বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে গণ-অভ্যুত্থান ঘটল, তাতে বাংলাদেশ নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করল। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে তা নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ মুনির খসরু
বাংলাদেশের বিজয়ী প্রিয় শিক্ষার্থী,
আপনাদের আন্দোলনের সাম্প্রতিক বিজয়, যা চূড়ান্তভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করেছে, সেটা আমাদের জাতির ইতিহাসের একটা সন্ধিক্ষণ।এই যুগান্তকারী ঘটনাটি একটি পরিবর্তনমুখী উত্থানের প্রতিধ্বনি, যেটি ১৯৯০-এর ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এই বিজয় আমাদের সামষ্টিক উদ্যোগের শক্তি এবং তারুণ্যের হার না-মানা চেতনার কথা মনে করিয়ে দেয়।
আপনাদের আবেগ, সংকল্প এবং ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি আবারও প্রমাণ করেছে, আপনারা পরিবর্তনের জন্য অনিবার্য একটি শক্তি। আপনারা ছাত্র আন্দোলনের সেই গর্বিত ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী, যাঁরা বারবার ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল, চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছিল ১৯৭১ সালের বিশ্বমানচিত্রে নতুন দেশ বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল।
এই যুগান্তকারী অর্জনকে ধরতে গিয়ে অবশ্যই আমাদের জাতীয় চরিত্রের একটি মৌলিক সত্যকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা বাংলাদেশিরা আবেগপ্রবণ, খুব দ্রুত আবেগে জ্বলে উঠি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেসব মহৎ উদ্দেশ্য ও ইতিবাচক আকাঙ্ক্ষাগুলো দীর্ঘ মেয়াদে রূপান্তরের জন্য যে টেকসই প্রচেষ্টা দরকার, অনেক সময় তার ঘাটতি দেখা যায়। এসব উদ্দেশ্য ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আপনারা মূল শক্তি। কেননা সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য আপনারা সংগ্রাম করেছেন। এই সংগ্রামে অসংখ্য নিরীহ তরুণপ্রাণ আত্মাহুতি দিয়েছেন।
২০২৪–এর আন্দোলনের ধরন ১৯৯০-এর আন্দোলনের থেকে ভিন্ন। সে সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল মূল ভূমিকা পালন করেছিল। ব্যক্তিগত বিশ্বাস, রাজনৈতিক মতাদর্শ-নির্বিশেষে আপনারা সব শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক শিবির অথবা মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করার বিরোধিতা করে আপনারা পুরো জাতির বিবেক ও কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। এর মধ্য দিয়ে আপনাদের কাছ থেকে আরও বড় কিছু আশা করার আশা জোগায়। কেননা, সেটা দেশের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা দিয়ে চালিত, শুধু ক্ষুদ্র পক্ষপাতিত্ব ও ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা চালিত নয়।
আপনাদের আন্দোলন ও বিদ্রোহ একটা ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কীভাবে প্রযুক্তির শক্তিকে ব্যবহার করে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, তারই সাক্ষী। ১৯৯০-এর দশকে ছাত্র আন্দোলন দুর্নীতিবাজ ও নীতিহীন সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল। সেই আন্দোলনের সময় যোগাযোগের যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল, এবারের কৌশল ছিল তার চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন। আপনারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে আপনাদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়া এবং আন্দোলন সমন্বয়ের কাজে ব্যবহার করেছেন।
১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা যদি ফিরে তাকাই, তাহলে বাংলাদেশের জন্য অগ্রগতি ও সুযোগ হারানোর মিশ্র পরম্পরা আমরা দেখব। ১৯৯১ সালে আমাদের জিডিপি যেখানে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ছিল, ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ সেখানে ৪৩৭ বিলিয়ন ডলার। এটা আমাদের অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতার প্রমাণ। ১৯৯১ সালে আয়ুষ্কাল ছিল ৫৪; ২০২২ সালে আয়ুষ্কাল দাঁড়ায় ৭৪; যেটা স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমান উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। আমরা নাটকীয়ভাবে আমাদের দারিদ্র্য কমাতে পেরেছি। ১৯৯১ সালে অতি দারিদ্র্যের হার যেখানে ৪২ শতাংশ ছিল, সেখানে ২০২২ সালে আমরা ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে কমিয়ে আনতে পেরেছি। অবকাঠামো খাতে আমরা স্মরণ করার মতো অগ্রগতি দেখেছি, ২০২২ সালে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়ে গেছে।
এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো ভঙ্গুর রয়ে গেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এতটাই ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে যে ২০২৪ সালের বিশ্বগণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৫তম অবস্থানে ছিল। মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হয়েছে এবং সমাজের ভেতরে দুর্নীতি প্লেগের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। সম্ভবত সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টি বেকারত্ব বাড়ার ব্যাপার। ১৯৯১ সালে যেখানে বেকার ছিল ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০২৩ সালে সেটা বেড়ে ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণের ফলে ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদদের একটা অভিজাত গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে। এর কারণ হলো নামমাত্র প্রকৃত ব্যবসা নিয়ে দ্রুত বড়লোক হওয়ার সেরা ব্যবসা হয়ে উঠেছিল রাজনীতি। কেননা তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। খুব অন্যায়ভাবে আপনাদের ব্যবসা ও রাজনীতির একটা ভালো মডেল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা দেখতে পেলাম, সেই দূষিত সংস্কৃতির সুবিধাভোগী গোষ্ঠী যাঁরা দেশে ও বিদেশে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন, তাঁরা দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, বিমানবন্দর ও সীমান্তে তাঁদের আটকে দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতি ও ব্যবসা কোনো জায়গাতেই আপনাদের অনুপ্রাণিত করার মতো ভালো দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করতে খুব কমই সফল হয়েছি। সুতরাং ব্যবসা ও রাজনীতি—দুই জায়গাতেই আপনারা এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যেটা আমাদের লজ্জা থেকে বের হয়ে আসতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আপনাদের অর্জন ও সফলতা এবং একই সঙ্গে আপনাদের চরিত্রের দৃঢ়তা ও সংহতির জন্য গর্ব বোধ করতে সহায়তা করে।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আপনাদের ভূমিকা প্রতিবাদের এ মুহূর্ত ছাপিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত। আপনারা আগামী দিনের বাংলাদেশের স্থপতি। আমি যেটাকে বলি ‘রূপকল্প ২০৫০’। আর আপনাদের দায়িত্ব কেবল শুরু হলো। নীতিবিষয়ক আলোচনায় আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত হোন, নিজেদের পছন্দের জায়গাগুলোয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করুন। নেতাদের শুধু আজকের জন্য নয়, আগামী বছরগুলোর জন্যও জবাবদিহির মধ্যে রাখুন। আপনাদের কর্মকাণ্ড যেন শুধু আবেগ দিয়ে পরিচালিত না হয়। আমরা যে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে চাই, সেটা যেন পরিষ্কার একটা রূপকল্প দিয়ে পরিচালিত হয়। রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ব্যবসা, প্রযুক্তি, শিল্প, সংস্কৃতি অথবা খেলাধুলা—সব ক্ষেত্রেই আমাদের জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো দক্ষতা অর্জন করুন।
আমি আপনাদের এমন একটা বাংলাদেশের কথা কল্পনা করতে বলব যে বাংলাদেশ তার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং সাহসের সঙ্গে ভবিষ্যতের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটা দেশ নির্মাণ করুন যে দেশটি বিশ্বের সামনে গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বাতিঘর যেন হয়। এই রূপকল্পে বাংলাদেশকে একটি পরিপূর্ণ উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসেবে নির্মাণ করার বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তৈরি পোশাক খাতের ওপর একক নির্ভরতা কাটিয়ে অর্থনীতিকে বহুমুখী করার পথ থাকতে হবে। প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করে এবং বিভিন্ন শিল্পে নতুন নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে হবে। এই রূপকল্পে প্রযুক্তিকে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রাখতে হবে। আপনাদের প্রতিবাদ এরই মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল টুলসগুলোর সুবিধাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। এখন চিন্তা করুন, সেই একই প্রযুক্তিকে কীভাবে সরকার পরিচালনা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির ক্ষেত্রে, একই সঙ্গে উদ্যোগ ও উদ্যোক্তারা ব্যবহার করতে পারে।
‘রূপকল্প ২০৫০’ উপলব্ধি করতে হলে ১৯৯১ সালের পর যেসব সমস্যা আমাদের সামনে এসেছিল, অবশ্যই সেগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে। রাজনৈতিক মেরুকরণ, দুর্বল প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাপক দুর্নীতি আমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সামনে এগোতে হলে আমাদের বিভিন্ন খাতে সমন্বিত সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঠেকাতে আমাদের অবশ্যই সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। ডিজিটাল অবকাঠামোয় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সেটা দরকার নয়; শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও দরকার। দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপগুলো শক্তিশালী করা অপরিহার্য। সেখানে যেন একটি কঠোর জবাবদিহি ব্যবস্থা থাকে।
এমন একটা স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করুন, যেখানে আইনের শাসন নিশ্চিত করা যায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শ যা-ই হোক না কেন, সব নাগরিকের জন্য সমান ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়। একটি স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল কেন্দ্র হওয়া উচিত। এর সঙ্গে সরকারের সব স্তরে জবাবদিহির সংস্কৃতি বিকাশে শক্তিশালী ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। সামাজিক সমতা বিষয়টি স্লোগানের চেয়ে বড় কিছু। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য যাতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা যায় এবং সব ধরনের বৈষম্য ঘোচাতে অবশ্যই বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনারা মেধাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে লড়াই করেছেন, তার একটা নীতি হলো, সবার জন্য সমান ও ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করা। এত ত্যাগ আর আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে অর্জন, তা বজায় রাখা ও সুরক্ষার জন্য সব সময় সজাগ থাকুন।
বিশ্বে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির যে বিকাশ ঘটছে, সেই চ্যালেঞ্জ মেটানোর জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো দরকার। ১৯৯২ সালে দেশে প্রথম বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পর আমরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিস্তার লক্ষ্য করেছি। দেশজুড়ে এখন ১০০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দ্রুত বিকাশ নিশ্চিতভাবে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার বিপুল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যাহোক, পরিমাণগত এই বৃদ্ধি শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের মানের বিবেচনায় শিক্ষকদের মান দ্রুত নিম্নগামী হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যাঁরা পাস করে বের হচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই দক্ষতা ও জ্ঞানে আধুনিক চাকরি বাজারের উপযোগী নন। ২০২৪-২৫ সালে বৈশ্বিক একাডেমিক সূচকে বাংলাদেশের মাত্র পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ করার মতো স্থানে ছিল। বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশের ২ হাজার ২৫০টি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সূচকটি করা হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিসরে উচ্চশিক্ষার প্রতিযোগিতায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দুর্বল অবস্থানে রয়েছে এবং উচ্চশিক্ষা খাতে উন্নতি করা প্রয়োজন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া তরুণদের জ্ঞান ও দক্ষতার সঙ্গে শিল্প খাতের চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুক্তিবাদী জ্ঞান, সমস্যা সমাধান এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের পাঠ্যক্রম অবশ্যই গতিশীল হতে হবে, যাতে করে অব্যাহতভাবে বিশ্বের সেরা অনুশীলনগুলো আত্মস্থ করা যায়। প্রযুক্তি এখন মানুষের বৌদ্ধিক জগতের ওপর অব্যাহতভাবে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে এবং একেকটা প্রযুক্তির গড় স্থায়িত্বকাল মাত্র তিন বছর। এ রকম বাস্তবতায় ভবিষ্যতের জন্য আমাদের দক্ষ লোকবল তৈরি করতে হবে। নতুন নতুন উদ্ভাবন, উদ্যোগ এবং তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে ব্যবহারিক দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারব এবং তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের ধারাটি উল্টে দিতে পারব।
স্বাস্থ্য খাতে পরিবার পরিকল্পনা, টিকাদান এবং মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার কমিয়ে আনতে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি হলেও ২০২৩ সালে স্বাস্থ্যসেবা সূচকে ৯৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৪তম স্থানে ছিল। এর অর্থ হলো স্বাস্থ্য খাতের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য এবং পদ্ধতিগত সমস্যা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার জন্য মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য খাত সংস্কার এবং এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
আপনারা এখন যে সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে অতীতে আপনাদের অনেক পূর্বসূরি যে ভুল করেছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। পরিবর্তনের এই উচ্ছ্বাস জাতি গঠনের শ্রমসাধ্য কাজের সঙ্গে মেলাতে হবে। আসুন, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে এমন একটা জায়গায় দাঁড় করায় যে দেশটি তারুণ্যের শক্তি ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে একটি দেশ কোথায় যেতে পারে, তার মডেল হয়। এমন একটা দেশ তৈরি করুন, যেখানে গণতন্ত্র বিকশিত হয়, যেখানে অর্থনীতি সবার জন্য সুযোগ তৈরি করে, যেখানে শিক্ষা সাফল্যের দরজা খুলে দেয় এবং যেখানে প্রত্যেক নাগরিক মর্যাদা ও আশা নিয়ে বাঁচতে পারেন।
অধ্যাপক সৈয়দ মুনির খসরু আন্তর্জাতিক থিঙ্কট্যাংক দ্য ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (আইপিএজি) চেয়ারম্যান