আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান ও ‘বিপ্লব’ পরস্পর–সম্পর্কিত হলেও এ ধারণাগুলোর বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র আলাদা। এগুলোর উদ্দেশ্য ও আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন, নেতৃত্বের ধরন ও চরিত্র আলাদা। এ কারণে আন্দোলন–পরবর্তী প্রত্যাশা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাও হয় ভিন্ন। বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোকে এ আন্দোলনকে বিশ্লেষণ করেছেন গোলাম রসুল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্ম নিয়েছে। এ ঘটনাকে তাত্ত্বিকেরা বিভিন্নভাবে চিত্রায়িত করেছেন এবং ভিন্ন ভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
একদল তাত্ত্বিক এটিকে একটি বিপ্লব হিসেবে দেখছেন এবং ‘জুলাই বিপ্লব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা সংবিধানের বাইরে গিয়ে একটি বিপ্লবী সরকার গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং এখনো দিচ্ছেন। অন্যরা একে একটি গণ-অভ্যুত্থান হিসেবে দেখছেন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের প্রস্তাব করছেন। এই নিয়ে পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা এবং তর্কবিতর্ক চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এই আন্দোলনের চরিত্র ও প্রকৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে হবে। আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে বিরাট পার্থক্য থাকলে তা থেকে হতাশার জন্ম নেয় এবং হতাশা থেকে ক্ষোভ ও বিদ্রোহের জন্ম হয়। ইতিমধ্যে কিছু কিছু মহলে হতাশার সুর শোনা যাচ্ছে। এই জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাস্তব চরিত্র ও তৎপরবর্তী আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুধাবন করা অত্যন্ত জরুরি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চরিত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়ার জন্য, এর আশা-আকাঙ্ক্ষা, আন্দোলনের নেতৃত্ব, আন্দোলনের চরিত্র ও প্রকৃতি বিচার–বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আন্দোলন, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব পরস্পর–সম্পর্কিত। যখন আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা লাভ করে এবং সমাজের ব্যাপক জনগোষ্ঠী এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তখন এটি গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি গণ-অভ্যুত্থান না বিপ্লব, এ ব্যাপারে সম্যক ধারণা না থাকলে আন্দোলন–পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণে ত্রুটিবিচ্যুতি হতে পারে এবং আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যাহত হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আন্দোলন–পরবর্তী কর্মসূচি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে ভুল কর্মসূচির কারণে অনেক দেশে আন্দোলনের সুফল পাওয়া যায়নি, এমনকি এর ফল আরও খারাপের দিকে গেছে।
উদাহরণস্বরূপ, আরব বসন্তের কথা বলা যায়। ২০১০-১১ সালে বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ ও গণ-অভ্যুত্থান গড়ে ওঠে। কিন্তু আরব বসন্তের পর আরবের বিভিন্ন দেশে এখন আরও প্রতিক্রিয়াশীল সরকার জেঁকে বসেছে।
যখন অভ্যুত্থানের ফলে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও কাঠামো ভেঙে নতুন একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়, তখন তা বিপ্লবে রূপ নেয়। বিপ্লব হলো আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ, যার উদ্দেশ্য বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন।
কেউ কেউ বলতে পারেন আন্দোলন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে বা ধাপে আন্দোলনের গতিবিধি ও চরিত্র পাল্টাতে পারে। গণ-অভ্যুত্থানের পর এই আন্দোলন একটি ‘বিপ্লবে’ রূপ নিতে পারত। কিন্তু কথা হচ্ছে একটি গণ-অভ্যুত্থানকে একটি ‘বিপ্লবে’ রূপ দেওয়ার জন্য যে আদর্শ, লক্ষ্য ও ‘বিপ্লবী’ চিন্তাচেতনা থাকা দরকার, তা এই আন্দোলনের পেছনে ছিল কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।
যেমন ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, চীনা বিপ্লব ইত্যাদি। ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের উৎখাত হয় এবং ফ্রান্সে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের ফলে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৪৯ সালে চীনা বিপ্লবের ফলে চীনে একটি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের পতন এবং ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান ও বিপ্লব পরস্পর–সম্পর্কিত হলেও সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে এই ধারণাগুলোর বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র আলাদা। তাদের উদ্দেশ্য ও আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন, নেতৃত্বের ধরন ও চরিত্র আলাদা। এমনকি আন্দোলন পরিচালনার পদ্ধতি ও কলাকৌশল আলাদা। এ কারণে আন্দোলন–পরবর্তী প্রত্যাশা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন। বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র বুঝতে হলে আমাদের ওপরে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোকে এই আন্দোলনের চরিত্র বিচার–বিশ্লেষণ করতে হবে।
এখন দেখা যাক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল ছাত্রদের একটি সুনির্দিষ্ট অসন্তোষ ও অভিযোগ থেকে। এ আন্দোলন ছিল বৈষম্যপূর্ণ কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যেখানে সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ পদ কোটার মাধ্যমে নির্ধারিত হতো। বিশেষ করে ৩০ শতাংশ পদ নির্ধারিত ছিল কেবল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসন্ততি ও নাতি-নাতনিদের জন্য, যাদের সংখ্যা শতকরা শূন্য ১ শতাংশের কম।
দুর্লভ চাকরির বাজারে যেখানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছিল, সেই সময় হাইকোর্ট কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-সন্ততিদের জন্য পুনরায় ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভীষণ হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম নেয়। তারা বুঝতে পারে আন্দোলন ছাড়া তাদের দাবি আদায় সম্ভব নয়।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এ থেকে অনেকের ধারণা হতে পারে, তাঁরা বুঝি সমাজে বিদ্যমান আরও অনেক ধরনের বৈষম্যেরও বিরুদ্ধে। এখন দেখা যাক, তাঁরা যে বৈষম্য বিরোধিতার কথা বলেছেন, সেখানে তাঁরা কোন ধরনের বৈষম্যের অবসান চান। তাঁরা কি শ্রেণিবৈষম্যের অবসান চান?
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক বৈষম্য অবশ্যম্ভাবী। তাঁরা কি বিদ্যমান পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবসান চান? তাঁরা কি সব অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের অবসান চান? সম্ভবত না।
কারণ, এ আন্দোলন একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল সমযোগ্যতাসম্পন্ন সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, যাতে সবাই যাঁর যাঁর যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন। তাঁরা কেবল যোগ্যতা অনুযায়ী সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা চান; কিন্তু শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থার মতো বিপ্লবী আদর্শ ধারণ করেন বলে প্রতীয়মান হয় না।
এবার দৃষ্টি দেওয়া যাক আন্দোলনের পেছনের মতাদর্শগত ভিত্তির দিকে। আন্দোলনটি শুরুতে কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক দাবি দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে এটি একটি রাজনৈতিক দাবি তথা উদার-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার দাবিতে পরিণত হয়। শেখ হাসিনা সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বেকারত্ব, সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য ছাত্র ও জনতার মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও বিক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।
গত সরকারের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ক্ষোভ ছিল এই যে গত তিনটি নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশলে জনগণকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি, তাদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ যেন তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনে একত্র হয়েছিল।
আন্দোলনের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আন্দোলনের নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। এ আন্দোলনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এর নেতৃত্বে এবং সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিল তরুণ ছাত্রসমাজ। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা এমনকি স্কুলের ছাত্ররা এই আন্দোলনে যোগদান করে। যদিও প্রথম দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এর নেতৃত্ব দেন, পরে তা সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে।
এ আন্দোলনের কোনো একক নেতৃত্ব ছিল না। শুরুতে এই আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নেতৃত্বে হলেও স্বৈরাচারী সরকার যখন তাদের আটকে রেখে এই আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে, তখন নিজ নিজ উদ্যোগে সব ছাত্র এগিয়ে আসে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ও তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।
এ আন্দোলনের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপ্লবে সশস্ত্র গ্রুপ এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের সম্পৃক্ততা থাকে। এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, সভা, সমাবেশ এবং অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে। কিন্তু পরে সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠে।
এ আন্দোলনের আদর্শ, উদ্দেশ্য, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কাঠামো বিচার–বিশ্লেষণ করে এটাই প্রতীয়মান হয়, এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল একটি শিক্ষিত ও সচেতন ছাত্রসমাজ। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে উন্নতির সোপানে ওঠা, ক্ষোভ ছিল স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে, বিদ্যমান বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যা তাদের স্বপ্নকে বাধাগ্রস্ত করছিল।
এটা স্পষ্ট, এ আন্দোলনের পেছনে কোন ‘বিপ্লবী’ চিন্তা, চেতনা, আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষা ছিল না। ‘বিপ্লবী’ আদর্শ ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ছাড়া কোনো আন্দোলনকে বিপ্লবে রূপ দেওয়া যায় না। এ আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষেরা যোগদান করলেও আন্দোলনের নেতৃত্ব বরাবরই ছিল ছাত্রদের হাতে।
ছাত্র-আন্দোলনের নেতারা বরাবরই বলে আসছিলেন যে তাঁরা স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার অবসান চান এবং বৈষম্যবিরোধী উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চান। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাঁরা রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও মেরামতের কথা বলছিলেন। কখনো বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কায়েমের মতো ‘বিপ্লবী’ আশা-আকাঙ্ক্ষা তাঁদের ছিল না। কাজেই একটি ‘বিপ্লবী’ আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু হয়েছে বলে যাঁরা অনুযোগ ও অভিযোগ করছেন, তা আন্দোলনের চরিত্র ও নেতৃত্ব দানকারী নেতৃত্বের শ্রেণি ও চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে প্রতীয়মান হয়।
কেউ কেউ বলতে পারেন আন্দোলন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে বা ধাপে আন্দোলনের গতিবিধি ও চরিত্র পাল্টাতে পারে। গণ-অভ্যুত্থানের পর এই আন্দোলন একটি ‘বিপ্লবে’ রূপ নিতে পারত। কিন্তু কথা হচ্ছে একটি গণ-অভ্যুত্থানকে একটি ‘বিপ্লবে’ রূপ দেওয়ার জন্য যে আদর্শ, লক্ষ্য ও ‘বিপ্লবী’ চিন্তাচেতনা থাকা দরকার, তা এই আন্দোলনের পেছনে ছিল কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।
আন্দোলনের চরিত্র না বুঝে এর ওপর ‘বিপ্লবী’ ধ্যানধারণা চাপিয়ে দিলে তা লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে। আন্দোলনে প্রতিবিপ্লব যেমন ক্ষতিকারক, অতিবিপ্লবীরাও আন্দোলনের জন্য তেমনি ক্ষতিকারক। ‘বিপ্লবী’ আন্দোলনের জন্য জনগণকে আগে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। তাঁদের চিন্তাচেতনাকে জাগ্রত করা প্রয়োজন।
জনগণকে প্রস্তুত না করে ‘বিপ্লবের’ ডাক দেওয়া অথবা আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা একধরনের হঠকারিতা। আশা করি, এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
গোলাম রসুল অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি