বিশ্লেষণ

দক্ষিণ এশিয়ায় কেন ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের’ গুঞ্জন

গত জুলাই মাসে ছাত্রজনতার আন্দোলন দমন করতে শেখ হাসিনা সরকার ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেয়। সেসময় প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো অনলাইনে প্রকাশ করা যায়নি। সেগুলো এখন ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হচ্ছে। অভিমত–বিশ্লেষণ পাতার এ লেখাটি আজ অনলাইনে প্রকাশ করা হলো।

দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশও নয়। এমনকি শ্রীলঙ্কার বাইরে বাকি সাতটি দেশে ৫ শতাংশের নিচে। তারপরও এই অঞ্চলজুড়ে একটা খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের গুঞ্জন আছে বহুদিন ধরে। এসব দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি মাঝেমধ্যে এ গুঞ্জনের কথা এত গুরুত্ব দিয়ে বলেন যে তাতে আঁচ-অনুমানের শাখা-প্রশাখা আরও বাড়ে। প্রশ্ন হলো, বাস্তবে এ রকম একটা কল্পিত রাষ্ট্রের সত্যতা কতটুকু? নাকি এটা শুধু সংখ্যাগুরুদের জুজু দেখানোর রাজনৈতিক কৌশলমাত্র?

প্রায় ২ লাখ বর্গকিলোমিটারের বিশাল বলয়!

দক্ষিণ এশিয়ায় খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচার ও প্রসার শুরু কেরালা, তামিলনাড়ুর দিকে। কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে তক্ষশীলার কথাও বলে। পুরোনো তক্ষশীলা এখন পড়েছে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। এর মধ্যে কেরালায় এখন প্রায় ২০ শতাংশ জনসংখ্যা খ্রিষ্টান। তামিলনাড়ুতে সেটা ৬ শতাংশের মতো। পাকিস্তানে ১ শতাংশের কম।

খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের গুঞ্জনটা অবশ্য এসব পরিসংখ্যান থেকে তৈরি হয়নি। এ গুঞ্জনের ভরকেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জনপদগুলো। মিয়ানমারের সন্নিহিত অঞ্চলও তাতে যুক্ত হয়েছে। উত্তর–পূর্ব জনপদগুলোর মধ্যে মেঘালয় (৭১ শতাংশ), মিজোরাম (৮৭ শতাংশ) এবং নাগাল্যান্ডে (৮৮ শতাংশ) খ্রিষ্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

এই তিন জনপদ যে লাগোয়া, তা নয়, তবে কাছাকাছি। মিয়ানমারের চিন এস্টেট এদের কাছের জনপদ। চিন এলাকায় ৯৬ শতাংশ মানুষ একই ধর্মাবলম্বী।

দক্ষিণ এশিয়ায় চারটি জায়গা হলো খ্রিষ্টানপ্রধান। চারটি জায়গাতেই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী রাজনীতিবিদদের রাজ্য চালানোর অভিজ্ঞতা আছে। তবে জনপদগুলো আয়তনে ও লোকসংখ্যায় ছোট।

এই চারটি এলাকার পাশাপাশি মণিপুর ও অরুণাচলকেও যদি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খ্রিষ্টান জনসংখ্যার (৪১ ও ৩০ শতাংশ) কারণে কাছে টানা হয়, তাহলে বেশ বড় একটা বলয় তৈরি হয়। আয়তনে যা দুই লাখ বর্গকিলোমিটারও ছাড়িয়ে যায়।

ভিন্ন ভিন্ন নামে কাছাকাছি থাকা বেশ বড় একটি এলাকার জনবিন্যাসের এ রকম প্রবণতা নিশ্চিতভাবে চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান তিন ধর্ম হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ ‘মুরব্বিদের’ এটা ভালোভাবে নজরে পড়েছে। মিজোরাম ও চিনসংলগ্ন বাংলাদেশের বান্দরবানের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোয় (রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি) খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কারণে বিষয়টা ঢাকায়ও মনোযোগের বিষয় হয়েছে। বান্দরবানে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ১০ শতাংশের মতো।

গুঞ্জনের বহু কারণ

দক্ষিণ এশিয়ায় খ্রিষ্টান রাজ্যের গুঞ্জন কেবল এই বিশ্বাসীদের সংখ্যাগত বৃদ্ধির কারণে নয়; উল্লিখিত এলাকাগুলোর অনেক বৈশিষ্ট্যও এ বিষয়ে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, চিন, মণিপুর, বান্দরবানের একাংশ এবং অরুণাচলের মধ্যে অনেক এলাকায় নানা ধরনের দাবিতে নিরস্ত্র-সশস্ত্র ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে।

কোথাও কোথাও সশস্ত্রতার ধরন অনেক ব্যাপক ও গভীর, কোথাও তা মৃদু, কিন্তু অগ্রাহ্য করার মতো নয়। এসব সশস্ত্রতার আবার প্রধান একটা ধরন দেখা যাচ্ছে, এ অঞ্চলের ‘রাষ্ট্র’গুলোর পরিচালকদের প্রতি আস্থার গভীর এক সংকট। এ রকম অনাস্থার পটভূমি তৈরি করেছে উপরিউক্ত প্রতিটি এলাকার উন্নয়ন-প্রান্তিকতা। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর থেকে এ রকম প্রতিটি জনপদের মানুষ নিজেদের ক্রমে সংকুচিত ও সীমিত গণ্ডিতে আবিষ্কার করছে। ফলে তাদের মধ্যে একধরনের আত্মরক্ষার বোধ বাড়ছে।

এসব জনপদের মানুষ জানে তারা কোনো দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিসিদ্ধান্তকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারবে না। যেমন ৫৪৩ আসনের ভারতীয় লোকসভায় অরুণাচল-মণিপুর-মেঘালয়-মিজোরাম-নাগাল্যান্ড মিলে আসন ৯টি। অথচ সেখানে শুধু উত্তর প্রদেশের জন্য আসন ৮০টি। মিয়ানমারের পার্লামেন্টের (দুই কক্ষ মিলে) ৬৬৪ আসনে চিন এস্টেটের জন্য আসন আছে ২১টি। বাংলাদেশে ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে বান্দরবানের জন্য আসন ১টি। যেহেতু আসন বণ্টিত হয় জনসংখ্যার হিস্যায়, তাই এই বাস্তবতাটা শিগগিরই বদলাবেও না। ফলে এসব জনপদের মানুষ জানে, নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তাদের উপস্থিতি সীমিত থাকতে বাধ্য।

অতীতে বিশেষ করে ঔপনিবেশিক শাসনামলের আগে ও তার মধ্যে এসব জায়গার জাতিসত্তাগুলো সমতলের মানুষদের থেকে দূরে পাহাড়ি এলাকায় যে রকম ট্রাইবাল স্বশাসন ভোগ করেছে, তার ঘাটতিও তাদের মধ্যে একধরনের হতাশার বোধ তৈরি করে।

এখন নিজেদের চারপাশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধদের সংখ্যাবৃদ্ধির মুখে তারা স্বধর্ম রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করেছেন। দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বিভিন্ন সময় চার্চগুলোয় আক্রমণ এবং এই ধর্মবিশ্বাসীদের ওপর হামলার ঘটনাও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জনপদের মানুষদের আত্মরক্ষার বোধে একটা ধর্মীয় ধরন যুক্ত করেছে। একেই ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মূলধারার অনেক মানুষ খ্রিষ্টবলয় তৈরির চেষ্টা আকারে ভাবেন। এ রকম ভাবনার কারণ এটাও যে ওপরের এলাকাগুলোয় খ্রিষ্টান রাজনীতিবিদদের সঙ্গে চার্চের সম্পর্কও বেশ নিবিড়।

আবার কিছু কিছু এলাকায় খ্রিষ্টান জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি এবং তার অতি প্রচারও কথিত গুঞ্জনের একটা উপাদান হয়েছে। তবে এরপরও ভারতে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ৩ শতাংশেরও কম। কিন্তু বিষয়টি আরএসএস পরিবারের কাছে এত স্পর্শকাতর যে খ্রিষ্টানমুখী ধর্মান্তরকরণ ঠেকাতে অন্তত ৯টি রাজ্যে ধর্মান্তরকরণবিরোধী আইন করা হয়েছে। সেখানে আরএসএস-বিজেপি পরিবারের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রতিপক্ষ হলো গির্জামণ্ডলী।

তবে ধর্মান্তরকরণ ও খ্রিষ্টান জনসংখ্যা বাড়ার প্রচার দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে অনেক সময় একপেশে চেহারাও নেয়। যেমন বাংলাদেশে অনেকে বান্দরবানের খ্রিষ্টান জনসংখ্যার বৃদ্ধি নিয়ে বলেন। কিন্তু শুমারির তথ্যে দেখা যায়, সেখানে ৯-১০ শতাংশ খ্রিষ্টানের বিপরীতে মুসলমান জনসংখ্যা প্রায় ৫৩ শতাংশ এবং সর্বশেষ দুটি শুমারির মধ্যে শেষোক্তরা প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। অথচ একই সময়ে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ১ শতাংশও বাড়েনি সেখানে।

কিন্তু খ্রিষ্টানরা কি নতুন দেশ চাইছে?

প্রশ্ন হলো, এত কিছুর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার খ্রিষ্টান সমাজ বা উল্লিখিত জনপদগুলো কি কখনো ধর্মভিত্তিক নতুন কোনো রাষ্ট্রের দাবি তুলেছে? এর জন্য কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন আছে? এ রকম দাবির সপক্ষে খ্রিষ্টান সমাজের বা গির্জামণ্ডলীর কোনো ইশতেহার আছে? সচরাচর এসব প্রশ্নের বিশ্বাসযোগ্য উত্তর পাওয়া যায় না।

তারপরও ক্রমাগত এ রকম দাবি ও গুঞ্জন উঠছে। সেটা ঘটছে মুখ্যত অখ্রিষ্টানদের তরফ থেকে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে বিশেষ বিশেষ মতাদর্শের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই বিষয়টি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভারতে ‘স্বরাজমার্গ’ নামে হিন্দুত্ববাদী একটা বিখ্যাত মিডিয়া এই ইস্যুতে বেশ এগিয়ে।

কৌতূহলোদ্দীপক হলো, ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের মতো আশপাশের অন্যান্য দেশের বৌদ্ধ ও ইসলামপন্থী অনেক মহলও এ প্রচারণায় উৎসাহী। বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির সংস্থাগুলোর এ রকম একই ধরনের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সামাজিক আর কোনো বিষয়ে তেমন দেখা যায় না। ভারতসহ সর্বত্র ভোট এলে দেখা যায়, খ্রিষ্টানরা প্রধানত মধ্যপন্থী কংগ্রেস বা মধ্য-বাম আঞ্চলিক দলগুলোকে ভোট দিচ্ছে। এটাও তাদের প্রতি ডানপন্থী প্রচারণা বাড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারে।

খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের গুঞ্জনকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কথিত ওই রাষ্ট্রের জন্য ইউরোপ-আমেরিকার আগ্রহের কথাও বলা হয় প্রচারে। কিন্তু তার সপক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না এখনো। কিন্তু এ রকম প্রচার খ্রিষ্টানদের জন্য নানাভাবে বিব্রত অবস্থা তৈরি করছে।

বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অ্যালবার্ট ডি কস্টা কয়েক মাস আগে এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের প্রচার তাদের সঙ্গে অন্যান্য সম্প্রদায়ের দূরত্ব সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করছে।

তারপরও যে এ রকম একটা প্রচারের পালে সম্প্রতি আরও বাতাস লেগেছে, তার কারণ মণিপুর ও চিন প্রদেশের ঘটনাবলি। মাসের পর মাস ধরে চলমান মণিপুর দাঙ্গায় হিন্দু মৈইতৈইদের হাতে খ্রিষ্টান কুকিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পার্শ্ববর্তী মিজোরামে তাদের প্রতি সহানুভূতির নীরব এক ঢেউ তৈরি হয়েছে। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মিয়ানমারের চিন প্রদেশের স্থানীয়দের প্রতিও মিজোরামের অনুরূপ সহানুভূতি রয়েছে।

এই তিন জায়গার মানুষই ‘জো’ জাতির শাখা-উপশাখা। বান্দরবানের বম খ্রিষ্টানরাও একই জাতিসত্তার দূরবর্তী অংশীদার। উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে জো সমাজের এ রকম ঘটনাবলিতে এতদঞ্চলে খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের গুঞ্জন তীব্রতা পেলেও কার্যত এ ধারণা বাস্তবসম্মত না হওয়ার কারণ একই জনপদগুলোয় নাগাদের উপস্থিতি।

নাগারাও খ্রিষ্টান, কিন্তু জোদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুব বেশি প্রীতিকর নয়। ফলে নাগাল্যান্ড, মণিপুরসহ আশপাশে কেবল খ্রিষ্টান ধর্মীয় বিশ্বাস সামনে রেখে নাগা ও কুকিরা (জো) একটা রাষ্ট্র গড়তে চাইবে বা পারবেন সেটা খুব কম রাজনৈতিক ভাষ্যকারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।

এমনকি কেবল জো–অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো নিয়ে কোনো রাষ্ট্রের ধারণাও মিজো নেতা জোরামথাংঙা কিছুদিন আগে (২১ জুন) প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাকচ করেছেন। তাঁর মতে, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘জো’দের বিভক্তি অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও এটা এখন এক বাস্তবতা। কারণ, তিনটি পৃথক রাষ্ট্রের সীমান্তে আছে তারা।

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইন্ধন দিচ্ছে

মিয়ানমারের চলতি গৃহযুদ্ধ এবং তার সম্ভাব্য পরিণতিও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের গুঞ্জনে একধরনের উসকানি হিসেবে কাজ করছে বলা যায়। এই গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে সক্রিয় তিনটি প্রান্তিক অঞ্চল হলো দক্ষিণ-পূর্বের কারেন, উত্তরের কাচিন এবং পশ্চিমের চিন অঞ্চল। এই তিন এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ সবচেয়ে বেশি সুসংগঠিত এবং এই তিন অঞ্চলে খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাসের মানুষও অনেক।

এ রকম মনে করা হয় যে দেশটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে গণতন্ত্রপন্থীদের সশস্ত্র সংগ্রাম যদি বিজয়ী হয় তাহলে প্রান্তিক এলাকা যে বাড়তি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে, সেটা অনেকটা স্বাধীন রাষ্ট্রের চেহারা নিতে পারে। আবার গণতন্ত্রপন্থীদের সংগ্রাম অনিশ্চিতভাবে দীর্ঘায়িত হলেও গেরিলা-দৃঢ়তা এ তিন অঞ্চলকে অনুরূপ চেহারা দিতে পারে।

মিয়ানমারের এ রকম সম্ভাবনায় ভারত উদ্বিগ্ন। সে কারণে তারা ওই দেশের সঙ্গে তার সীমান্ত অনেকটাই বন্ধ করে দিতে চায় বলে খবর বেরিয়েছে। সীমান্ত এলাকার ট্রাইবালরা অবশ্য এর ঘোর বিরোধী। কারণ, এতে তারা জাতিগতভাবে চিরস্থায়ীভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ার শঙ্কায় পড়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৫০-এর এক চুক্তির বলে সীমান্তবর্তী ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী পাসপোর্ট-ভিসাবিহীন একধরনের সাধারণ ভ্রমণ পাস নিয়ে অপর দেশের ১৬ কিলোমিটার ভেতর পর্যন্ত আসা-যাওয়া করতে পারে। শুরুতে চুক্তি অনুযায়ী ৪০ কিলোমিটার ভেতর পর্যন্ত এই সুবিধা ছিল। পরে কমিয়ে ১৬ কিলোমিটার করা হয় সেটা।

মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে এ সুবিধা রয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, তারা এ সুবিধা আর রাখতে চায় না। কারণ, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

অন্যদিকে এ ঘোষণার পর জো সংগঠনগুলো বলছে, এটা করার আগে ভারত-মিয়ানমার-বাংলাদেশে বিভক্ত হয়ে থাকা তাদের জাতির মানুষদের একত্র করে দেওয়া হোক। তা না হলে তারা এ রকম পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে। জো-রিইউনিফিকেশন অর্গানাইজেশন (জো-রো) নামের একটা সংগঠন দেশ-বিদেশে এ বিষয়ে কথা বলছে। দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের গুঞ্জন বাড়ার এটাও এক কারণ।

তবে এ রকম যাবতীয় গুঞ্জন অতিক্রম করে সরেজমিনে আরও গভীরে মনোযোগ দিলে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব পাহাড়ি উপত্যকায় ধর্মের বদলে একধরনের অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক সার্বভৌমত্বের আকুতিই বেশি শোনা যায়। কিন্তু মূলধারার রাজনীতি তার স্বার্থেই যেন কেবল খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের গুঞ্জনে বেশি আগ্রহী, সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক সুশাসন বা স্বশাসনে নয়।

● আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক