আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)

আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারে আইসিসির এখতিয়ার কতটুকু

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার বিষয়ে সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসিতে যাওয়া না–যাওয়াকে কেন্দ্র করে আইনি বাহাস লক্ষ করা গেছে। বিশেষত কে বা কারা, কখন ও কীভাবে মামলা করতে পারে কিংবা আইসিসিই মূলত কী ধরনের অপরাধের বিচার করতে পারে, তা নিয়ে জনমনে একধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই লেখায় সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ইমরান আজাদ

আইসিসি প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে ১৯১৯ সালে ‘কমিশন অন দ্য রেসপনসিবিলিটি অব দ্য অথারস অব দ্য ওয়ার অ্যান্ড অন এনফোর্সমেন্ট অব পেনালটিস’ বিভিন্ন দেশের বিচারকদের নিয়ে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার প্রস্তাব করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১৯ সালের ২৮ জুন স্বাক্ষরিত ভার্সাই শান্তি চুক্তির অনুচ্ছেদ ২২৭-২৩০ অনুযায়ী জার্মান সম্রাট উইলহেম দ্বিতীয়সহ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিদের বিচারের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমঝোতায় নুরেমবার্গ সনদের মাধ্যমে একটি মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয় শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত উচ্চপদস্থ নাৎসি কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য। একই সময়ে টোকিওতে আরেকটি মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয় জাপানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য।

স্নায়ুযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের দশকে পূর্বতন যুগোস্লাভিয়া ও রুয়ান্ডাতে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আইসিটিওয়াই (নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশন ৮২৭/১৯৯৩) ও আইসিটিআর (নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশন ৯৫৫/১৯৯৪) নামে পৃথক দুটি ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয়। এ সময়ই মূলত একটি স্থায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। এ বিষয়ে ১৯৯৪ সালের ইন্টারন্যাশনাল ল কমিশনের খসড়া প্রস্তাব, ১৯৯৬ সালের প্রিপারেটরি কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত স্থায়ী আদালত প্রতিষ্ঠার রূপরেখা এবং ১৯৯৮ সালের রোম সম্মেলনে চূড়ান্তভাবে আইসিসি প্রতিষ্ঠার সংবিধিটি গ্রহণ করা হয়।

আইসিসি পুরোদমে কাজ শুরু করার আগেই দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের উদ্যোগে কিছু ‘ইন্টারন্যাশনালাইজড’ বা হাইব্রিড ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয়। যেমন ২০০২ সালে জাতিসংঘ ও সিয়েরা লিওনের মধ্যকার চুক্তির মাধ্যমে (নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশন ১৩১৫/২০০০) একটা মিক্সড ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এখানে সিয়েরা লিওনের নাগরিক ও বিদেশি বিচারক-স্টাফের সমন্বয়ে বিচার সম্পন্ন করা হয়। ২০০১ সালে কম্বোডিয়াও এক্সট্রা–অর্ডনারি চেম্বারস ইন দ্য কোর্টস অব কম্বোডিয়া (ইসিসিসি) নামে রাষ্ট্রীয় আইনের ও পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে একই ধরনের মিক্সড ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এসব বিচারব্যবস্থার বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন দেশের ন্যাশনাল কোর্টগুলোতে ‘ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন’ নীতির আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার করা হচ্ছে।

আইসিসিতে কী ধরনের অপরাধের বিচার হয়

১৯৯৮ সালের রোম সংবিধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আইসিসি ২০০২ সাল থেকে একটা স্থায়ী আদালত হিসেবে এর কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ১২৪টি রাষ্ট্র রোম সংবিধির সদস্য; যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এর সদস্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইসরায়েল, ভারত, চীনসহ অনেক দেশ এটির সদস্য নয়। মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারে দেশীয় বিচারব্যবস্থার সমর্থনে বা এটার পরিপূরক (কমপ্লিমেন্টারি) হিসেবে কাজ করার জন্য আইসিসি তৈরি হয়েছিল (রোম সংবিধির প্রস্তাবনা এবং অনুচ্ছেদ ১ ও ১৭)।

অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী, আইসিসিতে চার ধরনের অপরাধের বিচার করা যায়—জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আগ্রাসনের অপরাধ। ১৯৯৮ সালের মূল আইনে প্রথম তিনটি অপরাধের কথা বলা ছিল। ২০১০ সালে রোম সংবিধিতে সংশোধনীর মাধ্যমে ক্রাইম অব অ্যাগ্রেশন বা আগ্রাসনের অপরাধের বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। এই অপরাধগুলো আদালতে প্রমাণের জন্য এলিমেন্টস অব ক্রাইমস নামে একটা সহয়িকা আছে, যেখানে প্রতিটা অপরাধ প্রমাণের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক উপাদানের কথা বলা আছে। আর বিচারের পদ্ধতিগত দিকগুলো বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে রুলস অব প্রসিডিউর অ্যান্ড এভিডেন্সে।

আইসিসির এখতিয়ার

রোম সংবিধির বিভিন্ন অনুচ্ছেদে আইসিসির এখতিয়ার (জুরিসডিকশন) সম্পর্কে বক্তব্য আছে এবং কোন পরিস্থিতিতে আইসিসি তার এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারবে কিংবা পারবে না, তা ওই সব বিধানের যৌথ-পাঠের মাধ্যমে বোধগম্য হয়। শুরুতেই অনুচ্ছেদ ১১ বলছে যে রোম সংবিধি কার্যকর পরবর্তী সময়ে (অর্থাৎ ১ জুলাই ২০০২-এর পরে) সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আইসিসি এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে।

আর কোনো রাষ্ট্র যদি এই সংবিধি কার্যকর হওয়ার পর এই সংবিধির সদস্য হয়ে থাকে, তবে সেই রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্র সদস্য হওয়ার পর কেবল সংঘটিত অপরাধের তদন্ত/বিচারে আইসিসি এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে। একে বলে ‘প্রসপেকটিভ অ্যাপলিকেশন অব জুরিসডিকশন’ বা এখতিয়ারের ভবিষ্যাপেক্ষ প্রয়োগ। আইসিসির সদস্য নয়, এমন রাষ্ট্র ঘোষণা বা ডিক্লারেশনের মাধ্যমে আইসিসির এখতিয়ার মেনে নিতে পারে (অনুচ্ছেদ ১১(২) ও ১২(৩))। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আইভরি কোস্ট রোম সংবিধি অনুমোদন করে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে। কিন্তু এরও অনেক আগে রোম সংবিধি কার্যকর হওয়ার পরবর্তী সময়ে আইভরি কোস্টে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য আইসিসির এখতিয়ার আইভরি কোস্ট ১৮ এপ্রিল ২০০৩ সালে ঘোষণা দিয়ে মেনে নিয়েছিল।

আইসিসি কখন এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে

অনুচ্ছেদ ১৩ অনুযায়ী তিনটি ক্ষেত্রে আইসিসি এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে। প্রথমত, যদি কোনো সদস্যরাষ্ট্র মনে করে যে কোথাও (নিজের ভূখণ্ডে বা অন্যত্র) অনুচ্ছেদ ৫-এ বর্ণিত এক বা একাধিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং সেই পরিস্থিতিকে যদি সেই রাষ্ট্র আইসিসির প্রসিকিউটরের কাছে তদন্তের জন্য পাঠায়। একে বলে ‘স্টেট পার্টি রেফারাল’। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যদি প্রসিকিউটরের কাছে ওপরে বর্ণিত কোনো পরিস্থিতিকে বিবেচনার জন্য পাঠায়। তৃতীয়ত, প্রসিকিউটর নিজেই যদি অনুচ্ছেদ ১৫ মোতাবেক তদন্ত শুরু করতে পারেন।

অনুচ্ছেদ ১২(৩) অনুযায়ী, প্রথম ও তৃতীয় ক্ষেত্রে এখতিয়ার প্রয়োগ করার বিষয়ে বলা আছে যে আইসিসি তার এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারবে যদি এক বা একাধিক রাষ্ট্র আইসিসির সদস্য হয় বা আইসিসির এখতিয়ার ইতিমধ্যে মেনে নেয়। আর কোনো রাষ্ট্র যদি আইসিসির সদস্য না হয়ে থাকে, কিন্তু আইসিসির এখতিয়ার প্রয়োগ করার জন্য সেই রাষ্ট্র কর্তৃক আইসিসির এখতিয়ার মেনে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে, তবে সে রাষ্ট্র চাইলে একটা ঘোষণা দিয়ে বলে দিতে পারে যে সে আইসিসির এখতিয়ার মেনে নিয়েছে।

এখতিয়ার মেনে নেওয়ার মানে হচ্ছে সেই রাষ্ট্র আইসিসিকে কোনো ধরনের বিলম্ব বা ব্যতিক্রম ছাড়াই তদন্ত ও বিচারে সহায়তা করবে। যেমন অধিকৃত ফিলিস্তিন ও পূর্ব জেরুজালেমে ১৩ জুন ২০১৪ সাল থেকে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে তদন্ত ও বিচারের জন্য ফিলিস্তিন আইসিসির এখতিয়ার মেনে নিয়েছে।

মোদ্দাকথা হলো, একটা রাষ্ট্র দুই উপায়ে আইসিসির এখতিয়ার মেনে নিতে পারে। অনুচ্ছেদ ১২(১) অনুযায়ী একটি রাষ্ট্র আইসিসির সদস্য হওয়ার মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ৫-এ বলে দেওয়া অপরাধগুলোর বিচারের বিষয়ে আইসিসির এখতিয়ার মেনে নিতে পারে। আর ওপরে বর্ণিত অনুচ্ছেদ ১৩-এর প্রথম ও তৃতীয় প্রেক্ষাপটে আইসিসি এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে যদি এক বা একাধিক রাষ্ট্র আইসিসির সদস্য হয় অথবা আইসিসির জুরিসডিকশন সংবিধি অনুযায়ী (অনুচ্ছেদ ১২(৩)) মেনে নেয়। এ ধরনের রাষ্ট্রগুলো দুই রকম হতে পারে: এমন রাষ্ট্র যার ভূখণ্ডে অভিযোগে আনা অপরাধসমূহ ঘটেছে অথবা এমন রাষ্ট্র, যার নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১২(২))।

তদন্তকাজে আইসিসি প্রসিকিউটরের ভূমিকা

অনুচ্ছেদ ১৫ অনুযায়ী, প্রসিকিউটর তথ্যপ্রাপ্তির ভিত্তিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করতে পারেন। তবে সেটা করার আগে, প্রাপ্ত তথ্যসমূহ কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য, সেটা তাকে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। যদি দেখা যায় যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করার মতো যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই, তাহলে এই মর্মে গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রসিকিউটর তাদের জানিয়ে দেবেন, যারা তাঁকে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেছিল।

রুলস অব প্রসিডিউর অ্যান্ড এভিডেন্সের ৪৬ ধারা অনুযায়ী প্রাপ্ত তথ্যসমূহের গোপনীয়তা যেমন রক্ষা করতে হবে, তেমনি ৪৯ ধারা অনুযায়ী গোপনীয়তা ও তথ্যদাতার নিরাপত্তা রক্ষা করে ‘তদন্ত করা হবে না’ মর্মে গৃহীত সিদ্ধান্তটা জানাতে হবে। আর তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তদন্ত করার মতো যৌক্তিক কোনো কারণ যদি তিনি খুঁজে পান, তবে প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের কাছে তিনি তদন্ত শুরু করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করবেন। প্রি-ট্রায়াল চেম্বার তদন্ত শুরু করার অনুমতি দিতে পারে আবার না–ও দিতে পারে। তদন্তের অনুমতির প্রার্থনা একবার খারিজ হওয়া সত্ত্বেও প্রসিকিউটর নতুন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আবার তদন্তের অনুমতি চেয়ে প্রি-ট্রায়াল চেম্বারে যেতে পারেন। এখন পর্যন্ত আফগানিস্তান, জর্জিয়া, বুরুন্ডি, আইভরি কোস্ট ও কেনিয়াতে প্রসিকিউটর স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত করেছেন।

অনুচ্ছেদ ৫৩ অনুযায়ী, প্রসিকিউটর তদন্ত শুরু করবেন কেবল তখনই, যখন ১. প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে প্রসিকিউটরের কাছে মনে হবে যে আইসিসির এখতিয়ারে আসার মতো কোনো একটা অপরাধ ইতিমধ্যে সংঘটিত হয়েছে বা সংঘটন চলমান রয়েছে; ২. অপরাধ সংঘটন সংক্রান্ত পরিস্থিতিটি অনুচ্ছেদ ১৭ মোতাবেক সম্ভাব্য বিচারযোগ্য একটা বিষয়; এবং ৩. অপরাধের তীব্রতা (গ্র্যাভিটি অব ক্রাইম) ও ভিকটিমের স্বার্থ (ইন্টারেস্ট অব ভিকটিম) বিবেচনায় নিলে বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে যে অপরাধটির তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের স্বার্থ (ইন্টারেস্ট অব জাস্টিস) সমুন্নত হবে।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রসিকিউটর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে তদন্ত করার যৌক্তিক কারণ উপস্থিত বা অনুপস্থিত। স্টেট পার্টি রেফারাল (অনুচ্ছেদ ১৩(১) ও ১৪) অথবা নিরাপত্তা পরিষদের রেফারালের (অনুচ্ছেদ ১৩(২)) ক্ষেত্রে প্রি-ট্রায়াল চেম্বার প্রসিকিউটরের ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে তদন্ত না করার’ সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে পারে এবং প্রসিকিউটরকে অনুরোধ করতে পারে তার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য। এ ছাড়া প্রি-ট্রায়াল চেম্বার স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রসিকিউটরের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রসিকিউটরের সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। আর নতুন তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তির ভিত্তিতে প্রসিকিউটর তদন্ত করা বা না করার সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় পুনর্বিবেচনা করতে পারেন।

‘অ্যাডমিসিবিলিটি টেস্ট’

আইসিসির এখতিয়ার নির্ণয় করার পাশাপাশি কোনো একটা মামলা আদৌ আইসিসিতে বিচারযোগ্য কি না, সেটা নির্ভর করে অনুচ্ছেদ ১৭ অনুসারে চারটি বিষয়ের ওপর। একে বলে অ্যাডমিসিবিলিটি টেস্ট। প্রথমত, অপরাধগুলোর ওপর এখতিয়ার আছে, এমন কোনো রাষ্ট্র
যদি ইতিমধ্যে তদন্ত বা বিচার সম্পন্ন করে ফেলে, তবে আইসিসির কাছে মামলাটি বিচার্য হবে না। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র তদন্ত করার পর কোনো ব্যক্তিকে বিচার না করার যদি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তবে সেটিও আইসিসির ধর্তব্যে আসবে না। তবে ওপরের দুই ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে রাষ্ট্র সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার করার জন্য অনিচ্ছুক বা অসমর্থ হয় অথবা কাউকে বিচার না করার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের অনিচ্ছা বা অসমর্থতার ফলাফল, তবে সেই ঘটনা বা মামলাটি আইসিসির কাছে বিচারযোগ্য হতে পারে।

এ ছাড়া একটা মামলা আইসিসির কাছে বিচারযোগ্য হবে না, যদি একই ব্যক্তিকে একই ঘটনার জন্য দুইবার বিচার করার বা শাস্তি দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। আর মামলাটি যদি যথেষ্ট পরিমাণে গুরুতর (সাফিশিয়েন্টলি গ্র্যাভ) না হয়, তবে সে ক্ষেত্রেও মামলাটি আইসিসির কাছে বিচারযোগ্য হবে না। অনুচ্ছেদ ১৭(২) ও (৩)-এ রাষ্ট্রের অনিচ্ছা বা অসমর্থতার ধারণাটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে।

আইসিসিতে কি কোনো ব্যক্তি মামলা করতে পারে

আইসিসির এখতিয়ার বিষয়ক ওপরের আলোচনায় এটা পরিষ্কার যে আইসিসিতে কখনো কোনো ব্যক্তি মামলা করতে পারে না। রাষ্ট্র, নিরাপত্তা পরিষদ বা প্রসিকিউটর মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনের কোনো একটা ঘটনাকে আইসিসির নজরে নিয়ে এসে বিচারের ব্যবস্থা করে থাকে। অবশ্য ২০০৯ সালের রেগুলেশনস অব দ্য অফিস অব দ্য প্রসিকিউটরের ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ অথবা বেসরকারি সংস্থা সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে প্রসিকিউটর অফিসে তথ্য-উপাত্ত বা প্রমাণ সম্পর্কিত কাগজপত্র জমা দিতে পারে। কিন্তু সেগুলো জমা দেওয়া মানেই আইসিসিতে কোনো মামলা হওয়া নয়। আদৌ তা প্রাথমিক অনুসন্ধান ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে একটা বিচারযোগ্য মামলা হিসেবে চূড়ান্তভাবে আইসিসির ট্রায়াল কোর্টে যাবে কি যাবে না, তা নির্ভর করবে জুরিসডিকশন ও অ্যাডমিসিবিলিটি প্রশ্নগুলো সুরাহা করার ওপর।

  • ইমরান আজাদ সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস