বিশ্লেষণ

বৈশ্বিক দক্ষিণের উত্থান ঘটছে, নেতৃত্ব দেবে কে

গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের নব-উত্থানের প্রধান চালিকা শক্তি হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন। নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা এবং একই সঙ্গে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে একধরনের বিভাজন সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাহলে বৈশ্বিক দক্ষিণের নেতৃত্ব দেবে কে—এই লেখায় সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন এ এন এম মুনীরুজ্জামান

বিশ্বের পরিবর্তনশীল ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতিতে বৈশ্বিক দক্ষিণের (গ্লোবাল সাউথ) নতুন উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক ও দীর্ঘদিনের উপেক্ষিত বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো বিশ্বমঞ্চে তাদের উপস্থিতি নতুন করে জাহির করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে পুনর্নির্মাণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা বর্তমান আন্তর্জাতিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জও করছে।

বৈশ্বিক দক্ষিণ বা গ্লোবাল সাউথের ধারণা সম্পূর্ণ নতুন নয়। ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিক থেকেই তৃতীয় বিশ্বের পাশাপাশি এ ধারণা বা নাম চলে আসছে। সে সময় নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিন্যাস (ইকোনমিক অর্ডার) দাবির পাশাপাশি বৈশ্বিক দক্ষিণের ধারণা উচ্চারিত হতে শুরু করে। তবে এ ধারণা প্রাধান্য লাভ করতে শুরু করে ব্র্যান্ডট কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে।

উইলি ব্র্যান্ডট কমিশন প্রধানত বিশ্বের সব দেশকে ‘পার ক্যাপিটা’ বা মাথাপিছু জিডিপির ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করে চিহ্নিত বা আলাদা করে। এটা সাধারণ ভাষায় ‘ব্র্যান্ডট লাইন’ হিসেবে পরিচিত। সেখান থেকেই পৃথিবীর দেশগুলো অর্থনৈতিক ভিত্তি বা সক্ষমতার ওপর ‘উত্তর’ ও ‘দক্ষিণ’ নামে পরিচিত হতে থাকে।

এ কারণে বৈশ্বিক দক্ষিণ কোনো ভৌগোলিক অঞ্চল নয়। এটি মূলত আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে—এমন একটি ধারণা। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলোর সব কটি উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত দেশ।

বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো ঔপনিবেশিকতা, শোষণ ও উন্নয়নের একটি সাধারণ ইতিহাস দ্বারা একীভূত। এরা দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বব্যবস্থায় একটি প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং ভূরাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক গতিশীলতায় এ দেশগুলো তাদের অবস্থানের বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।

বৈশ্বিক দক্ষিণের এই নব-উত্থানের প্রধান চালিকা শক্তি হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন। তবে এর ভেতরে নানা দেশ উন্নয়নের এবং রাজনৈতিক শক্তির নানা স্তরে অবস্থান করছে। এখানে যেমন চীন, ভারত বা ব্রাজিলের মতো দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ হওয়া দেশ অন্তর্ভুক্ত, একই সঙ্গে আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত উন্নয়নের নিচের সারির দেশও রয়েছে।

বৈশ্বিক দক্ষিণের উত্থান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকশিত মানচিত্রে একটি যুগান্তকারী ও রূপান্তরকারী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছে। এই দেশগুলো বিশ্বমঞ্চে নিজেদের নতুন করে প্রকাশ ও জাহির করছে। বিশ্বব্যবস্থার রূপরেখা নতুন করে তৈরি করে দিচ্ছে এবং বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামোকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য দাবি ও চ্যালেঞ্জ করছে।

এসব দেশের যে বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, এদের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ তরুণ এবং শ্রমশক্তিতে তাদের প্রাচুর্য আছে। তবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও বৈশ্বিক দক্ষিণের ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য ক্রমবর্ধমানভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।

বিভিন্ন আকার ও প্রকারভেদে দেশগুলো তাদের শক্তির গতিশীলতা ব্যবহার করে নতুন পরিবর্তন আনার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। এখানে উত্তর ও দক্ষিণের বিভাজন অতিক্রম করে তারা বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের জোট ও অংশীদারত্ব তৈরি করছে। যেমন আফ্রিকার আঞ্চলিক সংস্থা আফ্রিকান ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ান এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সংগঠন সেলাকের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এসব জোট ও যৌথ সংগঠন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে বৈশ্বিক দক্ষিণের যৌথ স্বার্থের পক্ষে এবং সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে। বাণিজ্য ও নিরাপত্তা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলো নিয়ে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা আছে।

এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে চীনের উত্থান। চীন ইতিমধ্যে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ হিসেবে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। এটা এখন স্পষ্ট, চীন শুধু একটি অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, বরং ভবিষ্যতের পরাশক্তিও বটে। চীনের এ নতুন অবস্থান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

চীন ইতিমধ্যে তাদের প্রণীত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর সঙ্গে গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া তারা গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ও গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে বিশ্বের আন্তর্জাতিক কাঠামোকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে। এটা মূলত চীনের নেতৃত্বেই হবে—এমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে।

একসময়ের জি-৭৭-এর মতো উদ্যোগ এই নতুন গঠিত বৈশ্বিক দক্ষিণের নানা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গতিশীলতা ও প্রশস্ততা লাভ করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর এ উদ্যোগ অর্থাৎ উন্নয়ন সহায়তা, ঋণ, ত্রাণ ও জলবায়ুর ন্যায়বিচারে মতো বিষয়গুলোয় বৈশ্বিক দক্ষিণ তাদের ন্যায্য স্বার্থের পক্ষে সমর্থনের জন্য জোরালো কণ্ঠস্বর নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

একুশ শতকের বাস্তবতায় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের নতুন রূপরেখায় সমষ্টিগত স্বার্থ সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থা ও বৈশ্বিক শাসন সংস্থাগুলোর সংস্কারের জন্য বৈশ্বিক দক্ষিণ জোরালো দাবি উপস্থাপন করছে।

তাদের দাবি হচ্ছে বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি ও গণতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাঠামো, যার মাধ্যমে বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা যায়। তারা বিশেষ করে বিশ্বের অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের আরও সুষম বণ্টনের দাবি করেছে। এসব দেশ বিশ্ববাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে, সেগুলো দূর করতে কাঠামোগত পরিবর্তন চায়। একই সঙ্গে এসব দেশ বড় ধরনের কিছু বৈশ্বিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। সমষ্টিগতভাবে সেগুলোর সমাধানের লক্ষ্যে বৈশ্বিক নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারা বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ দেখতে চায়।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিরূপ প্রক্রিয়ার ভেতরে পৃথিবী আছে, সেখানে তারা প্রথম সারির দেশ। তবে এ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে উন্নত বিশ্ব বা উত্তরের দেশগুলোর কাছ থেকে যে ধরনের আর্থিক সহায়তা পাওয়ার কথা, তা বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো এখনো পায়নি। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় নানা সভা-সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। এ কারণে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো এ সমস্যার আশু সমাধান দাবি করছে।

এখন যে প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে, তা হচ্ছে বৈশ্বিক দক্ষিণের নেতৃত্ব দেবে কে?

