১ মে, যে দিনটি আমরা শ্রম দিবস হিসেবে পালন করে থাকি, এটি বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অবদান উদ্যাপনের। দিনটি আমাদের গর্বের, উদ্যাপনের এবং আশাজাগানিয়া। আজকের দিনটি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন; বিশেষ করে যখন কোভিড-১৯ সংকটের তিন বছর পর তার হাত ধরে আসা মুদ্রাস্ফীতি, সংঘাত এবং খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহের সংকট আমাদের সঙ্গী হয়েছে। কিন্তু মহামারি চলাকালে যে প্রতিশ্রুতি, ‘বিল্ডিং ব্যাক বেটার’, তা এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকদের কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্বব্যাপী প্রকৃত মজুরি হ্রাস পেয়েছে, দারিদ্র্য বাড়ছে, বৈষম্য আগের চেয়ে আরও বেশি জেঁকে বসেছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই সাম্প্রতিক অপ্রত্যাশিত ঘটনার ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করতে পারেনি। ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেকেরই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, কোভিড ১৯-এর কারণে তাঁদের যে আত্মত্যাগ, এর জন্য পুরস্কৃত করা তো দূরে থাক, তঁারা স্বীকৃতিই পাননি। তঁাদের কণ্ঠস্বর যথেষ্ট স্পষ্ট এবং জোরালো নয়। এটি এমন একটি অবিশ্বাসের স্তর তৈরি করে, যা কারও কারও জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ নেই—এমন অনুভূতি তৈরি করে। এটা আসলে এমন হওয়ার কথা ছিল না। আমরা নিজেরাই পারি আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে। কিন্তু যদি আমরা একটি নতুন, আরও স্থিতিশীল এবং ন্যায়সংগত বিশ্ব গঠন করতে চাই, তবে আমাদের অবশ্যই ভিন্ন পথ বেছে নিতে হবে, যা সামাজিক ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দেয়।
আমি বিশ্বাস করি, এটি কেবল সম্ভবই নয়, বরং এটি একটি টেকসই ও স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কীভাবে এটি নিশ্চিত করব?
প্রথম এবং সর্বাগ্রে আমাদের নীতি ও কর্মপরিকল্পনা—দুটোই মানবকেন্দ্রিক হতে হবে, যাতে স্বাধীনতা ও মর্যাদা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং সমান সুযোগের ক্ষেত্র নিশ্চিত করে তাদের বস্তুগত সুস্থতা ও মানসিক বিকাশের বিস্তার করতে পারে। এ পদ্ধতি নতুন নয়, ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্যরা এটি সর্বসম্মতভাবে ফিলাডেলফিয়া ডিক্লারেশনের মধ্য দিয়ে স্বাক্ষর করেছিল।
এই দূরদর্শী নথি আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাগুলোর জন্য নির্দেশক নীতিগুলো নির্ধারণ করেছে, যেগুলোকে নির্দিষ্ট প্রবৃদ্ধির হার বা অন্যান্য পরিসংখ্যানগত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নয়, বরং মানুষের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষাগুলোকে প্রাধান্য দেবে।
এর অর্থ হলো বৈষম্য, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মূল সামাজিক সুরক্ষার দিকে মনোনিবেশ করা। এটি করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, যা একজন নাগরিককে তার সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করার নিশ্চয়তা দিতে পারে—‘ডিসেন্ট ওয়ার্ক ফর অল’ বা ‘সবার জন্য শোভন কাজ’, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৮-এর শর্ত অনুসারে।
এর অর্থ একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত রূপান্তরকে বাস্তবসম্মতভাবে কার্যকর করতে হবে, যা কর্মসংস্থানকে নতুন প্রযুক্তিবান্ধব; সক্রিয়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। জনমিতির লভ্যাংশ বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহারে দক্ষতার প্রশিক্ষণ, দক্ষ অভিবাসন এবং সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে সহায়তামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে আরও সমন্বিত ও স্থিতিস্থাপক সমাজ তৈরি করতে। এ পদক্ষেপগুলো মালিক-শ্রমিক উভয়কেই নিম্ন কার্বনের যুগ থেকে উপকৃত হতে সাহায্য করবে।
আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার স্থাপত্যের পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিন্যাস করতে হবে, যাতে তারা আমাদের অসমতা ও অস্থিতিশীলতার নীতি ‘ডুম লুপ’-এর দিকে না দিয়ে সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে এ পরিবর্তনকে সমর্থন করে। আমাদের অবশ্যই কর্মপ্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে, যাতে মালিক-শ্রমিক সামাজিক সংলাপ কার্যকর ও জোরালো হয়। আমাদের অবশ্যই কাজের জগৎকে প্রভাবিত করে এমন আইন ও প্রবিধানগুলো পর্যালোচনা করতে হবে, যাতে তারা প্রাসঙ্গিক এবং আপ–টু–ডেট থাকে এবং কর্মীদের সুরক্ষা দিতে এবং টেকসই ব্যবসাকে সমর্থন করতে সক্ষম হয়।
এ কারণে আমাদের সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি গ্লোবাল কোয়ালিশন দরকার। এ জোট আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের বিস্তৃত পরিসরে একত্র করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে। এ জোট বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচারকে মূলমন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে, যাতে এটি জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নীতি এবং কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পায়। সংক্ষেপে এটি আমাদের জন্য একটি মানবকেন্দ্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে আমরা যে বিশ্বে বাস করি, তা পুনর্গঠনের সুযোগ আমাদের রয়েছে। আসুন, আমরা এ সুযোগ গ্রহণ করি এবং ন্যায়সংগত ও স্থিতিস্থাপক সমাজ গঠনের জন্য এগিয়ে যাই, যা স্থায়ী শান্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
গিলবার্ট এফ হংবো আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক