বিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছাড়ার পর তাঁর সরকারি দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। ২০২২ সালের ২২ জুলাই রাজধানী কলম্বোয়
বিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছাড়ার পর তাঁর সরকারি দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। ২০২২ সালের ২২ জুলাই রাজধানী কলম্বোয়

অভিমত

শ্রীলঙ্কার নির্বাচনে উত্তেজনায় শামিল চীন-ভারতও

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হয় ২০১৯ সালে, পার্লামেন্টের ২০২০ সালে। সেই হিসাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগে হওয়ার কথা। তবে সবাই বলছেন, এবার আগে হবে পার্লামেন্ট নির্বাচন। ব্যতিক্রমের পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ২০২৪ সাল তাঁর দেশে নির্বাচনের বছর। নাগরিকেরা খুশি এই সংবাদে। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শ্রীলঙ্কা সরকার সেদেশের বন্দরে চীনের ‘গবেষণা জাহাজ’ আসা এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে। সঙ্গে সঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে চীন। বোঝা যাচ্ছে, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে লঙ্কার রাজনীতিতে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের যে অদৃশ্য মল্লযুদ্ধ হবে, সেটি শুরু হয়ে গেছে। যেমনটি ঘটেছিল কয়েক মাস আগে মালদ্বীপে নির্বাচনকে ঘিরে। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের নির্বাচন শেষে ভূরাজনৈতিক ফলাফলে যে ‘ভারসাম্য’ বিরাজ করছে, শ্রীলঙ্কার নির্বাচন তাকে এক দিকে হেলে দেবে। তবে ভাষ্যকারেরা এ–ও ভাবছেন, ভোটাররা কি আগের মতো জাতিগত ধারায় ভাগ হয়ে ভোট দেবেন? কিংবা নির্বাচন হলে অর্থনৈতিক দুর্দশা আদৌ কাটবে কি না? 

রনিল কেন নির্বাচন দিতে রাজি হলেন

শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের কথা বাংলাদেশেও বহুল প্রচারিত। আইএমএফের কড়া শাসনে আছে দেশটি। প্রেসিডেন্ট সামরিক আমলাতন্ত্রের সমর্থনে যখন যেটুকু দরকার কর ও দাম বাড়ান কেবল। তাই বলে নির্বাচনী ইস্যুর অভাব নেই। আগের নির্বাচনে দেশটি ভাসছিল সিংহলি জাতীয়তাবাদী উল্লাসে। এবার সেটি নেই। দ্বিদলীয় রাজনৈতিক প্রথা থেকে মুক্তির বাসনা আছে কেবল। 

এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হয় ২০১৯ সালে, পার্লামেন্ট নির্বাচন হয় ২০২০ সালে। উভয়ের মেয়াদ পাঁচ বছর। সেই হিসাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগে হওয়ার কথা। তবে সবাই বলছেন, এবার আগে হবে পার্লামেন্ট নির্বাচন। ব্যতিক্রমের পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। 

গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে যে তিনটি দল প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়, এখনকার প্রেসিডেন্ট তাঁদের কেউ নন। অঘটন কেবল এটিই নয়, জন–আন্দোলনের ভেতর দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন রনিল! আন্দোলনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাঁর গলা টিপে ধরে; আন্দোলনের কর্মীরা যাকে বলেন ‘প্রতিবিপ্লব’। 

তখন থেকে লঙ্কা নির্বাচনের অপেক্ষায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও আটকে আছে। সেই নির্বাচন হওয়ার কথা দুই বছর আগে। প্রেসিডেন্ট রনিল কোনো নির্বাচনই দিতে চাইছিলেন না। নতুন বছরের শুরুতে তিনি মত পাল্টিয়েছেন। যে ‘হিসাব’ থেকে সেটি ঘটুক,লঙ্কার মানুষ খুশি এতে। তাঁরা নির্বাচিত সরকার দেখতে চান। এখনো অবশ্য স্পষ্ট নয়, কোন নির্বাচন আগে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষ্যকারের বিশ্বাস, আগে হবে পার্লামেন্ট নির্বাচন এবং সেটি মার্চে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে সেপ্টেম্বরে। নির্বাচনের জন্য তহবিল জোগানোর ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ভোটার রেজিস্ট্রেশনও হচ্ছে। ফলে মানুষ বিশ্বাস করছে নির্বাচন দেবে শাসকগোষ্ঠী।

মাঠের হিসাবে এ মুহূর্তে লঙ্কার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পদুজানা পেরামুনা বা পিপলস ফ্রন্ট এবং জেভিপি বা জনতা বিমুক্তি পেরামুনা। কোনোটিই প্রেসিডেন্ট রনিলের দল নয়। তাঁর দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) দ্বিধাবিভক্ত। এর ছোট অংশ তাঁর পকেটে। এখনকার পার্লামেন্টে এই দলের সদস্য মাত্র তিনজন। ইউএনপির অপর বড় অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সজিথ প্রেমাদাসা ‘সঙ্গী জন বালাওয়েগায়া’ নামে। বর্তমান পার্লামেন্টে ৫৯ আসন নিয়ে তাঁরা প্রধান বিরোধী দল। এ রকম অবস্থায় পার্লামেন্ট নির্বাচন আগে করে রনিল নিজের দলকে গুছিয়ে তারপর প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে চাইছেন। যদি তিনি আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন, তাহলে প্রচারকাজ চালানোর মতো দলীয় বড় কর্মী বাহিনী নেই তাঁর। লঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে নিয়ম অনুযায়ী ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হয়। পার্লামেন্টে সদস্য হওয়ার বেলায় ও রকম কড়াকড়ি নেই। আনুপাতিক ভোটের হিসাবে সেখানে ছোট দলও কিছু আসন পেয়ে যায়। ফলে রনিল শুরুতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভেতর দিয়ে তাঁর দলকে মোটাতাজা করে নিতে চাইছেন। এমনকি এই নির্বাচনে রাজাপক্ষেদের পদুজানা পেরামুনা কিংবা জেভিপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও মন্ত্রিসভা গঠনকালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিল ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন।

সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টের সে ক্ষমতা আছে। তিনি পার্লামেন্ট ভেঙেও দিতে পারেন। গণতন্ত্রপন্থীরা প্রেসিডেন্টের এ রকম একচেটিয়া ক্ষমতার অবসান চাইছে বহুকাল। এর বাইরেও রাজনৈতিক সংস্কারের আরও বহু দাবি আছে মাঠে। একই মাঠে আছেন গণ–আন্দোলনকালে প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রাজাপক্ষেরাও। বর্তমান পার্লামেন্টে রাজাপক্ষেদের দলের যে প্রাধান্য আছে, সেটি আগামীতেও তারা ধরে রাখতে চায়। 

গত ১৫ ডিসেম্বর পদুজানা পেরামুনা দলের জাতীয় সম্মেলনে মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে আবার দলের প্রধান নির্বাচন করা হয়েছে। এই দল যে তাদের ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতিতে মোটেও পিছু হটতে রাজি নয়, সেটিই বোঝা গেল এই সিদ্ধান্তে। এর মধ্যে তাদের ‘প্রক্সি’ রনিলের পরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ‘স্বপ্ন’ সফল হতে হলে পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁকেও প্রভাব বিস্তার করতে হবে। সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র রনিলের পাশে বেশ শক্তভাবে আছে। তবে এই প্রশাসন যতটা সিংহলি বর্ণবাদী, রনিল ততটা নন। সে জন্য প্রশাসন নির্বাচনকালে রনিলের চেয়েও কড়া জাতীয়তাবাদী কাউকে প্রত্যাশা করবে। তারা রনিলের সঙ্গে রাজাপক্ষেদের জোট করিয়ে দিতেও আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে এই জোট রাজাপক্ষেদের কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং রনিলকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিতিয়ে আনতে সচেষ্ট হবে। দেশটির মধ্যবিত্ত সমাজ অবশ্য রাজাপক্ষেদের জাতিবাদী উগ্রতার বদলে অর্থনৈতিক চাপের সমাধান দিতে পারবে, এমন নেতৃত্ব চায়। 

পূরণ হবে কি লঙ্কার মানুষের প্রত্যাশা? 

শ্রীলঙ্কার দাপ্তরিক নামে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক’ শব্দগুলো আছে। কিন্তু দেশটি মোটেও সমাজতান্ত্রিক নয় এবং কতটা গণতান্ত্রিক, সেটিও ২০২২ সালের জন–আন্দোলন দমনের ধরনে বোঝা গেছে। এসব কারণে লঙ্কার মানুষ ‘পরিবর্তন’ চাইছেন। কতটা তীব্রভাবে চাইছেন, তার সাক্ষ্য ২০২২ সালের আন্দোলন। নির্বাচনী রাজনীতি যে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারবে না, সেটিও জানেন তাঁরা। ফলে আপাত চাওয়া হলো, পর্দার পেছন থেকে রাজাপক্ষেদের মদদে রনিল ও আমলাতন্ত্র যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, তা থেকে বের হওয়া। কিন্তু নির্বাচনে জনগণই একমাত্র পক্ষ নয়। ভারত এবং চীনও গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। এ রকম বিদেশি শক্তিগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর ব্যাপারে কতটা আগ্রহী, সেটি বাংলাদেশের মানুষের অজানা নেই। রাজাপক্ষে ও রনিলের রয়েছে ভালো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ জেভিপি এই ‘যোগ্যতা’য় বেশ পিছিয়ে। বিশেষ করে পাশের বড় প্রতিবেশী জেভেপিকে ক্ষমতায় দেখতে না–ও চাইতে পারে। সে রকম ক্ষেত্রে তারা বরং বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিলকে সহায়তা করবে, যেমন করেছে গত দুই বছর। রনিল তার প্রতিদান দিতে কার্পণ্য করছেন না। সম্প্রতি তিনি যে চীনের ‘গবেষণা জাহাজ’কে শ্রীলঙ্কার বন্দরে নিষিদ্ধ করলেন, তা ভারতের সংবাদমাধ্যমে প্রশংসা পেয়েছে। সেখানে এটাকে বলা হয়েছে ‘ভারতের বড় জয়’ (যেমন জিমিডিয়ার ‘ডব্লিউআইওএন’)। লঙ্কার এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রও খুশি। 

একই বিষয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল ক্ষুব্ধ। ২ জানুয়ারি তাদের সরকারি প্রচারমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, ‘চীনের গবেষণা নৌযানকে শ্রীলঙ্কার বন্দরে ভিড়তে না দেওয়া প্রতিবেশীদের ওপর ভারতের কর্তৃত্ববাদী কূটনীতির ফল।’ 

জেভিপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে

চীনের জন্য এবারকার নির্বাচনী পরিস্থিতি অস্বস্তিকর। তাদের পুরোনো পছন্দ রাজাপক্ষেরা দুর্নীতির মাধ্যমে বেশ নিন্দিত। সম্প্রতি দেশটির উচ্চ আদালত এক রুলিংয়ে মন্তব্য করেছেন, রাজাপক্ষে ভাইয়েরা ক্ষমতায় থাকার সময় এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা অর্থনৈতিক দুর্যোগের কারণ ঘটিয়েছে। এ রকম রাজনৈতিক শক্তিকে মদদ দিয়ে যাওয়া চীনের জন্য কিছুটা দুরূহ। যদিও বহু দেশে জনবিচ্ছিন্ন অনেক শাসকের পাশে তারা শক্তভাবে আছে। রাজাপক্ষেরা রনিলের সঙ্গে জোট বাঁধলে চীনের জন্য সাংস্কৃতিকভাবে কিছুটা সুবিধা হয় তাঁদের পাশে থাকতে। এর মধে৵ গত দুই বছরে সিংহলি সমাজে বিশেষভাবে প্রভাব বেড়েছে জেভিপির। 

শ্রীলঙ্কার সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে জেভিপির জন্ম ও উত্থান। স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশে জাসদের উত্থানে জেভিপির ভাবাদর্শিক প্রভাব ছিল। মাঝখানে দু-দুইবার রাষ্ট্রীয় দমন–পীড়নে প্রথম সারির প্রায় সব সংগঠককে হারিয়েছে দলটি। সমাজতন্ত্রের কথা বললেও অতীতে চীন-রাশিয়ার সঙ্গে জেভিপির অন্তরঙ্গতা ছিল না। কেবল সম্প্রতি চীনের শাসক দল জেভিপির একটা প্রতিনিধিদলকে তাদের দেশে দাওয়াত দিয়ে নিয়েছে। জেভিপির যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতার নীতি চীনের হয়তো পছন্দ। আসন্ন নির্বাচনে এই দলও চীনের কিছু সহানুভূতি পাবে বলে মনে হয়। তারা ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার বা এনপিপি নামে একটা জোট করেছে জাতীয়তাবাদী অনেক সংগঠনকে নিয়ে। এই জোট বলছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে আইএমএফের ফর্দ ছাড়াই দেশকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধারে সক্ষম তারা। ঔপনিবেশিক প্রশাসনের সংস্কার আনার কথাও বলছে তারা এবং এ রকম ‘সংস্কার’কে বলছে একালের ‘জাতীয় মুক্তি আন্দোলন’। রাজনৈতিক সংস্কার প্রশ্নে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে জেভিপির কিছু মিল দেখা যায়। 

তবে জেভিপিকে নিয়ে অনেকের ভয় আছে। যদিও এখন আর তারা আগের মতো র‌্যাডিক্যাল নেই; কিন্তু অতীতে দুবার সশস্ত্র গণ–অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে তারা কুলীন সমাজ ও আন্তর্জাতিক মুরব্বি দেশগুলোকে ভীত করে রেখেছে। জেভিপির অতীত উগ্র সিংহলি রাজনীতি তামিলদের মধ্যেও দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে। 

আসন্ন নির্বাচনে তামিলরা কী করবে, সে–ও জরুরি প্রশ্ন হিসেবে আছে এখানে। সচরাচর সিংহলি যে দল ভারতের সহানুভূতি পায়, তামিলরা সেদিকে হেলে থাকে। সে বিবেচনায় সজিথ প্রেমাদাসা বা রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে তামিলদের মৈত্রী হতে পারে। 

আলোচনায় ‘একেডি’

শ্রীলঙ্কায় তামিলরা সব সময় চেয়েছেন, যেকোনো নির্বাচনের আগে দেশটিতে তাঁদের জন্য কিছু রাজনৈতিক সংস্কার হোক। কিন্তু এবারও সে রকম কিছু হবে না। সেই না হওয়ার মাঝেই তাঁদের ভোটে আসতে হবে। রাজনীতিসচেতন অনেক তামিলের ভোটে আগ্রহ কম। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন তামিলের নির্বাচিত হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। কারণ, সিংহলিরা সেই প্রার্থীকে ভোট দেবেন সামান্যই। সচরাচর পার্লামেন্ট নির্বাচনে ১০-১৫টি আসন পাওয়ার ভেতর দিয়ে তামিলবান্ধব কোনো সিংহলি দলের পাশে দাঁড়ান তাঁরা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের পছন্দ এখন সজিথ প্রেমাদাসার দল; কিন্তু জেভিপি বা রাজাপক্ষেরা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়, তাহলে তামিলদের আবারও সজিথের সঙ্গে বিরোধীদলীয় অবস্থানে থেকে যেতে হবে। লঙ্কায় তামিলদের চিরদিনের এই বিরোধীদলীয় অবস্থাই তাদের বেদনার মর্মকথা। তবে সবাই আশা করছে, এবার নির্বাচনে জাতিগত বিবেচনা কম প্রভাব রাখবে। ২০২২ সালের মার্চ-আন্দোলনে দেখা গিয়েছিল শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণ-তরুণীরা সিংহলী-তামিল বিভেদকে অতিক্রম করতে চাইছেন। পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে, তাতে তামিলরা একজন নিজস্ব প্রার্থী দেবেন বলে মনে হয়। এ রকম প্রার্থীর ভাষণগুলোর ভেতর দিয়ে তাঁরা উত্তরের জাফনা অঞ্চলের সংকটগুলো তুলে ধরার কৌশল নেবেন। আপাতত যা দেখা যাচ্ছে, সিংহলিদের মাঝে জনগণের নজরে আছেন জেভিপির অনুঢ়া কুমার দেশনায়েকে, সজিথ প্রেমাদাসা, সাবেক সেনাপ্রধান শরৎ ফনসেকা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রথম তিনজনই বিরোধীদলীয় এবং মাঝের দুজন একই দলের। গত আন্দোলনের কর্মীরা সবাই চাইছেন, রনিল ও রাজাপক্ষেদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থীরা একজোট হোক। সেটি আদৌ সম্ভব কি না, এখনো স্পষ্ট নয়। সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে অনুঢ়াকে দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। নামের আদ্যাক্ষর মিলিয়ে জনসমাজে তাঁকে ‘একেডি’ বলে ডাকা হয়। মাঠে জনপ্রিয়তা বাড়লেও চীন-ভারত তাঁর ওপর কতটা ভরসা করছে, সেটি এখনো বোঝা যাচ্ছে না। জেভিপিও ইঙ্গিত দিচ্ছে না বেইজিং ও নয়াদিল্লির মধে৵ কার ‘বন্ধু’ হবে তারা। নাকি তারা পুরোনো আপসহীন-একরোখা-রাগী তারুণ্যের ইমেজ বজায় রাখবে? তবে দ্য হিন্দুসহ ভারতের মিডিয়ায় একেডির সাক্ষাৎকার ছাপা হতে দেখা যাচ্ছে ঘন ঘন। আবার কিছুদিন আগে কলম্বোয় একেডির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জুলি চাঙের সাক্ষাৎও সবার নজর কেড়েছে। 


আলতাফ পারভেজ গবেষক; শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম: দক্ষিণ এশিয়ায় জাতিরাষ্ট্রের সংকট গ্রন্থের লেখক