অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে সরকার কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে; কিন্তু শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের বাস্তব সমস্যাগুলো কি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন কল্লোল মোস্তফা
যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাতে নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের এক উল্ল্যেখযোগ্য অংশ ছিলেন শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। কাজেই এই অভ্যুত্থানের মধ্যে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ দায়িত্ব হলো, শ্রমজীবী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিরুদ্ধে চলমান অর্থনৈতিক বৈষম্য ও নিপীড়নের অবসান ঘটানো; তাঁদের জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি আনার চেষ্টা করা।
অন্তর্বতী সরকার শ্রম খাত সংস্কার কমিশন গঠন, পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিবেচনা ও শ্রম আইন সংশোধনের মতো ইতিবাচক কতকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার এমন কিছু তৎপরতা চালিয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ‘এলিট বায়াস’ বা অভিজাত শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন মোকাবিলা, ফুটপাতের হকার উচ্ছেদ ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের আচরণকে ঠিক শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্তবান্ধব বলা যাবে না। সেই সঙ্গে রয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা।
দীর্ঘ স্বৈরশাসনকালে নিপীড়ক রাষ্ট্রযন্ত্র ও পোশাক কারখানার মালিকদের শোষণ ও নিপীড়নে বঞ্চিত পোশাকশ্রমিকেরা যখন তাঁদের বঞ্চনা নিরসনের দাবিতে রাস্তায় নেমে এলেন, তখন এই আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ ও বিদেশি ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ শ্রমিকদের দাবিগুলো ছিল সুনির্দিষ্ট কিছু অধিকারকে কেন্দ্র করে, যেগুলোকে অযৌক্তিক বলার কোনো সুযোগ নেই।
এসব দাবির মধ্যে ছিল বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ থেকে বাড়ানো, প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু, ১৫ দিন পিতৃত্বকালীন ছুটি, টিফিন বিল ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ৬ মাস করা, মোট বেতনের সমান ঈদ বোনাস দেওয়া, ছুটি বৃদ্ধি করা এবং মাস শেষে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে মজুরি প্রদান ইত্যাদি।
■ অন্তর্বতী সরকার শ্রম খাত সংস্কার কমিশন গঠন, পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিবেচনা ও শ্রম আইন সংশোধনের মতো ইতিবাচক কতগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ■ বিগত সরকারের সময় ব্যাপক জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও বাস্তবে দেশে আনুষ্ঠানিক খাতে মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি।
দমন–পীড়ন করে পোশাকশ্রমিকদের এসব দাবি আদায়ের আন্দোলন মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ও মালিকপক্ষ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্য দিয়ে পোশাক খাতের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসে। এটা প্রমাণ করে যেকোনো ষড়যন্ত্র বা উসকানি নয়, অধিকারের দাবিতেই শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমেছিলেন।
১৮ দফার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে ১০ অক্টোবরের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধ করার কথা থাকলেও দেখা গেল, কোনো কোনো পোশাক কারখানার মালিক ওই সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করেননি। ফলে শ্রমিকদের আবার রাস্তায় নামতে হয়। দেখা গেল, অন্তর্বর্তী সরকার মালিকপক্ষকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বকেয়া পরিশোধে বাধ্য করতে পারছে না; বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন থামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ রকম একটি পরিস্থিতিতেই মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে নিরুপায় হয়ে বিক্ষোভে নামা জেনারেশন নেক্সট কারখানার শ্রমিকদের ওপর গত ২৩ অক্টোবর গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুলিতে আহত হয়ে ২৫ বছর বয়সী পোশাকশ্রমিক চম্পা খাতুন ২৭ অক্টোবর মারা যান।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ম্যাঙ্গোটেক্স কারখানার শ্রমিক কাউসার আহমেদ খান (২৬)। ৩১ অক্টোবর কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে মিরপুরের ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে আহত হয় ঝুমা আক্তার (১৫) ও আল আমিন হোসেন (১৭)। অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক বিভিন্ন আন্দোলনকে ‘ষড়যন্ত্রের চশমা’ দিয়ে দেখার কারণে এবং গণমানুষের সংকটের সঙ্গে তাদের বিচ্ছিন্নতার কারণে এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই কোনো ধরনের পুনর্বাসন ছাড়াই কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও গুলিস্তান থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৪ নভেম্বর কারওয়ান বাজারের রাস্তার দুই পাশ ও ফুটপাত থেকে এবং ১২ নভেম্বর গুলিস্তান ও ফার্মগেটের ফুটপাত থেকে শত শত হকারকে উচ্ছেদ করা হয়; কিন্তু শখ করে কেউ তো রাস্তায় দোকান নিয়ে বসেন না!
বৈষম্যমূলক অর্থনীতির থাবায় ক্ষতবিক্ষত গ্রামীণ কৃষি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বা নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ শহরে এসে আর কোনো কর্মসংস্থান করতে না পেরে হকারি করে। ফুটপাতে বসার জন্য তাদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়, নানাভাবে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের লাইসেন্সের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়মকানুন মেনে বৈধভাবে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করতে পারত।
প্রতিবেশী ভারত সরকার ঠিক এই কাজই করেছে দ্য স্ট্রিট ভেন্ডরস (প্রটেকশন অব লাইভলিহুড অ্যান্ড রেগুলেশন অব স্ট্রিট ভেন্ডিং) অ্যাক্ট-২০১৪–এর মাধ্যমে। এই আইনের মাধ্যমে হকারদের নগরের গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং সেই সঙ্গে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টাউন ভেন্ডিং কমিটি নামের একটি অংশগ্রহণমূলক কমিটির বিধান রাখা হয়। এই কমিটির সদস্যদের অন্তত ৪০ শতাংশ হকার থাকতে হয়।
এই কমিটির মাধ্যমে ফুটপাতের কোথায় কতক্ষণ হকার বসতে পারবে বা পারবে না, তা নির্ধারণ করা হয়। হকারদের লাইসেন্স দেওয়া এবং নিয়মকানুন মেনে চলতে বাধ্য করার কাজটিও এই কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। পাইকারিভাবে হকার উচ্ছেদ না করে অন্তর্বর্তী সরকার হকারদের নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এ রকম একটি উদ্যোগ নিতে পারত।
বিগত সরকারের সময় ব্যাপক জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও বাস্তবে দেশে আনুষ্ঠানিক খাতে মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। ফলে দেশের শ্রমজীবীদের ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এদের একটি উল্ল্যেখযোগ্য অংশ হলো ফুটপাতের হকার বা রিকশাচালক।
দেশে কর্মসংস্থানের সমস্যার সমাধান না করে এদের রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করা ভীষণ অমানবিক আচরণ। হকার উচ্ছেদ ছাড়াও আরও একটি অমানবিক আচরণের দৃষ্টান্ত হলো ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে নিলামে তুলে বেচে দেওয়া।
৭ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অভিযানে ৭৮টি অটোরিকশা এবং ৩১৫টি ব্যাটারি নিলামের মাধ্যমে ১০ লাখ ৫ হাজার টাকায় এবং ১১ নভেম্বর ১০২টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ৩৭৬টি ব্যাটারি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
এভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণের নামে দরিদ্র রিকশাচালকদের রিকশা জব্দ করে নিলামে বেচে দেওয়াটা কতটা ন্যায্য আচরণ হলো? ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে রিকশা ও ব্যাটারি ক্রয়কারী রিকশাচালকের ঋণ পরিশোধ কীভাবে হবে আর তার সংসারই বা কীভাবে চলবে? ঢাকা শহরে যানজটের জন্য কি শুধু ব্যাটারি রিকশাই দায়ী? আইন ভঙ্গ করার দায়ে ব্যাটারি রিকশা যেভাবে নিলামে তোলা হলো, ঢাকার রাস্তায় যত্রযত্র যাত্রী উঠিয়ে যানজট সৃষ্টিকারী মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়ঝক্কড় বাস কিংবা কোনো সামর্থ৵বান ব্যক্তির প্রাইভেট কারের বেলায় কি একই আচরণ করা সম্ভব হতো?
দিন শেষে ব্যাটারি রিকশার পক্ষে–বিপক্ষে সিদ্ধান্ত অনেকটাই শ্রেণিস্বার্থ ও শ্রেণিগত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নির্ধারিত হয়। যে যুক্তিতে রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়া হচ্ছে, সেই যুক্তিতে ঢাকার রাস্তা থেকে সবার আগে প্রাইভেট কার তুলে দেওয়া উচিত। কারণ, সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রাস্তা দখলকারী যান হলো প্রাইভেট কার।
মাত্র ৬ শতাংশ যাত্রী বহন করে রাস্তার ৭৬ শতাংশ জায়গা দখল করে থাকে এসব ব্যক্তিগত গাড়ি। তার পরেও এলিট শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গিতে যানজট সমস্যার কারণ হিসেবে শুধু রিকশাকেই দায়ী করা হয়। অথচ প্রাইভেট কারের তুলনায় রিকশা কম জায়গা দখল করে এবং সস্তায় বহু মানুষকে পরিবহন করে।
যথাযথ গণপরিবহনব্যবস্থা না থাকার কারণেই মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেল বা রিকশা ব্যবহার করেন। গণপরিবহনব্যবস্থা ঠিকঠাক না করে রাস্তায় প্রাইভেট কার চলাচল নিষিদ্ধ করা যেমন অযৌক্তিক হবে, রাস্তা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়াটাও সে রকম অযৌক্তিক ও অমানবিক হবে।
প্রয়োজন ছিল বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে এলাকাভেদে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, আধুনিক যন্ত্রপ্রকৌশলের মাধ্যমে এগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো, যান্ত্রিক কৌশলে এগুলোর গতি বেঁধে দেওয়া, ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা, চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট স্থানে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের সাধারণ মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা হলো নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পার হলেও নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে তেমন সফলতা দেখা যাচ্ছে না। সরকার বিভিন্ন নিত্যপণ্যের শুল্ক কমিয়ে আমদানি উৎসাহিত করে মূল্য কমানোর চেষ্টা করছে; কিন্তু এই কৌশল কতটা কাজ করছে সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে সরকার আলু আমদানির শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে এবং ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে। এরপর কিছু পরিমাণ আলু আমদানিও হয়; কিন্তু এর ফলে আলুর দাম কমেনি। গত দুই সপ্তাহে আলুর দাম কেজিতে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম গত বছরও এ রকম বেড়েছিল; তবে সেটি ডিসেম্বরে। অর্থাৎ এ বছর বেশ আগেই আলুর দাম বাড়ল।
আলুর এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হলো, এই সময় কৃষকের কাছে আলু থাকে না। পুরোনো আলু এখন বাজারে আসছে হিমাগার থেকে। অক্টোবর মাসে বেশি বৃষ্টির কারণে আলুবীজ রোপণে দেরি হওয়ায় বাজারে আগাম আলু আসতেও দেরি হচ্ছে। এসব কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, যার সুযোগ নিচ্ছেন হিমাগারের মজুতদারেরা।
চাহিদার তুলনায় আলুর ঘাটতি থাকার কারণে মজুতদারেরা ইচ্ছামতো দামে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি করছেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের দিক থেকে হিমাগার পর্যায়ে কোনো তদারকি না থাকায় মজুতদারেরা এভাবে বাড়তি দামে বিক্রি করতে পারছেন। (খুচরা বাজারে আলু কেজিতে ৭০-৭৫ টাকা, কেন এত দাম, প্রথম আলো, ১২ নভেম্বর ২০২৪)
১১ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শুল্ক হ্রাস করার ফলে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমার দাবি করা হলেও সেদিন সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাবে আলু ও পেঁয়াজের দাম এক মাস আগের তুলনায় যথাক্রমে ২৭ ও ২২ শতাংশ বেশি এবং এক বছর আগের তুলনায় ৪৭ ও ১০ শতাংশ বেশি ছিল।
শুল্ক কমালেই যে আমদানি বাড়বে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেমন গত এক বছরে প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৩৩ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান ১০ লাখ মুরগির ডিম আমদানি করেছে। শুল্ক কমানো হলেও নানা ধরনের অশুল্ক বাধার কারণে ব্যবসায়ীরা ডিম আমদানিতে উৎসাহবোধ করেন না।(অনুমতি ৩৩ কোটি ডিমের, এক বছরে এসেছে ১০ লাখ, প্রথম আলো, ১৩ নভেম্বর ২০২৪)
কাজেই সুদের হার বাড়ানো বা শুল্ক কমানোর মতো পদক্ষেপ বাজার নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন বাজারে অদৃশ্য হাতের কারসাজি বন্ধ করা। চাহিদা ও সরবরাহের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা, মজুতদারি প্রতিরোধ এবং কার্যকর রেশন–ব্যবস্থা চালু করা ইত্যাদি। এসব উদ্যোগ নেওয়া হলে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠশ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আরেকটু সহজ হতে পারত, অন্তর্বর্তী সরকার যা এখনো করতে পারেনি।
●কল্লোল মোস্তফা লেখক ও গবেষক