বিশ্লেষণ

বজ্রপাতে কেন মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে

বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার জন্য যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর কার্যকারিতা এবং ব্যয় নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে। বজ্রপাত ঠেকাতে খরচ বাড়লেও প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কেন কমছে না, তা নিয়ে লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা

রংপুরের পীরগঞ্জের দুই ভাই আরও অনেকের সঙ্গে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বীর বাসিন্দা ইউনিয়নের নোয়াবাড়ী গ্রামে এসেছিলেন ধান কাটতে। ধানকাটা শ্রমিক আফজাল আর আমীর গত ১৮ মে বজ্রপাতে আহত হন। কাছের মাঠ থেকে অন্য ব্যক্তিরা ছুটে এসে দুই ভাইকে হাসপাতালে নিলে সেখানে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। লাশ পড়ে থাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমকে জানান, নিহত দুজনের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এলে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

২৮ বছর আগে ১৯৯৬ সালের মে মাসের ১৩ তারিখে কালিহাতী, গোপালপুর, বাসাইল, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার ৪০টি গ্রাম টর্নেডো ও বজ্রপাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই বিভীষিকাময় ঘটনায় ধান কাটতে আসা রংপুর অঞ্চলের অনেক শ্রমিক নিহত হন। দুই দিন পর তাঁদের লাশ এক গর্তে কবর দেওয়া হয়। সেই শ্রমিকদের নাম আমরা কেউ জানি না। আফজাল-আমীরের নাম জানি, তাঁদের লাশ প্রমাণ সাপেক্ষে আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস মেলে।

২৮ বছরে পরিবর্তন শুধু এটুকুই। গরিব মানুষের জন্য এটাই-বা কম কী? বজ্রপাতে মৃত মানুষের মিছিল দিন দিন লম্বা হচ্ছে।

আট বছর আগে ২০১৬ সালের ১৭ মে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতকে সরকারি তালিকাভুক্ত দুর্যোগের মর্যাদা দেয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনায় এর আগে ১২টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ ছিল। সেদিনের সেই সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতেই জানিয়ে দেওয়া হয়— জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের বজ্রপাত হচ্ছে।

আসলেই কি তা-ই? কিসের ভিত্তিতে এই উপসংহার। সেসব আলোচনা বা প্রশ্ন না উঠলেও জানিয়ে দেওয়া হয় বজ্রপাত পরিস্থিতিতে সরকার খুবই উদ্বিগ্ন, অচিরেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে মসজিদ-মন্দিরের মাধ্যমে বজ্রপাত নিয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করা হবে। যারা মারা যাবে, তারা পাবে ২৫ হাজার টাকা আর আহত হয়ে বেঁচে থাকলে পাবে ৭ হাজার টাকা। আট বছর ধরে ক্ষতিপূরণ একই আছে।

সে বছর (২০১৬ সাল) সংবাদ সম্মেলনের দিন পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বজ্রপাতে সারা দেশে মৃত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮১। চলতি বছর (২০২৪) একই সময়কালে মৃত মানুষের সংখ্যা ৯৫। এর মধ্যে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আছেন ৬৭ জন। গত আট বছরে বজ্রপাতে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এই পরিসংখ্যান থেকে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতির আলামত খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বজ্রপাত থেকে মানুষের প্রাণ রক্ষার জন্য প্রথমে নেওয়া হয়েছিল তালগাছ সৃজন প্রকল্প। কথা ছিল, সারা দেশে ৪০ লাখ তালগাছ লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়া হবে। তাক লাগানো দূরে থাক, ব্যবস্থাপনার তালগোলে প্রায় শতকোটি টাকা পানির মতো বেরিয়ে যেতে বোঝা গেল, তালগাছের চারা কোথাও মরে গেছে, কোথাও চারা না লাগিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে। ‘গায়েবি’ গাছের ছড়াছড়ি।

এবার পরিকল্পনা কমিশন ঝেড়ে কাশল, খুবই পাণ্ডিত্যপূর্ণ সবক এল, সেখান থেকে ‘তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া। কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও হয়নি।’ তবে কি ঝোঁকের মাথায় আগাপাছতলা না ভেবেই তারা এই প্রকল্পের ছাড়পত্র দিয়েছিল। ঝোঁকের ঝাঁকিতে টাকা ঝরেছে, কিন্তু মানুষের ঝুঁকি কমেনি।

শেষ পর্যন্ত আবার এক মে মাসে (২০২২ সালের ১১ মে) তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী সভা করে জানালেন, তালগাছ লাগানোর কার্যক্রমটি বাতিল হয়েছে। একটি তালগাছ বড় হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ বছর। এত সময় ধরে অপেক্ষার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

এখন তাল কর্মসূচিকে ‘থুক্কু’ দিয়ে শুরু হয়েছে বজ্রপাত প্রতিরোধক বা লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপনের কাজ।

লাইটনিং অ্যারেস্টার কী

তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর বৈদ্যুতিক রোধের মাত্রা অনেক কম। তাই সাধারণত এ ধরনের ধাতু দিয়ে বজ্রনিরোধক দণ্ড তৈরি করা হয়। এটি উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎকে সহজে নিরাপদে মাটিতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। ৩০ থেকে ৪০ ফুট লম্বা দণ্ডে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি জিআইপি পাইপ এবং তামার তার থাকে। বজ্রনিরোধক দণ্ডের ওপর বসানো লাইটনিং অ্যারেস্টার ডিভাইসের মূল কাজ, নির্ধারিত ব্যাসের মধ্যে বজ্রপাত হলে তা টেনে মাটিতে নামিয়ে আনা। এতে মিটারের মতো কাউন্টার রয়েছে, কয়টি বজ্রপাত হলো, তার হিসাব সেখানে থাকবে। যন্ত্রটিকে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় রাখতে হয়।

অ্যারেস্টার কত দূর পর্যন্ত কার্যকর

এটা নির্ভর করে অ্যারেস্টারের শক্তির ওপর। উৎপাদকেরা নানা শক্তির অ্যারেস্টার বাজারজাত করেন। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, যে ধরনের অ্যারেস্টার এখন ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে ১০০ মিটার ব্যাসের মধ্যে এটা কার্যকর হবে।

২০২১-২২ অর্থবছরে হবিগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতনিরোধক যন্ত্র স্থাপনের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। জেলার ৯ উপজেলায় লাইটনিং অ্যারেস্টার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের ৬ উপজেলায় ২৪টি বজ্রনিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। একই কর্মসূচির আওতায় নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় বজ্রপাত–নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। আরও কয়েকটি জেলার নানা উপজেলায় এগুলো বসানো হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মতো দণ্ড বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ও। তারা এই কাজে খরচ করবে ২৩১ কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার এক মেগা বাজেট নিয়ে এগিয়ে আসছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেখানেও বজ্রনিরোধক দণ্ডের হিস্যা আছে। এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর ২০১৮ সালে বজ্রপাতের আগাম সংকেত দিতে ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি জায়গায় লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর (সংকেত ব্যবস্থা) বসিয়েছিল, যা এখন কাজে লাগছে না।

লোকবলের সংস্থান না রেখে, মানবসম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পনা ও বরাদ্দ না রেখে শুধু যন্ত্রপাতি নিয়ে একেকটি কামরা জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে বা হচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে যেসব অবৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তা দেখে আমি হতাশ। এ ধরনের চিন্তা কীভাবে আসে? এ ধরনের প্রকল্প সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।…’

কেমন আছে দণ্ডগুলো

১০ মে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বজ্রপাতনিরোধক যন্ত্র (লাইটনিং অ্যারেস্টার মেশিন) বসানো হয়েছে। তবে যন্ত্রটি কতটা বজ্রপাতনিরোধক, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওরে যন্ত্রটি বসানোর পর আর কেউ খোঁজ নেননি।’

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের অফিসের দালানের ছাদে একটি লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপন করা হয়েছে। সমালোচকেরা এ রকম স্থান নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সে বিতর্ক আপাতত মুলতবি রেখে বলা যায়, এখন পর্যন্ত দেখা লাইটনিং অ্যারেস্টারগুলোর মধ্যে যেগুলো চালু অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম। তবে নিচতলায় রাখা দণ্ডের সঙ্গে তারের মাধ্যমে সংযুক্ত মিটারবক্সটির চাবি খুঁজে পাওয়া যায়নি। জানানো হয়, চাবিটি থাকে সদর উপজেলা অফিসে পিআইওর তত্ত্বাবধানে। মিটার এক দালানে এবং চাবি আরেক দালানে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠালে উত্তরগুলো অজুহাতের মতো শোনায়।

দণ্ডটির পাশেই আছে ওয়্যারলেস টাওয়ার। সেটি আবার উচ্চতায় স্থাপিত অ্যারেস্টার দণ্ডের চেয়ে লম্বা। সাধারণ বিবেচনায় এটি একটি ‘অসাধারণ’ ত্রুটি। মেঘ থেকে নামার সময় বজ্র সবচেয়ে আগে যাকে পায়, তাকে ধাক্কা দেয়। নেত্রকোনার ক্ষেত্রে ওয়্যারলেস টাওয়ারটি ছেড়ে বজ্র তার থেকে নিচুতে থাকা অ্যারেস্টারের কাছে গিয়ে ‘আত্মসমর্পণ’ করবে, এটি প্রযুক্তি বা যুক্তি কোনো নিরিখেই সঠিক নয়। নেত্রকোনা শহরের একটি খেলার মাঠে স্থাপিত অ্যারেস্টার দণ্ডের ওপর বসানো অ্যারেস্টার ডিভাইসটির কোনো হদিস মিলল না। আর চাবির অভাবে আগের মিটারবক্সটি খোলা না গেলেও এটির মিটারবক্স এমনিতেই হাঁ করে তাকিয়ে ছিল।

বজ্রপাত থেকে প্রাণ রক্ষার সাশ্রয়ী পথ

২১ মের একটি খবর বলে দেয়, কৃষি ও মৎস্য সম্পদের জন্য কত উপকারী এই মেঘ-বজ্রের খেলা। ওই দিন বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীতে মৌসুমের প্রথম ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ) মা মাছ। সারা দেশের মৎস্যজীবীরা তাকিয়ে থাকেন হালদার দিকে। হ্যাচারির বাইরে এই প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছের পোনা পেলে তাঁরা আর কিছু চান না। সেদিন বেলা ১১টার পর জোয়ারের সময় নদীতে ৮ থেকে ১০টি স্থানে মা মাছগুলো ডিম ছাড়া শুরু করে। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই উপকারী প্রাকৃতিক ব্যবস্থা থেকে জানমালের সুরক্ষা। কৃষিজমির চকে আগে যেমন বাবলা, খেজুরগাছের সমারোহ ছিল, সেটা আবার আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। গাছ লাগানোর গড্ডলিকা প্রবাহে না ভেসে গাছ কাটা বন্ধের কাজটা অগ্রাধিকার দিতে হবে।

তাজা তালগাছ কেটে ডোঙা বানানো ও বিক্রি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক নড়াইলের জেলা প্রশাসক ইচ্ছা করলেই বছরে হাজার ছয়েক তালগাছ বাঁচাতে পারেন। নড়াইল জেলার চাচুড়ী, তুলারামপুর, দীঘলিয়াসহ বিভিন্ন হাটে ডোঙা বিক্রি শুরু হয় জুন মাসে, চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নড়াইল-যশোর সড়কে তুলারামপুরের হাট দেশের সবচেয়ে বড় ডোঙার হাট। এখানে সপ্তাহের শুক্র ও সোমবারে হাট বসে। এখানকার প্রতিটি হাটে কয়েক শ ডোঙা বেচাকেনা হয়। জনস্বার্থে তুলারামপুরের ডোঙার হাট বন্ধ করা কি খুবই কঠিন কাজ?

নেপাল ও ভারতের বজ্রপাতে বেঁচে যাওয়া কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন এমন সব মাঠকর্মী দেখেছেন, যেসব খেতমজুরের পায়ে রাবারের জুতা ছিল, তাদের বেঁচে যাওয়ার সংখ্যা খালি পায়ে থাকাদের চেয়ে অনেক বেশি। তা-ই যদি হয়, তাহলে রক্ষণাবেক্ষণ আর নজরদারির মুক্ত ব্যয়বহুল দণ্ড স্থাপনের চেয়ে জুতার দিকে মন দিতে বাধা কোথায়?

ক্ষতিপূরণ ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা

বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশই কৃষক, জেলেসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করলেও সরকার এখন পর্যন্ত আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে আলাদা তহবিল গঠন করেনি। বজ্রপাতের ঘটনায় আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলে জেলা প্রশাসকের দুর্যোগ ও ত্রাণ তহবিল থেকে মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে পরিবারকে ২০ থেকে ২৫ এবং আহত ব্যক্তিকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা করা হয়।

এর আগে বলা হয়েছিল, বজ্রপাতে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে তাঁর পরিবারকে চাল ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। সব ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। ভারতে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ মৃত ব্যক্তির জন্য ২ লাখ এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য ৫০ হাজার রুপি। বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি মনে করে, বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারপিছু কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।

বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে যত মাতম হয়, আহত ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা সেই তুলনায় একেবারে কম। অথচ আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিহত ব্যক্তিদের চেয়ে কমপক্ষে তিন গুণ। জানে বেঁচে গেলেও তাঁদের অনেকেই আর ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরতে পারেন না। দেশে এখনো বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার কোনো নির্দেশিকা বা ‘প্রটোকল’ তৈরি হয়নি। বিনিয়োগ হওয়া উচিত বিজ্ঞানসম্মত এক কার্যকর ‘প্রটোকল’ তৈরিতে। তবে একটা জবাবদিহি আর অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে অথবা সেই ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজটি ত্বরান্বিত করতে হবে।

  • গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক