ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি করেছে। এ আন্দোলনকে আন্তর্জাতিকভাবে জেন–জির আন্দোলন হিসেবেও দেখা হচ্ছে। জেন–জি জাগরণ এখন ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকাতেও। মহাদেশটির দেশে দেশে ক্ষমতা ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের তীব্র আন্দোলন তৈরি হয়েছে। নতুন আফ্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে জেন–জির আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সমাজ এখন ‘জেন-জি’ শব্দের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছে। প্রায় একই রকম অবস্থার শুরু আফ্রিকায়ও। আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে জনসংখ্যা প্রায় ১৩৭ কোটি। তার মধ্যে জেন-জি হবে প্রায় ৪৩ কোটি। পুরো সংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ। তবে সংখ্যার হিসাবের চেয়ে হঠাৎ তাদের রাজনৈতিক জোর বেড়েছে অনেক এবং সেটা মনোযোগ কেড়েছে সবার।
উগান্ডা, কেনিয়া, নাইজেরিয়ার পাশাপাশি মহাদেশের মুরুব্বি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাতেও জেনারেশন-জেড রাজনীতির লাগাম নিতে রাজপথ ও ইন্টারনেট মাতিয়ে চলেছে কয়েক মাস ধরে।
ইতিমধ্যে এ–ও বলা হচ্ছে ‘আফ্রিকার ভবিষ্যৎ জেন-জি’র হাতে। কৌতূহল-উদ্দীপক ব্যাপার, আফ্রিকার জেন-জিদের দাবিদাওয়া অনেকগুলো বাংলাদেশের সমবয়সীদের মতো। অনেকটা যেন বাংলা বসন্তের আফ্রিকা সংস্করণ। কেউ কেউ অবশ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত এসবই হচ্ছে বৈশ্বিক এক পালাবদলের সূচনা। ‘রাজনৈতিক-আগামীকাল’ শিগগির এ প্রজন্মের দখলে যেতে চলেছে। দেশে-দেশে স্থানীয় নানা ইস্যুতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে পড়ছে। প্রায় সব জায়গায় তাদের সাংগঠনিক ফর্মুলা হলো: ‘আগে নিজেরা নেমে পড়ো—কে কে সঙ্গে আসছে পরে দেখা যাবে—চূড়ান্ত গন্তব্য নিয়েও এখনই কিছু ভাবার দরকার নাই।’
আফ্রিকায় সাম্প্রতিক জেন-জি বিপ্লবের সূচনা কেনিয়ায়। এখানে তারা নামে গত জুনে অতিরিক্ত করারোপের প্রতিবাদে। সরকার নানা নতুন করের মাধ্যমে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার সমান রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা নেয় তখন। মারাত্মকভাবে ধনবৈষম্য ভরা দেশটিতে গরিব মানুষ এতে ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়তি শঙ্কায় পড়ে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের মাধ্যমে জেন-জি প্রথমে রাস্তায় নামার আওয়াজ তোলে। এ সময় তাদের কেউ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যাওয়ার কথা ভাবেনি, যা করার নিজেরাই করবে ভেবেছে। ২০২২ সালের নির্বাচন তাদের সন্তুষ্ট করতে না পারায় রাস্তায় নামার একটা সুযোগ খুঁজছিল তারা। কর বিল সেই সুযোগ এনে দেয়।
বিক্ষোভের শুরুতেই সরকারি বাহিনী ২০-২৫ জনকে হত্যা করে। পরে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ে। নিহত সবার বয়স ৩৫–এর নিচে। হত্যালীলার পাল্টা হিসেবে কর বিলবিরোধী আন্দোলন থেকে দ্রুত প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগের দাবি উঠতে শুরু করে, যার রেশ এখনো আছে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন যেমন এক পর্যায়ে এক দফার আন্দোলনে পরিণত হয়, তেমনি কেনিয়ায় #RejectFinanceBill2024 হ্যাশট্যাগ দ্রুত #RutoMustGo–তে পরিণত হয়ে যায়।
রুটো বরাবরই জনগণকে খরচ কমানোর কথা বলে নিজে বিলাসী ভঙ্গিতে চলাফেরা করতেন। অনেকটা বাংলাদেশের বিগত শাসক যেভাবে মানুষকে কাঁঠালের বার্গার খেতে বলতেন।
জেন-জির আন্দোলনের এক পর্যায়ে আপত্তি সত্ত্বেও কর বিলটি পাস হওয়ায় বিক্ষোভকারীদের একাংশ পার্লামেন্টে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর চালায়। বাংলাদেশের গণভবনে ঢুকে পড়ার আদলেই সেটা ঘটে। ‘সরকারের ডান হাত’ হিসেবে চিহ্নিত বিচারালয়েও ঢোকে জেন-জি। ২১ জুন থেকে এভাবে সাত দিন চলে।
পরে জুনের শেষ দিকে এসে আন্দোলনের ফল হিসেবে অর্থ বিলটির কার্যকারিতা স্থগিত হলেও তখন থেকে গোপন পুলিশের ধরপাকড়, অপহরণ চলছেই। কেনিয়ায় গোপন পুলিশের কাজ-কারবার বাংলাদেশের আয়নাঘরের মতো। বহু জেন-জি অ্যাকটিভিস্ট গুম হন। তবে এর মধ্যেও আন্দোলনের জুন অধ্যায়ের পর এখন সমাজে নানামুখী পরিবর্তনবাদী মেরুকরণ শুরু হয়েছে।
স্বৈরশাসনবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের কাছে সবচেয়ে ‘পরিচিত’ দেশ উগান্ডা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেন্সরশিপ এড়াতে বাংলাদেশকে যে তারা উগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করত, সেটা এখন আর স্বীকার করতে বাধা নেই। সে-ই উগান্ডায় প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি ৩৮ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত করে আর দেশ-বিদেশের ধনীদের সম্পদ লুটের সুযোগ দিয়ে কীভাবে দশকের পর দশক ক্ষমতায় থাকতে হয়, তার এক ‘মাস্টারমাইন্ড’ মুসেভেনি। দেশটির শিক্ষা পরিসরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে আলাপ-আলোচনা নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বিনোদনমূলক ব্যাপারগুলোকে সরকার বেশ মদদ জোগায়।
বাংলাদেশের রাতের ভোটের মতোই মুসেভেনি সর্বশেষ ২০২১ সালে পুনরায় ‘বিজয়ী’ হয়ে ক্ষমতার চর্চা করে যাচ্ছেন। উগান্ডার জেন-জি তাদের জীবনে মুসেভেনি ছাড়া কাউকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখেনি।
মুসেভেনি কেনিয়ায় আন্দোলনের মুখে থাকা রুটোর দোস্ত। অবাধ লুণ্ঠনের সুযোগ দেওয়া আছে বলে বিদেশি কোম্পানিগুলো মুসেভেনির খুব ভালো বন্ধু। ঠিক একই কারণে উগান্ডার জেন-জি তাদের প্রেসিডেন্টের অপসারণ চায়। তারা এমপিদের বেতন-ভাতা কমিয়ে রাষ্ট্রীয় খরচ জোগাতেও বলছে।
কেনিয়ার আন্দোলন তাদের বিশেষভাবে উৎসাহ জুগিয়েছে। এখানেও বিক্ষোভের শুরু দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও কর্মসংস্থানের অভাব থেকে। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারও বড় দাবি হিসেবে আছে। সেখানে মিছিলের অভিমুখ থাকে সচরাচর পার্লামেন্টের দিকে যাওয়া। যথারীতি পুলিশ অত্যাচার করে সেটা থামাতে যায়। গ্রেপ্তারও বিপুল। আন্দোলনে কেন্দ্রীয় কোনো নেতৃত্ব নেই। আন্দোলনে প্রধান সমস্যা জনসমাজের ভেতরকার তীব্র হতাশা ও পুরো দেশের প্রশাসনে পদ্ধতিগত দলীয়করণ।
মুসেভেনি একটা কাজে বিশেষভাবে সফল, সেটা হলো সমাজে হতাশা ছড়ানো। সিনিয়র সিটিজেনরা অধিকাংশ বিশ্বাসই করে না তাদের ৮০ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টকে জীবিত অবস্থায় পদচ্যুত করা সম্ভব। কিন্তু জেন-জি লেগে থাকতে চাইছে। মুসেভেনি বলছেন, আন্দোলনকারীরা আগুন নিয়ে খেলছে। বিপরীতে জেন-জিদের প্রিয় স্লোগান হলো, ‘কাপুরুষোচিত জীবনে ক্লান্ত আমরা এখন সাহস দেখাতে চাই।’ সরকারবিরোধী দলীয় নেতাদের ব্যাপকভাবে কারাগারে ঢোকানো হচ্ছে এ মুহূর্তে।
