ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিশ্লেষণ

ট্রাম্প ২.০: বিশ্বব্যবস্থায় ‘নিয়মতান্ত্রিকতা’র বিভ্রম কি ছুড়ে ফেলা হবে

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে চলতি মাসেই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাকি বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ভূমিকা বিশ্বব্যবস্থার বর্তমান রীতিনীতি পাল্টে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখছেন অনেকে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কী ধরনের পরিবর্তন হতে পারে, তা নিয়ে লিখেছেন রিচার্ড ফক

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের লেনদেনমুখী রাজনীতি অভিবাসীদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনবে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের দমননীতির প্রতি সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

ট্রাম্পের স্বভাব চঞ্চল। পরিস্থিতিও অপরিবর্তিত। তবু তিনি প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে সমঝোতার রাজনীতিতে হঠাৎ কেন এলেন?

এই পরিবর্তনেরও কোনো ব্যাখ্যা ট্রাম্প দেননি। এমন অবস্থার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে, তা অনুমান করতে যাওয়া বোকামি হবে।

ট্রাম্পের কথাবার্তায় তাঁর মতাদর্শ কট্টর বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আর এবার তিনি শক্তিশালী নির্বাচনী ম্যান্ডেট নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবেন। কংগ্রেসের উভয় কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে অতিরক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমর্থন।

এই সব মিলে স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় ট্রাম্পের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে আছে। তবে সামনের পথটি অনেক বন্ধুর হবে। কিছু বড় চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা সামনে অপেক্ষা করছে। এসব বাধা ট্রাম্পের প্রশাসনের লক্ষ্য ও ক্ষমতাকে কঠিন করে তুলতে পারে।

তাঁর প্রশাসনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা কঠিন। তবে তাঁর পূর্ববর্তী শাসনকালে যে ধরনের বিভেদ ও উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল, এবার সেগুলো আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মার্কিন রাজনীতিতে এই নতুন অধ্যায় শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বিশ্বজুড়েই প্রভাব ফেলতে পারে।

ট্রাম্প এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসে যাননি। তবে তাঁর প্রেসিডেন্সির কিছু দিক ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এটি প্রায় নিশ্চিত যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী লাখ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসীদর জীবন প্রথম দিন থেকেই দুর্বিষহ করে তুলবেন।

নিউ অর্লিয়েন্সে সাধারণ মানুষের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনার জন্য ট্রাম্প দুর্বল সীমান্ত নিরাপত্তাকে দায়ী করেছেন। এটা আদৌ ভালো কোনো ইঙ্গিত দেয় না। এ ঘটনা আমেরিকান সেনাবাহিনীর একজন সাবেক সদস্যের কাজ ছিল, যিনি সম্প্রতি ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন।

অভিবাসননীতির প্রতি ট্রাম্পের যে উগ্র মনোভাব, বিশেষ করে আশ্রয়প্রার্থী ও যথাযথ নথিপত্র ছাড়া সীমান্ত অতিক্রমকারী অভিবাসীদের প্রতি তাঁর বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি, তা বাস্তবায়িত হওয়ার পথে রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি যাঁকে সীমান্তের কোতোয়াল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, তিনি তাঁর উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে জানিয়েছেন—পরিবারগুলোর পুরোপুরি নির্বাসন কার্যকর করতে হবে। এমনকি তাদের মধ্যে ‘ন্যাচারালাইজড’ নাগরিক থাকলেও ছাড় দেওয়া যাবে না।

এই নীতির বাস্তবায়ন অমানবিক ও নির্মম হতে পারে। ট্রাম্প কিছু সময়ের জন্য এই নির্মম কাজ চালিয়ে যাবেন বলেই মনে হয়। কিন্তু শ্রমবাজারের অর্থনৈতিক বাস্তবতা দ্রুত এ পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে শ্রমিকের অভাবে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এটি মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়াবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের এই নীতিগুলো দীর্ঘ মেয়াদে কতটা কার্যকর বা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অভিবাসন প্রশ্নে তাঁর প্রশাসনের নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক ও অর্থনৈতিক দুই ক্ষেত্রেই গভীর প্রভাব ফেলবে।

উচ্চপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের দক্ষ কর্মীদের প্রতি বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কারণ, একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তারা অপরিহার্য। এ কথা ট্রাম্পের প্রধান উপদেষ্টা ইলন মাস্ক বারবার তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

এই উদ্বেগ আরও প্রকট হবে, যদি ট্রাম্প তাঁর ঘোষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এই পরিকল্পনায় কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে চীনা পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের কথাও।

এ ধরনের নীতি পারস্পরিক ধ্বংসাত্মক বাণিজ্যযুদ্ধের সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে উভয় দেশের ওপর।

অতএব এ খাতে দক্ষ কর্মী সৃষ্টির জন্য বিনিয়োগ ও বাণিজ্যনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে যে শুধু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে তা-ই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও এর ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন

বৈদেশিক নীতিতে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির ভবিষ্যৎ কিছুটা মিশ্র ও অনিশ্চিত। তবে সন্দেহ নেই যে তা হবে বৈশ্বিকভাবে বিপজ্জনক। শুরুর দিকে ট্রাম্প সম্ভবত নিজেকে একজন শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে জাহির করতে চান, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে।

এই সংঘাত এমন এক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ, যা তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এবার দেখা যাবে, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করবেন কি না? আর তা করলে আটলান্টিক জোটকে পাশ কাটাতে হবে। এ জোটের সঙ্গে সদ্ভাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার বৈদেশিক নীতির একটি মূল অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সির সময় যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক সমঝোতা করা সুযোগটিকে মারাত্মকভাবে অবহেলা করা হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন রাশিয়াকে ভূরাজনৈতিকভাবে পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। ফলে ইউক্রেন ও তার জনগণ বিপর্যয়ের মুখেও পড়েছে।

ট্রাম্প যদি এই দিক পরিবর্তন করে ফেলেন, তাহলে ন্যাটো অনুরাগীরা ইউরোপীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাগুলোর পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন। আমেরিকার স্টেট পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হবে। অথবা এমনও হতে পারে যে রাশিয়াকে বাইরে আর ন্যাটোকে ভেতরে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখতে তাদের অপ্রত্যাশিত রকম শক্তির ব্যবহার করতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্য

মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে নীতিগত অগ্রাধিকার নিয়ে কাহিনি আলাদা। ট্রাম্প যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা থেকে বোঝা যায়, তিনি বাইডেনের ইসরায়েলের প্রতি শর্তহীন সমর্থনকেও ছাড়িয়ে যেতে চান। গাজায় গণহত্যা, ভূমি দখল, জাতিগত নিধন অভিযান এবং দখল করা পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের সম্প্রসারণ এবং বেআইনি সহিংসতা চলতে থাকলেও ট্রাম্প এই সমর্থন কমাবেন না।

ট্রাম্প ইচ্ছামতো রাজনৈতিক নিয়োগ এবং অসংযত মন্তব্যের মাধ্যমে দৃশ্যত গাজায় ঝামেলা শেষ করতে চান। আর এই ঝামেলা শেষ করা মানে কেবল ফিলিস্তিনিদের মুছে ফেলা। কারণ, এই ফিলিস্তিনিরা ‘নদী থেকে সাগর’ পর্যন্ত বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

এ ছাড়া এমনটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে ট্রাম্প আরও দৃঢ়ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সম্ভবত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা আর তেহরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্যও সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেবেন তিনি।

এই নীতিগুলো বাস্তবায়িত হয়ে গেলে এর জন্য অনেক ঝুঁকি পোহাতে হবে। এর পরিণতি হতে পারে বিপজ্জনক। অনেক ঝামেলার মধ্যে অন্যতম হতে পারে বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা এবং দুনিয়াজুড়ে আমেরিকাবিরোধী অনুভূতির জেগে ওঠা।

এসবের কারণে ইসরায়েল সামনের দিনে একঘরে ব্রাত্য রাষ্ট্র হয়ে যাবে, দুর্বল হয়ে যাবে। আরব বিশ্বের জনগণ তাদের পশ্চিমমুখী দমনমূলক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার আন্দোলনে তা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশ্বের সমস্যার প্রতি অবজ্ঞা

অবশেষে ট্রাম্প ও তাঁর দল আন্তর্জাতিকতাবিরোধী মনোভাবের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প অতিরিক্ত জাতীয়তাবাদী এবং দেওয়া-নেওয়ার বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে কট্টর সমর্থন দেখিয়ে আসছেন।

ট্রাম্প বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোকে তাচ্ছিল্য করেন। দুনিয়াব্যাপী প্রকট হওয়া সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতি তাঁর বিশেষ কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়েও তিনি মাথা ঘামাতে আগ্রহী নন।

জাতিসংঘ যদি আমেরিকার কৌশলগত অগ্রাধিকারকে সমর্থন করে, কেবল তাহলেই তা আমেরিকার কাছে পাত্তা পাবে। কিন্তু জাতিসংঘ যদি সাহস করে ট্রাম্পের কোনো পদক্ষেপকে নিন্দা বা বিরোধিতা করে, তাহলে ট্রাম্প অবশ্যই হুমকি দেবেন। এরপর আমেরিকার তহবিল প্রত্যাহার করে দেবেন। এমনকি জাতিসংঘ থেকে আমেরিকার অংশগ্রহণ প্রত্যাহার করা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

যুক্তরাষ্ট্রকে কোনোভাবে বাধা দিলে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক আইনের নিয়ন্ত্রণমূলক ভূমিকার প্রতি তাচ্ছিল্য দেখান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ‘নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা’ নামের কপটতাকে বিদায় বলার সময় এসে গেছে। এই ব্যবস্থা মূলত মার্কিন নেতৃত্বাধীন ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থারই এক প্রতিশব্দ।

ট্রাম্প সম্ভবত অজান্তেই মানবজাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক আইনের বাধাগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা মোটেই তোয়াক্কা করে না। কিন্তু তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সেসব আইন মেনে চলতে হয়।

এই সত্য একটা বিভ্রম দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড হয়তো এই বাস্তবতা উন্মোচন করবে। কার্যত ট্রাম্পের এই মনোভাব বাইডেনের ভণ্ডামির চেয়ে অনেক ভালো।

ট্রাম্প প্রশাসন শেষ পর্যন্ত দুটি পথের মধ্যে একটি বেছে নিতে পারে। এক দিকে আছে আলাদা হয়ে থাকা। আরেক দিকে আছে আধিপত্য বিস্তার করা, যাকে বলা যায়—‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’। যদি আলাদা থাকার পথ বেছে নেওয়া হয়, তাহলে সম্ভবত শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী একক প্রভাবশালী বিশ্বের জায়গায় দ্রুতই এক জটিল বহুমুখী শক্তির যুগ শুরু হবে।

এভাবে ট্রাম্পের প্রশাসন হয়তো একাধিক মাত্রায় প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কাঠামো বদলে যাবে গভীরভাবে। আগের মতো এক মেরু বিশ্বধারণা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

ট্রাম্পের আমেরিকা যদি ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদী’ মডেল গ্রহণ করে, তাহলে তা হবে সম্ভবত ট্রাম্পপন্থী অতিজাতীয়তাবাদী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী আমেরিকান ‘ডিপ স্টেটের’ মধ্যে একটি আপসের ফলস্বরূপ। তখন বিভিন্ন বিরোধী কেন্দ্রগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। এর সঙ্গে শীতল যুদ্ধের একটা মিল থাকতে পারে। তবে পার্থক্যও থাকবে; যেহেতু এখন ভূরাজনৈতিক বিরোধিতার এজেন্ডাগুলোও বদলে গেছে।

এই পরিবর্তনের ফলে সংঘাতের এখন যে কোনো একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্র থাকবে না, তা প্রায় নিশ্চিত। এই নতুন যুগে ইউরোপ আর আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ থাকবে না, বরং বহুলাংশে উপেক্ষিত হবে। ইউরোপ বিংশ শতাব্দীর বিশ্বযুদ্ধগুলোর কেন্দ্রীয় অবস্থানে ছিল। এখন আর সেই অবস্থা নেই।

  • রিচার্ড ফক প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক

    মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন