জোর যার মুল্লুক তার চলতে পারে না

অবরুদ্ধ পরিবার

ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের গ্রামসমাজের মানুষ ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে থাকে। বিপদে–আপদে পরস্পরে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। একজন কোনো সমস্যায় পড়লে ১০ জন তার সহায়তায় এগিয়ে আসে। এটাই আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে গ্রামবাসীর মধ্যে সেই সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিতে অনেকটা চিড় ধরেছে। অনেক জায়গায় চলছে ‘জোর যার মুল্লুক তার।’ বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে যাদের খুঁটির জোর বেশি তারাই প্রতিবেশীদের বিপদে ফেলতে নানা রকম ফন্দিফিকির করে থাকে।

উদাহরণ হিসেবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর কানাইদেশী গ্রাম ও মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের বল্লভপুরের দুটি জবরদখলের ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। দেশের দুই প্রান্তের দুটি গ্রামের জবরদখলের চরিত্র প্রায় এক। রাস্তা ও খাসজমি দখল করে প্রতিবেশীদের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কমলগঞ্জের উত্তর কানাইদেশী গ্রামের সাতটি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করত, প্রতিবেশী কছির মিয়া, রশিদ মিয়া ও বশির মিয়া তা বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ আছে। ফলে ওই সাত পরিবার প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে আছে। প্রতিদিন সাত পরিবারের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে পানি-কাদা পার হয়ে চলাচল করতে হয়। স্কুল-মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও তারা নিরুপায়।

উল্লেখ্য, রাস্তাটি কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় নয়, সরকারি জমিতে। তারপরও জবরদখল করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তিনি রাস্তাটি খুলে দিতে নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সুপারিশও করেছেন। নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হকও স্বীকার করেছেন, রাস্তাটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। তারপরও গায়ের জোরে সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর পূর্ব পাড়ার সরকারি রেকর্ডভুক্ত রাস্তাটি কেলু ডাকালার পরিবার দখল করে আছে বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে মামলা–মোকদ্দমাও হয়েছে। জবরদখলকারীরা এতটাই ক্ষমতাবান যে তাঁরা আদালতের রায়ও মানতে চাইছেন না। একাধিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাস্তা উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েও সফল হননি। বরং ক্ষমতাধরদের কারণে তাঁদেরই বদলি হতে হয়েছে।

এভাবে যদি ক্ষমতাধরেরা আইনকানুন ও প্রশাসনকে উপেক্ষা করে জবরদখল চালিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে দুর্বল ও ক্ষমতাহীন মানুষ কীভাবে গ্রামসমাজে বাস করবে। অবিলম্বে কানাইদেশী ও বল্লভপুর গ্রামের দখল হওয়া রাস্তা দুটি পুনরুদ্ধারের দাবি জানাই। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই। জোর যার মুল্লুক তার সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার।