নারী ও পুরুষ স্বতন্ত্র স্বাধীন সত্তা। নারীরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিজেদের সোনাদানা, গয়না ও টাকাপয়সা অর্থসম্পদের জাকাত প্রদান করবেন এবং সদকাতুল ফিতরও আদায় করেন। যদিও নারীর পক্ষে পিতা, ভ্রাতা, স্বামী, সন্তান বা অন্য কেউ আদায় করে দিলে তা–ও কবুল হয়ে যাবে। যেহেতু আর্থিক ইবাদতগুলো একজন অন্যজনের পক্ষ থেকে আদায় করতে পারেন।
নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ কিছু বিধান রয়েছে। মায়েরা রোজা অবস্থায় শিশুকে দুধ পান করালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না এবং অজুও ভঙ্গ হয় না। এমনি এমনিতে দুগ্ধ নিঃসরণ হলেও রোজার বা অজুর ক্ষতি হয় না। কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বা তরল বের হলে রোজার কোনোরূপ ক্ষতি হয় না, তবে অজু ভঙ্গ হবে।
বমি হলেও রোজার ক্ষতি হয় না, এতে অজু ভঙ্গ হয়। রোজা পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা বিনষ্ট হয়। মহিলাদের রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব হলে রোজা ভঙ্গ হবে। এই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে; কাফফারা আদায় করতে হবে না। সন্তানসম্ভবা নারীকে যদি গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় বিজ্ঞ ও ধর্মসচেতন চিকিৎসক রোজা রাখতে বারণ করেন, তবে সেই রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। মহিলারা রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালে রোজা করতে পারবেন না, ওই রোজাগুলো পরে কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মিসরিয়া)।
মাসিক পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব চলাকালে রোজা রাখা যায় না, নামাজ পড়া যায় না এবং কোরআন তিলাওয়াত করা যায় না, কাবাঘর তাওয়াফ করা যায় না। এ ছাড়া অন্যান্য দোয়া–কালাম, দরুদ ইস্তিগফার, হাদিস তফসির পড়া যায়; তাসবিহ তাহলিল, জিকির–আজকার, অজিফা ইত্যাদি আমল করা যায়।
নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ কিছু বিধান রয়েছে। মায়েরা রোজা অবস্থায় শিশুকে দুধ পান করালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না এবং অজুও ভঙ্গ হয় না
এ অবস্থায় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন হয়ে জায়নামাজও ব্যবহার করতে পারবেন, সাহ্রি ও ইফতারে শামিল হতে পারবেন, রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করতে পারবেন। ঋতু চলাকালে নারীর স্পর্শে কেউ অপবিত্র হয় না বা কারও অজু–গোসল নষ্ট হয় না। রজঃস্বলা রমণীর সঙ্গে রতিক্রিয়া নিষিদ্ধ বা হারাম।
বিশেষ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে কোনো নারী তাঁঁর মাসিক বন্ধ রেখে যদি রোজা পালন করেন, তবে তাঁর রোজা আদায় হয়ে যাবে। যদি এতে তাঁর শারীরিক ও মানসিক কোনো প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে। রোজা অবস্থায় মাসিক শুরু হলে ওই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে, কিন্তু সেদিন পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। অনুরূপ রোজার মধ্যে মাসিক চলাকালে দিনের বেলায় তা বন্ধ হলে সেদিনও পানাহার থেকে বিরত থাকবেন, কিন্তু এটি রোজা হিসেবে গণ্য হবে না; পরে এই রোজাও কাজা আদায় করবেন।
রোজা অবস্থায় যদি কেউ কোনো ছোট্ট শিশু বা অন্য কাউকে প্রয়োজনে খাবার চিবিয়ে বা দাঁত দিয়ে কেটে বা টুকরা করে দেন, এতে রোজা ভাঙবে না। যেসব নারী ও পুরুষ রান্নাবান্নার কাজ করেন, তাঁরা প্রয়োজনে রোজা অবস্থায়ও তরকারি বা খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করতে বা লবণ দেখতে পারবেন। মুখে বা জিবে নিয়ে তারপর ফেলে দিতে হবে এবং তারপর থুতু ফেলে দিলেই মুখ পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রয়োজন মনে করলে পানি দিয়ে কুলি করেও নিতে পারেন।
শিশুরা রমজানের চাঁদ ওঠার আগেই উৎসুক হয়ে থাকে। তারা বড়দের সঙ্গে সাহ্রি, ইফতার ও তারাবিহতে শরিক হয় অত্যন্ত প্রাণচঞ্চল ও আনন্দের সঙ্গে। নাবালেগ শিশু রোজা রেখে ভেঙে ফেললে তার জন্য কাজা বা কাফফারা কিছুই লাগবে না।
এ অঞ্চলে সাধারণত মেয়েরা এগারো থেকে তেরো বছরে এবং ছেলেরা তেরো থেকে পনেরো বছরে বালেগ বা সাবালক হয়; তখন থেকেই এদের নামাজ, রোজা ইত্যাদি ফরজ হয়। যদিও সাত বছর থেকে শিখন ও ১০ বছর থেকে বাস্তব প্রশিক্ষণমূলক আমল শুরু করাতে হয়। নাবালেগ শিশুদের আমলের সওয়াব পিতা-মাতা ও অভিভাবকেরা পাবেন।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com