জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোর প্রভাব কী হবে

যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ও প্রভাবের কারণে মার্কিন নির্বাচনের ফল সব সময়ই বাকি বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে, সে কারণে আগামী নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই ২০২৪ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলা যেতে পারে।

এই নির্বাচন অন্য নির্বাচনগুলো থেকে যে কারণে মৌলিকভাবে আলাদা করছে—দুটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীদের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিল অনেক বেশি। 

আন্দাজ করা যায়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ নিজ দলের মনোনয়ন পাবেন। এই দুজনের মধ্যে কে জিতবেন, তা যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি বিশ্ব—উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে।

নিশ্চিতভাবে দুজনের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে। যেমন উভয়ের কেউই মুক্তবাণিজ্যে বিশ্বাসী নন। অবশ্য বাইডেনের বিপরীতে ট্রাম্প অনেক বেশি কট্টর সুরক্ষাবাদে বিশ্বাসী। উভয়েই চেয়েছিলেন আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসুক। তাঁরা দুজনেই চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও একমত। 

তবে দুজনের মধ্যে অমিল অনেক বেশি। যেমন বাইডেন একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ, যিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এবং গণতন্ত্রের সাধারণ নিয়মকানুন সহজাতভাবে গ্রহণ করেন।

অন্যদিকে ট্রাম্প রাজনীতির বাইরের পরিমণ্ডল থেকে আচমকা আসা একজন মানুষ, যিনি সাংঘাতিকভাবে পক্ষপাতিত্বপ্রবণ এবং প্রায়ই রাজনৈতিক নিয়মকানুন অস্বীকার করেন।

বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের ঘিরে আবর্তিত হয়। অন্যদিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের যতটা না মিত্র ভাবেন, তার চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আমেরিকান সম্পদ বিসর্জনের নর্দমা বলে মনে করেন। 

বাইডেন বর্তমান সময়কে গণতন্ত্র ও কর্তৃত্বতন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে মনে করেন। তাঁর যুক্তি হলো, বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক মিত্রকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা করা উচিত। অন্যদিকে ট্রাম্প বিশ্বের সব কর্তৃত্ববাদী নেতার সঙ্গে ওঠাবসায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। 

এ লেখা যখন লিখছি, তখন অবধি ট্রাম্পকে বেশ জনপ্রিয় নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জনতুষ্টিবাদের এ জমানার সঙ্গে তাঁর রাজনীতি ও ব্যক্তিত্ব ভালোই মিলছে।

অভিবাসীদের অপ্রত্যাশিত আগমন ও মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বাইডেনের ‘বুড়িয়ে যাওয়া’ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাঁর বাইডেনের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। 

 আপাতত কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ডেমোক্র্যাটদের হাতে রয়েছে। অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। নভেম্বরের পর এ চিত্র উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আরও কয়েক ডজন দেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে মধ্য জানুয়ারিতে ভোট হবে তাইওয়ানে।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী উইলিয়াম লাই জনপ্রিয়তায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন।

লাই যদি তাইওয়ানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে চীন সম্ভবত দ্বীপটিতে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বলপ্রয়োগ বাড়িয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানাবে।

এর দুই মাস পর রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। ভ্লাদিমির পুতিন আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হবেন—এর চেয়ে সহজ ভবিষ্যদ্বাণী আর হতে পারে না। আরেকটি সহজ ভবিষ্যদ্বাণী হলো, আগামী জুনে নির্বাচনে মেক্সিকোর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন একজন নারী। কারণ, সেখানকার দুই নেতৃস্থানীয় প্রার্থীই নারী।

বর্তমান বছরটি রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের তৃতীয় বছর। এ বছর এই যুদ্ধের নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, কোনো পক্ষই আলোচনার দিকে ঝুঁকছে না। তবে পশ্চিমা সমর্থন কমতে থাকায় ইউক্রেন তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে পুতিন আমেরিকায় ট্রাম্পের জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন। কারণ, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে পারে। যদি বন্ধ না-ও করে, তাহলে অন্তত সহায়তা অনেক কমাবে, তাতে সন্দেহ নেই।

রিচার্ড এন হাস কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের প্রেসিডেন্ট


ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত আকারে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট