গুলিস্তান এলাকায় আক্রমণকারীর ঘুষি খাওয়ার পর সেলাই লেগেছে আসমার (ছদ্মনাম)। ১২ সেপ্টেম্বরে তোলা
গুলিস্তান এলাকায় আক্রমণকারীর ঘুষি খাওয়ার পর সেলাই লেগেছে আসমার (ছদ্মনাম)। ১২ সেপ্টেম্বরে তোলা

মতামত

এই মেয়েদের মারবে কেন

নির্মম, নিষ্ঠুর

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গত ৩০ আগস্ট দিবাগত রাতে বেধড়ক লাঠিপেটা খেয়েছেন। লাঠির মালিকেরা তাঁর কষ্টে জমানো ১৩ হাজার ৫০০ টাকা আর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন।

৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যখন মিরপুর এলাকায় ছোট ঘরটিতে গেলাম, তিনি মেঝেয় বসে এক বন্ধুর এনে দেওয়া নাশতা খাচ্ছিলেন।

ভারী শরীরটা নিয়ে নড়াচড়া কষ্ট। ব্যথা তখনো যায়নি। দেখলাম তাঁর দুই পা, ঊরু, পেছন দিক, দুই হাত-বাহু আর কাঁধে আঘাতের লালচে দাগড়া দাগড়া চিহ্ন।

ভাঙা গলায় বলেন, ‘আমার জীবন শেষ।’ বলেন, পেট বাদে পুরো শরীরে লাথি-চড় মেরেছেন আর গাছের ডাল, বাঁশের চটা ও নীল পাইপ দিয়ে পিটিয়েছেন কয়েকজন যুবক।

‘আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে এর একটা বিচার চাই।’— রত্না (ছদ্মনাম)। ৬ সেপ্টেম্বর, মিরপুর

ধরা যাক তাঁর নাম রত্না।

পেশায় তিনি ভাসমান যৌনকর্মী। ঢাকার শ্যামলী স্কয়ার (সিনেমা হল) এলাকায় এক দোকানির কাছে কিছু কিছু করে টাকা জমাতেন। বাড়িভাড়া আর ঘরখরচের জন্য সে রাতে টাকাটা তুলতে গিয়েছিলেন। রাত ১১টার পর টাকা গুনে নিয়ে রিকশায় উঠলে দুজন যুবক এসে তাঁকে থামান।

যুবকেরা তাঁকে নামিয়ে একটা সিএনজিতে উঠতে বলেন। তিনি না উঠলে ‘ধাম ধাম’ করে দুই গালে চড় মারেন। তিনি বলতে থাকেন, তাঁর বাচ্চা পেটে। তাঁরা ফোন করে এক নারীকে আনিয়ে সেটা নিশ্চিত হন।

মার কিন্তু থামে না। তাঁরা আরও কয়েকজন যুবককে ফোন করে ডেকে আনেন। ১০-১২ জন মিলে বিশ্রী গালাগালি করে তাঁকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন।

রত্না বলেন, ‘এত মাইর আমি জীবনে খাই নাই। মনে হইসে আমি বুঝি মইরাই গেছি। পরে যখন আমি পেট ধরে বইয়া পড়ছি, আমি এক ফোঁটা পানি চাইছি অনেকক্ষণ ধইরা।’ একটা লোক পানি দিতে এলে যুবকেরা দিতে দেননি।

এর আগেই তাঁরা রত্নার টাকাসহ ব্যাগ আর মোবাইল ফোনটা নিয়ে নিয়েছেন।

রত্নার খোঁজে তাঁর কিশোরী মেয়ে ফোন করলে যুবকেরা তাকেও আসতে বলেন। রত্না চিৎকার করে মেয়েকে নিষেধ করেন।

মার চলে। রাত তিনটা-সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা রত্নাকে ছেড়ে দেন। মামলা না করতে বা সেনাবাহিনীকে না জানাতে কড়া হুমকি দেন।

ততক্ষণে মেয়ের কাছে খবর পেয়ে রত্নার বড় বোন আর যৌনকর্মী সংগঠনের এক কর্মী তাঁকে খুঁজতে আসেন। তাঁরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। মোটরসাইকেলে পিছু নেন দুই যুবক। রত্না ভয়ে ফিরে আসেন।

সেই থেকে বাসায় শুধু ব্যথার ওষুধ খাচ্ছেন। তিনি স্বপ্নচূড়া নারী সংঘের সদস্য। সংগঠনের কিছু সাহায্য আর ঋণের ওপরে চলছেন।

আক্রমণকারী লুটেরা যুবকেরা বলেছিলেন, রত্না ‘পতিতা’—সমাজকে নষ্ট করছেন।

এইচ এম রাসেল সুলতান ২৭ আগস্ট ফেসবুক লাইভে সবাইকে আহ্বান করেন ভিডিও শেয়ার করতে, এই মেয়েদের পেটাতে।

চোরের মার

১ সেপ্টেম্বর শ্যামলী স্কয়ারে যৌনকর্মীদের মারধর করার তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হলে প্রথম আলো সেগুলো ধরে একটা প্রতিবেদন করে

যৌনকর্মী এবং তাদের সংগঠনগুলোর কাছ থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন নির্যাতনের খবর পেতে থাকি। নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে যৌনকর্মীদের মোর্চা সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে

আমি ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর সাতজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলি। আরও আটজনের কাছ থেকে মোট অন্তত ৩০ জন নারীর এমন অভিজ্ঞতার বিবরণ শুনেছি। বয়ান ও ভিডিওগুলো যাচাই-বাছাই করে তারপর লিখছি।

রত্নার ঘরে বসে স্বপ্নচূড়ার প্রচার সম্পাদক তন্নি এবং উল্কা নারী সংঘের সভাপতি হেনা আক্তার আমাকে বলেছিলেন, এমন মারধর হয়েছে মিরপুর পদচারী–সেতুর কাছে। হয়ে চলেছে শ্যামলী ও সংসদ ভবন এলাকায়।

কথা বলি সালমার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ২০ আগস্ট ভোরে তিনি আর আরেকটি মেয়ে বাসায় ফিরছিলেন।

আড়ংয়ের কাছে আসাদগেট এলাকায় পাঁচজন তরুণ তাঁদের বলেন, যা আছে বের করে দিতে। তারপর তাঁরা বড় লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসেন।

সালমা দৌড় দিলে এক তরুণ তাঁকে ল্যাং মেরে রাস্তায় ফেলে থুতনিতে লাথি মারেন। ‘আমার তিনটা দাঁত লড়ে এহন,’ বলেন সালমা। তাঁর হাত-পা জুড়ে আর কাঁধে আঘাতের দাগ।

তরুণেরা তাঁর ঘড়ি আর বারো শ টাকা ছিনিয়ে নেন। অন্য মেয়েটিকেও মারেন। সালমা বলেন, এঁরা বলছিলেন, এটা ‘বিএনপি এলাকা’; এখানে এসব কাজ চলবে না।

তিনি এক মাসে একই জায়গায় তিনবার মার খেয়েছেন। বললেন, আশপাশের মানুষজন নীরব ছিল। কেউ কিছু বলতে গেলে ‘পতিতার দালাল’ বলে গালি আর হুমকি দেওয়া হয়।

১১ সেপ্টেম্বর সংসদ ভবন এলাকায় মার খেয়েছেন ফরিদা (ছদ্মনাম)। ১৩ সেপ্টেম্বর

পুরান ঢাকায় একই চিত্র

৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে গেলাম বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে। এ অঞ্চলে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে কল্যাণময়ী নারী সংঘ। রিনা বেগম সংগঠনটির সভানেত্রী।

রিনা বললেন, আন্দোলন চলাকালে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে যৌনকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়াতে পারছেন না। আগস্টের শেষ ভাগ থেকে আয়রোজগার প্রায় নেই, মারধরের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। ঘাটে আসা অন্তত ছয়জন একই কথা বললেন।

মোমেনা বেগমের (ছদ্মনাম) এলাকা  রায়সাহেব বাজার। আগের রাতে একদল যুবককে দেখে তিনি প্রথমে সরে গিয়েছিলেন। তিনটার দিকে ফিরে দেখেন তাঁরা তখনো আছেন।

তাঁদের উপস্থিতিতে পানওয়ালা তাঁকে পান বিক্রি করতে রাজি হন না। চায়ের দোকানে বসে এক কাপ চা হাতে নিয়েছেন, ওই যুবকেরা এসে সেটা ফেলে দিয়ে তাঁকে লাথি-ঘুষি মারেন, ডাবের খোলা আর ছড়া দিয়ে পেটান।

মোমেনা আরেকটি মেয়েকে ধরে বাহাদুর শাহ্ পার্কের ভেতরে নিয়ে যেতে দেখেছেন। মোমেনা বললেন, এমন যুবকেরা রোজ আসেন লাঠি নিয়ে।তাঁদের চলে যেতে বলেন, লাঠিপেটার ভয় দেখান।

কয়েকদিন আগে গুলিস্তান এলাকায় ঘুষি খেয়ে চোখের কোনায় টানা সেলাই নিতে হয়েছে আসমাকে (ছদ্মনাম)।

সকালে হেনা ও তন্নি বলেছিলেন, শ্যামলী ও সংসদ ভবন এলাকায় আক্রমণকারীরা বলেন, এলাকার ভেতরে যৌনবৃত্তি বা যৌনকর্মী থাকতে পারবে না।

দায় কার

৭ সেপ্টেম্বর শ্যামলীতে আদাবরমুখী রাস্তায় একটি ব্যানার টাঙানো দেখি। সেখানে হোটেলে যৌনবৃত্তি প্রতিরোধ করতে এলাকাবাসী ও ‘ছাত্রসমাজকে’ অনুরোধ করা হয়েছে।

এটার ছবি পাঠিয়েছিলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরীকে। তিনি বললেন, এটা তাঁরা দেননি। তাঁরা হোটেলে গিয়ে তল্লাশিজাতীয় কোনো কাজের অনুমোদন দেননি। আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা প্রথম থেকেই খুব পরিষ্কার।

আর তাহমীদ বললেন, কারও গায়ে হাত দেওয়ার অনুমতি দেননি। কেউ এমন করলে তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমি ভাবছি, দেবেটা কে? কারও তো কোনো উদ্যোগ দেখছি না!

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসানের সঙ্গে কথা হলো মুঠোফোনে। তিনি বললেন, এমন নির্যাতনের কথা তিনি জানেন না। কোনো অভিযোগ পাননি। নির্যাতনের ভিডিওগুলো তিনি দেখেননি।

ওসি ইফতেখার আরও বললেন, তাঁর এলাকায় কোনো ব্যক্তিকে কেউ শারীরিক আঘাত করলে তিনি অবশ্যই সেটা প্রতিহত করবেন। হুমকি-ধমকি-ধাওয়াও ফৌজদারি অপরাধ। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

কিন্তু নজরদারি করে প্রশাসন নিজে থেকে তো ঠেকাচ্ছে না! প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থাও নিচ্ছে কই?

স্বপ্নচূড়ার সভানেত্রী নিলুফা বললেন, ১১ সেপ্টেম্বরেও ফার্মগেট আর সংসদ ভবন এলাকায় ১০ জন মেয়ে লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন। আগে রাতে পুলিশ থাকত, টহল হতো। এখন তেমনটা দেখেন না।

দুই সপ্তাহ আগে সংসদ ভবন এলাকায় লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন ফুলি (ছদ্মনাম)। একদল তরুণের হাতে নির্যাতনের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলেন তিনি ৭ সেপ্টেম্বর।

ভিডিও–সন্ত্রাস

সেদিনই কথা হলো হালিমার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশনের এইচআইভিএইডস কর্মসূচিতে আউটরিচ ওয়ার্কার হিসেবে মাঠে যৌনকর্মীদের সেবা দেন।

