মতামত

যে কারণে ইউক্রেনের সমর্থন কমতে পারে

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সফলভাবে তাদের দেশের বেশির ভাগ অংশ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করে চলেছে। তবে মার্কিন সহায়তা না পেলে ইউক্রেনের সামরিক অভিযান সম্ভবত কয়েক মাস আগেই গুটিয়ে নিতে হতো।

রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি ইউক্রেনকে দেওয়া পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তার সিংহভাগই দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তাঁর লোকজন—এ উভয় শিবিরই আশঙ্কা করছে, ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনকে দেওয়া এ সহযোগিতার চ্যানেলগুলো ছোট হয়ে আসবে।

রাশিয়ান-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। এটি আমেরিকান ভোটারদের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন সমর্থন হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে রিপাবলিকানদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ বলছে, গত মার্চে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক এবং রিপাবলিকানের দিকে ঝোঁকা স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে ৯ শতাংশ ভোটার মনে করতেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি সমর্থন দিচ্ছে এবং সে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা উচিত; সেপ্টেম্বরে এসে তাদের সংখ্যা ৩২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মার্কিন অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় থাকলেও রিপাবলিকানরা কয়েক মাস ধরে বাইডেন ও ডেমোক্র্যাটদের দুর্বল করার জন্য দেশীয় অর্থনৈতিক উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ প্রথম থেকেই ইউক্রেনের পাশে আছে। ইউক্রেনের মাটিতে ১০ হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা। আনুষঙ্গিক সামরিক সহায়তাও দিচ্ছে। কিন্তু নতুন বাস্তবতায় ইউরোপের মানুষের মধ্যে ইউক্রেনকে সমর্থন করার ধারণা বদলাতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ইউরোপকে জ্বালানি সংকটে পড়তে হয়েছে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের জীবনকে অস্থির করে তুলছে।

গত মে মাসে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ৫৭ জন রিপাবলিকান সদস্য ইউক্রেনকে চার হাজার কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে রিপাবলিকান সিনেটর ম্যাকার্থি সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সই করা ব্ল্যাংক চেক দিতে পারে না।’

বিভিন্ন জরিপের ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য প্রমাণ করে যদি রিপাবলিকান পার্টি মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত ভবিষ্যতের সাহায্য প্যাকেজগুলো কংগ্রেসে বড় ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে।

ন্যাটো এবং ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার ধারণাকে সমর্থন দেওয়ার প্রবণতা রিপাবলিকানদের মধ্যে ঐতিহ্যগতভাবেই অনেক কম। ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকার পুরোটা সময় ন্যাটোর জন্য বরাদ্দ রাখার বিরোধিতা করে গেছেন। কিয়েভের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সেপ্টেম্বরের পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনের জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সমর্থনও কমে যেতে শুরু করেছে।

অক্টোবরের আরেকটি পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের প্রধান বিবেচনার বিষয় হলো অর্থনীতি। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে অস্থির করার বিনিময়ে ইউক্রেনে সহায়তা দেওয়ায় রাজি নন।

গত ২৪ অক্টোবর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের উদারপন্থী ককাসের ৩০ জন সদস্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে এবং যুদ্ধ শেষ করতে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। পরদিন তাঁরা চিঠিটি প্রত্যাহার করে নিলেও এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের পতনশীল সমর্থনকে সামনে নিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ইউক্রেনকে ৫২০০ কোটি ডলারের সামরিক, মানবিক ও অন্যান্য খাতের সহায়তা দিয়েছে। এ সহায়তার ধারা বন্ধ হয়ে গেলে তা ইউক্রেনের আত্মরক্ষার ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ প্রথম থেকেই ইউক্রেনের পাশে আছে। ইউক্রেনের মাটিতে ১০ হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা। আনুষঙ্গিক সামরিক সহায়তাও দিচ্ছে। কিন্তু নতুন বাস্তবতায় ইউরোপের মানুষের মধ্যে ইউক্রেনকে সমর্থন করার ধারণা বদলাতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ইউরোপকে জ্বালানি সংকটে পড়তে হয়েছে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের জীবনকে অস্থির করে তুলছে।

সব মিলিয়ে ইউক্রেনের জনসমর্থন কমতে শুরু করেছে, যা জেলেনস্কিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

  • জন পি রুহেল ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী একজন অস্ট্রেলিয়ান-আমেরিকান সাংবাদিক