মতামত

নববর্ষ উদ্‌যাপন কীভাবে বিভাজনের রাজনীতির পাঁকে পড়েছে

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলা নববর্ষ এলে নানা তর্ক–বিতর্ক তৈরি হয়
ছবি : প্রথম আলো

ইদানীং কিছু তর্কবিতর্ক থেকে স্পষ্ট যে সংস্কৃতি, কৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে ঘোরতর বিভ্রান্তি কমছে না, বরং বাড়ছে। কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে জল ঘোলা করছে। সজ্ঞান ঘোলাকারীরা ঘোলা জলে মাছ শিকারে নামছে। আলোচনার মূলে ফিরব পরে। আগে ডালপালা চেনা যাক। প্রথমে ডালপালা চিনতে ইংরেজি রাইটস-রিচুয়ালসের আশ্রয় নিচ্ছি—বাংলায় আচার-প্রথা, পূজা-অর্চনা। খতনা অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে মৃত্যুপরবর্তী চল্লিশা পর্যন্ত নানা রকম চর্চা আছে। অন্নপ্রাশন, বিয়েশাদির আগে কোষ্ঠী-ঠিকুজি, সাত পাকে বাঁধা মন্ত্রে বিয়ে, মৃত্যুর পর চিতায় তোলা, বর্ণ ও সংস্কারভেদে মাথা মুড়োনো, উপবাসসহ আরও নানা রকম যজ্ঞ আছে। সব মত-পথ-ধর্মবিশ্বাসীর ভিন্ন ভিন্ন চর্চা আছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির অধিবাসীদের অসংখ্য যজ্ঞ আছে। এসব আচার-প্রথাকে ‘আচার-প্রথা’ বলা সংগত; ‘সংস্কৃতি’ মনে করা ভুল। ভুল ধারণা ব্যবহারের কারণে ‘সংস্কৃতি’-বিতর্ক ভুল পথে বাঁক নিচ্ছে।

‘রাইটস-রিচুয়ালস’-এর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমটি সময়ানুবর্তিতা (টাইমলিনেস, টেম্পোরালিটি) ও নিয়মসিদ্ধতা (সিস্টেম্যাটিক)। যখনকার বিষয় তখনকার আয়োজন। ৯০ বছরে কারও খতনা হয়? অন্নপ্রাশন হয়? মৃত্যুর আগেই কবর হয়? দাহ হয়? মাথা ন্যাড়া, উপবাসের ঘটনা ঘটে? ‘পরে সময় পাব কি না’ বা ‘বাঁচব কি না ঠিক নেই, আগেই যজ্ঞ করে ফেলি’—ব্যাপার-স্যাপার কেউ দেখেছে কখনো? আগামী শুক্রবার ব্যস্ত থাকব, তাই মঙ্গলবারেই জুমার নামাজ পড়ে নিচ্ছি—এমনটি কখনো সম্ভব? অসম্ভব! আচার-প্রথা সময়ানুবর্তী। ‘রাইটস-রিচুয়ালস’-এর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্য (ডাইভার্সিটি) ও ভিন্নতা (ডিফারেন্স)। মুসলিম-হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ-প্রকৃতিপূজারিদের আচারগুলোই প্রমাণ।

আচার-প্রথাগুলোয় থাকে নজরকাড়া স্বাতন্ত্র্য (ইউনিকনেস)। চৈত্রসংক্রান্তি, লক্ষ্মী-দুর্গা-কালীপূজা, দুই ঈদ ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আচার-প্রথা প্রায় নির্দিষ্ট। দেবী বিসর্জন বা ফিতরা-জাকাত-কোরবানির প্রথায় ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ কম। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য, একই সমাজে বিবাদ-বিসংবাদমুক্তভাবেই ‘রাইটস-রিচুয়ালস’ সহাবস্থান (কো-এক্সিট) করে। আমরা যেমন শতকের পর শতক ছিলাম। এটিকে ‘ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতি’ ইত্যাদি ভাবলে বিভ্রান্তি আরও বাড়ে।

ক্ষমতাসীনদের একদল দাড়ি-টুপিধারী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাদের মূর্তি-মুখোশ দলীয় শোভাযাত্রায় যথার্থ হতে পারে, কিন্তু সর্বজনীন উদ্‌যাপনে অযথার্থ ও বিভাজনমূলক। হরেদরে দাড়ি-টুপিকেই প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রতীক বোঝাতে চাওয়া মারাত্মক কূপমণ্ডূকতা এবং সেকেলে ও অনাধুনিক জড়চিন্তামাত্র। দেশে দাড়ি-টুপিধারী কোটি কোটি অরাজনৈতিক ধর্মানুরাগী সাধারণ মানুষও রয়েছেন। এরূপ প্রদর্শনী তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ ও অপমানের বোধ তৈরি করতে পারে।

দুই

রাইটস-রিচুয়ালস সামাজিক আনন্দ-উচ্ছ্বাস হয়ে গেলে সেরিমনি বা ‘উদ্‌যাপন’-এ রূপ নেয়। আনন্দ-উচ্ছ্বাসই এগুলোর মূল। বিয়ের আগে-পরের গায়েহলুদ, রংচং, সাজগোজ, বউভাত, ফিরানি, এটা-সেটা কত-কী! এগুলো ‘রাইটস-রিচুয়ালস’ থাকে না। কারণ, বিধিবদ্ধতা বা নিয়মাবদ্ধতা নেই। কেউ আদালতে, মাজারে-মসজিদে-মন্দিরে বা কাজি অফিসে বিয়ে করলে গায়েহলুদ, রংচং, সাজগোজ, বউভাত, ফিরানি লাগছে না। তা ছাড়া সেরেমনির তালিকায় নতুন নতুন সংযোজন-বিয়োজন চলতেই থাকে। রং-কাদা-পানি ছোড়াছুড়ি খেলা হতে পারে, মোরগলড়াই, ষাঁড়ের লড়াই, নৌকাবাইচ—বহু কিছু যুক্ত হতে পারে।

কেউ গজল-ভজন-শাস্ত্রীয় সংগীতের ঘরোয়া আয়োজন করতে পারে। কেউ কাওয়াল-বাউল-বৈরাগী আনে, কেউবা ডিস্ক-জকির আয়োজন করে, কেউবা নট-নটী-নাচিয়ে, যাত্রাপালাও নিয়ে আসতে পারে।

কেউ ভাবতে পারে, সব বাদ, শুধুই গরিবদের এক বেলা খাওয়াব। যার যার রুচি ও ভালো লাগা অনুযায়ী আনন্দ উদ্‌যাপনই বড় কথা।

‘সর্বজনীনতা’ সেরেমনিকে বিশেষ মহত্ত্ব দেয়। বাংলা নববর্ষের সর্বজনীনতার চমৎকার একটি উদাহরণ—হালখাতা। সব ধর্ম-গোত্র-বর্ণের মানুষ দাওয়াতি। পাশাপাশি বসেই তারা মিষ্টি-দই-দধি-পান খায়। আরও উদাহরণ নৌকাবাইচ ও ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা। সেরেমনি বিভাজনের বদলে মানুষকে এক করে। একটা সময়ে মুসলমানের মধ্যে কিছু হিন্দু আচরণ, হিন্দুর মধ্যে কিছু কিছু মুসলিম আচরণের আনাগোনা চলত। সেরেমনির কারণে ধর্মে-বর্ণে-গোত্রে আদান-প্রদান, নেওয়া-থোয়া-সংমিশ্রণ (অ্যাসিমিলেশন) ও অন্তর্গতকরণ (ইনক্লুশন/ইনক্লুসিভনেস/ইনক্লুসিভিটি) ঘটত। প্রতিবেশীদের মধ্যে ‘দেবে আর নেবে, মেলাবে মিলিবে’র সৌন্দর্যও বাড়ত।

তিন.
উদ্‌যাপন বা সেরেমনি ‘উৎসব’ (ফেস্টিভ্যাল) নয়। যেমন ‘ম্যারেজ সেরেমনি’। ‘ম্যারেজ ফেস্টিভ্যাল’ নয়।

আমরাই ভুলভাল বিবাহ উৎসব লিখি। আসলে বিয়ে-অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন। উৎসবের গণ্ডি বিশাল।

নৃতাত্ত্বিকেরা বলেন ‘ফ্যাস্টিভ’। সীমাহীন উৎসব-উচ্ছ্বাসমুখরতা থাকতে হয়। ফ্যাস্টিভ বলেই ফেস্টিভ্যাল।

শিশু-কিশোর-আবালবৃদ্ধবনিতা-নির্বিশেষে সবার জন্য অশেষ আনন্দ-ফুর্তি-পানাহার-ক্রীড়াকৌতুকের ব্যবস্থা থাকতে হয়। নৃতাত্ত্বিকেরা আরও বলেন ‘কার্নিভ্যালেস্ক’। ঝাকানাকা-সমৃদ্ধতা। বিশাল এলাকাজুড়ে রংচং-মুখোশ, বাদ্যবাজনা ও রঙিন আলোর ঝলকানি থাকতে হয়। একটি-দুটি নয়, অনেক ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজন থাকতে হয়। তাঁরা মেক্সিকোর ‘ডে অব দ্য ডেডস’ (প্রয়াতদের দিন) কার্নিভ্যালের উদাহরণ টানেন প্রায়ই। কার্নিভ্যালে রঙিন পোশাক, মুখোশ, গীতবাদ্য, বিচিত্র ক্রীড়াকৌতুক, খেলা, প্রতিযোগিতা, সার্কাস, ভোজবাজি—সবই থাকতে হয়। বৈশাখী মেলা, কুম্ভমেলা, গড়িয়াহাটের মেলা ইত্যাদি ছিল আমাদের কার্নিভ্যাল। হস্তশিল্প-কুটিরশিল্প, বিচিত্র দেশি খাবার, পিঠাপুলি-মিষ্টান্ন, পালাগান, গীতবাদ্য, সার্কাস, যাত্রাপালা, চড়ক, নৌকাবাইচ, ঘুড়ি উৎসব, বলীখেলা—আমাদের মেলাগুলোয়ও কার্নিভ্যাল-বৈশিষ্ট্যের কমতি ছিল না।

উৎসবে নতুন নতুন বিষয় ও অনুষঙ্গ যুক্ত হতে থাকাই স্বাভাবিকতা

‘আমাদের সংস্কৃতি’, ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ ইত্যাদি অতি আবেগপ্রবণ, অতি জাতীয়তাবাদী কথামালার বাড়াবাড়ি প্রয়োগ ক্ষতিকর। সাধারণ্যে ‘সংস্কৃতি’ বিষয়ে দুটি ভুল ধারণা পোক্ত হয়ে বসেছে।

প্রথম ভুল গান-বাজনা-নাচ-নাটক-সিনেমা-আঁকাআঁকি ইত্যাদিকে ‘সংস্কৃতি’ ভাবা। এগুলো আসলে ক্রিয়েটিভ আর্টস ও পারফর্মিং আর্টস—সৃজনমুখী ও প্রদর্শনমূলক শিল্পকলা। এগুলোর আলাপ-বিকাশের দায়িত্ব নন্দনতত্ত্বের। দ্বিতীয় ভুল আচার-প্রথা, অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন এবং উৎসব-কার্নিভ্যালগুলোকে সংস্কৃতি ভাবা। আসলে এগুলো জীবনাচরণের চিহ্ন ও অনুষঙ্গ। শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ, নাটাই-লাটিম, ডালা-কুলা-পাখা ইত্যাদিও বাঙালির পরিচিতি-চিহ্ন। সে অর্থে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই; তবে ‘সংস্কৃতি’ নয়। সংস্কৃতি গতিশীল ও পরিবর্তনশীল। চিহ্নে আটকে থাকে না।

‘সংস্কৃতি’ আসলে কী? এককথায় ‘লাইফস্টাইল’ বা ‘জীবনধারা’। অতীতমুখী নয়, ভবিষ্যৎমুখী। বদলাতে থাকা। মিনিটে মিনিটে পরিবর্তনশীলতা। রিকশাওয়ালাদের অনেকেও এখন ট্রাউজার পরে রিকশা চালায়। ভিক্ষুকের হাতেও মুঠোফোন। প্রযুক্তি ও সময়ের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মেলানো, মানিয়ে নেওয়া, নিজেদের খাপ খাওয়ানো, অভিযোজন (অ্যাডাপ্টেশন) ইত্যাদিই ‘সংস্কৃতি’। ইংরেজিতে ‘কালচার’। ল্যাটিন ও গ্রিক ‘কুলচুরা’ থেকে নেওয়া। ‘কুলচুরা’ অর্থ কর্ষণ ও কৃষিকাজ। কৃষক হাল টেনে, লাঙল টেনে নিড়ানি দেয় আরও ভালো ফলনের আশায়, আরও নতুন ফলন আবিষ্কারের আশায়, আরও ভালো থাকার আশায়। অতীতাবিষ্ট ও অতীতবন্দী হয়ে থাকার জন্য মোটেই নয়। কুলচুরা/কালচার-এর যথার্থ বাংলা প্রতিশব্দ ‘কৃষ্টি’ বা কৃষি-চাষবাস। ‘সংস্কৃতি’ও সঠিক ধারণা। ‘সংস্কৃতি’ শব্দের প্রতিপাদ্যই ‘সংস্কার’—উন্নয়ন, সামনে এগোনো, ভুলের শুদ্ধি। তবু বছরের পর বছর ‘সংস্কৃতি’কে অনড় ভাবা থামছে না কেন?

চার

নববর্ষের শোভাযাত্রা বা ছায়ানটের বর্ষবরণ—এগুলো কোন প্রকরণে পড়ে? সবচেয়ে মুক্ত ও শিথিল বিষয় ‘সেরেমনি’ বা ‘উদ্‌যাপন’-এ পড়ে। উদ্‌যাপনে জোরজবরদস্তিরই সুযোগ নেই। যার আনন্দ নেওয়ার যোগ দেবে। যার ভালো লাগে না যোগ দেবে না। ‘মঙ্গল’ শব্দ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বিতর্ক নিতান্তই উভয় পক্ষের রাজনৈতিক ভেদবুদ্ধিজাত অসুস্থ বিদ্যাচর্চা। এতে রাষ্ট্রপক্ষনির্ভর নানা প্রতিষ্ঠানের অনধিকার চর্চার সুযোগও তৈরি হয়েছে। মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বোর্ডের স্কুলে-মাদ্রাসায় দিনটি পালনের নির্দেশনা এবং কী কী করণীয়— এমন তালিকা ধরিয়ে দেওয়া অপ্রয়োজনীয় বাড়াবাড়ি। আমাদের শৈশবে চাঁদের হাট, কচিকাঁচার মেলা, খেলাঘর, শিশু একাডেমি ইত্যাদির বদৌলতে সুদূর মফস্‌সলেও স্বতঃস্ফূর্ত নববর্ষ উদ্‌যাপিত হতো। সেগুলো ধ্বংস করে দিয়ে নির্বাহী আদেশে ‘সর্বজনীনতা’ ফেরানোর চেষ্টা কাঁঠালের আমসত্ত্বস্বরূপ।

নববর্ষ উদ্‌যাপনকে যেকোনো মূল্যে দলীয় রাজনীতির আদর্শ ও প্রভাবমুক্ত রাখা গেলে বিতর্ক যুদ্ধংদেহী ও বিধ্বংসী হতো না। শোভাযাত্রা বা ছায়ানটের বর্ষবরণকে ‘সেরেমনি’র বাইরে ‘সংস্কৃতি’ বলেকয়ে তর্কাতর্কি ভুল তো বটেই, বিপজ্জনকও বটে। সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক রাজনৈতিক লাভালাভের উদ্দেশ্যে সেরেমনিটির ব্যবহার। ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদেরা যেকোনো মূল্যে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেন। রাজনীতিকদের অবস্থা লোকজ উপমার স্বর্ণকার আর দরজির মতো। স্বর্ণকার নাকি মায়ের গয়নার স্বর্ণও চুরি করে; দরজি নিজের জামা বানাতে বসেও নাকি কাপড় চুরি করে। কথার কথা হলেও রাজনীতিবিদেরাও সমস্বভাবের। রাজনৈতিক লাভালাভের জন্য তারা যেকোনো কুকর্মই করতে পারে।

সেরেমনিতে নতুন নতুন বিষয় ও অনুষঙ্গ যুক্ত হতে থাকাই স্বাভাবিকতা। মধ্য-আশি থেকে নব্বইয়ের দশকের শেষ নাগাদ আমরা বিনা তর্কে শোভাযাত্রা ও ছায়ানটের বর্ষবরণ প্রাণভরে উপভোগ করেছি। তাতে ‘সর্বজনীনতা’ ছিল। ছিল না বিভাজনের রাজনীতি। এরশাদের শাসনামলের শেষ দুই বছরে আনন্দ শোভাযাত্রা দেশের জনগণের স্বৈরাচারবিরোধী অবস্থানের ‘সর্বজনীন’ প্রতিফলন হয়ে উঠেছিল।

কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্থূল অ্যাজেন্ডা সেগুলোর ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি। তখন জনগণের অবিভাজ্য ভাবনার প্রতিফলন থাকত চারুকলার তৈরি কারুকর্মগুলোয়। ফলে, বিতর্ক থাকত না। গত দশকে বিতর্ক তৈরি হওয়ার মতো কাণ্ডকীর্তি বেড়েছে বলেই বিতর্ক বাড়ছে।  

ক্ষমতাসীনদের হাতে পড়ে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ধারণাটিও সরাসরিই রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হয়ে পড়েছে। বৈশাখ বা নববর্ষের সঙ্গে এমনিতেও ‘সাম্প্রদায়িকতা’র কোনোই ঐতিহাসিক সংযোগ নেই। সব যুগে সব কালেই ভিন্নমতধারী ও রক্ষণশীল মানুষ ছিল, আছে ও থাকবে। তাদের হটাতে চাওয়া রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে, ‘সর্বজনীন’ আনন্দ উদ্‌যাপনের বিষয় বিবেচিত হওয়ার কোনোই যুক্তি থাকতে পারে না।

ক্ষমতাসীনদের একদল দাড়ি-টুপিধারী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাদের মূর্তি-মুখোশ দলীয় শোভাযাত্রায় যথার্থ হতে পারে, কিন্তু সর্বজনীন উদ্‌যাপনে অযথার্থ ও বিভাজনমূলক। হরেদরে দাড়ি-টুপিকেই প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রতীক বোঝাতে চাওয়া মারাত্মক কূপমণ্ডূকতা এবং সেকেলে ও অনাধুনিক জড়চিন্তামাত্র। দেশে দাড়ি-টুপিধারী কোটি কোটি অরাজনৈতিক ধর্মানুরাগী সাধারণ মানুষও রয়েছেন। এরূপ প্রদর্শনী তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ ও অপমানের বোধ তৈরি করতে পারে।

আমাদের একটিই চাওয়া—বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন বিভাজনের রাজনীতিওয়ালাদের হাতে কখনোই না পড়ুক এবং আসলেই ‘সর্বজনীন’ হয়ে উঠুক।

  • হেলাল মহিউদ্দীন অধ্যাপক, সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ, পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোশিওলজি; নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।