পুরুষ কিসে আটকায়?

কারেন্ট জালে জাটকা আটকায়; সরকারি টেবিলে দরকারি ফাইল আটকায়; আঠা ছাড়াই ফাটা বাঁশে অনেকের অনেক কিছু আটকায়। কিন্তু এই সব আটকাআটকির ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে ফেসবুকের ফাটকা আসরের টাটকা আলাপ হলো নারী কিসে আটকায়?

আগে তর্ক হতো মুখে মুখে, আর এখন যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা হয় ফেসবুকে।
‘মুখবইয়ে’ দিন দশেক আগে কে যেন শোর তুলেছে নারী কিসে আটকায়? গাড়িতে? বাড়িতে? ভালোবাসার দড়িতে? টাকা-পয়সা-কড়িতে? আসলেই তো, নারী কিসে আটকায়? সে কি সিক্স প্যাক বডি দেখে পুরুষের বুকে হুকে আটকানো আটার বস্তার মতো আটকায়? নাকি অভাবী লোকেরও স্বভাবচরিত্র দেখে আটকায়?

এই নিয়ে মত চলছে। দ্বিমত চলছে। আলাপ চলছে। বিলাপ চলছে। প্রলাপ বকতে বকতে সংলাপের অপলাপ হচ্ছে। লেখক থেকে দলিল-লেখক; কবি থেকে কবিরাজ; কাঠমিস্ত্রি থেকে আর্টমিস্ত্রি; নারীবাদী থেকে শাড়িবাদী; হেডমাস্টার থেকে পোস্টমাস্টার—সবাই যার যার বিশেষ জায়গা থেকে বিশেষজ্ঞ মত দিচ্ছেন, নারী কিসে আটকায়?

আফসোস! কেউ বলছে না, পুরুষ কিসে আটকায়? কারণ ধরেই নেওয়া হয়েছে, পুরুষ অটোম্যাটিক্যালি আটকানো ‘বস্তু’। নারীতে তো সে এমনি এমনিই আটকায়। কিন্তু যে কথাটা সবাই জানে এবং মানে, কিন্তু বলে না; সেটি হলো সম্পর্কের ফাটকে দীর্ঘমেয়াদে সে আটকা থাকে বটে; কিন্তু সেই থাকায় তার সায় থাকে না (বি. দ্র. এই কথা শুনে ‘আটকাবিলাসী’ স্ত্রৈন সম্প্রদায় ক্ষেপে যাবেন না। কথাটা আপনাদের বলিনি)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আলোচিত সেই পোস্টটি নিয়ে এভাবেই বানানো হয়েছে মিম

বিশেষত বিয়ের পর উত্তম পুরুষ থেকে মধ্যম পুরুষ, কাপুরুষ থেকে মহাপুরুষ, কালপুরুষ থেকে পরপুরুষ—নির্বিশেষে বহু পুরুষ রসগোল্লার রসে বসে আটকা পড়ে ডানা ঝাপটাঝাপটি করা মাছির মতো মুক্তি খোঁজে। মুক্তি পেতে দশ হাত লম্বা একটা অজুহাত খোঁজে। মানে আটকা থেকে মুক্তি পেতে কায়দামতো যুক্তি খোঁজে।

কেউ হয়তো যুক্তি ছাড়াই মুক্তি নিয়ে নতুন করে আটকা পড়ার মওকা খোঁজে। কারও হয়তো যুক্তি মেলে, মুক্তি মেলে না। ছাড়া পাওয়ার সাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে আটকা থাকতে হয়।

মনের মধ্যে ঘাপটি মারা বহুগামী ঈগলপাখি মনে মনে উড়তে থাকে। তার ডানাটা কেউ দেখে না। ‘আমি জানি তুমি কোথায় যাও রোজ রাত্তিরে... মনের ভেতর ঘুমের ঘোরে’ টাইপের মনোযাত্রা চলতে থাকে।

আমৃত্যু কারাদণ্ডের কয়েদির কাছে কয়েদখানাই ‘সুখের ঠিকানা’। স্বামীগুলো সেই আসামি। আটকাজীবন অভ্যেসে ভেসে চলে। প্রথম প্রথম আটকা থাকাটা সে মেনে নেয়, মনে নেয় না। মনের মধ্যে ঘাপটি মারা ঈগলপাখি বহু ঘাটের পানি খেতে মনে মনে উড়তে থাকে। তার ডানাটা কেউ দেখে না। ‘আমি জানি তুমি কোথায় যাও রোজ রাত্তিরে... মনের ভেতর ঘুমের ঘোরে’ টাইপের মনোযাত্রা চলতে থাকে।

এক সময় ধীরে ধীরে ক্লান্তি তাঁকে ঘিরে ধরে। সে হয়ে যায় অবিডিয়েন্ট; খাঁচায় পোরা নরম–সরম ময়না পাখি।

সাদা চোখে দেখা যায়, পুরুষ আটকায়। আসলে আটকায় না। আসলে সে কাদায় থাকা বাইন মাছ। কাদায় মেশে কিন্তু আটকায় না। পুরুষ হলো মাসুদ রানা; টানে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। বুঝলে সোহানা!

  • সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক
    ইমেইল: sarfuddin2003@gmail.com