ইসলাম শ্রমকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করে। ইসলাম শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর যখন নামাজ পূর্ণ করা হবে, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়ো; আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।’ (সুরা-৬২ জুমুআহ, আয়াত: ১০)
হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘ফরজ ইবাদতগুলোর পরেই হালাল উপার্জন করা একটি ফরজ ইবাদত।’ (তিরমিজি) ‘হালাল উপার্জনগুলোর মধ্যে তা সর্বোত্তম, যা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে অর্জন করা হয়।’ (মুসলিম)
শ্রমিকের অধিকার ও শ্রমগ্রহীতার কর্তব্য সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘শ্রমিকেরা তোমাদেরই ভাই, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের দায়িত্বে অর্পণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা যার ভাইকে তার দায়িত্বে রেখেছেন; সে যা খাবে, তাকেও তা খাওয়াবে; সে যা পরিধান করবে, তাকেও তা পরিধান করাবে; তাকে এমন কষ্টের কাজ দেবে না, যা তার সাধ্যের বাইরে। কোনো কাজ কঠিন হলে সে কাজে তাকে সাহায্য করবে।’ (মুসলিম, মিশকাত)
তাই শ্রমিকের পারিশ্রমিকের পরিমাণ অন্তত এমন হতে হবে, যাতে তাঁর খোরপোশ ও বাসস্থানের বন্দোবস্ত ভালোভাবে হয়ে যায় এবং তাঁর নিজের ও পরিবারের জীবনধারণে কোনো কষ্ট না হয়। হজরত শুআইব (আ.) হজরত মুসা (আ.)–কে কাজে নিয়োগ দেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘আর আমি আপনাকে কষ্টে ফেলতে চাই না; ইনশা আল্লাহ! আপনি আমাকে কল্যাণকামী রূপে পাবেন।’ (সুরা-২৮ কছাছ, আয়াত: ২৭)
হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘এক লোক এসে নবীজি (সা.)–এর কাছে ভিক্ষা চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কি কিছুই নেই?” সে বলল, “আমার একটি কম্বল আছে।” নবীজি (সা.) বললেন, “যাও, কম্বলটি নিয়ে এসো।”
‘কম্বল নিয়ে এলে নবীজি (সা.) তা নিলামে বিক্রি করলেন দুই দিরহাম মূল্যে। এক দিরহাম তাকে দিয়ে দিলেন পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করতে আর এক দিরহাম দিয়ে একটি কুড়াল কিনে নবীজি (সা.) নিজ হাতে তাতে হাতল লাগিয়ে দিলেন; আর ওই লোকটাকে কাঠ কেটে উপার্জন করার নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
প্রায় সব নবী–রাসুলই কায়িক পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। হজরত আদম (আ.) কৃষিকাজের সূচনা করেছিলেন। ‘দ্বিতীয় আদম’খ্যাত হজরত নুহ (আ.) কাঠমিস্ত্রি বা ছুতারের কাজ করেছেন।
যারা শ্রমিকের মজুরি প্রদানে টালবাহানা করে, তাদের ব্যাপারে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সামর্থ্যবান পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম বা অবিচার।’ (বুখারি)
হজরত ইদ্রিস (আ.) সেলাইয়ের কাজ করতেন। হজরত সুলাইমান (আ.)–এর পিতা নবী ও সম্রাট হজরত দাউদ (আ.) লৌহশিল্প বা কামারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নবী হজরত শুআইব (আ.)–এর পশুর খামার ছিল। তাঁরই খামারে হজরত মুসা (আ.) আট-দশ বছর চাকরি করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও হজরত বিবি খাদিজা (রা.)–এর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে মালিক বা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো শ্রমিকের প্রতি সদয় হওয়া, তাঁর কাজের চাপ কমিয়ে দিয়ে তাঁকে সাহায্য করা। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার কাজের লোকের কাজ কমিয়ে সহজ করে দিল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার হিসাব সহজ করে দেবেন।’ (বুখারি)
পারিশ্রমিকের ব্যাপারে হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করো তার ঘাম শুকানোর আগেই।’ (বায়হাকি, মিশকাত)
যারা শ্রমিকের মজুরি প্রদানে টালবাহানা করে, তাদের ব্যাপারে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সামর্থ্যবান পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম বা অবিচার।’ (বুখারি) ‘হাশরের দিনে জুলুম অন্ধকার রূপে আবির্ভূত হবে।’ (মুসলিম)
হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাদের বিরুদ্ধে থাকব, যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে, মানুষকে বিক্রি করে এবং ওই ব্যক্তি যে কাউকে কাজে নিয়োগ করল, অতঃপর সে তার কাজ পুরা করল; কিন্তু সে তার ন্যায্য মজুরি দিল না।’ (বুখারি)
হাদিস শরিফে আছে, ‘যদি কেউ কারও ন্যায্য পাওনা অস্বীকার করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশত হারাম করে দেন।’ (মুসলিম)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com