প্রধানমন্ত্রী তিনটি দেশ সফর করছেন এমন এক সময়ে যখন তাঁর সরকার যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও জাপানের দিন থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখে আছে। চাপ আছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়েও। তাই এসব চাপ পুরো দূর করা না গেলেও কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী কী পদক্ষেপ নেন, সেটা কৌতূহল তৈরি করেছিল তো বটেই।
প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে জাপানে প্রকাশিত ঘোষণাপত্রটির শিরোনাম হচ্ছে ‘জাপান-বাংলাদেশ জয়েন্ট স্টেটমেন্ট অন স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’, অর্থাৎ কৌশলগত অংশীদারত্ব সম্পর্কে জাপান-বাংলাদেশ এর যৌথ ঘোষণা। এই ঘোষণাপত্রে যৌক্তিকভাবেই অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অংশীদারত্বের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার ওপরে।
দুই দেশের যৌথ যে বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট, বিবৃতিতে চীনের বিরুদ্ধে খুব শক্ত অবস্থান আছে। অবশ্যই এই ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় ইন্দো-প্যাসিফিক এবং পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বক্তব্য, কিন্তু দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও কথা বলা দরকার, যেটা চীনের স্বার্থের বেশ বিরোধী।
যৌথ ঘোষণার দ্বিতীয় পয়েন্টেই বলা হয়েছে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানসম্পন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হবে, যা বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর উন্নয়নে অবদান রাখবে। দুই নেতা উন্নয়নের অর্থ জোগানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন, যা হবে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী টেকসই ঋণের মাধ্যমে।
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে চীনের বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের নানান প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প’। কিন্তু এসব প্রকল্পের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতির খুব শক্তিশালী অভিযোগ আছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তৈরির মাধ্যমে ছোট দেশগুলোকে চীন ‘ঋণফাঁদে’ ফেলছে, এটা এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত সত্য।
যৌথ ঘোষণায় অবকাঠামো নিয়ে বলা প্রতিটি কথা চীনা প্রকল্প অর্থাৎ পরোক্ষভাবে ‘বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর বিরুদ্ধে বলা। চীনা প্রকল্প এবং অর্থায়নের অস্বচ্ছ পদ্ধতির সমালোচনা করে জাপান বাংলাদেশে আরও অনেক বেশি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে যুক্ত হওয়া নিশ্চিতভাবেই চীনের স্বার্থবিরোধী।
এই বিবৃতিতে এমন সরবরাহ ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে, যেটি নানা রকম চাপ এবং ঘাতপ্রতিরোধী হবে (রেজিলিয়েন্ট সাপ্লাই চেইন)। করোনার সময় তো বটেই, করোনা সহনীয় হয়ে আসার পরও যখন সারা পৃথিবী সবকিছু খুলে দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তখনো চীন ‘জিরো কোভিড’ নীতিতে চলেছে। এর ফলে চীনে উৎপাদিত অনেক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী এবং ফিনিশড পণ্যের সংকটে ভুগেছে পুরো পৃথিবী।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের যোগদানের পর বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে চীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়েছিল। করোনা দেখিয়েছিল, এভাবে একটা দেশের ওপর নির্ভরশীল থাকা পৃথিবীর অর্থনীতিকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এ ছাড়া চীনের অতি দ্রুত অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি হিসেবে উত্থান পশ্চিমাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিপরীত বলে চীনের ওপরে অর্থনৈতিক নির্ভরতা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে।
সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এমন একটি সরবরাহব্যবস্থার কথা সামনে এসেছে, যেটি নানা রকম চাপ এবং ঘাতপ্রতিরোধী (রেজিলিয়েন্ট সাপ্লাই চেইন)। এই উদ্দেশ্যে চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে বিকল্প উৎপাদন এবং সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার আলোচনা হচ্ছে। এটাও চীনের স্বার্থের সরাসরি পরিপন্থী।
আমরা স্মরণ করব জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার আগে সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেই অনেকটা তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ তার ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখার মূল বিষয়গুলো ঘোষণা করেছিল। এতে এ অঞ্চলে সমস্যা তৈরির জন্য চীনকে দায়ী করা ছাড়া (যা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা করেছে) এবং ভাষা অনেকটা নরম এবং কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্ট রাখা ছাড়া কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলের খুব বেশি পার্থক্য নেই। এটারই স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা গেল জাপানে।
বিবৃতির ১ নম্বর পয়েন্টের একেবারে প্রথম বাক্যটি একেবারে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের কৌশলের অনুসরণে বলা হয়েছে দুই প্রধানমন্ত্রী উন্মুক্ত এবং বাধাহীন ইন্দো-প্যাসিফিকের কথা বলেছেন, যেখানে ছোট-বড় যেকোনো দেশের অধিকার মুক্তি এবং সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিক আইন নিয়ম এবং চর্চা দ্বারা নিশ্চিত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনবিরোধী অন্যান্য দেশ যে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার (রুল বেজড অর্ডার) কথা বলে সেটা স্পষ্টভাবেই চীনকে উদ্দেশ করে বলে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বব্যবস্থায় জাতিসংঘের অধীনে অনেকগুলো আইন ও রীতি অনুযায়ী (অবশ্যই অনেক বিচ্যুতিসহ) পৃথিবী যেভাবে চলছিল চীনের নেতৃত্বে আরও কিছু দেশ এই ব্যবস্থাটি ভেঙে দিতে চাইছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে যৌথ বিবৃতি চতুর্থ পয়েন্টে যা বলা হয়েছে, সেটা হুবহু পড়ে নেওয়া যাক:
‘প্রধানমন্ত্রী কিশিদা প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সমুদ্রবিষয়ক ১৯৮২ সালের কনভেনশন (আনক্লজ) সম্পূর্ণভাবে মেনে চলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এই এলাকার স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করে উত্তেজনা বাড়ানোর মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে (রুল বেজড ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার) নষ্ট করার যেকোনো রকম একপক্ষীয় চেষ্টা অগ্রহণযোগ্য হবে বলে দুই প্রধানমন্ত্রী তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা গভীর সমুদ্রে উন্মুক্ত এবং অবাধ জাহাজ চলাচল (ফ্রিডম অব নেভিগেশন) এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) মানদণ্ড এবং সুপারিশ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেন’।
এ কথাগুলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়ে বলছেন এমন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, যাঁকে চীন আবহমানকাল থেকেই শত্রুদেশ বলে গণ্য করে। চীন তার এক তিক্ত অতীত অভিজ্ঞতা ‘হানড্রেড ইয়ার্স অব হিউমিলিয়েশন’-এর সময় ব্রিটেনের সঙ্গে জাপানের ভূমিকা (তাইওয়ান, মাঞ্চুরিইয়া দখল; নানকিং হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদি) ভোলেনি তো বটেই, প্রজন্মান্তরে এই স্মৃতি চাঙা রেখেছে। দুই দেশের মধ্যে আছে সাম্প্রতিক সমুদ্রসীমা বিরোধও।
জাপানের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে, পূর্ব চীন সাগরে অবস্থান সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের। জাপানের নিয়ন্ত্রণাধীন এসব দ্বীপের মালিকানায় অবশ্য চীনেরও জোর দাবি আছে (চীনের ভাষায় ডাউইউ দ্বীপপুঞ্জ)। জেনে রাখা ভালো, জাপানের সর্ব দক্ষিণ প্রান্ত ইশিগাকি দ্বীপ থেকে এর দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার, আর মেইনল্যান্ড চীন থেকে এর দূরত্ব ৩৩০ কিলোমিটার। মানববসতি না থাকলেও এই দ্বীপপুঞ্জ যে দেশের অধিকারে যাবে, সে দেশ যে সমুদ্রসীমার অধিকারী হবে, সেটা মৎস্য ও খনিজ সম্পদে খুবই সমৃদ্ধ। এটাই এই দ্বীপ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবির নেপথ্যে।
এবারের জাপান সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে যৌথ বিবৃতি দিয়ে এসেছেন, ভূরাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এর অত্যন্ত বড় প্রভাব আছে। যেকোনো বিবেচনায় এত শক্ত অবস্থান বাংলাদেশ কখনো চীনের বিরুদ্ধে নেয়নি। এর আগে একবার কোয়াডে যুক্ত হওয়ার মার্কিন আহ্বানের পরেই চীনের রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে সমুদ্রসীমাবিষয়ক বিরোধ আছে ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের (আছে তাইওয়ানও)। এদের সঙ্গে সংঘাতের প্রধান কারণ হচ্ছে চীন তার নিজের তৈরি করা অনেক পুরোনো একটি মানচিত্রে প্রদর্শিত ‘নাইন ড্যাশ লাইন’-এর ভিত্তিতে দক্ষিণ চীন সাগরের ৯০ শতাংশ মালিকানা দাবি করে। এতে দেখা যায়, সীমানা নিয়ে সংঘাত থাকা দেশগুলো শুধু সার্বভৌম সমুদ্রসীমার (টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস) বাইরে যে অর্থনৈতিক এলাকা থাকে (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) সেটার প্রায় কিছুই পায় না।
এ ছাড়া সমুদ্রের যে অংশগুলো আন্তর্জাতিক সমুদ্র হিসেবে চিহ্নিত, সেসব এলাকার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দক্ষিণ চীন সাগরের গভীর এলাকায় কতগুলো দ্বীপ (স্পার্টলি এবং প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ) নিজের দখলে নিয়েছে চীন এবং অনেকগুলো কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে, যাতে সামরিক স্থাপনাও বসিয়েছে তারা।
দক্ষিণ চীন সাগরের স্কারবোরো শোলের দূরত্ব ফিলিপাইন থেকে ২০০ কিলোমিটার আর চীন থেকে ৬০০ কিলোমিটার। ২০১২ সালে চীন দখল করে নেওয়ার আগপর্যন্ত এই জায়গাটি ফিলিপাইনের অধিকারে ছিল। সমুদ্রসীমার বিরোধ নিয়ে ফিলিপাইনের আনক্লস বা ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল’জ অব দ্য সির অধীনে আরবিট্রেশনে যায়। চীন এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ (১৯৯৪ সালে), ফিলিপাইন তো বটেই। স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে চীনের এই আরবিট্রেশনে অংশ নেওয়ার দায় থাকলেও চীন তাতে অংশ নেয়নি। শুনানির পর আদালত রায় প্রদান করেন, যাতে ফিলিপাইনের সব কটি না হলেও অনেকগুলো দাবি মেনে নেওয়া হয়।
আমাদের এই কলামের আলোচনার জন্য শুধু এই দুটি সিদ্ধান্তই জানা আমাদের জন্য দরকার: ১. ‘নাইন ড্যাশ লাইন এর ভিত্তিতে যেভাবে দক্ষিণ চীন সমুদ্রের মালিকানা চীন দাবি করে, সেটা আন্তর্জাতিক আইনে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ২. স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জের মতো দ্বীপপুঞ্জগুলোকে একটি ইউনিটের মতো বিবেচনা করে তার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা পাওয়া সমর্থনযোগ্য নয়। অর্থাৎ আনক্লসের অধীনে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের দাবি পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
এবার নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পারছি বাংলাদেশ যখন দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে আনক্লস সম্পূর্ণভাবে মেনে চলার কথা বলে, এখানে বল প্রয়োগের মাধ্যমে একপক্ষীয়ভাবে বিদ্যমান স্থিতাবস্থা ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টাকে সমর্থনযোগ্য নয় বলে, তখন সেটা চীনের বয়ানের ঘোর বিরোধী অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়। শুধু সেটাই নয়, দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত তাইওয়ানকে নিজের কবজায় নেওয়ার জন্য চীন যদি বল প্রয়োগ করে (প্রয়োজনে যেটা তারা করবে বলে স্পষ্টভাবে বলেছেন সি চিন পিং) সেটাও কিন্তু এই স্থিতাবস্থাবিরোধী হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ অন্তত এ ঘোষণা অনুযায়ী তেমন কোনো শক্তি প্রয়োগের ঘটনায় বাংলাদেশ চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
যৌথ বিবৃতিতে এ অঞ্চলের গভীর সমুদ্রে উন্মুক্ত এবং অবাধ জাহাজ চলাচল (ফ্রিডম অব নেভিগেশন) বিমান চলাচলের কথা যখন বাংলাদেশ বলে, তখন আমরা স্মরণ করব এ অঞ্চলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার একটি বিষয়কে। যেহেতু চীন দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো অংশ আন্তর্জাতিক সমুদ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, তাই চীনের এই দাবিকে খণ্ডন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের বিভিন্ন জাহাজ বিভিন্ন সময়ে এ সাগরের এমন অঞ্চল দিয়ে যায় যেটাকে চীন তার সার্বভৌম এলাকা (টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস) বলে দাবি করে। চীনকে চরম ক্ষুব্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘ফ্রিডম অব নেভিগেশন’ নিশ্চিত করা।
এবারের জাপান সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে যৌথ বিবৃতি দিয়ে এসেছেন, ভূরাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এর অত্যন্ত বড় প্রভাব আছে। যেকোনো বিবেচনায় এত শক্ত অবস্থান বাংলাদেশ কখনো চীনের বিরুদ্ধে নেয়নি। এর আগে একবার কোয়াডে যুক্ত হওয়ার মার্কিন আহ্বানের পরেই চীনের রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলে ঘোষিত একটি প্রোগ্রাম ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) যুক্ত হওয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল তখনো চীন কূটনৈতিক ভাষায় হলেও এর বিরুদ্ধেই বাংলাদেশের অবস্থান প্রত্যাশা করেছিল।
সার্বিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ এ অবস্থান নেওয়ার আগে কি ‘চীনের ছাড়পত্র’ নিয়েছে কোনোভাবে, যে তারা নির্বাচনের আগে আপাতত পশ্চিমা চাপকে কিছুটা সহজ করতে চায়? নাকি চীন প্রস্তুত হচ্ছে এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য? সেটা যদি হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়া কেমন হবে এবং কতটা কঠোর হবে?
জাহেদ উর রহমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ–এর শিক্ষক