যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসন রোধে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অভিবাসননীতির ফলাফল কী হতে পারে, তা নিয়ে লিখেছেন মো. জালাল উদ্দিন সিকদার, সেলিম রেজা ও কে এম নূর-ই-জান্নাত
সম্প্রতি (১৬ মে ২০২৪) যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসন রোধে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।
২০১১ সালের ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫২৯ বাংলাদেশি ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে ব্রিটেনে বসবাস করছেন। এঁদের মধ্যে ৫২ শতাংশ ব্রিটেনেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বাকি ৪৮ শতাংশ বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে জন্ম নিলেও পরবর্তী সময়ে ‘ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে ইউরোপের ছয়টি রুট দিয়ে, বিশেষত ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। ২০২৩ সালে ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গত বছরে ইতালিতে ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের একটি বড় অংশ সম্প্রতি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। অবৈধভাবে প্রবেশ করা এসব অভিবাসীর অনেকেই শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্যের আদালতে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। ফল হিসেবে, ব্রিটেনে উদ্বেগজনকভাবে শরণার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাসাইলাম ইনফরমেশন ডেটাবেজের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৪ হাজার ২৫৮ জন আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে ‘প্রোটেকশন স্ট্যাটাস’–এর জন্য আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭১ শতাংশ আবেদনকারীর আবেদন খারিজ করা হয়েছে।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে এ রকম আশ্রয়ের আবেদন বেড়ে যাওয়ার কারণে তা ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে।
এখানে বলে রাখা দরকার, ব্রিটিশ সরকারের প্রাইভেসি অ্যাক্ট অনুযায়ী তারা আবেদনকারীর কোনো প্রকার তথ্য প্রকাশ করে না। কাজেই এই আশ্রয়প্রত্যাশীরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, নাকি বিদেশে যাওয়ায় পর তাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, নাকি তাঁরা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন, তা ধারণা করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ সরকার অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে অবৈধ অভিবাসন রোধে কঠোর নীতি প্রয়োগ নতুন কোনো বিষয় নয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনেক আগে থেকেই এর ধারাবাহিকতা চলছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা এই শরণার্থীর অনেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বা ব্রিটেনে আশ্রয় নিতে চান রাজনৈতিক কারণে।
১৯৫১ সালে স্বাক্ষরিত রিফিউজি কনভেনশন অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের মানবিক সাহায্যের পাশাপাশি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসব আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন যাচাই–বাছাই করে। তবে সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি তারা রুয়ান্ডার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে, যার আওতায় যুক্তরাজ্যে আসা অবৈধ অভিবাসীদের একটি বড় অংশকে রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এই অভিবাসীদের যাবতীয় আইনি কার্যকলাপ যুক্তরাজ্য থেকে পরিচালিত হলেও তাঁদের রুয়ান্ডায় রাখা হবে। পরবর্তী সময়ে আইনি ধাপ শেষে তাঁদের আবার রুয়ান্ডা থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বেলায়ও এ রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল। অবৈধ অভিবাসীদের পাপুয়া নিউগিনিতে পাঠিয়ে দিয়ে পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক অভিবাসীকে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
ব্রিটিশ সরকারের কঠোর অভিবাসননীতির কারণ হিসেবে প্রথমেই বলা যেতে পারে যে ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসন রোধে সরকারের ওপর বহুমুখী চাপ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানান চ্যালেঞ্জ ব্রিটিশ সরকারকে নানামুখী প্রতিকূলতার মধ্যে ফেলেছে।
অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ বাজেটে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ১৯৫১ সালের কনভেনশন অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকার এই অভিবাসীদের থাকা–খাওয়া, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা এবং প্রয়োজনে চাকরি না থাকলে তাঁদের বেকার ভাতার ব্যবস্থা করতে চুক্তিবদ্ধ। এই চাপ মোকাবিলায় তারা এসব অভিবাসীকে রুয়ান্ডায় পাঠাচ্ছে, যাতে অভিবাসীদের পেছনে বরাদ্দ বাজেটের কিছুটা হলেও সাশ্রয় করা যায়। এতে অর্থনৈতিক মন্দা তথা মূল্যস্ফীতিজনিত অর্থসংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।
ব্রিটেনের কঠোর অভিবাসননীতির প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক। কোভিড–পরবর্তী সময়ে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্রিটেন এবং ইউরোপের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। এ যুদ্ধে ইউক্রেনকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করায় ব্রিটেনকে তার নিজস্ব বাজেট থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের অর্থনীতির ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রদান করতে হচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ব্রিটেনে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। যেহেতু ব্রিটিশ সরকার ইউক্রেনকে আর্থিক ও মানবিক দিক থেকে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই ব্রিটেন তাদের সামগ্রিক বাজেটের একটি বড় অংশ ইউক্রেনের পেছনে ব্যয় করছে। ফলে যুক্তরাজ্য অন্যান্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে নতুন কোনো অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি ব্রিটেনের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে না পারে।
রুয়ান্ডা সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে তারা কেন যুক্তরাজ্য সরকারকে সাহায্য করতে আগ্রহী, তার বিভিন্ন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমত, রুয়ান্ডা বর্তমানে তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে আফ্রিকার দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
তবে রুয়ান্ডা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। সে দেশের সরকার এ কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। বলতে গেলে এই অভিযোগগুলো ঢাকার লক্ষ্যে বা নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় রুয়ান্ডা সরকার যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এই চুক্তির অন্যতম কারণ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ। রুয়ান্ডা ধারণা করছে, যুক্তরাজ্য সরকার রুয়ান্ডায় বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করবে। যেহেতু রুয়ান্ডা তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করছে, তাই এই সময় বিদেশি বিনিয়োগ রুয়ান্ডার জন্য ব্যাপক সুফল বয়ে আনবে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য থেকে আসা অভিবাসীদের আশ্রয় দিলে রুয়ান্ডায় ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আসা বিনিয়োগের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
তৃতীয়ত, রুয়ান্ডায় কর্মক্ষম লোকবলের সংকট রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে এসব অভিবাসীকে কাজে লাগানোরও পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। বলে রাখা ভালো, ইইউ-তুরস্ক চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপে শরণার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে অন্যতম রুট তুরস্ককে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দিয়েছিল (সূত্র: ইউরোপীয় কমিশন)।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, রুয়ান্ডার এই পদক্ষেপ তাদের গণতন্ত্রের দুর্বলতা ঢাকার একটি প্রচেষ্টা। কিন্তু যুক্তরাজ্যের সুশীল সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীরা এ ধরনের নীতিমালার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ করছেন।
তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের সাধারণ জনগণ এই অবৈধ অভিবাসীদের বোঝা মনে করছেন না; বরং যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদেরা রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে অবৈধ অভিবাসনকে সামনে আনছেন। তাঁরা ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, গণতন্ত্র সুরক্ষাসহ মানবিক সংকটে ব্রিটেনের প্রতিশ্রুতি বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি কোনো নতুন বিষয় নয়। এর আগে ২০১৭ সালে ইউরোপে বসবাসরত প্রায় ৯০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এসওপি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির আলোকে ইউরোপে যেসব বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী আছেন, তাঁদের যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে আশ্রয় না পেলে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
সে সময় মানবাধিকারকর্মীরা এর ব্যাপক সমালোচনা করে বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানের মতো দুর্বল রাষ্ট্র থেকে আসা অভিবাসীদের বেলায় ভিসা নীতি প্রয়োগের ভয় দেখিয়ে এই চুক্তি করতে বাধ্য করেছিল। সে সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই পদক্ষেপ সমালোচিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে করা চুক্তিতে এ রকম কোনো নীতি আছে কি না, সে সম্পর্কে আমরা কোনো ধারণা পাইনি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে বাংলাদেশে যাঁরা অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের থেকে সরকারকে কোনো রকম সুপারিশ করার সুযোগ ছিল না। এ চুক্তি সম্পর্কে এখনো কোনো সুস্পষ্ট ধারণা কারও কাছে নেই।
এখানে আমাদের আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশি যাঁরা আছেন, তাঁদের অধিকার কতটুকু সুনিশ্চিত হচ্ছে? আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে প্রতিবছর আমরা এই বৈধ এবং অবৈধ পথে যুক্তরাজ্য যাওয়া অভিবাসীদের মাধ্যমে বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছি। কাজেই তাঁদের প্রতি আমাদের একধরনের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
এখন তাহলে বাংলাদেশের করণীয় কী। প্রথমত, বাংলাদেশ সরকারকে পুরো ব্যাপারটাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। আমাদের অভিবাসননীতিতে এই অবৈধ অভিবাসীদের জন্য কী ধরনের কাজ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এ বিষয়ে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যাঁরা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে গেছেন, তাঁরা দিনের পর দিন আবেদনপ্রক্রিয়া–সংক্রান্ত মামলা–মোকাদ্দমা চালানোর কারণে আর্থিক অনটনে রয়েছেন। তাঁদের স্বার্থে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে দ্রুত আলাদা হটলাইন বা সেলের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন অবৈধ অভিবাসীরা দ্রুত হাইকমিশন থেকে সাহায্য পাওয়ার সুযোগ পান। বিভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ থেকে তাঁরা যেন যুক্তরাজ্যে পাঠানোর সুযোগ পান। অভিবাসীরা যেন যেকোনো আইনি জটিলতায় বিশেষজ্ঞ আইনবিদদের সাহায্যের সুযোগ পান, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশি অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে কি না, সে বিষয়ে আমাদের কোনো পর্যাপ্ত ধারণা নেই। তবে এই সিদ্ধান্ত বহাল হলে দ্রুত রুয়ান্ডা সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে, যেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা রুয়ান্ডায় থাকতে পারেন বা সেখানে কাজের সুযোগ পান।
চতুর্থত, ব্রিটিশ সরকার অবৈধ অভিবাসন রোধে বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে লোক নিয়োগে আগ্রহী। ব্রিটিশ সরকারের এই আগ্রহ সত্যি হলে বাংলাদেশ সরকারের উচিত এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করা। নতুন করে লোক না নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পরিবারসহ যাঁরা ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন, তাঁদের যেন বৈধ অভিবাসনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সে লক্ষ্যে প্রচলিত আইনি কাঠামোর বাইরে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
পঞ্চমত, অনেক অবৈধ অভিবাসী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হতে পারেন। রাজনৈতিক কোনো কারণে বা ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে বিদেশে যাওয়ার কারণে তাঁরা যেন বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ সমস্যাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।
সবশেষে দেশে ফেরত আসা অভিবাসীদের অনেকেই যুক্তরাজ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের পেশাগত দক্ষতা নিয়ে এসেছেন। তাঁদের এই দক্ষতাকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, সে লক্ষ্যে সরকারকে নতুন কর্মপরিকল্পনা গঠন করতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছর বহু মানুষ কাজ করতে আসছেন। অথচ নিজ দেশে কাজ না পেয়ে বাংলাদেশিরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। কাজেই বাংলাদেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমাদের দেশের মানুষের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
মো. জালাল উদ্দিন সিকদার ও সেলিম রেজা শিক্ষক ও গবেষক, সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
কে এম নূর-ই-জান্নাত গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।