কেনিয়া ও উগান্ডার পরই আগস্টে ১০ দিনব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়ে নাইজেরিয়ায় জেন-জি রাস্তায় নামে ১২ দফা দাবিতে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্য বাড়ার লাগামহীন অবস্থার মধ্যে এখানে বিশেষ গুরুত্ব পায় নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার এবং অতিরিক্ত কর কমানোর বিষয়ও। #ENDBGIN হ্যাশট্যাগ ছিল এই আন্দোলনের একটা প্রতীকচিহ্ন।
নাইজেরিয়ার মানুষ সচরাচর ধর্ম, জাতি ও অঞ্চলগত বিষয়ে খুব স্পর্শকাতর। কিন্তু জেন-জি শুরু থেকে বলছে, এই তিনটা বিষয়ের বাইরে এসে রাজনৈতিক কাজে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। তাদের ভাষায়—‘নো ট্রাইব, নো রিলিজিয়ন, নো রিজন’।
রাস্তায় নামলে সঙ্গে কী কী নেওয়া যাবে, সে–ও #ENDBGIN থেকে বলা হয়। এক বোতল পানি, এক টুকরা সাদা কাপড়, নাইজেরিয়ার পতাকা, রুমাল এবং কোনো দাবির একটা প্ল্যাকার্ড যেন সবার কাছে থাকে, সেটা নিশ্চিত করে তারা। সচরাচর তরুণদের হাতে ক্ষুধাবিরোধী অনেক প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। অথচ দেশটি খনিজ তেলের অন্যতম রপ্তানিকারক।
এখানেও ২০২৩–এ নির্বাচন হয়, কিন্তু তাতে সামাজিক সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি। কারণ, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সমস্যার সমাধান দিতে পারছে না নির্বাচন। বাংলাদেশের মতো নাইজেরিয়া ও কেনিয়ায় এমপিদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বেশ উচ্চ। অথচ সাধারণ সমাজের তাদের থেকে প্রাপ্তি সামান্যই।
তবে চলতি আন্দোলন এসব প্রতিপক্ষের নিপীড়ন ও বাধা অতিক্রম করে এখনো বিজয়ী হতে পারেনি। সংগঠকদের অনেকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার বিচারের আয়োজন চলছ। ১১ সেপ্টেম্বর সেই শুনানি শুরু হবে। এ ঘটনা যেকোনো সময় ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিতে পারে বলে অনুমান আছে। যেখানে রাস্তায় নামা যাচ্ছে না, সেখানেও অনলাইনে চিৎকার জারি আছে।
কেনিয়া, উগান্ডা ও নাইজেরিয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকায় জেন-জির উত্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আলাদা মনোযোগ পাচ্ছে। কারণ, এখানে রয়েছে মান্দেলা ও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের মতো সংগঠনের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ঐতিহ্য ও প্রভাব। কিন্তু এখানকার তরুণেরাও গত ৩০ বছরের ‘অগ্রগতি’তে সন্তুষ্ট নয়। তাঁরাই দেশটার জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ। ফলে তাঁদের মনোভাবকে অবজ্ঞা করারও সুযোগ নেই। যার পরিণতিতে এবারের নির্বাচনে এএনসি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ভোটের মাত্র ৪০ শতাংশ পেল তারা। ১৯৯৪ সালের পর এই প্রথম মান্দেলার দলকে ক্ষমতায় থাকতে কোয়ালিশনের কথা ভাবতে হলো। আবার দেশটিতে ভোটের হারও কমে গেছে ভয়ানকভাবে। মানুষ মনে করছে, বিদ্যমান দলগুলোকে ভোট দিয়ে সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না। বিশেষ করে পদ্ধতিগত দুর্নীতিতে সবাই বিরক্ত। এসব নিয়ে কথা বলা তরুণ সোশ্যাল ‘মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা’ রীতিমতো নায়কে পরিণত হয়েছে। মহাদেশটির সব দিকে কিশোর-তরুণদের এ রকম প্রবণতাকে ভূকম্পনের সঙ্গে তুলনা করে ইংরেজিতে ‘ইয়ুথকোয়াক’ও (Youthquake) বলা হচ্ছে।
আফ্রিকায় চলমান জেন-জির রাজনৈতিক সংগ্রামের সঙ্গে ‘বাংলা বসন্তে’র তুলনা করতে বসলেই প্রথমেই যেটা দেখা যায়, তা হলো নির্বাচনী ব্যবস্থার দুর্নীতি। সব জায়গায় শাসকেরা সুষ্ঠু ভোটের রাস্তা দূষিত করে ফেলেছিলেন। এ রকম সব কটি দেশে তীব্র ধনবৈষম্য রয়েছে এবং শাসকেরা বড়লোকদের সিন্ডিকেটগুলোকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করছে বা করছিল। সব জায়গায় বেকারত্বও তীব্র। অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ কোথাও সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠকে সুখ তো দূরের কথা স্বস্তিও দিচ্ছে না। কথিত ‘র্যাডিক্যাল’ রাজনীতিও এ অবস্থার সমাধান এনে দিতে পারেনি। মূলত এ রকম অর্থনৈতিক পটভূমিতেই জেন-জিদের উত্থান।
তবে বাংলাদেশে যেভাবে জুলাই-আগস্টে শাসকেরা হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছিল, অন্য জায়গাগুলোতে সে রকম নির্মমতা কম। তবে সবাই বিশেষভাবে ভয় পাচ্ছে উগান্ডার তরুণদের নিয়ে। মুসেভেনি শাসক হিসেবে নিষ্ঠুর।
বাংলাদেশের মতো আফ্রিকার এই শাসকেরা দমনমূলক ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামোর ব্যাপক সুবিধাভোগী। ঔপনিবেশিক আইন ও যাবতীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শ্রেণিনির্বিশেষে জেন-জি জোরালো আপত্তি তুলছে। বন্দুকের মুখে তাদের এসব বলতে হচ্ছে। তবে আগের মতো আর তাদের বিভিন্ন গোত্র ও অঞ্চলে ভাগ করা যাচ্ছে না।
আফ্রিকার চলতি জেন-জি আন্দোলনগুলোকে পশ্চিমের প্রচারমাধ্যমে ‘নেতৃত্বহীন’ বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে এগুলো সংগঠকহীন নয়। তবে গতানুগতিক রাজনীতির নেতৃত্ব বলতে যা বোঝায়, এগুলোর সংগঠকেরা সে রকম ধাঁচের নন। তাঁরা পাজেরো বা ল্যান্ডরোভার নিয়ে চলাচল করছেন না এবং তাঁরা নিজেদের কোনো দলের স্বার্থ খুঁজেও হয়রান নন। এ রকম সবার ‘মূলধন’ হিসেবে দেখা যাচ্ছে স্মার্টফোনটিকে। এই অর্থে তাঁরা একটা টেকনো-জেনারেশনও। সে জন্য আফ্রিকার এক ভাষ্যকার লিখেছেন, ‘আমাদের ডিজিটাল জেনারেশন অ্যানালগ রাষ্ট্রে’র বিরুদ্ধে লড়ছে।
ইউরোপ-আমেরিকায় উগ্র দক্ষিণপন্থার উত্থান এবং গণতন্ত্রের দুর্দিনে এশিয়া ও আফ্রিকায় জেন-জি চলতি গণতান্ত্রিক আর্তি বৈশ্বিক পরিসরেও বেশ চমক তৈরি করেছে। অনেকে একে ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রাম আকারেও দেখছেন। কেউ কেউ আবার একে বলছেন, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতনের পর পশ্চিমা গণতন্ত্রের আবেদনও ফুরিয়ে যাওয়া পরবর্তী অ্যানার্কিজমের কালপর্ব। এ রকম দাবিও আছে, এই কালপর্বকে তৈরি করেছে নতুন প্রযুক্তি। প্রযুক্তি জেন-জিকে তাদের ভাবনা প্রকাশের রাস্তা করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো কেউই নীতিগতভাবে জেন-জির পাশে দাঁড়াচ্ছে না। নিজস্ব ভূরাজনৈতিক স্বার্থে কোথাও তারা জেন-জির প্রশংসা করছে, কোথাও আবার তাদের কাজ-কারবার নিয়ে একদম চুপ। যেমন কেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট রুটো আমেরিকার বেশ প্রিয়ভাজন। আবার উগান্ডায় মুসেভেনির পতন চায় তারা। বাংলাদেশের জেন-জির মতোই আফ্রিকার কিশোর-তরুণেরা অবশ্য তাঁদের কাজে চীন-আমেরিকার দিকে তাকিয়ে নেই। তাঁদের সবার কথা, ‘অকুপাই ফিউচার’ (ভবিষ্যৎ দখল করো)।
আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ে গবেষক