আগস্টের শেষ দিকে শ্যামলী এলাকায় নীল পাইপ দিয়ে তাঁকে পিটিয়েছিলেন এইচ এম রাসেল সুলতান নামের এক যুবক, হালিমার চাকরির কার্ড দেখার আগেই।

আমার হাতটা টেনে নিয়ে হালিমা দেখালেন তাঁর আঘাত এখনো শক্ত চাকা হয়ে আছে। রাসেল পরে আরও তিনজনকে চোরের মার মারেন। কেউ একজন সবটা ভিডিও করেন। সেটা রাসেল নিজের ফেসবুক আইডিতে আপলোড করে দেন। হালিমা বলেন, ‘যত এমন ভিডিও আছে, ডিলিট করা গেলে ভালো হতো।’

ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও রাসেলের ফেসবুকে আর নেই, তবে এটা নানা জনের পোস্টে ঘুরছে। ঘুরছে আরও অন্তত দুটি ভিডিও, যেগুলোতে সাতজন মেয়ের চেহারা স্পষ্ট দেখা যায়।

এইচ এম রাসেল সুলতানের ফেসবুকে দেওয়া ছবি। একটি সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে। অন্যটি আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী কার্ড গলায় ঝোলানো

রাসেলের সৌজন্যে

ভুক্তভোগীসহ ওই অঞ্চলের মেয়েরা বলছেন, আগস্টের শেষ সপ্তাহে রাসেল শ্যামলীতে তিন দিন মারধর চালিয়েছেন। কাছাকাছি অন্যান্য এলাকাতেও তিনি এটা করেছেন।

হালিমাদের ভিডিওতে নির্যাতকের চেহারা এবং রাসেলের ফেসবুক আইডিতে (HM Rasel Sultan) তাঁর ছবি মিলিয়ে তাঁকে শনাক্ত করেছি। তাঁকে ‘সরফরাজ’ নামের একজনকে ডাকতে শোনা যায়।

দুটি ভিডিও ইউটিউবে। সেগুলোর ঠিকানাও তাঁর দিকে ইঙ্গিত করে। ভিডিও তিনটি খুঁটিয়ে দেখেছি।

রাসেলের উন্মত্ত ভাবভঙ্গি ও হুংকার, অশ্রাব্য গালাগাল, সবাইকে ভিডিও শেয়ার এবং ‘পতিতা’ উচ্ছেদ করার ডাক, শিকারির মতো ধাওয়া করা, লাঠি আর পাইপের বাড়ির শব্দ, আক্রান্ত মেয়েদের আর্তচিৎকার, অসহায় মুখ—এসব মাথায় গেঁথে গেছে।

বাংলাদেশে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট-চেক ও যাচাইবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশির বলছেন, তিনটি ভিডিওই রাসেলের। এর দুটো তিনি আগে রাসেলের ফেসবুক আইডিতে দেখেছেন।

কদরুদ্দীন আমাকে বললেন, তিনটিই নানা ক্যাপশনে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি ১১ আগস্ট ‘পতিতা উচ্ছেদ’ শব্দবন্ধ দিয়ে খুঁজে এমন অন্তত ২০০ পোস্ট পেয়েছেন।

তিনি বলছেন, কারও অভিযোগের পর ফেসবুক হয়তো ভাইরাল ভিডিওটা সংশ্লিষ্ট আইডি থেকে সরিয়ে দিল। কিন্তু এমন ‘ন্যায়পরায়ণ’, ‘সমাজ সংস্কারসংক্রান্ত’ বা ‘ধর্মীয়’ আবেগে নাড়া দেওয়া ভিডিও মানুষ নানাভাবে শেয়ার করে।

সব মিলিয়ে কমপক্ষে হয়তো এক লাখ এমন পোস্ট উসকানিমূলক হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থেকে যাচ্ছে।

কদরুদ্দীন আরও বললেন, একজন যখন এমন আবেগ ব্যবহার করে আইন হাতে তুলে নেয়, তখন অন্যরাও একই রকমভাবে সে কাজ করতে উৎসাহ পায়। তিনি বলেন, ‘কিছু নতুন পোস্ট সবাইকে এমন ভূমিকা নিতে আহ্বান করছে।’

ফেসবুক তাঁর একটা ভিডিও সরিয়ে দিয়েছে বলে গত ২৭ আগস্ট ৮ মিনিটের একটা লাইভ করেন রাসেল। সেখানে তিনি বলেছেন, এই মেয়েদের জন্য তাঁর পরিবারের চলাচলে সমস্যা হতো, অনেক সংসার ভেঙে যাচ্ছে, ব্যভিচার হচ্ছে, ইত্যাদি।

লাইভে তিনি কয়েকবার এই মেয়েদের ‘ইচ্ছেমতো’ পেটানোর কথা বলেছেন। সবাইকে বলেছেন পেটাতে আর ভিডিও করে ছড়িয়ে দিতে।

তাঁর দুটি ব্যবসায়িক নম্বরে কয়েকবার করে কল দিয়েছিলাম। কেটে দেওয়া হলো। মেসেঞ্জারে বার্তা রেখেছিলাম। তিনি শুধু লিখলেন, আমাকে চেনেন না। তারপর থেকে তাঁর ফেসবুকে ঢুকতে পারছি না।

এদিকে সাংবাদিক মোস্তফা ইউসুফ বললেন, রাসেলের ফেসবুকে সাবেক বনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ছবি ছিল। কোনো এক নির্বাচনে তাঁর গলায় আওয়ামী লীগের কার্ড ঝোলানো ছবি ছিল। মোস্তফা সে ছবি দুটো পাঠিয়ে বললেন, ২ সেপ্টেম্বর এগুলো দিয়ে নিজের ফেসবুকে তিনি একটা পোস্ট দিয়েছিলেন।

মোমেনাকে (ছদ্মনাম) লাথি-ঘুষি মেরে ডাবের খোলা আর ছড়া দিয়ে পেটানো হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর, ওয়াইজঘাট, পুরান ঢাকা

অতঃপর...

সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের হিসাবে সারা দেশে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার। সমাজের তলানিতে পড়ে থাকা এই মেয়েদের সংখ্যা ঢাকায় কত, তার সঠিক হিসাব কারও জানা নেই, তবে ১০ হাজারের কম হবে না।

৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে যৌনকর্মীরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সুরক্ষা চেয়েছেন, উপদেষ্টা পরিষদের কাছে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ জীবন চেয়েছেন। তাঁরা আক্রমণকারীদের আইনানুগ ও দ্রুত শাস্তি চেয়েছেন।

মানবাধিকার মোর্চা ‘সংহতি’র পাঁচজন প্রতিনিধি গত ২১ আগস্ট সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে যৌনকর্মীদের খাদ্যসহায়তা, নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তাবে পেশার স্বীকৃতির বিষয়ও ছিল, সে প্রসঙ্গে আজ যাব না। আপাতত বলি, যৌনকর্মীরা মৌলিক মানবাধিকার, নাগরিক ও ভোটারের প্রাপ্য অধিকার চাইছেন।

আর রত্না? রত্না সরকারকে কী বলতে চান?

‘বলব যে আমি অতিরিক্ত অত্যাচারের শিকার,’ বলেন রত্না। ‘আমারে মাইরধর করছে। আমার এত কষ্টের টাকা…ছিনতাই কেন করল?...আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে এর একটা বিচার চাই।’

তাঁর কাকুতি, যদি তাঁর টাকাটা সরকার বা কেউ উদ্ধার করে দিত! আলট্রাসনো রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁর প্রসবের সময় আসন্ন।

(সংশোধনী: ১৮ আগস্টে প্রকাশিত লেখাটিতে ভুল করে একটি মেয়ের ছদ্মনাম ‘আমেনা’ লেখা হয়েছিল। সংশোধন করে নামটি ‘আসমা’ করা হলো।)

  • কুর্‌রাতুল-আইন-তাহ্‌মিনা সাংবাদিক

ই–মেইল: Qurratul.tahmina@gmail.com