আইন প্রয়োগের সঙ্গে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি

অবাধে পরিযায়ী পাখি নিধন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে। মূলত হাওর-বিল পরিবেষ্টিত অঞ্চলে পাখিগুলো আশ্রয় নেয়। শীত শেষে সেগুলো আবার নিজেদের আবাসে ফিরে যায়। প্রাকৃতিক জলাভূমি কমে যাওয়া এবং দূষণের ফলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা এমনিতেই কমে যাচ্ছে। এর ওপর চোরা শিকারিরা জালের ফাঁদ পেতে কিংবা ধানের সঙ্গে একধরনের কীটনাশক মিশিয়ে ‘বিষটোপ’ তৈরি করে অবাধে পাখি শিকার করছে। সেগুলো চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে। শুধু অতিথি পাখি নয়, বকের মতো দেশীয় প্রজাতির পাখিও শিকার চলছে দেদার।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের কামিনীগঞ্জ বাজার এলাকায় ঝুড়িতে করে মাছের মতো ‘বনবাটান’ বা ‘উড সেন্ডপাইপার’জাতীয় পরিযায়ী পাখি বিক্রি করা হচ্ছিল। হাকালুকি হাওর থেকে পাখিগুলো ফাঁদ পেতে ধরে আনা হয়। কক্সবাজারের উখিয়াতেও ফাঁদ পেতে বক শিকারের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য বন বিভাগের অভিযানে শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ১৭৮টি সাদা বক।

শীত মৌসুমে পাখিশিকারিদের এই অপতৎপরতা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের বিল-হাওরের বড় অংশ প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত। সেখানে বন বিভাগ কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিয়মিত নজরদারি কম। এসব এলাকায় অনেক ক্ষেত্রেই সংঘবদ্ধ শিকারিরা পাখি নিধনে যুক্ত। আবার দারিদ্র্যের কারণে অনেকে পাখি শিকার করেন। এ ছাড়া পাখি যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এ ধরনের সচেতনতা মানুষের মধ্যে নেই বললেই চলে। একশ্রেণির মানুষ চড়া দামে পাখি কেনায় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে।

পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্য প্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে।

পরিযায়ী কিংবা দেশি প্রজাতির পাখি শিকার বন্ধে মাঝেমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকের সাজাও হয়। কিন্তু পাখি নিধন বন্ধ হয় না। এ ক্ষেত্রে শিকারিদের থামাতেই হবে। পাখি নিধন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার সচেতন লোকদের এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। পাখিশিকারি ও ক্রেতা উভয়ের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃজন করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির নিরাপদ আবাস তৈরির বিকল্প নেই