আমরা দেখতে পেয়েছি যে ইতিমধ্যে চীন বৈশ্বিক দক্ষিণের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাদের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছে বা ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া তারা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে চীনভিত্তিক করতে নতুনভাবে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কিছু নতুন ধারণা দিয়েছে।

চীন বিশেষভাবে বিশ্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং উন্নয়নব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে নতুন কাঠামোয় আনার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে ভারতও দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিগত জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের সময় গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছ। কাজেই অনেকে আশঙ্কা করছেন, গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা এবং একই সঙ্গে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে একধরনের বিভাজন সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বৈশ্বিক দক্ষিণের বেশির ভাগ দেশ মনে করে, তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একক কোনো দেশের প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে বরং বৈশ্বিক দক্ষিণের সব দেশের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য একধরনের সমষ্টিগত নেতৃত্ব থাকা উচিত, যেটা কোনো আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কোনো আনুষ্ঠানিক সম্মেলন ও আলোচনার ভিত্তিতে করা যেতে পারে।

অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে, বৈশ্বিক দক্ষিণের উত্থান অভ্যন্তরীণ ও সমষ্টিগতভাবে নানা ধরনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এর ভেতরে প্রধান যে বিষয় দেখা যাচ্ছে, তা হলো, অনেক দেশেই ক্রমাগত সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একই সঙ্গে এসব দেশে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও ভঙ্গুর পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক দেশই রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক দুর্নীতিগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতি এসব দেশের টেকসই উন্নয়ন ও ন্যায়সংগত অগ্রগতির জন্য কঠিন বাধা সৃষ্টি করছে।

অনেক ক্ষেত্রেই নব্য ঔপনিবেশিকতা ও অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের যে বিস্তার লাভ করেছে, বিভিন্নভাবে তার শিকার এই দুর্বল দেশগুলো হচ্ছে। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য বৈশ্বিক দক্ষিণের সম্পদ ও শ্রম এখনো নানাভাবে শোষণ করে চলেছে। এসব কারণে এ দেশগুলোয় পরনির্ভরতা ও অনুন্নয়নের চক্র একটি স্থায়ী রূপ পেয়েছে।

এর মধ্যে অনেক দেশ অভ্যন্তরীণ কারণে ও বহিরাগত প্রভাবে নানা ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক দক্ষিণের অনেক দেশই বিভিন্ন সময় গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নিজ জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির ব্যাপারে যেখানে তাদের সোচ্চার থাকার কথা, সেখানে বৈশ্বিক দক্ষিণের অনেক দেশই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই গণতন্ত্রহীনতাই তাদের অনুন্নয়নের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বাধা পেরিয়েই বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর প্রায় সব কটিই উন্নয়নের সিঁড়িতে ওঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং বৈশ্বিক দক্ষিণের উদ্যোগের দ্বারা উপস্থাপিত সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে সমন্বিত বহু পক্ষের পদক্ষেপ অপরিহার্য। দারিদ্র্য, অসমতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারির মতো বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংহতির ভিত্তিতেই অংশীদারত্ব গড়ে তোলা অপরিহার্য।

এ ছাড়া দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা, জ্ঞান ভাগাভাগি ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের নীতিগুলোকে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে উত্তর-দক্ষিণ সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা প্রয়োজন। এসব করতে পারলে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোর সামনে যে উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা আছে, সেটা তারা উন্মোচন করতে পারবে। সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের মজবুত ভিত্তি স্থাপন করতে পারবে।

পরিশেষে বলা যেতে পারে, বৈশ্বিক দক্ষিণের উত্থান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকশিত মানচিত্রে একটি যুগান্তকারী ও রূপান্তরকারী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছে। এই দেশগুলো বিশ্বমঞ্চে নিজেদের নতুন করে প্রকাশ ও জাহির করছে। বিশ্বব্যবস্থার রূপরেখা নতুন করে তৈরি করে দিচ্ছে এবং বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামোকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য দাবি ও চ্যালেঞ্জ করছে।

একই সঙ্গে তারা আরও ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলছে। বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলো এসব কাজে লাগিয়ে এবং সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে সমগ্র বিশ্বের জন্য আরও ন্যায্য, সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে বড় ধরনের যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রয়োজন আছে, সেখানে বৈশ্বিক দক্ষিণের বলিষ্ঠ ভূমিকা সবার জন্য খুব প্রয়োজন।

  • মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এ এন এম মুনীরুজ্জামান সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি।