মেট্রোরেল আইন ২০১৫-এর শুরুতেই মেট্রোরেলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘জনসাধারণকে স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত ও উন্নত গণপরিবহনসেবা প্রদান’। এই আইনের ১৮(২) ধারায় মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে মেট্রোরেল পরিচালনার ব্যয় এবং জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়গুলো বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল বিধিমালা ২০১৬-এর ২২(ঘ) ধারায় ‘অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়ার সহিত সামঞ্জস্য রক্ষার কথাও বলা হয়েছে। কাজেই মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারের দায়িত্ব হলো মেট্রোরেলের ঘোষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য মুনাফা অর্জন নয়, বরং মেট্রোরেলের পরিচালন ব্যয়, জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য ও গণপরিবহনের বিদ্যমান ভাড়ার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মেট্রোরেল আইন ২০১৫ অনুসারে, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের কমিটি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মেট্রোরেলের ভাড়া প্রস্তাব করে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা হারে। কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো মুনাফা না ধরে শুধু পরিচালন ব্যয় হিসাব করে এই ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। মুনাফা করতে হলে ভাড়া আরও বাড়াতে হবে (সূত্র: মেট্রোরেলের ভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সার প্রস্তাব, সমকাল, ১২ জানুয়ারি ২০২১)। ২০২২ সালের মার্চেও কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা হারে মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা সুপারিশের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে (সূত্র: মেট্রোরেলের ভাড়া হতে পারে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সা, ২৩ মার্চ ২০২২, জনকণ্ঠ)। কিন্তু তার কয়েক মাস পরই সেপ্টেম্বরে জানা গেল, মেট্রোরেলের ভাড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা হারে। সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল এই ২০ কিলোমিটারের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। ঠিক কী কারণে ভাড়া নির্ধারণী কমিটির প্রাথমিক সুপারিশের দ্বিগুণ হারে মেট্রোরেলের ভাড়া চূড়ান্ত করা হলো, তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। মেট্রোরেলের এই ভাড়া ঢাকার বিদ্যমান বাসভাড়ার দ্বিগুণ—ঢাকায় প্রতি কিলোমিটার বাসভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, যা মেট্রোরেল বিধিমালা ২০১৬-এর ২২(ঘ) ধারার বরখেলাপ।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মেট্রোরেলের ভাড়া বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় ও বিদ্যমান গণপরিবহনের ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি হলেও ডিএমটিসিএল-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘আশপাশের দেশের মেট্রোরেলের ভাড়া বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের আয়ের দিকটিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।’ শুধু তা-ই নয়, বলা হয়েছে, ‘পরিচালন ব্যয়, সুযোগ-সুবিধা ও আরামদায়ক বিবেচনা করলে ঢাকার মেট্রোরেলের নির্ধারিত ভাড়া কমই বলা যায়।’ (সূত্র: মেট্রোরেলের ভাড়া: কার লাভ, কার ক্ষতি, প্রথম আলো, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২)।
মেট্রোরেলের ভাড়ার তুলনা করতে হলে আর্থসামাজিক অবস্থা ও মাথাপিছু গড় আয় বিবেচনায় ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের মেট্রোরেলের ভাড়ার তুলনা করা প্রয়োজন। চলুন দেখা যাক, ভারতের কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও পাকিস্তানের লাহোরের মেট্রোরেলের ভাড়া ঢাকার মেট্রোরেলের ভাড়ার তুলনায় কত কম বা বেশি।
কলকাতা: ভারতের কলকাতায় মেট্রোরেলের ভাড়া বাসভাড়ার চেয়ে কম এবং সেটা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট উল্লেখ করে রেখেছে: “মেট্রো ফেয়ার ইজ অলসো ইন দ্য লোয়েস্ট ইন কম্পারিজন টু রোড ট্রান্সপোর্ট ইন দ্য সিটি অব কলকাতা” অর্থাৎ, “কলকাতা শহরের সড়ক পরিবহনের তুলনায় মেট্রোভাড়া সবচেয়ে কম।” কলকাতায় মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ রুপি বা ৬ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ রুপি বা ৩১ টাকা (ভারতীয় ১ রুপি সমান ১ দশমিক ২৪ টাকা হিসাবে)। কলকাতায় ৫ রুপি বা ৬ টাকা দিয়ে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়, ১০ রুপি বা ১২ টাকা দিয়ে ২ থেকে ৫ কিলোমিটার, ১৫ রুপি বা ১৯ টাকা দিয়ে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার, ২০ রুপি বা ২৫ টাকা দিয়ে ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং ২০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ রুপি বা ৩১ টাকা লাগে। (সূত্র: https://mtp.indianrailways.gov.in/view_section.jsp?lang=0&id=0,2,396; https://mtp.indianrailways.gov.in/uploads/files/1629713844228-Fare%20Structure%2023_08_2021.docx)
রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের অর্থে। ফলে মেট্রোরেলের আরামদায়ক ও দ্রুতগামী পরিবহনসেবা পাওয়ার অধিকার সর্বজনের। অধিক হারে ভাড়া নির্ধারণ করে মেট্রোরেলকে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলে, সেটা হবে রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণ।
নয়াদিল্লি: ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মেট্রোতে প্রথম ২ কিলোমিটারের জন্য ১০ রুপি বা ১২ টাকা, ২ থেকে ৫ কিলোমিটারের জন্য ২০ রুপি বা ২৫ টাকা, ৫ থেকে ১২ কিলোমিটারের জন্য ৩০ রুপি বা ৩৮ টাকা, ১২ থেকে ২১ কিলোমিটারের জন্য ৪০ রুপি বা ৫০ টাকা, ২১ থেকে ৩২ কিলোমিটারের জন্য ৫০ রুপি বা ৬৩ টাকা এবং ৩২ কিলোমিটারের বেশি যেকোনো দূরত্বে যাতায়াতের জন্য সর্বোচ্চ ৬০ রুপি বা ৭৬ টাকা খরচ হয়। সেক্ষেত্রে ছুটির দিনে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০ রুপি বা ১২ টাকা করে কম নেওয়া হয়। (সূত্র: https://www.delhimetrorail.com/fare)
মুম্বাই: মুম্বাই মেট্রোরেল লাইন ২-এ এবং ৭-এর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ রুপি বা ১২ টাকা, যা দিয়ে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যায়। এরপর ৩ থেকে ১২ কিলোমিটারের জন্য ২০ রুপি বা ২৫ টাকা, ১২ থেকে ১৮ কিলোমিটারের জন্য ৩০ রুপি বা ৩৮ টাকা, ১৮ থেকে ২৪ কিলোমিটারের জন্য ৪০ রুপি বা ৫০ টাকা এবং ২৪ থেকে ৩০ কিলোমিটারের জন্য ৫০ রুপি বা ৬৩ টাকা খরচ হয়।(সূত্র: https://themetrorailguy.com/mumbai-metro-red-line-info-route-maps-fares-tenders-updates/)
চেন্নাই: চেন্নাই মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ রুপি বা ১২ টাকা, যা দিয়ে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করা যায়। এরপর ২ থেকে ৫ কিলোমিটারের জন্য ২০ রুপি বা ২৫ টাকা, ৫ থেকে ১২ কিলোমিটারের জন্য ৩০ রুপি, ১২ থেকে ২১ কিলোমিটারের জন্য ৪০ রুপি বা ৫০ টাকা এবং ২১ থেকে ৩২ কিলোমিটারের জন্য ৫০ রুপি বা ৬৩ টাকা খরচ হয়। (সূত্র:http://timesofindia.indiatimes.com/articleshow/81130067.cms)
লাহোর: পাকিস্তানের লাহোরে অরেঞ্জ লাইন মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া পাকিস্তানি ২০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র ৯ টাকা এবং ২৭ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ভাড়া ৪০ রুপি বা ১৮ টাকা (পাকিস্তানি ১ রুপি সমান বাংলাদেশি ৪৫ পয়সা ধরে)। লাহোর মেট্রোতে ১ম ৪ কিলোমিটার যেতে লাগে ২০ রুপি বা ৯ টাকা, ৫ থেকে ৮ কিলোমিটারের জন্য ২৫ রুপি বা ১১ টাকা, ৯ থেকে ১২ কিলোমিটারের জন্য ৩০ রুপি বা ১৪ টাকা, ১৩ থেকে ১৬ কিলোমিটারের জন্য লাগে ৩৫ রুপি ১৬ টাকা এবং ১৬ থেকে ২৭ কিলোমিটারের জন্য লাগে ৪০ রুপি বা ১৮ টাকা। (সূত্র: ক্যাবিনেট অ্যাপ্রুভস নিউ ফেয়ারস অব অরেঞ্জ লাইন ট্রেন, পাকিস্তান অবজারভার, ১৯ নভেম্বর ২০২২, লিংক https://pakobserver.net/cabinet-approves-new-fares-of-orange-line-train/)
ওপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার মেট্রোরেলের ভাড়া শুধু দেশের ভেতরে বেসরকারি বাসভাড়ার দ্বিগুণ তা-ই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন নগরীর মেট্রোরেলের ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি। ঢাকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ এবং কলকাতার তিন গুণ। ঢাকার ২০ কিলোমিটার মেট্রোভাড়া ভারতের কলকাতার চার গুণ, নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের দ্বিগুণ এবং পাকিস্তানের লাহোরের ভাড়ার প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি।
ঢাকার মেট্রোরেলের মতো ভারত ও পাকিস্তানের মেট্রোরেলগুলোও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত, আরামদায়ক ও দ্রুতগামী। মেট্রোরেলের পরিচালন ব্যয়ও মোটামুটি একই রকম হওয়ার কথা। মেট্রোরেল আন্ডারগ্রাউন্ড বা মাটির নিচে থাকলে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কিছুটা বাড়তি খরচ হয়, যা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয় বা আর্থিক সামর্থ্যও দিল্লি কিংবা মুম্বাইয়ের মতো ব্যয়বহুল নগরীর চেয়ে বেশি নয়। কাজেই এসব নগরীর মেট্রোরেলের চেয়ে ঢাকার মেট্রোরেলের ভাড়া দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি হারে নির্ধারণ করা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
কেউ কেউ মনে করতে পারেন, মেট্রোরেলে যেহেতু বাসের চেয়ে কম সময়ে আরামদায়ক যাতায়াত করা যায়, তাই মেট্রোর ভাড়া বাসের চেয়ে দ্বিগুণ হলেও মেট্রোতে যাতায়াত করার মানুষের অভাব হবে না। সন্দেহ নেই, আর্থিকভাবে তুলনামূলক সামর্থ্যবানদের জন্য বাসের চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও মেট্রোতে যাতায়াত সুবিধাজনক হলেও এই বাড়তি ভাড়া নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য নতুন ধরনের বৈষম্য তৈরি করবে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের অর্থে। ফলে মেট্রোরেলের আরামদায়ক ও দ্রুতগামী পরিবহনসেবা পাওয়ার অধিকার সর্বজনের। অধিক হারে ভাড়া নির্ধারণ করে মেট্রোরেলকে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলে, সেটা হবে রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণ। ঠিক এই কারণেই ভারত ও পাকিস্তানের নগরীগুলোতে মেট্রোরেলের ভাড়া এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যেন তা সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের জন্য সহজলভ্য হয়।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার বিবেচনায় ও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় ঢাকার মেট্রোরেলের অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে মেট্রোরেল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে কী করে যানজট নিরসনের ঘোষিত উদ্দেশ্য সাধন হবে, সেটাও পরিষ্কার নয়। মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা দেখলে যে কেউ বুঝবেন, মেট্রোরেলে স্বল্প দূরত্বে চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। একদিকে বলা হচ্ছে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৫ টাকা, অন্যদিকে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা।
মেট্রোরেলের অনেক স্টেশনের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১ কিলোমিটার এর কম বা তার কাছাকাছি। যেমন মিরপুর-১২ থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১১ থেকে মিরপুর-১০, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া—এসব স্টেশনে একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ১ কিলোমিটারের কম। (সূত্র: ঢাকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লির দ্বিগুণ, কলকাতার তিন গুণ, লাহোরের আড়াই গুণ, ডেইলি স্টার অনলাইন বাংলা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-391076 )। কিন্তু একটি থেকে আরেকটিতে যেতে হলে সর্বনিম্ন ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা। ফলে উদাহরণস্বরূপ, মিরপুর-১০ থেকে কাজীপাড়া যেতে কোনো যাত্রী ২০ টাকা খরচ করতে চাইবেন না। কারণ, এর চেয়ে অর্ধেক ভাড়ায় তিনি বাসে যেতে পারবেন।
মেট্রোরেলের বাড়তি ভাড়ার কারণে পরিবার নিয়ে যাতায়াতেও যাত্রীরা নিরুৎসাহিত হবেন। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরা থেকে একটি পরিবারের ৪ জনের মতিঝিলে যেতে হলে খরচ পড়বে ৪০০ টাকা, যা তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি কিংবা রাইড শেয়ারিং সেবার ব্যবহার বজায় রাখতে উৎসাহিত করতে পারে। বেশি ভাড়ার কারণে শ্রমজীবী মানুষ তো দূরের কথা, এমনকি নিম্ন আয়ের অফিসযাত্রীদের পক্ষেও নিয়মিত মেট্রো ব্যবহার কঠিন হয়ে যাবে। প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল অফিসে যাতায়াত করলে মেট্রোরেলে দৈনিক ভাড়া গুনতে হবে ২০০ টাকা। সপ্তাহে ৬ দিন অফিস করলে মাসে প্রায় ৫ হাজার ২০০ টাকা খরচ হবে শুধু যাতায়াতেই, যে ব্যয় করা অনেক কর্মজীবী মানুষের পক্ষেই দুঃসাধ্য।
কাজেই মেট্রোরেল যেন শুধু সামর্থ্যবান শ্রেণির মানুষের বাহনে পরিণত না হয় এবং সর্বস্তরের মানুষের ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে যানজট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার রাখতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে এবং প্রতিবেশী দেশের নগরীগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেট্রোরেলের ভাড়া হ্রাস করা প্রয়োজন। সামনে আরও অনেক মেট্রোরেল নির্মিত হবে, সেসব মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণেও প্রথম মেট্রোরেল বেঞ্চমার্ক হিসেবে কাজ করবে। এ কারণেও বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের ভাড়াকে মুনাফাবান্ধব নয়, বরং জনবান্ধব করার ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া জরুরি।
কল্লোল মোস্তফা লেখক ও প্রকৌশলী, সর্বজনকথা সাময়িকীর নির্বাহী সম্পাদক