আধুনিক পররাষ্ট্রনীতির কলিজার নাম অর্থনৈতিক কূটনীতি। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমলা ও পেশাদার কূটনীতিকেরা যতটা বুঝতে পারেন, সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক কর্তারা ততটাই কম অনুধাবন করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে এসে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জকে কয়েকজন মন্ত্রী অনেকটা ‘যুদ্ধের’ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। সরকারের প্রিয়তা অর্জনে উন্মুখ কিছু মিডিয়া বা টিভি চ্যানেল ‘মার্কিনরা এই দেউলিয়া হয়ে গেল আর কি’ কিংবা ‘পুতিনের ভয়ে আমেরিকা কম্পমান’—এ জাতীয় প্রচারণায় যেন মার্কিনবিরোধী সংগ্রামে নেমে পড়েছে।
এগুলো অনলাইন পোর্টালে দেখার পর ভয়ে ভয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই, কোনো মার্কিন আমাকে বাংলাদেশি জেনে আক্রমণ করতে এল কি না। কিংবা মার্কিন সরকার দেউলিয়া হয়ে গেলে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সপরিবার না খেয়ে মরতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে কিছু লিখতে গেলে কোনো মার্কিন সংস্থার ‘এজেন্ট’ হয়ে যাই কি না, সে ভয়েও লিখতে মন চায় না। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিচার হচ্ছে আদালতে। তখন বাংলাদেশের এক টিভি চ্যানেল থেকে জানলাম, ‘আমেরিকায় রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে।’ যেহেতু দেউলিয়া হইনি, রক্তগঙ্গাও বয়ে যায়নি, তাই সাহস করলাম কিছু লিখব।
আধুনিক পররাষ্ট্রনীতির কলিজার নাম অর্থনৈতিক কূটনীতি। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমলা ও পেশাদার কূটনীতিকেরা যতটা বুঝতে পারেন, সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক কর্তারা ততটাই কম অনুধাবন করেন। তাই তাঁরা অতিবাচালতায় বিভোর হয়ে বহিঃসম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেন।
পেশাদার কূটনীতিকদের কিছু করার থাকে না। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্ত্রীরা উচ্চবাক হলে সমস্যা নেই। রাজনীতির মাঠ গরম রাখতে হবে। মিডিয়ায় বেশি ফোকাস পেলে কোনো মন্ত্রী অতিকথনের রোগ থেকে মাঝেমধ্যে বিচ্যুতি কথনেও লিপ্ত হবেন—এটাও মানুষ মেনেই নেয়। কিন্তু পররাষ্ট্র দপ্তর সামলাতে হয় অল্প কথন দিয়ে—পেশাদার কূটনীতিকদের তৈরি করা লিখিত বক্তব্য দিয়ে।
বঙ্গবন্ধুও এই পেশাদারির সম্মান রাখতেন। পেশাদার কূটনীতিকদের সঙ্গে সব ঠিক করে নিতেন। তাই তিনি একজন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নেতা হয়েও পশ্চিমা দুনিয়া থেকে শান্তিপদক পেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক মোড়লত্ব বা আঞ্চলিক মাতব্বরি বজায় রাখার স্বার্থে সামরিক ও কৌশলগত বিষয়গুলো ঠিক করা। তিনটি দেশই তাদের প্রভাবের সাম্রাজ্য বিস্তারে ব্যস্ত। যদিও এই বিস্তারের কাজে কারও কৌশল আর্থিক ও জ্ঞানগত প্রভাব, কারওটা মধ্যযুগীয় মানে সরাসরি জমি দখল।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ। নালিতাবাড়ীর গ্রামে দেখেছি, দুই মোড়লের লড়াই হলে বুদ্ধিমান মাস্টার বা কৃষক কারও পক্ষ নিয়ে ওকালতি করেন না। চুপচাপ থেকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নেন।
মাস্টার দুই মোড়লের মেয়েকেই টিউশনি পড়ান, কৃষক দুজনের জমিই বর্গাচাষ করেন। কী দরকার ভেজালে গিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ সম্প্রতি পুতিনের বিপজ্জনক বিদ্যুৎ ও চীনা ঋণের অজস্র বিনির্মাণ প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করার অতি উৎসাহে লিপ্ত। তাই মার্কিন সম্পর্ক আরও তিক্ত হলো। এর প্রয়োজন ছিল না।
রাশিয়ান তেলের এক বিশাল ভোক্তা হয়েও ভারতের মোদি সরকার পুতিন-প্রীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েনি; বরং প্রধানমন্ত্রী মোদি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ভাষণ দিতে গিয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউক্রেন একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে তার সীমানাগত সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার অধিকার রাখে।
এটি সদা ক্ষুব্ধ পুতিনের রক্তচাপ আরও বাড়াবে কি না, তা বিবেচনায় আনেননি; বরং জাতিসংঘের সনদ মান্যতা ও গোঁয়ার প্রতিবেশী কর্তৃক আক্রান্ত না হওয়ার অধিকার যে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেই বার্তা প্রধানমন্ত্রী মোদি পরিষ্কার করে দিয়ে গেছেন। ইউক্রেন আক্রমণকে ঘুরিয়ে–পেঁচিয়ে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ’ বলে চালিয়ে দেননি। জটিল বিষয়ে মতামত যদি দিতেই হয়, তাহলে নিজস্ব সংবিধান ও জাতিসংঘের সনদের আশ্রয় নেওয়াই চৌকস কূটনীতির মূলকথা।
একাত্তর বাঙালির চেতনার নাম। কিন্তু সর্বত্র একে টেনে আনা বিচক্ষণতা নয়। সিঙ্গাপুরে এক বিনিয়োগ সম্মেলনে আমাদের একজন মন্ত্রী ভাষণে একাত্তরের যুদ্ধ নিয়ে কথা বললেন অনেকক্ষণ।
পাশে বসা সিঙ্গাপুরের একজন ব্যবসায়ী নেতা আমাকে বললেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে এসব কথার দরকার ছিল কি? আমি বললাম, একাত্তর আমাদের স্বাধীনতার বছর। তিনি উত্তরে বললেন, আমরা তো লি কুয়ান থেকে শুরু করি না। এখানে বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে কথা বলাই সমীচীন। একাত্তরে রাশিয়া বা আমেরিকার পক্ষ-বিপক্ষ নেওয়ার ইতিহাসে ভর করে আজকের দুনিয়ায় সম্পর্ক নির্ধারণ অপ্রাসঙ্গিক।
সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। যাঁরা ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একাত্তরের লিওনিদ ব্রেজনেভকে খুঁজতে যাচ্ছেন, তাঁদের চশমার ফ্রেম বদলাতে হবে। যাঁরা জো বাইডেনের মধ্যে রিচার্ড নিক্সনের ছায়া অনুসন্ধান করছেন, তাঁদের দৃষ্টিশক্তিই প্রশ্নসাপেক্ষ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘন ঘন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে মানেই সম্পর্ক তিক্ত, যা অপ্রয়োজনীয় ও বাংলাদেশের স্বার্থনাশক। সমাজ শিক্ষিত হলে যেমন অনেক আইন অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়, নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে মার্কিন ভিসা নীতিও আমাদের বিচলিত করবে না। আপাতত এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বা বাচালতা—কোনোটিরই প্রয়োজন নেই।
একাত্তরের সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি পরাশক্তির নাম, যা সারা বিশ্বে একটি মুক্তিকামী আলাদা পৃথিবী সৃষ্টি করতে পেরেছিল। বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক আদর্শের একটি সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। ভারতের ইন্দিরা গান্ধীও সে আদর্শে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। সেই সমীকরণেই সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
আজকের রাশিয়া তো ঠিক তার উল্টো আদর্শের দেশ। পুতিন স্বহস্তে তেল ও গ্যাসের মোগল এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠী গড়ে নিজেই এর সম্রাট বা নব্য ‘জার’। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন ও ভিন্নমতের মানুষদের গুম করে ফেলায় তাঁর ‘খ্যাতি’ আছে। আজ একাত্তর ঘটলে পুতিন নিঃসন্দেহে ধনতান্ত্রিক ও সামরিক তেজ পুষ্ট পাকিস্তানকেই সমর্থন দিতেন।
জেনারেল ইয়াহিয়ার বাহিনী যেভাবে নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তা থেকে ইউক্রেনবাসীর ওপর পুতিনের ঝাঁপিয়ে পড়া তো আলাদা কিছু নয়। সেটাকে জাতিসংঘে নিন্দা জানাতে যদি ‘শরম’ লাগে, তাহলে কাল যদি ভারত ভুটানকে দখল করতে নামে, তখন বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে?
ছাত্রাবস্থায় বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনের এক কোনে বসে খাচ্ছি। একজন বয়স্ক ডাইনিং কর্মচারী এসে জানতে চাইলেন আমার দেশ কোথায়। বাংলাদেশের নাম শুনেই তিনি আমাকে উচ্ছ্বাসে প্রায় জড়িয়ে ধরলেন। তিনি রবি শংকর ও জর্জ হ্যারিসনের ‘বিটলস’ দলের নেতৃত্বে করা বিখ্যাত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ যোগ দিয়েছিলেন।
তিনি চাঁদাও দিয়েছেন। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের নেতা ও অর্থনীতিবিদেরা আমেরিকায় জনমত গড়েছেন, শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। রিপাবলিকানরা তখন ক্ষমতায় থাকার পরও অনেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান নিক্সনের পাকিস্তানপ্রীতি পছন্দ করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসম্যানরা শুধু কণ্ঠভোট দিয়ে জীবন পার করেন না। আপন বিচারবুদ্ধিতে মত প্রকাশ করেন। সে মত দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেদিকেই যাক না কেন। ডেমোক্র্যাট সদস্যরা পাকিস্তানের গণহত্যার বিরোধিতা করে মার্কিন মুলুকে বিবেক জাগরিত করেন।
জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব আনেন এবং সরকারকে ভারতে অবস্থিত শরণার্থীদের জন্য সাহায্য পাঠাতে বাধ্য করেন। হঠাৎ বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা আসায় এসব ইতিহাস যেন রাতারাতি পচে গেল। উল্টে গেল সুর। এই সুর আবার বড় বেসুরো হয়ে পড়ল। কারণ, সরকারি দলের মধ্যেই এই ভিসা নীতির কখনো উপকারিতা, কখনো যন্ত্রণা নিয়ে নানা রাগিণীর বিচিত্র সংগীত বেজে উঠেছে।
একেকজন মন্ত্রীর একেক ঘরানার তালিম। এখানে কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দেওয়া হয়নি। তার জন্য দরকার ছিল পেশাদার কূটনীতিকদের নিয়ে মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে অভ্যন্তরীণ ‘ব্রেইনস্টর্মিং’ বা সিদ্ধান্তসভায় সম্পূর্ণ একরকম বিবৃতি প্রকাশ করা। মার্কিন ভিসা নীতিতে একাত্তরকে টেনে আনা ঠিক নয়। একাত্তরে চীনের ভূমিকাও ভালো ছিল না। তারা স্বাধীনতাযুদ্ধকে কী নামে আখ্যায়িত করেছিল, সেটা এখানে লিখতেও আমার লজ্জা হচ্ছে। চীনের ব্যাপারে মন্ত্রীরা সে জন্যই কি চুপচাপ?
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে বিল ক্লিনটনের নির্বাচনী কৌশলবিদ জেমস কারভিলের সেই বিখ্যাত উক্তির আশ্রয় নিতে হয়, ‘ইট ইস দ্য ইকোনমি, স্টুপিড।’ মার্কিন নির্বাচন এলেই এটা হাওয়ায় ভাসে এবং অর্থনীতিই নির্বাচনে জয়–পরাজয়ের মূল নির্ধারক হিসেবে আবির্ভূত হয়। অর্থনীতির বিচারে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তাই অর্থনৈতিক কূটনীতির সব বিদ্যাবুদ্ধি খাঁটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বুদ্ধিদীপ্ত কূটনীতির কাজ।
লেনদেনের ভারসাম্যের যে স্থিতিপত্র, তার দিকে তাকালে এর সত্যতা পাওয়া যায় কঠিনভাবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃক্ষের গোড়ায় আছে তিনটি শিকড়—রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও পুঁজি বা আর্থিক হিসাব। রপ্তানি আয় আছে বলেই আমরা আমদানি করতে পারি।
রেমিট্যান্স আছে বলেই আমরা বাণিজ্য ও সেবা ঘাটতি মোকাবিলা করে চলতি হিসাবে ঘাটতি অনেকটা কমাতে পারি। যেটুকু পারি না, তা মেটাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসে আর্থিক হিসাবে।
বিদেশি বিনিয়োগ চলতি হিসাবের ঘাটতির চেয়ে বেশি হলে লেনদেনের ভারসাম্য নিশ্চিত করে বাড়তি মুদ্রা চলে যায় বিদেশি মুদ্রার মজুত ভান্ডারে। রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ—এই তিন খাতেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে চ্যাম্পিয়ন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। রাশিয়া এর ধারেকাছে নেই। নেই চীনও। ভারতও নেই।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স দেয়—তার চেয়েও বড় কথা, এই রেমিট্যান্স স্থায়ী ও চিরমেয়াদি। তেলের দাম কমে গেলে বা তেলের মজুত শেষ হলে কিংবা বড় রোগবালাই দেখা দিলেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আমাদের শ্রমশক্তিকে গুঁতিয়ে বিদায় করবে।
যুক্তরাষ্ট্র তা করতে পারবে না; কারণ, সেখানে গুণগত প্রবাসায়ন হয়েছে। মুদ্রা প্রেরকেরা মার্কিন বাসিন্দা বা নাগরিক। প্রতিবছর ১০ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১০ বছরের মাথায় তাঁরা আরও আট গুণ আত্মীয়স্বজন নিয়ে যান সেখানে। লটারিতে যাওয়া মানুষও প্রচুর স্বজন দেশ থেকে নিয়ে গিয়েছেন। এ মিছিল চলছেই। প্রায় ১০ লাখ বাঙালি সেখানে বাস করেন।
শুধু রেমিট্যান্স নয়, স্বদেশকে তাঁরা সমৃদ্ধ করেন জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা ও শিক্ষাগত সুবিধা দিয়ে, যা এককথায় অমূল্য। এই উপকার চিরজীবী ও ক্রমবর্ধমান। এর একাংশ সহায়তাও আমরা চীন বা রাশিয়া থেকে পাব না। কারণ, ওরা আমাদের পোশাক বা দ্রব্যও সেভাবে কিনবে না। কিংবা স্থায়ী অভিবাসন দিয়ে জীবনেও সাহায্য করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তেতো করার আগে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত ছিল। এখনো প্রতিকারের পথ হচ্ছে কূটনৈতিক অর্থনীতি বাড়িয়ে সম্পর্ক সুদৃঢ় করা।
মাঝেমধ্যেই ‘সেন্ট মার্টিন নিয়ে গেল’, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে উন্নত’, ‘নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইরান ও কিউবাকে কিছু করা যায়নি’, ‘ওরা বাংলাদেশের উন্নতিকে হিংসা করে’—এ জাতীয় ভিত্তিহীন বাচালতা পরিহার করতে হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘন ঘন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে মানেই সম্পর্ক তিক্ত, যা অপ্রয়োজনীয় ও বাংলাদেশের স্বার্থনাশক। সমাজ শিক্ষিত হলে যেমন অনেক আইন অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়, নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে মার্কিন ভিসা নীতিও আমাদের বিচলিত করবে না। আপাতত এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বা বাচালতা—কোনোটিরই প্রয়োজন নেই।
ড. বিরূপাক্ষ পাল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ডে অর্থনীতির অধ্যাপক