সম্প্রতি বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংকিং খাতে সংস্কার নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে। এই সংস্কারের একটি মূল বিষয় হচ্ছে ব্যাংক একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ। কিন্তু একীভূতকরণ হলেই ব্যাংকিং খাতের সমস্যার সমাধান হবে কি না, তা নিয়ে লিখেছেন শহীদুল জাহীদ।
আর্থিক বাজার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের প্রয়োজনে অর্থাৎ চাহিদা ও জোগানের বিবেচনায় সংস্কারের প্রয়োজন হয়। যুগে যুগে অর্থনীতির অন্যান্য ভিত্তিমূলের মতো ব্যাংকিং খাত তো বটেই, অন্যান্য অ-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানেও ছোট-বড় সংস্কার হয়েছে। তাই ব্যাংকিং খাতে সংস্কার তথা একীভূতকরণ অথবা অধিগ্রহণের যে বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে, তা মোটেই নতুন কিছু নয়।
আর্থিক খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবস্থান
প্রথমেই বলতে হয় যে বাণিজ্যিক ব্যাংক আর্থিক বাজারে একটি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্যিক ব্যাংক পুঁজিবাজারের কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। অর্থবাজারের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে পারে না। বাণিজ্যিক ব্যাংক মূলত জনগণের কাছ থেকে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ বিভিন্ন নামে আমানত হিসেবে জমা রাখে এবং জনগণের কাছে আমানতলব্ধ অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করে।
ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এসব বাণিজ্যিক ব্যাংক সুদ আয় করে এবং আমানতের বিপরীতে তারা সুদ ব্যয় প্রদান করে। সুদ আয় ও সুদ ব্যয়ের পার্থক্যই হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের প্রধানতম উৎস, যা ‘স্প্রেড’ নামে পরিচিত। বাণিজ্যিক ব্যাংক যেসব ঝুঁকি বহন করে, তাদের মধ্যে এই ‘স্প্রেড-ঝুঁকি’ অন্যতম। এসব ব্যাংক যেকোনোভাবেই ‘স্প্রেড-ঝুঁকি’ সর্বনিম্ন রেখে উচ্চতর মুনাফা করতে চায়।
‘স্প্রেড-ঝুঁকি’ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাংকগুলোর খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। কারণ, তারা বেশি সুদে বিনিয়োগ করতে পারলে আমানতকারীদের বেশি সুদ প্রদান করে আবার বিনিয়োগের সুদের হার কম হলে তারা আমানতকারীদের কম সুদ প্রদান করে। এভাবে তারা প্রতিনিয়ত একটি পরিমিত ‘স্প্রেড’ বা মুনাফা অর্জন করে।
বাণিজ্যিক ব্যাংক অর্থনীতির মৌলিক কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। এসব প্রতিষ্ঠান কোনো দ্রব্যসামগ্রী সরাসরি উৎপাদন করে না; বরং অর্থনীতিতে সহায়ক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সেবাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালন করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক আর্থিক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান হলেও এর ধরনে ভিন্নতা লক্ষণীয়। সেই ধারণায় ব্যাংকিং এবং অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এরূপ বিভাজন পরিলক্ষিত হয়।
ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে বর্তমানে ৬২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে। এসব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নানাভাবে বিভক্ত করা যায়। যেমন মালিকানার ধরন অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক। এ ছাড়া সাধারণ, ইসলামি, বিশেষায়িত, তফসিলি এবং অ-তফসিলি—এভাবেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভাগ করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালের ওপর ভিত্তি করে প্রথম, দ্বিতীয়, প্রজন্মের বাণিজ্যিক ব্যাংকও বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ইসলামি বাণিজ্যিক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বিদেশি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে।
বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যাংক কোম্পানি আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হলেও এ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনও এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকের সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশে প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্যবসার ধরন, ক্ষেত্র ও পরিধি ইত্যাদি বিবেচনায় অসামঞ্জস্যতা লক্ষণীয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে প্রতিযোগিতা, তা মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রেই বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। যেমন বেসরকারি মালিকানার অধিকাংশ ব্যাংকই শহরকেন্দ্রিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন পর্যন্ত কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। সে ক্ষেত্রে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে মূল ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বাণিজ্যিক ব্যাংক অত্যধিক নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সারা বিশ্বে ব্যাংকিং খাতের মন্দ ঋণ বা কু-ঋণের হার ১০ শতাংশের কম হলেও বাংলাদেশে তা ১১ শতাংশের মতো। উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে মন্দ ঋণের স্ট্যান্ডার্ড হার ২ শতাংশ। বাংলাদেশের মানুষের ব্যাংকিং প্রবণতা উন্নত দেশগুলো তো বটেই, প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়েও কম।
আইএমএফের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ১৫ বছর বা তার অধিক জনগোষ্ঠীর ব্যাংকিং প্রবণতা পরিসংখ্যানে দেখা যায় জাপানে এই হার প্রায় ৯৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৯৬, যুক্তরাষ্ট্রে ৯৪, ভারতে ৪১, পাকিস্তানে ৩৬ শতাংশ। বাংলাদেশে এটা মাত্র ৩১ শতাংশ। ২০১৭ সালে প্রতি ১ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ ছিল ১২৫টি, ভারতে ৭৪ কিন্তু বাংলাদেশে ৪৪টি। উপরিউক্ত পরিসংখ্যানে স্পষ্টতই বোঝা যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় ব্যাংকিং পরিষেবা অপ্রতুল। অর্থাৎ চাহিদা ও জোগানের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।
ব্যাংক একীভূতকরণের প্রসঙ্গ কেন এল
বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি বিকাশমান অর্থনীতি। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের স্বতন্ত্র যাত্রা শুরু হয়। একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং একই সঙ্গে এ দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের যাত্রাপথ সহজীকরণের পথ সুগম করে দেয়। আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশে একই সঙ্গে বেসরকারি মালিকানা এবং ইসলামি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সেবাদান শুরু করে।
এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ধারাবাহিকতা বেসরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। এই শতাব্দীর শুরুর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা ছিল প্রশংসনীয়। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক বাণিজ্য সহজীকরণ, সরকারি ক্রয়, বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সহায়তা, জীবনমানের উন্নতির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অসামান্য অবদান রেখেছে। সময়ের পরিক্রমায় প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতির পাশাপাশি বেশ কিছু অদক্ষতা ধীরে ধীরে সামনে এসেছে।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় অদক্ষতা যা জনসমক্ষে বড় হয়ে দেখা দেয় তা হলো, বড় অঙ্কের কু-ঋণ অথবা মন্দ ঋণ। ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণের বেশ কিছু কারণ থাকে। অনেক কারণ যৌক্তিকও বটে। যেমন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্থনৈতিক মন্দা। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ভূমিধস, মহামারি, যুদ্ধ ইত্যাদি কারণে অন্যান্য খাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং খাতেও অনিশ্চয়তা আসতে পারে। বিনিয়োগকারীরা যথাযথ ব্যবসা করতে না পেরে যদি ব্যাংকের দায় পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলেও মন্দ ঋণের সৃষ্টি হয়।
এসব কারণ সব ব্যাংকের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য, তাই কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংক বিশেষ ক্ষতির মুখে পড়বে—এমনটা হওয়ার কথা নয়। তবে অন্যান্য কারণগুলো ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যেমন অদক্ষ ব্যবস্থাপনা বা নৈতিক বিপর্যয়। বাংলাদেশে অন্যতম বৃহৎ ঋণ কেলেঙ্কারির মধ্যে কথিত হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি, জনতা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি এবং হালের ইসলামী ব্যাংকের মন্দ ঋণ ইস্যু উল্লেখযোগ্য। সব ক্ষেত্রেই ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালিক পক্ষ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব কেলেঙ্কারির অনেকগুলোই বিচারাধীন। এর মধ্যে হলমার্কের তানভীর মাহমুদ এবং বেসিক ব্যাংকের আবদুল হাই বাচ্চুর নাম এখনো লোকমুখে উচ্চারিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পরিচালকেরা তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। বলাবাহুল্য যে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পরেও সোনালী ব্যাংক রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে মূলধন সহায়তা পেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোও ঋণ কেলেঙ্কারি অথবা লোকসানের পর একই রকমভাবে অর্থ সহায়তা পেয়েছে।
এসব রাষ্ট্রীয় অর্থ সহায়তার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু সরকার অনেকটা বাধ্য হয়েই ওই সব ব্যাংকের মূলধন জোগান দিয়েছিল। অন্যথায় ব্যাংকের প্রতি জনগণের অবিশ্বাস তুঙ্গে উঠত। জনগণের আমানতের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়ে ওই সব ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেতে পারত। যেহেতু রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংক, তাই রাষ্ট্র ওই সব ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। তবে মূলধন জোগানের পাশাপাশি সরকারের উচিত ছিল দক্ষ ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি ও পেশিশক্তির অপব্যবহার রোধ ও আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
বেসরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোর ব্যর্থতার দায় কে নেবে, সেটা একটা মৌলিক প্রশ্ন। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিদেশি ব্যাংকগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো ব্যবসা করছে। লক্ষণীয়, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবসা পরিধি বেশি নয়। তারা শহরকেন্দ্রিক অল্প কিছু শাখা নিয়ে হলেও ভালো মুনাফা অর্জন করে থাকে। জনগণের আস্থাও তাদের প্রতি বেশি। তাহলে দেশীয় মালিকানার বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঠিক কী কারণে উচ্চ কু-ঋণ ঝুঁকিতে পড়ল?
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ‘বেসেল চুক্তি’র অন্যতম স্বাক্ষরকারী। বেসেল-৩ মান অনুযায়ী, বাংলাদেশের অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকই তাদের পর্যাপ্ত মূলধন তথা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ রাখতে সক্ষম হয়নি। করোনা মহামারিকালে ব্যাংকিং খাতে প্রণোদনা, মহামারি শেষে ঋণ অবলোপনের আজগুবি হিসাবের মারপ্যাঁচে এসব ব্যাংকের কু-ঋণের হার কম দেখানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে মালিকপক্ষের নামে-বেনামে ঋণ এবং তা ফেরত না দেওয়ার বিষয়টি ব্যাংকের প্রতি জন-অনাস্থার কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়ে সময়ে অনেক ব্যাংককে সতর্ক করেছে অথবা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে—সেই দাবি করতেই পারে। তারা বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংককে চূড়ান্ত সতর্কবার্তাও দিয়েছে। পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দিয়ে অথবা অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের নির্দেশনার কথা তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে লোকমুখে প্রচারিত হচ্ছে।
ব্যাংক একীভূতকরণের আন্তর্জাতিক চিত্র
পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রেও ব্যাংকের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকের যে সংখ্যা, এক শ বছর আগে তা তিন গুণ বেশি ছিল। ১৯২৮-১৯৩৩-এর মহামন্দা, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুর্যোগ, ১৯৯৯ সালের ‘দ্য গ্রাম-লিচ-ব্লিলি অ্যাক্ট ইত্যাদি কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকের সংখ্যা কমে যায়। কিন্তু ১৯৯৯ সালের আইনের কারণে ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের পথ সুগম হয়। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বিনিয়োগ ব্যাংকের একীভূত অথবা অধিগ্রহণ হয় আবার উল্টোটাও ঘটে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০১৭ সালের পূর্বে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ছিল ১৭টি। এগুলো পরে ১০টি ব্যাংকে একীভূত হয়। ব্যাংকিং খাতে একীভূতকরণের মূল কারণ হতে পারে অসম প্রতিযোগিতা। বৃহৎ ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলে অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যাংক বড় ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে থাকে। অর্থনীতির অভিধায় অসম প্রতিযোগিতা নিরূপণের সূত্রও রয়েছে।
ব্যাংক একীভূত হলে কার লাভ, কার ক্ষতি
একীভূত অথবা অধিগ্রহণের নির্দেশনায় ও এর বাস্তবায়নে দুটি পক্ষ সবচেয়ে ‘আতঙ্কিত’ হতে পারেন। প্রথমত, আমানতকারী এবং দ্বিতীয়ত একীভূতকৃত ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আমানতকারীদের ভয় থাকবে জমাকৃত আমানতের সুরক্ষা। তবে সে দায় একীভূত নীতিমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে পারে এবং উভয় শ্রেণিকেই আস্থায় আনা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অনৈতিক চাপ এবং রাজনৈতিক হিংসা-প্রতিহিংসা অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।
একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মালিকপক্ষের দাবিদাওয়া। একীভূতকরণের মাধ্যমে মালিকপক্ষ দায়মুক্তি চাইতে পারে। আবার তাদের মূলধন শেয়ারের বিপরীতে বাজারমূল্যের চেয়ে উচ্চমূল্যও দাবি করতে পারে।
শেয়ার মূল্য মূল্যায়নের যথার্থ পদ্ধতি অনুসরণ না করলে মালিকপক্ষের ‘পোয়াবারো’ হতে পারে। একদিকে দায় থেকে নিষ্কৃতি আর অন্যদিক শেয়ারমূল্য কারসাজির মাধ্যমে আখের গোছাতে কেউ বসে নেই তো? সে ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের কেউ কেউ মালিকপক্ষের ‘সহযোগী’ হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু ব্যাংক একীভূতকরণই তাই সমস্যার সমাধান নয়, কার স্বার্থে এবং কোন শর্তে করা হচ্ছে, সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে।
ড. শহীদুল জাহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক