মাহা মির্জার কলাম

‘গরিবের দেশে’ ধনী কীভাবে আরও ধনী হয়

একটা সময় ছিল, যখন ধনী হতে হলে উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হতো, কলকারখানা করতে হতো। কিন্তু গত এক দশকে দেখা গেল, ধনী হওয়ার ‘বিকল্প উপায়’ তৈরি হয়েছে। কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় ‘গরিবের দেশে’ ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন, তা নিয়ে লিখেছেন মাহা মির্জা

আম্বানির ছেলের বিয়েতে এক হাজার কোটি টাকার জৌলুশ দেখা গেল। প্রশ্ন উঠল, কোটি কোটি গরিব মানুষের দেশে এমন খরচবহুল বিয়ের অনুষ্ঠান করা ঠিক হলো কি না। কেউ বললেন, আম্বানির টাকা আছে, আম্বানি খরচ করেছেন। সমস্যা কী?

কেউ বললেন, আম্বানির মোট সম্পদের তুলনায় এই খরচ কিছুই নয়। আম্বানির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১১ লাখ কোটি টাকা। বলা হয়, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা—এই দুই রাজ্যের জিডিপি একসঙ্গে করলেও আম্বানি ও আদানির সম্মিলিত সম্পদের সমান হবে না।

আম্বানি কেমন করে এমন অস্বাভাবিক ধনসম্পদের মালিক হয়ে উঠলেন, সেই প্রশ্নও করতে হয়। এত এত গরিব মানুষের দেশে একজন আম্বানি বা একজন আদানির এই অদ্ভুত রকমের ধনী হয়ে ওঠা কি কাকতালীয়? তাঁরা কি কঠোর পরিশ্রম করে ধনী হয়েছেন? নতুন প্রযুক্তি বা নতুন ‘ইনোভেশন’ করে ধনী হয়েছেন?

এটা কি একেবারেই কাকতালীয় যে নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই আদানি ও আম্বানির সম্পদের পরিমাণ খুবই অদ্ভুতভাবে বেড়েছে? এটাও কি কাকতালীয় যে করোনা মহামারির সময় ভারতের কয়েক কোটি মানুষ যখন কাজ হারালেন, সেই একই বছর আম্বানির সম্পদের পরিমাণ একলাফে ১৩ বিলিয়ন ডলার বেড়ে গেল! আর আদানির সম্পদ বাড়ল প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার!

অরবিন্দ কেজরিওয়াল একবার বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি নির্বাচিত হলে পরের পাঁচ বছর মোদি নন, দেশ চালাবে ‘আম্বানি ব্রাদার্স’। কেজরিওয়াল খামাখা এ কথা বলেননি। গুজরাটি ব্যবসায়ী আদানি-আম্বানিদের সঙ্গে মোদির সম্পর্ক বহু পুরোনো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আদানির প্রাইভেট জেটে চেপেই মোদি প্রচারণা চালাতেন। পরবর্তী সময় করপোরেট ভারতের সঙ্গে মোদির সম্পর্কটা হয়ে গেল গভীর লেনদেনের। মোদি ক্ষমতায় গিয়ে প্রথম কয়েক বছরেই অর্ধশত দেশ সফর করেছেন। এসব সফরে আঠার মতো লেগে ছিলেন এ দুই টাইকুন।

মোদি রাশিয়ায় গেছেন, আমেরিকা, জাপান, মালয়েশিয়া, ইরান, ও ইসরায়েলেও গেছেন। বাংলাদেশেও এসেছেন। সফর শেষে আদানি-আম্বানির মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো মোট ১৮টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অ্যাগ্রো, ফার্মা, জাহাজ নির্মাণ, ইন্টারনেট প্রযুক্তি, বন্দর, প্রতিরক্ষা—কোনো খাত বাকি নেই। সবচেয়ে বড় চুক্তিগুলো হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে, আম্বানিদের রিলায়েন্স ডিফেন্সের সঙ্গে।

মোদির বাংলাদেশ সফরের পর মেঘনা ঘাটে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পেয়েছে রিলায়েন্স। আর খুবই উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি করেছে আদানি। উল্লেখ্য, আদানির বার্ষিক ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ (বসিয়ে বসিয়ে ভাড়া) প্রায় ৪৫ কোটি ডলার! অথচ বাংলাদেশের জন্য এসব চুক্তি ছিল সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় (দেখুন, আদানি গোড্ডা পাওয়ার প্রজেক্ট: টু এক্সপেনসিভ, টু লেইট, টু রিস্কি ফর বাংলাদেশ, আইইইএফএ, ২০১৮।)

অর্থাৎ এটা পরিষ্কার, মোদি সরকারকে খুশি রাখতে হলে আসলে আদানি-আম্বানিদেরই খুশি রাখতে হয়।

২০১৯ সালে ভারতের পার্লামেন্টে নতুন কৃষি বিল পাস হলো। কৃষকেরা আন্দোলন শুরু করলেন। পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে লাখ লাখ কৃষক দিল্লির পথে হাঁটাও দিলেন। সেই দীর্ঘ হাঁটার পথে কৃষকেরা প্রায় দেড় হাজার জিও টাওয়ার ভাঙচুর করলেন! কিন্তু কেন? কৃষকের আন্দোলন তো কৃষি বিলের বিরুদ্ধে, আম্বানির ওপর কৃষকদের এত রাগ কেন?

কৃষকেরা বলছিলেন, এই নতুন বিল কার্যকর হলে সরকারনিয়ন্ত্রিত স্থানীয় বাজারগুলো আর থাকবে না। গ্রামগঞ্জের বাজারগুলো সরাসরি ব্যক্তিমালিকানা খাতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ভারতের কৃষকেরা চান না, বড় অ্যাগ্রো কোম্পানিগুলো তাঁদের স্থানীয় বাজারব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়ুক। সমস্যা হলো, রিলায়েন্স তো শুধু ‘জিও’, ‘ওয়েল’ বা ‘মিডিয়া’ নিয়ে ব্যবসা করে না। রিলায়েন্স ‘অ্যাগ্রিকালচার’ নিয়েও ব্যবসা করে। কৃষকেরা বলছেন, রিলায়েন্সের মতো ‘অ্যাগ্রো-দৈত্য’কে খুশি করতেই ভারত সরকারের এই বিল।

মহামারিতে ধনীর সম্পদ বাড়ে

কোভিডের সময় ভারতের জিডিপি কমেছিল ৮ শতাংশ। জিডিপি কমেছে মানে উৎপাদন কমেছে, শিল্প স্থবির হয়েছে, কারখানা চলেনি। অথচ মহামারির বছরেই ভারতের ১৪০ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেল! স্থবির অর্থনীতিতেও কোটিপতিদের সম্পদ বৃদ্ধি কেমন করে সম্ভব? সাংবাদিক পি সাইনাথ বললেন, ‘ওয়েলথ ট্রান্সফারড ফ্রম পুওর টু রিচ।’ অর্থাৎ নিচের তলার মানুষের পকেট থেকে টাকা চলে গেছে ওপরতলায়। বিশেষ করে ফার্মা, চিকিৎসা ও ডিজিটাল খাতে।

একই ঘটনা আমাদের দেশেও ঘটেছে। কোভিডের সময় শ্রমিক দিশেহারা, সঞ্চয়হারা। বিবিএস প্রতিবেদন বলছে, ওই বছর বাংলাদেশের মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। অথচ একই বছর দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার। উৎপাদন কমেছে, কলকারখানা বন্ধ হয়েছে, দোকানপাট বন্ধ থেকেছে, জিডিপি সংকুচিত হয়েছে, কিন্তু ধনীরা ঠিকই আরও ধনী হয়েছে।

মহামারির পরের বছর তো বিশ্বখ্যাত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ধনীদের ‘ডিপোজিট’ বেড়ে দাঁড়াল প্রায় আট হাজার কোটি টাকা! প্রতিবেদন বলছে, মহামারির পরপরই এই ‘ডিপোজিট’ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ হারে! এমনকি মহামারির ১৮ মাসে দুবাইয়ের রিয়েল-এস্টেট খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশি নাগরিকেরাই! ধারণা করা হয়, প্রায় পুরোটাই পাচার করা টাকা!

আবার এদিকে ভয়ংকর ডলার-সংকটের মধ্যেও দেশে বিলাসী গাড়ির আমদানি ঠেকানো যাচ্ছে না। গত চার বছরে শত শত বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভার আর মার্সিডিজ ঢুকেছে দেশে! আজব ব্যাপার হলো, ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর পরও বিলাসী গাড়ির আমদানি বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ!

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদন ২০১৮ সালেই দেখিয়েছিল যে বড়লোকের সংখ্যা ‘বৃদ্ধি’তে সারা দুনিয়ার মধ্যে চীন নয়, ভারত নয়, দুবাইও নয়; বরং আমাদের এই ঋণগ্রস্ত বাংলাদেশই সবার শীর্ষে! নতুন শিল্পায়ন নেই, নতুন কারখানা নেই, হাজারে হাজারে ছাঁটাই হচ্ছে, গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বিপর্যস্ত; অথচ ধনী আরও ধনী হচ্ছেন। কীভাবে?

একটা সময় ছিল, যখন ধনী হতে হলে উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হতো। কলকারখানা করতে হতো। বাংলাদেশের পুরোনো শিল্পপতিদের একটা বড় অংশই ‘উৎপাদন’ করে, শিল্প করে বা ‘গার্মেন্টস’ করেই ধনী হয়েছে (যদিও এই শিল্পপতিদেরই আরেকটি অংশ জাতীয় সম্পদ লুট আর রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের টাকা মেরেই ধনী হয়েছিল।)

তো গত এক দশকে আমরা দেখলাম, এই ‘উন্নয়ন’ জামানায় শতকোটি টাকার মেশিন বসিয়ে ঘটঘট শব্দ করে উৎপাদন-টুৎপাদন করে ধনী হওয়ার দরকার নেই। বরং ধনী হওয়ার অনেক সহজ উপায় আছে। প্রথমত, এই দেশে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর টাকা ফেরত দেওয়া লাগে না। দ্বিতীয়ত, শুধু কমিশন-বাণিজ্য করেই হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের লোক বসিয়ে গোটা ব্যাংকই ‘খেয়ে’ ফেলা যায়। চতুর্থত, প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে কিম্ভূতকিমাকার খরচ দেখিয়ে প্রচুর পরিমাণে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা সম্ভব।

ব্যাংকের টাকায় বিলাসী জীবন ও আমাদের কৃষি বাজেট

ভারতের একসময়ের শীর্ষ ধনী ছিলেন বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি আর সুব্রত রায় (নেটফ্লিক্স এই তিন ধনীকে নিয়ে বানিয়েছে বহুল আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘ব্যাড বয় বিলিয়নিয়ার্স’)। এই তিন ধনীর চিন্তাভাবনায় অদ্ভুত মিল আছে। এসব ধনী ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে কয়েক হাজার কোটি রুপি ঋণ নিয়েছিলেন এবং ‘পাবলিক মানি’ দিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করে গেছেন। কিন্তু তাঁরা মনেই করেননি যে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে না পারা একটি ফৌজদারি অপরাধ।

বাংলাদেশের শীর্ষ ধনীরা কি তাঁদের চেয়ে আলাদা? ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেন? দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানটির কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকার পাওনা আছে ২২ হাজার কোটি টাকা! (জনতা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৪০ হাজার কোটি টাকাই দেশের শীর্ষ তিন শিল্প গ্রুপের)। এর আগেও দেশের শীর্ষ চার ধনীকে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক।

এই ‘বিশেষ বিবেচনা’ জিনিসটা কী? এগুলো কার জন্য প্রযোজ্য? কৃষি ব্যাংক নামের একটা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক আছে বাংলাদেশে। ওখানে আছে ‘বিশেষ বিবেচনা’ বলি কিছু আছে? পত্রিকায় দেখলাম, ‘ঈশ্বরদীতে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। ১২ জনকে হাজতে পাঠানো হয়েছে।’ উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে এসব চাষার ‘ঋণ’ ছিল মোটে ৩০ হাজার টাকা।

বর্তমানে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সোয়া ১ লাখ কোটি টাকা। অন্যদিকে, দেশের ৪ কোটি কৃষকের জন্য রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্যে ধনীদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ

দেশ-বিদেশের ভূতত্ত্ববিদেরা ক্রমাগত বলে গেছেন, বাংলাদেশ গ্যাসসম্পদে সমৃদ্ধ, এলএনজি আমদানির প্রয়োজন নেই। অথচ একটি বিশেষ ‘গ্রুপ’কে দেওয়া হলো বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানির লাইসেন্স। তার মেশিন নেই, জনবল নেই, সক্ষমতাও নেই। ভাড়া করা হলো বিদেশি কোম্পানি। বিরাট কমিশন-বাণিজ্য হলো। যে আমদানি করছে, সেই ‘রিগ্যাসিফিকেশন’ করছে, সে-ই টার্মিনাল বানাচ্ছে, সে-ই ইচ্ছেমতো ‘বিল’ করছে সরকারকে। এভাবে দেশের সবচেয়ে জরুরি ‘সাপ্লাই চেইন’টিকে পরিকল্পনা করেই তুলে দেওয়া হলো এই শীর্ষ ধনী কোম্পানির হাতে।

দেশের বিদ্যুৎ খাতকে আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপের হাতে। বছরের অধিকাংশ সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদের বসিয়ে বসিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই ‘বসিয়ে ভাড়া’র পরিমাণটা তো রীতিমতো অবিশ্বাস্য। গত এক দশকে ‘প্রাইভেট’ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো শুধু ‘ভাড়া’ বাবদই নিয়ে গেছে এক লাখ কোটি টাকা (দেশের ৬ বছরের কৃষি বাজেটের সমান)। চীন, জাপান, ভারত, রাশিয়া, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির কাছে বাংলাদেশের সব দেনা একসঙ্গে করলেও এত টাকা হয় না!

ব্যাংক ও জ্বালানি খাত শেষ। বাকি রইল খাদ্য। ১৭ কোটি বিপর্যস্ত মানুষের খাদ্য।

হাতে গোনা কিছু কোম্পানির হাতে চলে গেছে গোটা বাজারের নিয়ন্ত্রণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় গম, চিনি, আটা আর সয়াবিন তেলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে একটি বিশেষ গ্রুপ। যে আমদানি করছে, সে-ই রিফাইনারির মালিক, সে-ই প্যাকেটজাত করছে। কিসের প্রতিযোগিতা, কিসের ‘ফ্রি মার্কেট’। ইচ্ছেমতো দাম বাড়াও। মুরগি, ডিম, ওষুধ, ফিডও চলে গেছে আরেকটি বৃহৎ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে কয়েক লাখ প্রান্তিক খামারি নিঃস্ব হয়েছেন। সাধারণ মানুষের প্লেট থেকে আমিষ হাওয়া হয়ে গেছে।

ক্লান্ত মানুষ ধারদেনা করে টিকে আছে এই দেশে। চাল, ডাল, ঘরভাড়া, মায়ের চিকিৎসা, সন্তানের পড়াশোনা—সব চলে গেছে আয়ত্তের বাইরে। আর এখানেই ১০ ভাগ লোক লুটে নিয়েছেন দেশের ৪০ ভাগ সম্পদ। এই অবস্থাকে কেউ বলছেন ‘গ্যাংস্টার ক্যাপিটালিজম’, কেউ বলছেন ‘পুঁজিবাদের দুর্বৃত্তায়ন’। কিন্তু এই পরিস্থিতি তো ‘অ্যাক্সিডেন্টাল’ নয়।

উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বৈদেশিক ঋণ এসেছে, ঋণের টাকায় অস্বাভাবিক খরচের প্রকল্প হয়েছে, পাবলিক ব্যাংক থেকে টাকা চলে গেছে ধনীর ‘প্রাইভেট’ অ্যাকাউন্টে। ধনী সেই টাকা দেশের ভেতরে বিনিয়োগ করেনি, বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। মধ্যখান থেকে ঋণ পরিশোধ করতে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর চাপানো হয়েছে অস্বাভাবিক ট্যাক্সের বোঝা।

এদিকে এনবিআর বলছে, দেশের ৮৭ ভাগ ধনীই আয়কর দেন না! এই ভূখণ্ডে তাই ধনীর আরও ধনী হয়ে ওঠা কোনো ‘অঘটন’ নয়। গণতন্ত্র, জবাবদিহি, বিচারব্যবস্থা, ব্যাংকিং—সবকিছুই পরিকল্পনামাফিক কবজা করা হয়েছে শুধু পাবলিক খাতের বিপুল সম্পদ ধনীর হাতে তুলে দিতেই। সরকার ও ধনী ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে যোগসাজশ করে, প্রভাব খাটিয়ে, আইন পরিবর্তন করে জনগণের সম্পদ ধীরে ধীরে ‘প্রাইভেট কোম্পানির’ হাতে স্থানান্তর করেছেন। উন্নয়নের দেড় দশকে এই কাজটাই সবচেয়ে সফলভাবে হয়েছে।

  • মাহা মির্জা লেখক-গবেষক