমনকি বিপণিবিতানও গড়ে তোলা হয়। শহর–উপশহরের ফুটপাত তো বটেই, বাজার এলাকায়ও খাসজমিতে অবৈধভাবে দোকানপাট, এমনকি পাকা মার্কেটও গড়ে তোলা হয়। রাতারাতি কোথাও কিছু গড়ে ওঠে না; এসব অবৈধ নির্মাণকাজ চলে দিনের পর দিন, বহু বছর ধরে। তারপর হয়তো হঠাৎ একটি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে, তখন অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার অভিযান শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে ওঠা প্রচুরসংখ্যক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার অভিযান শুরু হলে স্থাপনার মালিকেরা প্রতিবাদ করেন, কেউ কেউ আদালতে মামলাও করেন এই দাবি করে যে তাঁর স্থাপনা অবৈধ নয়, তিনি জায়গাটি কিনেছেন অমুক বা তমুক ব্যক্তির কাছ থেকে। এই নিয়ে আদালতে মামলা চলে, আদালত হয়তো স্থগিতাদেশ দেন, কিংবা হয়তো উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু তারপরও সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না ‘প্রভাবশালী’ গোষ্ঠী বা মহলের চাপে। মাঝপথে উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায়।

এ রকম ঘটনার সর্বসাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হলো সাভারের আমিনবাজার থেকে নবীনগর পর্যন্ত ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান মাঝপথে থেমে যাওয়ার ঘটনা। আমিনবাজার থেকে নবীনগর পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশটির উভয় পাশে প্রচুর অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে, এর ফলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হয়। মহাসড়ক প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে ওঠে। তাই গত সোমবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়; কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত উচ্ছেদ চালানোর পরই অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়; ফলে অনেক অবৈধ স্থাপনা যথাস্থানে বহাল তবিয়তে রয়ে যায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা একটি ডাইং অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানার শ্রমিকদের বাধার মুখে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারেননি। আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা আছে, সেই বিবেচনা থেকে উচ্ছেদ অভিযান ‘স্থগিত’ করা হয়েছে। তার মানে, অভিযান শেষ নয়, আপাতত স্থগিত করা হয়েছে, আইনি জটিলতা দূর হলে আবার উচ্ছেদ শুরু করা হবে।

আমরা বলব, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে ‘আইনি জটিলতা’র অভিজ্ঞতা অত্যন্ত পুরোনো। সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হোক।