পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষাব্রতী জাহান আরা রহমানকে তাঁর জন্মশতবর্ষে জানাচ্ছি শুভ অভিবাদন। সাক্ষাতে অনেকবারই তাঁর পদধূলি নিয়ে ধন্য হয়েছি। গতকাল তাঁর শততম জন্মদিনে তাঁকে সাক্ষাতে শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছা ছিল। অনিবার্য কারণে সেই মহৎ ইচ্ছা পূরণ হয়নি।
প্রথম আলোয় গতকাল ছাপা হওয়া রাফসান গালিবের শ্রদ্ধাপত্রটি পড়ে একঝলকে শতবর্ষী জাহান আরা রহমান আপাকে শ্রদ্ধা জানাতে মনে মনে নতজানু হলাম, তাঁর পদধূলি নিলাম, অনুভব করলাম তাঁর স্নেহ–আশীর্বাদ।
জাহান আরা রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম ২০১৮ সালে, সম্ভবত মার্চ-এপ্রিলে—তাঁর বাড়িতে স্নেহপূর্ণ আমন্ত্রণে আপ্লুত হয়ে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ বিষয়ে আমার অনুসন্ধানপর্ব চলছিল সে সময়।
শিক্ষাব্রতী জাহান আরা রহমান আপাকে আমরা খুব বেশি আত্মপ্রচারে মগ্ন হতে দেখিনি-জানিনি। তাঁর পারিবারিক, সংস্কৃতি-শিক্ষাপূর্ণ গৌরবময় জীবনসাধনার বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান নারী জাগরণের ইতিহাসে তেমন প্রচারিত না হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি অপরিচিত রয়ে গেছেন।
তখন নানা প্রসঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনযাপন, ‘ব্রেবোর্নিয়ান’ পরিচয়ের গৌরবময় স্মৃতিতর্পণ, পারিবারিক জীবনযাপনের সুখ-দুঃখময় নানা স্মৃতিতে হাসি–কান্নার গল্পকথায় আমরা ভরপুর ছিলাম। সে কি ভুলতে পারি?
শতবর্ষে পদার্পণ করা জাহান আরা রহমান বাংলাদেশের প্রথম যুগের শিক্ষাব্রতী ব্রেবোর্নিয়ান। তাঁর শতবর্ষ পূর্ণতায় আমরা জানাচ্ছি শ্রদ্ধা–ভালোবাসা। তিনি কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী হিসেবে পড়েছিলেন। সেই কলেজে তাঁর ইন্টারমিডিয়েট এবং বিএ সম্পন্ন হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএতে ভর্তি হলেও সে স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি। পরে কলকাতার ট্রপিক্যাল মেডিকেল স্কুলের তৎকালীন চিকিৎসক মুজিবুর রহমানের জীবনসঙ্গিনীরূপে আনন্দময় জীবনের পথে এগিয়ে যান তিনি।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষাব্রতী জাহান আরা রহমান এগিয়ে ছিলেন নিজ ব্রত পালনে। ১৯৪৭ সালের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন সংসারব্রত ও শিক্ষাব্রতকে বাহন করে।
শিক্ষাব্রতী জাহান আরা রহমান আপাকে আমরা খুব বেশি আত্মপ্রচারে মগ্ন হতে দেখিনি-জানিনি। তাঁর পারিবারিক, সংস্কৃতি-শিক্ষাপূর্ণ গৌরবময় জীবনসাধনার বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান নারী জাগরণের ইতিহাসে তেমন প্রচারিত না হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি অপরিচিত রয়ে গেছেন।
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তাঁকে পরিচিত করার ব্রত নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব, এ–ই হোক শ্রদ্ধেয় শিক্ষাব্রতী জাহান আরা রহমানের জন্মশতবর্ষে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
মালেকা বেগম সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক