আজব শহর ঢাকা: এত ‘উন্নয়ন’, তবুও এত ভোগান্তি

যানজট সমস্যার সমাধানে বানানো হয়েছিল উড়ালসড়ক। সেখানেও নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে যানবাহন। একই চিত্র নিচের সড়কেও। তীব্র ভোগান্তিতে রাজধানীর বাসিন্দারা। শান্তিনগর এলাকা।
ফাইল ছবি: সাজিদ হোসেন

মেট্রোরেলের আরও দুটি স্টেশন বুধবার খুলে যাচ্ছে। এটি অবশ্যই আনন্দের সংবাদ। ঢাকায় মেট্রোরেল চলছে—এটি হয়তো আমাদের প্রজন্ম একটা সময় কখনো ভাবতেই পারেনি। সেই ঢাকায় এখন মেট্রোরেল আছে। হয়েছে অনেক নতুন নতুন ফ্লাইওভার। চারদিকে যে কর্মযজ্ঞ চলছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যে কেউ একটা দীর্ঘ সময় পর ঢাকায় পা রাখলে বুঝতে পারবে, ঢাকার বাহ্যিক রূপ পাল্টে যাচ্ছে দ্রুতই। কিন্তু সবকিছু কি আদৌ পাল্টাচ্ছে?

এই যে এত রাস্তাঘাট, মেট্রোরেল কিংবা ফ্লাইওভার হচ্ছে, এতে কি ঢাকা শহরের ট্র্যাফিক জ্যাম এতটুকু কমেছে? নাকি বেড়েছে? কারও কাছে কি কোনো পরিসংখ্যান আছে—প্রতিদিন অফিসে যাওয়া-আসা করা মানুষগুলো দিনের কতটা সময় রাস্তাতেই পার করে দিচ্ছেন? আর এই সময়ে তাঁরা যখন ট্র্যাফিক জ্যামে আঁটকে থাকেন, তখন কি তাঁরা এসব প্রকল্পের প্রশংসা করেন, নাকি উল্টো সমালোচনা করেন? তাহলে এসব প্রকল্পের সুফলটা আসলে কারা ভোগ করছে? যারা এসব প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত তারা, নাকি সাধারণ মানুষ? যদি সাধারণ মানুষের জন্যই এসব করা হয়ে থাকে, তাহলে তো এর সুফল তাদের পাওয়া উচিত। কেন ঢাকা শহরের ট্র্যাফিক জ্যাম দিন দিন বেড়েই চলছে?

কারণ, কোনো কিছুই সঠিক পরিকল্পনামাফিক এগোয় না এই জনপদে। নেই কোনো সমন্বয়। কোথাও সঠিক তদারকি হয় কি না, এ নিয়েও রয়েছে হাজারটা প্রশ্ন। কয়েক দিন ধরে দেশের নানা জায়গায় বিভিন্ন বিস্ফোরণে অনেক মানুষ মারা গিয়েছেন। সীতাকুণ্ড থেকে ঢাকার গুলিস্তান—সব জায়গায় একই চিত্র। এখন জানা যাচ্ছে সীতাকুণ্ডে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, এর কারণ হচ্ছে, যারা এসব তদারক করে, সেই সংস্থার গাফিলতি ছিল। হয়তো কয় দিন পর গুলিস্তানের ঘটনারও কারণ জানা যাবে। কারণটাও হয়তো একই হবে।

ঢাকা শহরে মশার উপদ্রব সেই ছোটবেলায় যা দেখেছি, এখনো তেমনই আছে। উল্টো আরও বেড়েছে। গত বছরই অনেক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। মশা মারতে সিটি করপোরেশনের কামান দাগানোর গল্পও পুরোনো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মশা আর মরছে না। ১৫ মার্চ প্রথম আলোর খবরের শিরোনাম হয়েছে—এ বছর মশা মারার জন্য যে স্প্রে আনা হয়েছে, খোদ উত্তরের মেয়র নিজেই নাকি বিদেশে গিয়ে শিখে এসেছেন, এই স্প্রে কাজ করে না! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কার নির্দেশে এই স্প্রে আনা হয়েছে? মেয়র মশাই কি জানতেন না এ বিষয়ে? কিংবা যারা এই কাজ করেছে, তারা কি আদৌ মশা মারার জন্য এই স্প্রে এনেছে, নাকি নিজেদের পকেট ভরার জন্য?

এই করেই আমরা এ জনপদের মানুষজন প্রজন্মের পর প্রজন্ম পার করে দিচ্ছি। চারদিকে উন্নয়ন হয়। উঁচু উঁচু দালান ওঠে। নতুন নতুন ফ্লাইওভার হয়। মেট্রোরেলও হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় নেমে সেই একই জ্যাম, একই ভোগান্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। সেই অপেক্ষা করতে করতে কখনো বিস্ফোরণে বেঘোরে মারাও যেতে হচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষেরা বেঘোরে মরতে থাকি, আর উঁচু দালানের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে রাস্তায় দামি গাড়ির সংখ্যা। তবু শেষ হয় না ভোগান্তি। এ এক আজব শহর ঢাকা!

  • ড. আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি। ই-মেইল: tutul_ruk@yahoo.com