সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

মতামত

উত্তরসূরি ঠিক করতে মোহাম্মদ বিন সালমানের কেন ভয়

সৌদি আরবের বৃদ্ধ বাদশাহ সালমানের ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় এবং সম্প্রতি তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় ধারণা করা হচ্ছে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বাদশাহ হওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার। মোহাম্মদ বিন সালমানের সিংহাসনে বসাটা অনিবার্য এবং নির্বিঘ্ন বলে মনে হলেও বাদশাহ হওয়ার পর তাঁকে দুটি চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একটি হলো, একজন ক্রাউন প্রিন্স ঠিক করা এবং আরেকটি হলো, একজন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ঠিক করা।

ভবিষ্যৎ ক্রাউন প্রিন্স নিয়োগ করার সময় মোহাম্মদ বিন সালমানকে তাত্ত্বিক দিক থেকে সৌদি আরবের ১৯৯২ সালের প্রশাসনের মৌলিক আইন মানতে হবে। ওই আইনে ইবনে সৌদের পুরুষ বংশধরদের মধ্য থেকে ‘সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ’ ব্যক্তিকে ক্রাউন প্রিন্স নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে।

২০১৪ সালে তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ (মৃত্যুবরণ করার আগের বছর) প্রথম ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স পদটি চালু করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, যদি কোনো কারণে সৌদি বাদশাহ মারা যাওয়ার পরপর ক্রাউন প্রিন্সও মারা যান, তাহলে দ্রুত সংকট সমাধানে তৃতীয় ব্যক্তিকে ঠিক রাখতে হবে। সে কারণে তিনি ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স পদটি চালু করেছিলেন।

ভবিষ্যৎ বাদশাহ মোহাম্মদ বিন সালমান এই ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্সের পদটি রাখবেন কি না, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। ২০১৭ সালে তিনি ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর থেকে এখনো ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্সের পদটি শূন্য রয়েছে। দুটি কারণে বাদশাহ সালমান কখনোই ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেননি।

প্রথম কারণটি হলো, ২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যখন নির্বাচিত করা হয়, সে সময় তাঁর বয়স ছিল অল্প। মোহাম্মদ বিন সালমানের যেকোনো সময় মৃত্যু হবে এবং তখন তার জায়গা পূরণের জন্য একজন ডেপুটি প্রয়োজন হবে, এটি তিনি তখন ভাবেননি।

দ্বিতীয় কারণটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো, উপযুক্ত ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স খুঁজে পাওয়া বাদশাহ সালমানের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি এবং তাঁর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান আল-সৌদ বংশের নায়েফ এবং আবদুল্লাহের গোত্রসহ বিভিন্ন সৌদ বংশের শাখার বিরোধিতা করেছিলেন।

গত সাত বছরে মোহাম্মদ বিন সালমান একাই ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে আছেন। তিনি কার্যকরভাবে রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। সৌদি আরবে সামরিক থেকে বিনোদন ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ক্ষমতা অর্জন করেছেন।

এদের মধ্যে সবচেয়ে অপমানিত হয়েছেন সাবেক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ। কয়েক দশক ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পর তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়েছিল। এখনো তিনি প্রকাশ্য জনজীবন থেকে আড়াল হয়ে আছেন।

বাদশাহ আবদুল্লাহর ছেলে মুতাইবকেও অপমানজনকভাবে সৌদি আরবের ন্যাশনাল গার্ডের সাবেক প্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনিও এখন প্রকাশ্য জনজীবন থেকেও ‘উধাও’ হয়ে গেছেন।

বাদশাহ সালমান ও তাঁর ছেলে সৌদ বংশের এই দুই শাখার কোনো বংশধরকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স বানানোর ঝুঁকি নিতে চান না। তবে বাদশাহ সালমান চাইলে এই দুই গোত্রের বাইরের অন্য কোনো গোত্র থেকে কাউকে পছন্দ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।

সম্ভবত বাদশাহ সালমান চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান বয়োজ্যেষ্ঠ যুবরাজদের (যাঁদের বেশির ভাগই মন্ত্রী বা সামরিক কমান্ডার হিসেবে সরকারের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন) পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই নিজের ক্ষমতার ভিত্তিকে পোক্ত করে নিতে সক্ষম হোক।

গত সাত বছরে মোহাম্মদ বিন সালমান একাই ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে আছেন। তিনি কার্যকরভাবে রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। সৌদি আরবে সামরিক থেকে বিনোদন ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ক্ষমতা অর্জন করেছেন।

মোহাম্মদ বিন সালমান এখন একজন নিরঙ্কুশ শাসক। তিনি শুধু তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বিদেশি উপদেষ্টা, পরামর্শদাতা এবং নিজ বলয়ের কথা শুনছেন। তাঁর অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি নীতিগুলোতে জ্যেষ্ঠ ও অধিকতর অভিজ্ঞ যুবরাজদের পরামর্শের প্রতিফলন নেই। এসব নীতিতে তাঁর নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ফলে এটি বোঝা যাচ্ছে, এ সময় কোনো ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স থাকলে তিনি তাঁর জন্য উপদ্রব হয়ে পড়তেন।

ভবিষ্যৎ বাদশাহ হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য তাঁর মনের মতো একজন ক্রাউন প্রিন্স এবং একজন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স খুঁজে বের করা কঠিন হবে। তাঁকে মাথায় রাখতে হবে, তিনি যাঁদের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করবেন, তাঁদের কেউই যেন যোগ্যতায়, বয়সে এবং কর্মদক্ষতায় তাঁকে ছাড়িয়ে না যান।

● মাদাবি আল-রশিদ লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের খণ্ডকালীন অধ্যাপক

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত