১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ফরিদপুরে বাস ও ছোট ট্রাকের সংঘর্ষে মহাসড়কে মৃত্যু হলো ১৫ জনের। এ ঘটনার পরদিন ১৭ এপ্রিল বুধবার খুলনা-ঝালকাঠি মহাসড়কের গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় সিমেন্টবাহী ট্রাকচাপায় নিহত হলেন আরও ১৪ জন। উভয় ক্ষেত্রেই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর উন্মোচিত হচ্ছে বহু অনিয়ম, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কথা।
প্রথমত, ফরিদপুরের ঘটনায় নিহত সবাই ছিলেন ছোট ট্রাকের যাত্রী। সংঘর্ষে বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাসের কোনো যাত্রীর মৃত্যু ঘটেনি। পিকআপ ট্রাকের যাত্রীদের মৃত্যু ঘটেছে। কারণ, পিকআপ ট্রাক মালামাল পরিবহনের জন্য তৈরি, যাত্রী পরিবহনের জন্য নয়। কোনো ট্রাকের কাঠামোই যাত্রী পরিবহনের উপযুক্ত নয়। এ কারণে ট্রাকে যাত্রী পরিবহন করা হলে দুর্ঘটনায় যাত্রী ছিটকে পড়ে কিংবা দুমড়েমুচড়ে গিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটার ঝুঁকি বেশি। তাহলে ট্রাকে করে মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করতে দেওয়া হলো কেন? হাইওয়ে পুলিশের কাজ কী তাহলে?
মালামাল পরিবহনের ট্রাকে যাত্রী পরিবহন যে ঝুঁকিপূর্ণ, এটা তো নতুন কোনো তথ্য নয়। অনেকের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১১ সালে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে স্কুলছাত্রদের বহনকারী একটি ট্রাক উল্টে ৪৪ শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যুর কথা।
এ ঘটনার পর তদন্ত কমিটি অধিক প্রাণহানির জন্য খোলা ট্রাকে যাত্রী পরিবহনকেই দায়ী করেছিল এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের যানবাহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এরপরও ট্রাক ও পিকআপের মতো যানবাহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়নি। বিশেষত উৎসবের মৌসুমে পরিবহনসংকট ও বাসের অতিরিক্ত ভাড়ার সুযোগে এসব মালবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহন করে মানুষের জীবন বিপন্ন করা হয়। (বাস সনদহীন, ট্রাকে যাত্রী, সড়কে গর্ত, নিহত ১৪, প্রথম আলো, ১৭ এপ্রিল ২০২৪)
দ্বিতীয়ত, ফরিদপুরে ইউনিক পরিবহনের যে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে পিকআপের এত যাত্রী মারা গেলেন, সেই বাসের ফিটনেস সনদ, রুট পারমিট—কিছুই ছিল না। বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এরপর আর ফিটনেস সনদ নবায়ন করা হয়নি।
দুর্ঘটনাটি ঢাকা-মাগুরা রুটে ঘটলেও বাসটির রুট পারমিট বা চলাচলের অনুমোদন ছিল চট্টগ্রাম-বগুড়া পথে, অবশ্য সেটির মেয়াদও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গিয়েছিল। (ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন—কিছুই ছিল না ইউনিক পরিবহনের সেই বাসের, ডেইলি স্টার অনলাইন বাংলা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪)
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮–এর ২৫ ধারা অনুসারে, ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ ব্যবহার করে বা ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত বা ফিটনেসের অনুপযোগী যানবাহন চালনা করা বা চালনার অনুমোদন দেওয়া বেআইনি। এই বিধান লঙ্ঘন করলে আইনটির ৭৫ ধারা অনুসারে, ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা।
অন্যদিকে সড়ক পরিবহন আইনের ২৮ ধারা অনুসারে, রুট পারমিট ছাড়া যানবাহন চালনা করা বা চালানোর অনুমোদন প্রদান করা বেআইনি। এই ধারা লঙ্ঘন করলে আইনটির ৭৭ ধারা অনুসারে, তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা।
কিন্তু দেখা গেল, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮–এর অনেকগুলো ধারা লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই দূরপাল্লার এই বাস তিন বছর ধরে ফিটনেস ছাড়া এবং দুই বছর ধরে রুট পারমিট ছাড়া চলছিল। অথচ এটির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
যদিও সড়ক পরিবহন আইন লঙ্ঘন করে এভাবে যানবাহন চলাচল করলে হাইওয়ে পুলিশ বা বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারত বিআরটিএর নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিদর্শক।
অন্যদিকে হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব হলো, মহাসড়কে সড়ক আইনের প্রয়োগ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি। এ জন্য তাদের নিজস্ব লোকবল ও থানা-ফাঁড়ি রয়েছে। বিআরটিএ কিংবা হাইওয়ে পুলিশ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে ইউনিক পরিবহনের বাসটি এভাবে সড়ক পরিবহন আইন ভঙ্গ করে বছরের পর বছর চলতে পারত না।
অনিয়ম আরও আছে। বাসটি ইউনিক পরিবহনের নামে চললেও ইউনিক পরিবহনের মালিক শামসুল হুদা বেশ কয়েক বছর আগে নাজমুল হোসেন নামের একজনের কাছে বাসটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। অথচ নাজমুল হোসেন ইউনিক পরিবহনের নামেই বাসটি পরিচালনা করছিলেন। (ডেইলি স্টার অনলাইন বাংলা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪)
তৃতীয়ত, দুর্ঘটনায় পড়া ইউনিক পরিবহনের বাসটির বয়স ছিল ২০ বছরের বেশি। বাসটির রেজিস্ট্রেশন করা হয় ২০০২ সালের নভেম্বরে। (ওল্ড, আনফিট ভেহিকেল রানিং অ্যামোক, ডেইলি স্টার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪) অথচ সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবেশদূষণের বড় কারণ পুরোনো যানবাহন—এই বিবেচনায় ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক সড়ক থেকে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার ২০২৩ সালের মে মাসে।
কিন্তু পরে প্রভাবশালী পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের চাপের মুখে পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে সরকার। (মালিকদের ‘চাপে’ পিছু হটল সরকার, পুরোনো বাস চলবে, প্রথম আলো, ৬ আগস্ট ২০২৩) সড়ক থেকে ২০ বছরের পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে কি ইউনিক পরিবহনের এই বাস মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ হতো?
চতুর্থত, দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো, সড়কে গর্ত থাকা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুসারে, দুর্ঘটনার স্থানে মহাসড়কে বেশ কিছু খানাখন্দ ছিল। ফলে বাসের চাকা গর্তে পড়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এতে বাসটি হঠাৎ মহাসড়কে আড়াআড়ি হয়ে যায় এবং তাতে ধাক্কা দেয় পিকআপ। (বাস সনদহীন, ট্রাকে যাত্রী, সড়কে গর্ত, নিহত ১৪, প্রথম আলো, ১৭ এপ্রিল ২০২৪)
পঞ্চমত, খুলনা-ঝালকাঠি মহাসড়কের দুর্ঘটনার পর জানা যায় যে চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না, তাঁর লাইসেন্স ছিল হালকা যান চালানোর। পুলিশ জানায় যে ট্রাকটি আল আমিন চালালেও তিনি সেটির মূল চালক নন। বদলি হিসেবে ট্রাক চালচ্ছিলেন তিনি। তাঁর ভারী গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাও ছিল না। (অটোরিকশা-প্রাইভেট কারে ধাক্কা দেওয়া ট্রাকচালকের ছিল না ভারী যানের লাইসেন্স, এপ্রিল ১৭ ২০২৪, ডেইলি স্টার বাংলা)
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর ৪ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যে শ্রেণি বা ক্যাটাগরির মোটরযান চালনার লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেই শ্রেণি বা ক্যাটাগরি ব্যতীত অন্য কোনো শ্রেণি বা ক্যাটাগরির মোটরযান চালাতে পারেন না। কেউ এই বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৬৬ ধারা অনুযায়ী ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা।
ষষ্ঠত, ঝালকাঠির ঘটনার জন্য দায়ী ট্রাকটি অতিরিক্ত সিমেন্ট দিয়ে বোঝাই ছিল। দুই অ্যাক্সেলের ট্রাকটির অনুমোদিত ধারণক্ষমতা ১৩ টন হলেও সিমেন্ট ছিল প্রায় ২০ টন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুসারে, পিরোজপুর থেকে ঝালকাঠি শহরগামী ট্রাকটি গাবখান সেতু পার হয়ে ঢাল দিয়ে নামার সময় ওভারলোডের কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি, ফলে সেতুর পূর্ব ঢালে টোল প্লাজায় অপেক্ষমাণ যানবাহনগুলো পিষে দেয়।(আনাড়ি হাতে ২০ টন ট্রাক, ফের সড়কে ঝরল ১৪ প্রাণ, সমকাল, ১৮ এপ্রিল ২০২৪)
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী, অতিরিক্ত ওজন বহন দণ্ডনীয় অপরাধ। ৮৬ ধারা অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজন বহন করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা।
কিন্তু দেখা গেল, এক আনাড়ি চালক যথাযথ লাইসেন্স ছাড়াই অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে খুলনা থেকে বিনা বাধায় ঝালকাঠির গাবখান পর্যন্ত চলে এলেন এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মানুষ পিষে মারলেন।
কাজেই আপাতদৃষ্টে দুর্ঘটনা মনে হলেও ফরিদপুর ও ঝালকাঠি উভয় ঘটনার জন্য দায়ী অনেকগুলো অবহেলা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। ফরিদপুরের সংঘর্ষের ক্ষেত্রে বলা যায়, যদি পিকআপে যাত্রী পরিবহন করতে দেওয়া না হতো, যদি বাসটির যথাযথ ফিটনেস থাকত এবং যদি দ্রুতগতির যান চলাচলের রাস্তায় গর্ত না থাকত, তাহলে এই অকালমৃত্যু ঘটত না।
আর ঝালকাঠির দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বলা যায়, যদি যথাযথ লাইসেন্সবিহীন আনাড়ি চালককে অতিরিক্ত সিমেন্টবোঝাই ট্রাক চালিয়ে খুলনা থেকে মহাসড়ক ধরে ঝালকাঠিতে আসতে দেওয়া না হতো, যদি হাইওয়ে পুলিশ তার দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করত, তাহলে এত মানুষকে ট্রাকের নিচে পিষ্ট হয়ে মরতে হতো না।
তদারকি সংস্থার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে ট্রাকচালকের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি দায় রয়েছে ট্রাকমালিকেরও। কেননা তিনি যথাযথ লাইসেন্স ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই একজনের হাতে তাঁর ট্রাক তুলে দিয়েছেন এবং ট্রাকটি অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করছে কি না, তার কোনো তদারক করেননি।
শুধু এই দুটো দুর্ঘটনাই নয়, বেশির ভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হয় চালকের লাইসেন্স নেই অথবা মোটরযানটির ফিটনেস নেই অথবা সড়কটি ত্রুটিপূর্ণ। অথচ সড়কপথে নিরাপদ যাতায়াত ও পরিবহনব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান হলো: ত্রুটিমুক্ত নকশার সড়ক–মহাসড়ক, ত্রুটিমুক্ত যানবাহন, লাইসেন্সধারী দক্ষ চালক, চালক ও তাঁদের সহকারীদের যথাযথ মজুরি ও কর্মপরিবেশ, পরিবহনমালিক ও পরিবহন কোম্পানিগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করতে সক্ষম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইত্যাদি। এর কোনো একটির অনুপস্থিতিতেই যাতায়াত ও পরিবহনব্যবস্থা অনিরাপদ হয়ে উঠতে বাধ্য।
বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পরিবহনব্যবস্থায় নিরাপদ যাতায়াত ও পরিবহনব্যবস্থার এসব অপরিহার্য শর্তের কোনোটিই যথাযথভাবে মেনে চলা হয় না বলেই মহাসড়কে মৃত্যুর মহামারি থামছে না। এ দেশে ফিটনেস সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক এ রকম ১৬ লাখ যানবাহনের মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার অর্থাৎ প্রায় ৩৯ শতাংশ যানবাহন ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলাচল করছে। (বাস সনদহীন, ট্রাকে যাত্রী, সড়কে গর্ত, নিহত ১৪, প্রথম আলো, ১৭ এপ্রিল ২০২৪) আর সড়কে ২০ বছরের পুরাতন লক্কড়ঝক্কড় বাস চলছে ৩৫ হাজার ৭৮২টি এবং ২৫ বছরের পুরাতন ট্রাক চলছে ৩৭ হাজার ২৭৫টি। (ওল্ড, আনফিট ভেহিক্যাল রানিং অ্যামোক, ডেইলি স্টার ১৭ এপ্রিল ২০২৪)
বিআরটিএর হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের তুলনায় লাইসেন্সধারী দক্ষ চালকের সংখ্যা অন্তত ১৫ লাখ কম। (দক্ষ চালক তৈরির অবকাঠামো নেই দেশে, প্রথম আলো, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২) দক্ষ চালকের সংকটের কারণে অনেক যানবাহনের মালিক লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে নিজের যান তুলে দেন।
সম্প্রতি টিআইবির এক জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী মালিকদের ১১ দশমিক ৯ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের কোম্পানিতে এক বা একাধিক চালকের বৈধ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স আছে। অন্যদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারী কর্মী/শ্রমিকদের ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ বলেছেন, নিয়োগ প্রদানের পূর্বে কোম্পানি তাঁদের লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করেনি।(ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার, টিআইবি, মার্চ ২০২৪, পৃষ্ঠা-২৯)
সড়কের নকশায় ত্রুটিও সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। এ কারণে রোড সেফটি অডিটের মাধ্যমে পদ্ধতিগত, আনুষ্ঠানিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়নের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণের আগে ও পরে নিয়মিত সড়কের সম্ভাব্য ত্রুটি চিহ্নিত করে তার সমাধান করা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের সড়কগুলোয় নিয়মিত এই কাজ করা হয় না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৫৫ কিলোমিটার সড়কের সেফটি অডিট করেছে, যার অর্থ ৯৫ শতাংশের বেশি সড়কের কখনো অডিট করা হয়নি। (সেফটি অডিট ইগনোরড ইন রোড প্রজেক্টস, ৬ এপ্রিল ২০২৪, ডেইলি স্টার)
২০১২ সালের পর ১১ বছরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সড়ক, সেতু, টানেল নির্মাণে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে। (সড়কে ছয় লাখ অবৈধ যান, প্রথম আলো, ১৮ এপ্রিল ২০২৪) কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল ব্যয় হলেও সড়ক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় শর্ত যেমন: ত্রুটিমুক্ত নকশার সড়ক–মহাসড়ক, ত্রুটিমুক্ত যানবাহন, লাইসেন্সধারী দক্ষ চালক ও সহকারীদের যথাযথ মজুরি ও কর্মপরিবেশ, পরিবহনমালিক ও পরিবহন কোম্পানিগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করতে সক্ষম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইত্যাদি নিশ্চিত করা হয়নি। আর এ কারণেই হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে তৈরি উন্নয়নের মহাসড়কে মৃত্যুর মহামারি থামছে না।
হয়তো আবারও কোনো দুর্ঘটনায় বহুসংখ্যক মানুষের অকালমৃত্যুর পর উন্মোচিত হবে লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে ফিটনেসবিহীন মানব পরিবহনের অনুপযোগী লক্কড়ঝক্কড় বাস বা ট্রাকের কাহিনি। তত দিন সড়ক–মহাসড়কে সরকারের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর চোখের সামনেই চলতে থাকবে মানুষখেকো সড়কদানবগুলো।
কল্লোল মোস্তফা টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক