২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে আশঙ্কা ছিল জনমনে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নজর আছে, এ বিবেচনায় অনেকেই আশা করেছিলেন এই দফায় ২৮ অক্টোবর ব্যতিক্রমী কিছু হবে। সমাবেশ শান্তিপূর্ণ করতে ‘তলেতলে’ দুই দলের সমঝোতা হয়েছে, এমন আলোচনাও ছিল।
তবে শেষ রক্ষা হলো না। বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। এই নিবন্ধ লেখার সময়ও কাকরাইলে পুলিশ উপর্যুপরি টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করছিল জমায়েত। কী কারণে সংঘাত শুরু হলো পরিষ্কার না। অভিযোগ আছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা কাকরাইলে প্রথম ঝামেলা শুরু করেছে। বিএনপি বলেছে, আওয়ামী লীগ তাদের আগে ধাওয়া দিয়েছিল।
কাকরাইলের একটি ভবনে আশ্রয় নেওয়া বেশ কিছু বিএনপি নেতা ও পথচারীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কাউকে কাউকে হকচকিত মনে হয়েছে।
মিরপুর ১২ নম্বর থেকে আসা বিএনপির একজন কর্মী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা তো শান্তি সমাবেশে খালি হাতে আইসছি। যুদ্ধ বাইধে যাবে ভাবিনি।’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংঘাত নতুন নয়, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই সংঘাত হয়।
তারপরও কেন ভেবেছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন শেষ হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকেও তাদের সংঘাতে না জড়ানোর কথা বলা হয়েছিল।
তবে বরিশাল থেকে আসা বিএনপি কর্মী ও শিকারপুরে ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জাহিদুল ইসলাম মনে করেন, সরকার সমাবেশের অনুমতি দিলেও তাদের কথায় আস্থা রাখা উচিত হয়নি।
আওয়ামী লীগ কখনোই কথা রাখেনি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তাঁর ধারণা, প্রথমে পুলিশকে দিয়ে তাঁদের মাঠছাড়া করার পরিকল্পনা ছিল, ফেরার পথে তাঁদের পেটানোর দায়িত্ব পাবে ছাত্রলীগ।
পুলিশের অ্যাকশন তাঁদের হতাশ করেছে। বারবারই তাঁদের বলতে শোনা যায়, জনগণের টাকায় বেতন হয়, জনগণকে গোনে না। কত অস্ত্র, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে আজ তারা পথে নেমেছে, এ প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
একটি টক শোর উল্লেখ করে তাঁদের একজন বলেন, ‘এক আওয়ামী লীগ কর্মী সেদিন বলেন, আমাদের পুলিশ আছে...। পুলিশ কি তাগের একার, এই কথা জিজ্ঞেস করছে উপস্থাপক।’
এদিকে উত্তরা থেকে কাজে বেরোনো মো. আলমগীর ও মো. আবদুল লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ এত দ্রুত ভেঙে যাওয়ায় অবাক। মো. আলমগীর মনে করেন, বিদেশিদের কথায় আস্থা রাখা ঠিক হয়নি।
এই সমাবেশের এমন পরিণতিতে, ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে বিএনপি কর্মীদের কারও কারও মনে হতাশা আছে। তাঁদের কেউ মনে করছেন, এভাবে মাঠ ছাড়ায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সংঘাত হবে না, এই আশা করে তাঁরা সঠিক কৌশল নেননি। দিনাজপুর থেকে আসা একদল বিএনপি কর্মী বলেছেন, আজকের সমাবেশ থেকে এসপার-ওসপার কিছু একটা হবে বলে ভেবেছিলেন তাঁরা। অন্য পক্ষ মনে করছে, তাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি আরও বাড়বে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলতে চান, তাঁরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মাঠে নামেননি। তাঁরা চান সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা।
মাঠ ফাঁকা, এবারও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে দেবে কি না, এই প্রশ্নে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলেছেন, এবার তাঁরা ভোট হতে দেবেন না। হয়ে গেলে কী করবেন, এমন আলোচনায় তাঁরা যেতে চান না।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলতে চান, তাঁরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মাঠে নামেননি। তাঁরা চান সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা।
এদিকে সংঘাতে আটকে পড়া মানুষ বরাবরের মতোই হতাশ। নিরাপদে বাড়ি যেতে পারবেন কি না, সে চিন্তায় পড়েছেন।
সংঘর্ষের সময় কাকরাইলের ওই ভবনটিতে আমিও আটকা পড়ি। ফলে আমার আশপাশে যারা ছিলেন তাদের সবাই–ই হয় বিএনপিকর্মী নাহয় পথচারী। সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী না থাকায় সংঘাতের উৎস নিয়ে তাদের কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শেখ সাবিহা আলম প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক