পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার ও বিপদ–আপদ দূর করার বিভিন্ন আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে। বিশ্বাসী মুমিনরা তাই সর্বদা আল্লাহর ওপর ‘তাওয়াক্কুল’ করেন। তাওয়াক্কুল অর্থ নির্ভরতা ও ভরসা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করল, তবে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা-৬৫ তালাক, আয়াত: ৩) ‘আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চান মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ১০৭)
দুশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হলো ইতিবাচক চিন্তা ও কল্যাণমূলক পরিকল্পনা। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘বান্দা আমার প্রতি যে রূপ ধারণা রাখে, আমি বান্দার প্রতি সেই রূপ আচরণ করি।’ (বুখারি: ৬৯০১)
কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ্য আসে। কঠিন অবস্থার পর সচ্ছলতা আসে। পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘নিশ্চয় কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ্য আছে; অবশ্যই স্বাচ্ছন্দ্য আছে কষ্টের পর।’ (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
তাওয়াক্কুল তথা কর্মফলের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করলে হতাশা ও দুশ্চিন্তা আসতে পারে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ভরসাকারী বিশ্বাসীগণ তাঁর (আল্লাহর) ওপরই নির্ভর করুক।’ (সুরা-৩৯ জুমার, আয়াত: ৩৮) ‘আর তাঁর (আল্লাহর) ওপরই ভরসা করা চাই নির্ভরকারীগণের।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ৬৭)
তাওয়াক্কুলের সঙ্গে তাকদিরের সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা মাতৃজঠরে রয়েছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে অবহিত।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ৩৪)
কখনো কখনো মানুষ চেষ্টা–প্রচেষ্টা ও কর্ম সম্পাদনের পর তার সুফল বা ভালো ফল না পেলে হতাশা, দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত হয়। তাওয়াক্কুল মানুষকে হতাশামুক্ত সম্ভাবনাময় জীবন দান করে। আশা, উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সৎসাহস নিয়ে সত্য সঠিক ন্যায়ের পথে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।
কারণ, কর্মের ফল নগদ বা তাৎক্ষণিক না পেলেও ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে; যা চাওয়া হলো, তা না পেলেও তার বিকল্প অন্য কিছু পাওয়া যাবে; ইহজগতে না পেলেও পরকালে অবশ্যই পাওয়া যাবে। (মিশকাত, তিরমিজি)।
ইস্তিগফার করলে বিপদ-আপদ দূর হয়। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। (ফলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করাবেন, তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে।’ (সুরা-৭১ নুহ, আয়াত: ৭১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তাকে সব সংকট উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ: ১৫২০)
দরুদ শরিফ পড়লে দুশ্চিন্তা দূর হয়। হজরত উবাই ইবন কাআব (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার ওপর অধিক হারে দরুদ পাঠ করে থাকি।...আমার সবটুকু সময় আপনার ওপর দরুদ পাঠে ব্যয় করব? তিনি বলেন, তাহলে তো তোমার চিন্তামুক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে; আর তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি: ২৪৫৭)
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) চিন্তাযুক্ত হলে এই দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল।’ অর্থ—‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে।’ (বুখারি: ২৮৯৩)
■ মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com