মণিপুর রাজ্যে চলতি সংঘাতের মূল কারণ সমাজ ও ইতিহাসের অনেক গভীরে। তার শিকড় ছড়িয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার আরও বহু জনপদজুড়ে।
মণিপুরের মানচিত্র দেখতে হীরার খণ্ডের মতো। কেউ কেউ তাই ছোট্ট এ ভূখণ্ডকে ‘হীরক রাজ্য’ও বলেন। খ্যাতনামা রাজনীতিবিদদের মাঝে জওহরলাল নেহরু প্রথম মণিপুরকে এ রকম সম্বোধন করেন। সেই হীরার খণ্ডে এক মাস ধরে জাতিগত দাঙ্গা চলছে।
কোনো জনপদকে হীরার সঙ্গে তুলনায় বাড়তি আবেগ থাকে। তবে এ–ও সত্য, মণিপুরের প্রকৃতি অপরূপ। নয়টি পর্বতমালার মাঝে একটা উপত্যকা ইম্ফল দেখতে অনন্য। যাঁরা ইতিমধ্যে হাওবাম পবন কুমারের ৭৫ মিনিটের নাইন হিলস ওয়ান ভ্যালি দেখেছেন, তাঁরা মণিপুরের মানুষ ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের ভক্ত না হয়ে পারেননি।
এখানকার মানুষগুলো সাদাসিধা। তবে তাঁদের জাতিগত ও ধর্মীয় বিন্যাস খুব জটিল। চলমান দাঙ্গার উৎস ও ফলাফল বুঝতে গেলে সেদিকেই নজর দেওয়া ভালো। ইদানীং কেউ কেউ বলছেন, যদিও দাঙ্গার কারণ বহুবিধ, কিন্তু এর ভরকেন্দ্রে আছে কোনো এক ‘জালেন-গামে’র জন্য পাহাড়ি কুকি-চিন-মিজোদের আদিম আকুতি। কতটা সত্য এ কথা?
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মণিপুর রাজ্যে সংঘাতে শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। উদ্বাস্তু সংকট ব্যাপক। ৬০ হাজার মানুষ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে দুর্ভোগে আছেন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সব জাতিসত্তার মানুষ। সরকারি সৈন্যও আছেন। তবে কুকিদের সংখ্যাই বেশি।
এর মধ্যে গত ১৩ জুন কুকিদের বিরুদ্ধে ইম্ফলভিত্তিক ১৫টি মেইতেই সংগঠন জাতিসংঘেও অভিযোগ দায়ের করেছে। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় বিভিন্ন বাহিনী ‘কুকি সশস্ত্রতা’ দমনে সর্বোচ্চটুকু করছে না। সরকার এ ক্ষেত্রে বেকায়দায় রয়েছে। অনেক বছর ধরে তারা কুকি সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে আছে। এখন দাঙ্গা দমনের নামে যদি সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে রাজ্যজুড়ে সশস্ত্রতার মহাতরঙ্গ শুরুর শঙ্কা আছে। সরকারের এই টানাপোড়েনের সুযোগ নিচ্ছে কুকিরা। যেকোনোভাবে আলাদা রাজ্যের দাবি আদায়ে মরিয়া তারা। সংঘাত কমছে না সে কারণে।
মানুষের হাতে বিপুল অস্ত্র এখানে। এমনকি অনেক নারীর হাতেও। দাঙ্গার মাঝে হাজার হাজার বুলেট ও শত শত বন্দুক খোয়া গেছে রক্ষীদের ডেরা থেকে। প্রতিদিন এখন অস্ত্র উদ্ধার চলছে। সহিংসতাও থেমে নেই।
৩ মে থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন জাতিসত্তার মাঝে বিদ্বেষের প্রচার-অপপ্রচার কমার বদলে বাড়ছে। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে কুকি পতাকা উড়ছে। তার আশপাশেই বাংকার বানিয়ে বসে আছে সশস্ত্র কুকিরা। সবাই ভাবছে রাজ্যটিতে শিগগির হয়তো নয়াদিল্লি থেকে রাষ্ট্রপতির শাসন শুরু হবে। প্রশ্ন উঠেছে, তাতে শান্তি আসবে কি না?
মেইতেইরা মণিপুরে ৫৩ ভাগ। নাগা ২৪ শতাংশ। বিভিন্ন জো-জাতির (কুকিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট জনগোষ্ঠী) মানুষ আছে ১৬ ভাগ। প্রায় এক ডজন জো-জাতির মধ্যে কুকিরা আকারে বড়।
এখানকার অর্ধেক মানুষ থাকে সমতলে। বাকিরা পাহাড়ি এলাকায়। ধর্মে ৪০ ভাগ হিন্দু-বৈষ্ণব; সমসংখ্যক খ্রিষ্টান। মুসলমান আছে ১০ ভাগের মতো। হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমতলে থাকে। সমতল মানে মূলত রাজধানী ইম্ফল ও আশপাশটা। হিন্দু বাদে অন্যরা থাকে দূর পাহাড়ে। মেইতেই ছাড়াও আরও প্রায় ১০টি ভাষার চল আছে রাজ্যজুড়ে।
মণিপুরের চলমান সংঘাতকে তাই শহর বনাম গ্রাম, সমতল বনাম পাহাড় ইত্যাদি আদলে বিচার করা যায়। পত্রপত্রিকায় বেশি লিখছে মেইতেই বনাম কুকি দ্বন্দ্ব আকারে। কেউ কেউ এটাকে হিন্দু বনাম খ্রিষ্টান দ্বন্দ্ব আকারেও দেখছেন। মিডিয়ানির্ভর অপেক্ষাকৃত নবীন ভাষ্যকারদের কাছে এই দাঙ্গা হচ্ছে মাদক চোরাচালানের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে। এ রকম সব শিরোনামে কিছু সত্যতা আছে। তবে বড় সত্য হলো, চলতি সংঘাতের মূল কারণ সমাজ ও ইতিহাসের আরও অনেক গভীরে। তার শিকড় ছড়িয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার আরও বহু জনপদজুড়ে। মণিপুরের সমস্যা সে কারণে পরোক্ষে আশপাশের অনেক দেশের সমস্যাও বটে।
কিছুকাল আগেও মণিপুরের সব জাতিসত্তার একক দাবি ছিল স্বায়ত্তশাসন। স্থানীয় কোনো কোনো সংগঠন আরও বেশি কিছু চাইত। কিন্তু খ্রিষ্টান মিশনারি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের তৎপরতা পাল্লা দিয়ে যত বেড়েছে, তত মণিপুরের রাজনীতিতে ধর্মবিশ্বাসের অঙ্ক প্রবল হয়েছে। দাঙ্গার শুরু থেকে চার্চগুলো সচেতনভাবে আগুনের নিশানা হয়েছে। অনেকে বুঝতে চাইছেন, এমনটি কেন ঘটছে? এর সমাধান কী? এসব প্রশ্নের উত্তর মণিপুরের ভেতরের পাশাপাশি বাইরেও খুঁজতে হবে।
মণিপুরের উত্তরে নাগাল্যান্ড। সেখানে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ৮৯ ভাগ। দক্ষিণে মিজোরাম, সেখানে ৮৭ ভাগ মানুষ খ্রিষ্টান। পশ্চিমে আসাম। যেখানে হিন্দু ৬২ ভাগ। মিয়ানমারের চিন প্রদেশ ও স্যাগাইন বিভাগের সঙ্গেও মণিপুরের সীমান্ত আছে। চিনে ৮৫ ভাগ বাসিন্দা খ্রিষ্টান।
দেখা যাচ্ছে, মণিপুরকে ঘিরে খ্রিষ্টান একটা বলয় আছে। আসামের কারণে সেই বলয় খানিক অসমাপ্ত। বিজেপির রাজনীতিতে আসামের বাড়তি গুরুত্ব এখানেই। একই কথা বলা যায় ত্রিপুরা নিয়ে।
মণিপুরের কুকিরা এখনকার রাজ্যের প্রায় ২২ হাজার বর্গকিলোমিটার (৬০ ভাগ এলাকা) নিয়ে যে আলাদা রাজ্য চাইছে, সেটা যে আরেকটি খ্রিষ্টান অধ্যুষিত রাজ্য হবে, এটা আরএসএসের জন্য অসহনীয়। মিজোরাম, নাগাল্যান্ডের বাইরে মেঘালয়, অরুণাচলেও ইতিমধ্যে খ্রিষ্টানরা সংখ্যায় প্রথম অবস্থানে চলে এসেছে। ফলে মণিপুর ভেঙে একটা কুকিপ্রধান রাজ্য গড়া, যা এ মুহূর্তে দাঙ্গার ভেতরকার বড় দাবি—তার বৃহত্তর অর্থ দাঁড়ায় আসাম ও ত্রিপুরা বাদে দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল একটা অঞ্চলে খ্রিষ্টান প্রাধান্য তৈরি হওয়া।
তবে চার্চগুলোর আছে নানান ফিতনা, যা বিশাল এই বলয়কে একক চরিত্র নিয়ে দাঁড়াতে দেয় না। কিন্তু মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের মুখে চিন থেকে যখন মানুষ মিজোরাম ও মণিপুরে আশ্রয় নিয়েছে, তখন স্থানীয় পাহাড়িরা যত্নের সঙ্গে তাদের গ্রহণ করে ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে।
১৯৮৮ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আরেকবার এ রকম শরণার্থীর ঢেউ এসেছিল মিয়ানমার থেকে। মেইতেইরা অবশ্য বলছে, সীমান্তের অপর দিক থেকে আসা জোরা স্থানীয় কুকিদের স্বজাতীয় ভাড়াটে যোদ্ধা বা মাদক চোরাচালানি মাত্র। এ রকম অভিমতের ভেতর যে বিদ্বেষ আছে, তা নজর এড়ায় না।
বাস্তবে সীমান্তের ঊর্ধ্বে উঠে জোদের পরস্পরকে আশ্রয় দেওয়ার ভ্রাতৃত্ববোধে একদিকে আছে খ্রিষ্টান চেতনা, অন্যদিকে আছে জাতিগত মমত্ববোধ। ঔপনিবেশিক শক্তির তৈরি সীমান্তে এই মমত্ববোধ সংগত কারণেই এখন ‘অবৈধ’। কিন্তু আন্তদেশীয় ‘জালেন-গাম’ চৈতন্যকে সে-ই অবৈধতার শিকলে আটকানো দুরূহ।
উত্তর-পূর্ব ভারতীয় খ্রিষ্টানবলয়ে এ মুহূর্তে নাগা ও কুকিরা প্রধান জাতিগোষ্ঠী। প্রায় ৪৫টি জাতিসত্তার ‘নাগা’রা বহুকাল নাগাল্যান্ডকে কেন্দ্র করে তাদের পুরোনো ‘নাগালিম’ গড়ার কথা ভাবে। তেমনি কুকিদের ১০-১২টি উপশাখা মিলে স্বপ্ন দেখে জালেন-গামের।
উপমহাদেশের মানুষ নাগালিমের কথা যতটা শুনেছে জালেন-গাম ততটা কম প্রচারিত। ভাষাগতভাবে জালেন-গাম অর্থ ‘মুক্তির ঠিকানা’। শিক্ষিত কুকিরা যাকে বলে ‘হোম অব ফ্রিডম’। এবারের মণিপুর দাঙ্গায় ইতিহাসের সে-ই ‘স্বাধীনতার-রাজ্য’ পুরাণ থেকে আড়মোড়া ভেঙে রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের দরবারে হাজির হয়েছে আবার।
আজকের মণিপুরকে ব্যাখ্যা করার সময় মনে রাখতে হবে সমস্যাটা ভারতের তৈরি নয়। উত্তরাধিকারসূত্রে তারা সমস্যার মালিকানা নিয়েছে মাত্র। পাশাপাশি এ–ও ভুলে গেলে চলে না, নাগারা যেমন কেবল নাগাল্যান্ডে থাকে না, তেমনি কুকিরা নানান ছোট ছোট ‘ট্রাইব’ হিসেবে থাকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশজুড়েও।
কুকিদের ভাষ্যমতে, তারা অন্তত ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন আন্তদেশীয় ‘রাজ্যে’ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখন। ‘আছে’ মানে থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশের বমরাও বৃহত্তর কুকি বলয়েই পড়ে। এ রকম সব কুকির অনেক যোদ্ধা নেতাজি সুভাষ বসুর ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’কে সহায়তা করেছিল সর্বনাশা ব্রিটিশদের হাত থেকে জালেন-গাম ফিরে পাওয়ার আশায়। কয়েক শ কুকি সেদিন শহীদ হলেও তাঁদের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।
উপমহাদেশের বড় জাতিগুলো বরাবরই তাদের রাজনীতিতে দূর পাহাড়ের জাতিসত্তাগুলোকে প্রত্যাশামতো বিবেচনায় নেয়নি। মিজোরামে কুকিদের অবস্থাও তাই।
ইম্ফলের মেইতেইদের কাছে তারা কম গুরুত্ব পায়। আশপাশের দেশের জো-জাতিগুলোর অবস্থাও কমবেশি তাই। একদিকে ব্রিটিশদের তৈরি সীমান্তে বিভক্ত হয়ে পড়া, পর্যটন আর রিজার্ভ ফরেস্টের নামে জমি হারানো, অন্যদিকে সব সীমান্তে ‘বড়’দের দ্বারা অবহেলায় পড়ে কুকি মনস্তত্ত্বে ক্রমাগত আবেদন বেড়েছে স্বপ্নের জালেন-গামের।
পাহাড়ে পাহাড়ে কুকিরা যুগের পর যুগ এমন এক নিজস্ব জনপদের কথা ভেবেছে, যেখানে তারা পুরোনো স্বাধীনতা ফিরে পাবে। অনেকেই জালেন-গামের ধারণাকে পৃথক কুকি ‘রাষ্ট্রের’ স্বপ্ন হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। কুকিরা এখন যে মণিপুরের ভেতর পৃথক রাজ্য চাইছে, সেটাও জালেন-গাম ধারণার অংশ হিসেবে কুকিবিরোধীরা প্রচার করে। তবে এই দুটি ধারণার ফারাক আছে।
১৯৬০ সাল থেকে কুকিরা একটা পৃথক রাজ্য চাইছে। ২০১০ সাল থেকে এ দাবিতে তারা নতুন করে সোচ্চার। পৃথক রাজ্য না হলে অন্তত মণিপুরের পাহাড়ি এলাকাগুলো তারা মিজোরামের সঙ্গে যুক্ত দেখতে চায়। মেইতেইদের সঙ্গে বহু আগে থেকে তাদের বনিবনা হচ্ছে না। একই সমস্যা আছে কুকিদের বাকি ‘ছয় সীমান্তের’ ভেতরও। চলমান এসব অবহেলাকে অতিক্রম করে স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বাঁচার চেষ্টাও আছে।
তবে সব বঞ্চনার গভীরে অবহেলার যে ঐতিহাসিক বেদনাবোধ, তার উত্তর খোঁজে কুকিরা জালেন-গাম নিয়ে লেখা গান, কবিতা ও গল্পের রূপকথায়। যাযাবর জাতি হিসেবে তাদের ওই ‘মুক্তাঞ্চলের’ কল্পিত ইমেজ আবার অন্য সব জাতিসত্তাকে ভীত করে। সে কারণেই বোধ হয় অনেক জনপদে কুকিরা অনাহূত।
এবারের দাঙ্গার ফাঁকেই মেইতেইরা আসামের মতো ‘নাগরিক গণনা’ চাইছে মণিপুরে। মণিপুরে এই রকম কর্মসূচিতে জো জাতির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। আসামে এনআরসি নিয়ে মুসলমানরা উদ্বিগ্ন ছিল। মণিপুরে সেই উদ্বেগ আছে খ্রিষ্টানদের মাঝে। যে খ্রিষ্টানরা কুকি কিংবা মিজো বা চিন।
কোনো কুকি উপশাখার এটা অজানা নেই, নতুন একটা পৃথক রাজ্য বা পৃথক দেশ তাদের শান্তি ও স্বস্তি এনে দেবে না। আজকে মণিপুর ভেঙে একটা পৃথক রাজ্য হলেও সেখানে নাগাদের সঙ্গে তাদের বিবাদ বাধবে। কারণ, উভয়ে একই পাহাড়ে কাছাকাছি থাকে তারা বহু যুগ ধরে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত নাগাদের সঙ্গে কুকিদের বহু সংঘর্ষ হয়েছে।
নাগারা স্পষ্টই বলছে, মণিপুরের পাহাড়ি এলাকাগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের জায়গা; কুকিরা সেখানে যাযাবর হিসেবে এসেছিল মাত্র। মণিপুরজুড়ে নাগা-কুকি সংঘর্ষের সময় মেইতেইরা কুকিদের পাশে দাঁড়ায়নি। আজ যেভাবে নাগারা মেইতেইদের পাশে নেই।
এ রকম অভিজ্ঞতার আলোকে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মেইতেই আর কুকিদের যে বিবাদ এখন সবাইকে ভাবাচ্ছে, নতুন কোনো রাজ্য হলে সেখানে কুকিদের সঙ্গে নাগাদের একই ধাঁচের সংঘাত হাজির হবে।
নাগাদের সঙ্গে বর্তমানে দিল্লির সরকারের যে আলোচনা চলছে, তার যৌক্তিক উপসংহার হতে পারে স্বায়ত্তশাসিত একটা ‘নাগালিম’। নিশ্চিতভাবে তাতে মণিপুরের অনেক জেলা যুক্ত হবে এবং সেখানকার কুকিদের তখন নাগাদের কথা মেনেই থাকতে হবে।
সুতরাং পৃথক রাজ্য বা পৃথক দেশ উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলোর ‘পরিচয়বাদী’ দাঙ্গার কোনো কার্যকর সমাধান নয়। ঠিক এ কারণেই নয়াদিল্লির হাতেও মণিপুরের চলতি দাঙ্গার কোনো সমাধান নেই। এই দাঙ্গায় তাদের কিছুটা কৌশলগত লাভও আছে। নাগাদের সঙ্গে আলোচনায় তারা এখন বলতে পারবে, মণিপুরের কুকি এলাকা তোমাদের দেওয়া যাবে না এবং বাস্তবতাও কার্যত সে রকমই।
এ অবস্থায় কুকি ও নাগা কারোই জালেন-গাম হাতের মুঠোয় পোরার সুযোগ নেই শিগগির। কিন্তু কোনো এক ‘মুক্ত’ জনপদের অধরা স্বপ্ন তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিবাদও জারি রাখবে তুষের আগুনের মতো। যত দিন দক্ষিণ এশিয়ার কথিত ‘আধুনিক রাষ্ট্র’গুলো প্রান্তিক পাহাড়িদের স্বাতন্ত্র্য ও মুক্তি–চেতনার কোনো যৌক্তিক আশ্রয় হয়ে উঠতে পারছে না, তত দিন জালেন-গামের মতো রূপকথা পাহাড় থেকে পাহাড়ে তার সবল উপস্থিতি বজায় রাখবেই।
আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ে গবেষক