পাটকলশ্রমিকদের ওপর হামলা

অবিলম্বে তাঁদের পাওনা মিটিয়ে দিন

গত সোমবার খুলনায় পাটকলশ্রমিকদের যে অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হতে পারত, সেটি শেষ হলো সংঘাতের মধ্য দিয়ে। চাকরি হারানো শ্রমিকেরা পুলিশের লাঠিপেটা ও টিয়ার গ্যাসের শিকার হলেন। কেউ কেউ আটক হয়ে গেলেন কারাগারে। শ্রমিকদের প্রতি পুলিশের এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার খুলনায় পাটকলশ্রমিকদের ১৪ দফা দাবি নিয়ে সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ অবরোধ কর্মসূচি নেয়। খুলনা–যশোর মহাসড়কে শ্রমিকদের আহূত এ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে আধা ঘণ্টা কর্মসূচি পালনের অনুমতি চান তাঁরা। পুলিশ অনুমতিও দেয়। কিন্তু কর্মসূচি শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে তারা শ্রমিকদের লাঠিপেটা করতে থাকে এবং শ্রমিকনেতাদের দীর্ঘ সময় ইস্টার্ন মিলগেটে আটকে রাখে। এতে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশ শটগানের দুটি গুলি ছোড়ে ও সাতটি টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশের দাবি, শ্রমিকেরা তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা এ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের নেতারা বলেছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

যেখানে শ্রমিকেরা পুলিশের অনুমতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন, সেখানে তাঁদের ওপর হামলা চালানোর যুক্তি কী? আন্দোলন করার কারণে শ্রমিকদের আটক করা হলো, অথচ যে পুলিশ সদস্যরা বিনা প্ররোচনায় তাঁদের লাঠিপেটা করলেন, তাঁদের কিছুই হলো না। এখন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করার পরিবর্তে শ্রমিকদের আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে সহকর্মীদের মুক্ত করতে। গত বুধবার নাগরিক পরিষদের নেতাসহ আটক ১৩ শ্রমিককে আদালতে হাজির করা হলেও শুনানি হয়নি। শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয় আগামী রোববার। সেই সময় পর্যন্ত শ্রমিকদের কারাগারেই থাকতে হবে।

বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল আধুনিকীকরণ করে দ্রুত চালু, দুর্নীতি, ভুল নীতি, লুটপাট বন্ধ, শ্রমিকদের বকেয়া টাকা এককালীন পরিশোধ, ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ১৪ দফা দাবিতে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। শ্রমিকদের দাবি অন্যায্য নয়। সেপ্টেম্বরের মধ্যে শ্রমিকদের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করার কথা ছিল। অথচ অক্টোবর মাসের শেষার্ধে এসেও অধিকাংশ শ্রমিক পাওনা মজুরি পাননি। খুলনায় প্লাটিনাম জুট মিলসহ কয়েকটি কারখানার অল্প কিছু শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদের পাওনা পর্যায়ক্রমে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে এত বিলম্ব কেন? সরকারের উচিত শিগগিরই তাঁদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া।