পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জ্বলার আগেই নিভে গেল

ভাগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোশিন একদম নির্বোধ নন। তাঁর হাতেও খেলার মতো বিস্তর তাস রয়েছে, তিনি ও পুতিন একে অপরের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছেন।

রোস্তভ-অন-দন শহরে সামরিক যান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ভাগনার বাহিনীর দুই যোদ্ধা। গত শনিবার রাশিয়ার এই শহর দখলে নেয় ভাগনার গ্রুপ। তাদের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন মস্কো অভিমুখে অভিযান বন্ধ ঘোষণার পর যোদ্ধারা শহর ছেড়ে চলে যান

যেমন বীজ বুনবে তেমন ফসল পাবে—এই প্রবাদ যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানেন না, তা নয়। তিনি জেনেশুনেই ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের মতো একজন দুর্বৃত্তকে পেলেপুষে রেখেছিলেন।

চুরির অভিযোগে বছর আট জেল খাটার পর বাইরে এসে তিনি হ্যামবার্গার বিক্রি শুরু করেন, তারপর রেস্তোরাঁর ব্যবসা। সেখান থেকেই পুতিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তাঁর দোকানে আহার করে পুতিন এতটাই খুশি হন যে তাঁকে সরকারি ভোজসভার খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করে দেন। সেই থেকে প্রিগোশিনের পরিচয় ‘পুতিনের পাচক’ হিসেবে।

পুতিনের সাহায্য ও সমর্থনে তিনি গড়ে তোলেন ভাড়াটে সেনা কোম্পানি ভাগনার। রাশিয়ায় ভাড়াটে সেনাদল গঠন বেআইনি হলেও ভাগনার সেন্ট পিটার্সবুর্গে বিশাল দপ্তর খুলে বসে। এই কোম্পানি ছিল পুতিনের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক লক্ষ্য অর্জনের গোপন হাতিয়ার। যে কাজ নিজের সেনা বা গুপ্ত বাহিনী দিয়ে করা কঠিন, প্রিগোশিন ও তাঁর ভাড়াটে সেনাদের দিয়ে তা-ই করিয়েছেন তিনি।

যাকে নিজের হাতের পুতুল ভেবেছিলেন, শেষ পর্যন্ত সে-ই হয়ে দাঁড়াল তাঁর আড়াই দশক শাসনের সবচেয়ে বড় হুমকি।

যেমন নাটকীয়ভাবে প্রিগোশিন ও তাঁর ভাড়াটে সেনারা বিদ্রোহ অভিযান শুরু করেছিলেন, সেভাবেই তাঁরা গুটিয়ে গেলেন। সে বিদ্রোহ স্থায়ী হলো না। দুই সপ্তাহ আগে ইউক্রেনের বাখমুত দখলের পর তিনি সে অঞ্চলের ভার রুশ বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিয়ে সরে আসেন। কিন্তু তিনি যে এরপর নিজ বাহিনী নিয়ে মস্কোর পথে ‘ন্যায়ের জন্য পদযাত্রা’ শুরু করবেন, এ কথা কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি।

প্রিগোশিন অনেক আগে থেকেই রুশ যুদ্ধমন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সেনাপ্রধান গেরাসিমফের বিরুদ্ধে অযোগ্যতা ও যড়যন্ত্রের অভিযোগে দিনের পর দিন বিষোদ্‌গার করে গেছেন। একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব এই যুদ্ধে পুতিনের জন্য জয় ছিনিয়ে আনা, এমন দাবিও তিনি করেছেন।

বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল শোইগু ও গেরাসিমফের অযোগ্যতা। তিনি এমন কথাও বলছিলেন যে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এসব জেনারেল পুতিনকে ভুল তথ্য দিয়ে যুদ্ধে ঠেলে দেন। সব জেনেশুনেও পুতিন এই দুই পক্ষের বিবাদে নাক গলাননি, তা সম্ভবত সুপরিকল্পিত। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে এখনো জয় আসেনি, তাতে তিনি নিজে দায়ী নন, সব দায়ভার এসব পেশাদার জেনারেলের অযোগ্যতা। প্রিগোশিনকে দিয়ে সে কথা বলিয়ে নেওয়াই হয়তো তাঁর লক্ষ্য ছিল।

বিপত্তি বাধল যখন দুই সপ্তাহ আগে শোইগু ভাগনারের সেনাদের অবিলম্বে রুশ বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করার নির্দেশ দিলেন। সে নির্দেশের অর্থ ছিল ভাগনারের নিয়ন্ত্রণভার প্রিগোশিনের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া। তাতে বেঁকে বসলেন তিনি। সৈন্যসামন্ত নিয়ে রওনা হলেন মস্কোর দিকে।

ঠিক কী লক্ষ্য ছিল এই অভিযানের, তা স্পষ্ট নয়, তাঁর সেনারা যত দক্ষই হোক না কেন, রুশ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি কোনোভাবেই জয়লাভ করবেন না, এ কথা নিশ্চিত। তাহলে কোন ভরসায় তিনি চার নম্বর হাইওয়ে ধরে মস্কোর পথে যাত্রা শুরু করলেন?

রাশিয়া মূলত একটি অলিগার্কি, হাতে গোনা কিছু অতি ধনী ও ক্ষমতাবান মানুষ দেশটিকে নিজেদের মুঠোয় ধরে রেখেছেন। এই ক্ষমতা বলয়ের কেন্দ্রে পুতিন, কিন্তু তিনি নিজেকে যতই ক্ষমতাবান মনে করুন, গোষ্ঠীপতিদের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব অলিগার্কের বিলাসব্যসনে টান পড়েছে, অনেকের প্রমোদতরি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা নেমে এসেছে। ফলে তাঁরা পুতিনের প্রতি অসন্তুষ্ট।

এই প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা যায়নি। হতে পারে, তিনি আশা করেছিলেন, শোইগু ও গেরাসিমফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাকে আরও অনেকে সঙ্গ দেবে। প্রিগোশিন নিজের বিদ্রোহকে ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। জার্মান ফ্রন্টে পর্যুদস্ত সেনারা ঘরে ফিরে বলশেভিকদের বিপ্লবে শামিল হন। সে কথা সত্য, কিন্তু প্রিগোশিন লেনিন নন, তাঁর ডাকে দেশজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে—সে কথা ভাবা দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।

ভাগনার বাহিনীর আকস্মিক অভিযানে পুতিন ও দেশের সেনা নেতৃত্ব যে ভীত হয়েছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যেভাবে তড়িঘড়ি করে মস্কোর সুরক্ষায় পরিখা খননের পাশাপাশি ট্যাংক নামিয়ে দেওয়া হয়, তাতে সে কথা স্পষ্ট হয়। এই লড়াই এক দিনে শেষ হবে না—এই বিশ্বাস থেকে মস্কোর মেয়র নিজ শহরে আজ সোমবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। সেটিও এই ভীতি থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত।

পুতিন নিজেও যে হকচকিত হয়ে পড়েন, ভাগনারকে সতর্ক করে জাতির উদ্দেশে দেওয়া পাঁচ মিনিটের ভাষণ থেকে সে কথা স্পষ্ট হয়। তিনি প্রিগোশিনকে বিশ্বাসঘাতক ও রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে অভিহত করেন বটে, কিন্তু এই বিদ্রোহ মোকাবিলায় স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপ ঘোষণা করেননি। তিনি সামরিক আইন জারি করতে পারতেন, বিদ্রোহ মোকাবিলায় অতিরিক্ত সেনা প্রেরণের নির্দেশ দিতে পারতেন। তার কোনোটাই করেননি। শক্ত হাতে বিদ্রোহ দমনের বদলে তিনি আশ্রয় করলেন তাঁর আরেক পুতুল, বেলারুশের একনায়ক প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর ওপর। তাঁর মধ্যস্থতায় অবশেষে রফা হলো, অস্ত্র সংবরণের বদলে প্রিগোশিন রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে আশ্রয় নেবেন। তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে এবং ভাগনার বাহিনীর সদস্যরা চাইলে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন।

অন্য কথায়, বিদ্রোহের মতো কঠোর অপরাধ সত্ত্বেও প্রিগোশিন সব অপরাধ থেকে মাফ পেয়ে গেলেন। এই রফা করতে পুতিনকে নির্ভর করতে হলো বিদেশি এক রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি শুধু হতভম্বই নন, ভীষণ রকম দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

রুশ বিশেষজ্ঞ আলিনা পোলিয়াকভা এক টুইটে মন্তব্য করেছেন, প্রিগোশিনের বিদ্রোহ মোটেই অপ্রত্যাশিত কোনো ব্যাপার নয়। তিনি বলেন, ‘রাজার ব্যক্তিগত লেঠেল যখন অতিরিক্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন একটা সময় রাজা তার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাবেনই।’

এক ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন আরেক রুশ বিশেষজ্ঞ তাতিয়ানা স্তোয়োনোভা। তাঁর বিশ্বাস, যুদ্ধের একটা পর্যায়ে প্রিগোশিন রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন। তা সত্ত্বেও তিনি যা কিছু করছেন, সবই পুতিনের নির্দেশে—এ কথা সদর্পে বলে বেড়িয়েছেন। পুতিনের সমর্থন ছাড়া এমন করা সম্ভব নয়।

যুদ্ধমন্ত্রী শোইগু তাঁকে নিরস্ত্রের উদ্যোগ নিলেও সম্ভবত পুতিনের আপত্তির কারণেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর একটা কারণ সম্ভবত এই যে মুখে যত বিরক্তিকর কথাই প্রিগোশিন বলুন না কেন, যুদ্ধের ময়দানে তো তাঁদের হয়ে কাজটা করে দিচ্ছেন। গত ছয় মাসে একমাত্র বাখমুতেই রুশ বাহিনী জয়লাভ করে, সেটা ভাগনারের জন্যই সম্ভব হয়েছে। সমর ক্ষেত্রে এই সাফল্য প্রিগোশিনের মাথাটা এতটাই গরম দেয় যে তিনি নিজেকে শোইগুর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

এরপর কী হবে?

এই উত্তর কারও জানা নেই। রাশিয়ার ভেতরের খবর নিয়ে যাঁরা নাড়াচাড়া করেন, তাঁদের বিশ্বাস, প্রিগোশিনের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব।
সরাসরি রুশ রাষ্ট্র ও রুশ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরও যদি তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ অসম্ভব হয়, তাহলে এই রাষ্ট্র ও তার প্রেসিডেন্টের দুর্বলতাই প্রমাণিত হবে। বেলারুশে তিনি আশ্রয় পেলেন বটে, কিন্তু লুকাশেঙ্কো এমন ধোয়া তুলসী পাতা নন যে প্রিগোশিনকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তাঁকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। পুতিন নিজে কখনো তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রুকে ক্ষমা করেন না। ফলে প্রিগোশিনের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তবে অবস্থা ভিন্ন দিকেও মোড় নিতে পারে। প্রিগোশিন একদম নির্বোধ নন। তাঁর হাতেও খেলার মতো বিস্তর তাস রয়েছে, তিনি ও পুতিন একে অপরের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছেন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভাড়াটে সেনা ব্যবহার করে তিনি ইতিমধ্যে বিস্তর ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন, যার বখরা পুতিনের রয়েছে—এ কথা ভাবা মোটেই অযৌক্তিক নয়।

তা ছাড়া ভাগনার মস্কোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র, তাকে নিষ্ক্রিয় করা হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে, যা পুতিন চাইবেন না। নিজেকে বাঁচাতে প্রিগোশিন লুকাশেঙ্কোর মাধ্যমে পুতিনের সঙ্গে কী গোপন চুক্তি করেছেন, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। যদি শোইগু বা গেরাসিমফকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে বোঝা যাবে তাঁদের দুজনের মধ্যে গোপন কোনো রফা হয়েছে।

এই ঘটনা পুতিনকে যে দুর্বল করেছে, তাতে সন্দেহ নেই। রোস্তভে ভাগনার বাহিনীর স্বাগত অভ্যর্থনা থেকে স্পষ্ট, ইউক্রেনে রুশ হামলার বিরুদ্ধে রুশ জনগণের সমর্থন তেমন গভীর নয়। রোস্তভ একটি আঞ্চলিক প্রধান সেনাছাউনি ও সামরিক সরবরাহ কেন্দ্র। সেখানকার সেনা নেতৃত্ব যে কার্যত কোনো প্রতিরোধ দেখায়নি, তাতেও বোঝা যায় এই যুদ্ধের ব্যাপারে রুশ সেনাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এই ঘটনার পর পুতিন দুর্বল হয়ে পড়েছেন—এই ধারণা থেকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে মনোভাব আরও তীব্র হতে পারে।

রাশিয়া মূলত একটি অলিগার্কি, হাতে গোনা কিছু অতি ধনী ও ক্ষমতাবান মানুষ দেশটিকে নিজেদের মুঠোয় ধরে রেখেছেন। এই ক্ষমতা বলয়ের কেন্দ্রে পুতিন, কিন্তু তিনি নিজেকে যতই ক্ষমতাবান মনে করুন, গোষ্ঠীপতিদের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব অলিগার্কের বিলাসব্যসনে টান পড়েছে, অনেকের প্রমোদতরি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা নেমে এসেছে। ফলে তাঁরা পুতিনের প্রতি অসন্তুষ্ট।

তাঁকে ‘লৌহমানব’ ভেবে কেউ এত দিন মুখ খোলেননি, কিন্তু প্রিগোশিনের বিদ্রোহ থেকে স্পষ্ট, তিনি মোটেই ধরাছোঁয়ার বাইরে নন। ফলে আগামী দিনগুলোতে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা ও প্রতিবাদ যদি আরও বাড়ে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।

একমাত্র যে বা যারা এই ঘটনার তাৎক্ষণিক সুফল পেতে পারে, সে হলো ইউক্রেন ও তার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ইউক্রেন ইতিমধ্যে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযান শুরু করেছে, কিন্তু তাতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। ফলে জেলেনস্কির ওপর ভেতর-বাইরের চাপ বেড়েছে।

প্রিগোশিনের বিদ্রোহের ফলে রুশ বাহিনীতে অল্পবিস্তর বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা দেখা দেবেই। তা ছাড়া যে ভাগনার বাহিনীর হাতে তাদের বাখমুতে বিস্তর নাকাল হতে হয়, যুদ্ধের ময়দান থেকেও তারা প্রস্থান করেছে। এর ফলে সাময়িকভাবে হলেও সামরিক ক্ষেত্রে ইউক্রেন কিছু ফায়দা আদায় করে নিতে পারবে।