আর কী বাকি ছিল? এখন তো ইমরান খানের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী খাইবার পাখতুনখাওয়ার আলী আমিন গান্ডাপুর এক গুলির বিনিময়ে ১০ গুলি চালানোর ধমকি দিয়েছেন। এর ফল খুব সুবিধার কিছু হবে না। খাইবার অঞ্চল গোত্রভিত্তিক সহিংসতার জন্য বিখ্যাত। এর ফলে পুরো খাইবার অঞ্চল এখন এক গোত্রভিত্তিক লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়ে যাবে বলে মনে করার কারণ আছে। অতীত তো তাই বলে। আর তা হলে পুরো প্রদেশে তা ছড়াতে সময় লাগবে না।
এর জন্য ইমরান খানের পক্ষ থেকে আলী আমিন শাবাশ পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে আলী আমিন প্রতিদিন আরও বড় সংঘাতের দিকে এগোচ্ছেন। এর পরিণতি যে কী হবে, তা যে কেউ আন্দাজ করতে পারেন। যে গুলি করবে, সে পাল্টা গুলি খাবে—এই ধমকি পাঠান গোত্রের ইংরেজ আমলের কথা বলে মনে হয়। এই সময় এই কালে এ কোন ধরনের রাজনীতির বার্তা?
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ৯ মের পর ইমরান খান আর তাঁর তেহরিক–ই–ইনসাফ কোনো শিক্ষা নেয়নি। এরপর যেসব সমস্যা আর নির্যাতন তাঁদের ওপর নেমে এসেছে, তা থেকে দলের নেতারা কি কম শিক্ষা নেবেন না?
দেশের ভেতরে গৃহযুদ্ধ লাগানোর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে দেশের সব প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়বে। দুর্বল হবে শাসনব্যবস্থা। এতে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট নেতা বা দলের সুবিধা হবে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার সুযোগ বাড়ানোর জন্য এমন করা কি কোনো রাজনৈতিক কৌশল বলে মেনে নেওয়া যায়?
আলী আমিন আসলে কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, ‘আগেও দেশে আমাদের মর্যাদা লঙ্ঘিত হয়েছে। এ দেশের জন্য আমাদের আত্মত্যাগ কে অস্বীকার করতে পারে? তা–ও করা হয়েছে। এখন আমাদের ওপর গুলিও করা হচ্ছে। আজ আমার দুই কর্মীকে গুলি করা হয়েছে। আমাদের ওপর সরাসরি শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আমাদের ৫০ জন কর্মী। পাঞ্জাবের সীমান্তে প্রতি তিন কিলোমিটার অন্তর আমাদের ওপর গুলি আর শেল বর্ষণ করা হয়েছে।’ এরপরই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে এর পর থেকে কেউ তাঁর কর্মীদের ওপর একটা গুলি ছুড়লে পাল্টা ১০টা গুলি ছোড়া হবে।
ভিডিও বক্তৃতায় আলী আমিন যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে বর্তমান সরকার অস্বস্তিতে পড়বে, তা খুব স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। ফেডারেল তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এই বার্তা পেয়ে বলেছেন, ইসলামাবাদে, পাঞ্জাবে সৈন্য পাঠিয়ে কি মুখ্যমন্ত্রী ৯ মের পুনরাবৃত্তি করতে চান?
আরও অনেক দল তো রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউ তো ৯ মে ঘটায়নি। কেউ তো এক গুলির বদলে ১০ গুলি চালানোর ধমকি দেয়নি। তেহরিক–ই–ইনসাফের লোকেরা তো আগেই ইমরান খানকে ভালোবাসা আর অন্যদের ঘৃণা করা সমার্থক বলে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। ইমরান খানকে ভালোবাসতে গিয়ে তাঁরা নিজের দেশকে পেছনে ফেলে দিচ্ছেন না তো? আর তা কি শুধু নিজের রাজনীতির যেন ফায়দা হয়, এ জন্য?
যত কিছুই হোক, নিজের দেশকে বিপদের মধ্যে দেখে কেউ কি খুশি হতে পারে! দেশের জন্য ভালো খবর এলে নাখোশ হওয়া! দেশের জন্য নেতিবাচক কিছুতে আপনি উচ্ছ্বসিত হবেন, শুধু এ কারণে যে এতে আপনার রাজনৈতিক ফায়দা হতে পারে।
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশের জন্য কোনো ইতিবাচক প্রয়াস যদি পরিলক্ষিত হয়, আর তা যদি করে আপনার বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি, তাহলে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে? আপনি কি এটা শুধু বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা করবেন?
তবে এখন পাকিস্তানে এমনও হয়েছে যে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশকে দেউলিয়া বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর প্রমাণ আছে। কিন্তু তাতে সংশ্লিষ্টদের কোনো লজ্জা নেই।
এ কেমন রাজনীতি, যা নিজের দলের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশের জন্য নেতিবাচক কিছু হলে খুশি হয়? দেশ যদি দেউলিয়া হয়, তাহলে ক্ষতি তো দেশের সাধারণ মানুষের, তা এর সঙ্গে যে দলেরই সংযোগ থাকুক না কেন।
দেশের ভেতরে গৃহযুদ্ধ লাগানোর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে দেশের সব প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়বে। দুর্বল হবে শাসনব্যবস্থা। এতে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট নেতা বা দলের সুবিধা হবে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার সুযোগ বাড়ানোর জন্য এমন করা কি কোনো রাজনৈতিক কৌশল বলে মেনে নেওয়া যায়?
আনসার আব্বাসি সাংবাদিক
পাকিস্তানের দৈনিক পত্রিকা জঙ্গ থেকে নেওয়া, উর্দু থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন